in ,

ATP-এর পূর্ণরূপ কি? জীবনীশক্তি ও ATP- এর ভূমিকা

ATP-এর পূর্ণরূপ কি? জীবনীশক্তি ও ATP- এর ভূমিকা
ATP-এর পূর্ণরূপ কি? জীবনীশক্তি ও ATP- এর ভূমিকা

ATP-এর পূর্ণরূপ অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেট (adenosine triphosphate)।

জীবনীশক্তি ও ATP- এর ভূমিকা

জীবনীশক্তি বা জৈবশক্তি (bioenergy) বলতে আমরা ভিন্ন বা বিশেষ কোন শক্তি নয়। পদার্থবিজ্ঞানে শক্তির যেই সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে সেটি থেকে এটি আলাদা কিছু নয়। শুধু জীবদেহ বা জৈব অণুর রাসায়নিক বন্ধন ছিন্ন করার মাধ্যমে প্রাপ্ত শক্তিকে এই নামে ডাকা হয় মাত্র। জীব প্রতিনিয়ত পরিবেশ থেকে শক্তি সংগ্রহ করে, সংগৃহীত শক্তিকে একরূপ থেকে অন্যরূপে পরিবর্তিত করে, কখনো বা সঞ্চয় করে এবং শেষে সেই শক্তি আবার পরিবেশে ফিরিয়ে দেয়।

DNA এবং RNA-এর গাঠনিক উপাদানগুলোর একটি হলো অ্যাডেনিন। এটি একটি নাইট্রোজেন বেস। এর সাথে পাঁচ কার্বনবিশিষ্ট রাইবোজ সুগার অণু যুক্ত হয়ে তৈরি হয় অ্যাডিনোসিন। অ্যাডিনোসিন অণুর সাথে পর্যায়ক্রমে একটি, দুটি এবং তিনটি ফসফেট/ফসফরিক এসিড যুক্ত হয়ে যথাক্রমে অ্যাডিনোসিন মনোফসফেট (AMP), অ্যাডিনোসিন ডাইফসফেট (ADP) এবং অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেট (ATP) গঠন করে। এভাবে ফসফেট যুক্ত করতে বাইরে থেকে শক্তি দিতে হয়। এই বিক্রিয়ার নাম ফসফোরাইলেশন (Phosphorylation)। আবার এর বিপরীত প্রক্রিয়ায়, ফসফেট গ্রুপ বিচ্ছিন্ন হলে শক্তি বের হয়ে আসে। এই বিক্রিয়ার নাম ডিফসফোরাইলেশন (Dephosphorylation)। উল্লেখ্য, প্রতিমোল ATP অণুর প্রান্তীয় ফসফেট গ্রুপে ৭.৩ কিলোক্যালরি (প্রায় ৩০.৫৫ কিলোজুল) শক্তি জমা থাকতে পারে।

পরিবেশ থেকে শক্তি সংগ্রহ করে তাকে কোষের তথা জীবদেহের ব্যবহার-উপযোগী রুপে পরিবর্তিত করার জন্য কাজ করে দুটি অঙ্গাণুঃ মাইটোকন্ডিয়া এবং প্লাস্টিড। উভয়েরই রয়েছে ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম নামক একসেট বিশেষ জৈব অণু, যাদের কাজ হলো পুষ্টি উপাদান (যেমন- গ্লুকোজ) বা কোন -অন্তর্বর্তীকালীন অণুর শক্তিকে ATP- এর ফসফেট গ্রুপের বন্ধন শক্তি হিসেবে জমা করা। আবার, ATP-এর রাসায়নিক বন্ধন ভেঙ্গে যে শক্তি বের হয়, সেই শক্তি দিয়ে জীবদেহের প্রতিটি জৈবনিক কাজ অর্থাৎ, মাংসপেশির সংকোচন থেকে ইন্দ্রিয়ানুভুতি, খাবার খাওয়া থেকে হজম করা, নিঃশ্বাস নেওয়া থেকে কথা বলা, চিৎকার করা থেকে হাসি-কান্না, দৈহিক বৃদ্ধি থেকে প্রজনন, দেহের তাপমাত্রা ঠিক রাখা থেকে শুরু করে দেহের প্রতিটি কোষের স্বাভাবিক আয়তন বজায় রাখা এর সবই সম্পন্ন হয়। আমরা যে খাবার খাই তা জারিত হয়, সেই জারণ থেকে নির্গত শক্তি দ্বারা ফসফোরাইলেশনের মাধ্যমে আবার সেই ভাঙ্গা দুই টুকরা জোড়া লেগে ATP তৈরি হয়। শক্তি প্রয়োজন হলে তা আবার ভাঙ্গে। তারপর খাদ্য থেকে শক্তি নিয়ে আবার জোড়া লাগে। এ যেন এক রিচার্জেবল ব্যাটারি। ATP শক্তি জমা করে রাখে এবং প্রয়োজন অনুসারে অন্য বিক্রিয়ায় শক্তি সরবরাহ করে। এজন্য ATP-কে অনেক সময় ‘জৈবমুদ্রা’ বা ‘শক্তি মুদ্রা’ (Biological Coin or Energy Coin) বলা হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন- সালোকসংশ্লেষণ কি? সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার গুরুত্ব