in

‘স্যার, এই যে ১০ লাখ টাকা। বই দেবেন কবে?’

হুমায়ূন আহমেদের সাথে অন্যপ্রকাশের পথচলা শুরু যেভাবে
হুমায়ূন আহমেদের সাথে অন্যপ্রকাশের পথচলা শুরু যেভাবে

গত প্রায় তিন দশক থেকে হুমায়ূন আহমেদ নামটির সাথে অন্যপ্রকাশ প্রকাশনী ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। হুমায়ূন আহমেদ তার একাধিক লেখায় অন্যপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম, সিরাজুল কবির চৌধুরী কমলের নাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু অন্যপ্রকাশের সাথে তার সম্পর্কের শুরুটা কীভাবে হয়েছে সেটি কোথাও লেখেন নি। বাংলাদেশের আরেক জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন তার একটি লেখায় হুমায়ূন আহমেদের সাথে অন্যপ্রকাশের সম্পর্ক শুরুর ঘটানটি উল্লেখ করেছেন।

ইমদাদুল হক মিলন নিজেও একজন ব্যাপক জনপ্রিয় লেখক। ১৯৯০-৯১ সালের দিকে তিনি কেবল পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পেতে শুরু করেছেন। সে সময় তিনি থাকতেন গেণ্ডারিয়ার রজনী চৌধুরী রোডের চারতলার ছোট একটা ফ্ল্যাটে। ওই ফ্ল্যাটে একদিন চার যুবক আসেন মিলনের সাথে দেখা করতে, যারা কিনা মিলনের পূর্ব পরিচিত ছিলেন। এই চারজন ছিলেন মাজহারুল ইসলাম, মাসুম রহমান, সিরাজুল কবির চৌধুরী (কমল) আর আবদুল্লাহ নাসের। তারা ইতিমধ্যে পজিট্রন নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা করেছেন। এখন তারা অন্যদিক নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকা এবং প্রকাশনা সংস্থা করবেন। ইমদাদুল হক মিলনের কাছে এসেছেন একটি বই চাইতে। কিন্তু তাদের বই চাওয়ার কৌশলটি ছিল অনেকটা অন্যরকম। চা খেতে খেতে মাজহারুল ইসলাম আচমকা একটি পলিথিনের শপিং ব্যাগ মিলনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন, ‘এখানে দুই লাখ টাকা আছে। একুশে ফেব্রুয়ারি বইমেলায় আপনার একটা বই চাই।’

ইমদাদুল হক মিলন অপকটে লিখেছেন, এই ঘটনার আগে তিনি একসঙ্গে কখনো দুই লাখ টাকা দেখেন নি। এই টাকা পেয়ে তিনি কি করবেন বুঝতে পারছিলেন না। মাজহারুল ইসলামদের দেয়া এই টাকায় তার জীবন ঘুরতে শুরু করে।

হুমায়ূন আহমেদের ক্ষেত্রে এই চার যুবক ঘটিয়েছিলেন আরও বড় ঘটনা। তারা হুমায়ূন আহমেদকে জানান, তারা হুমায়ূন আহমেদের একটি বই প্রকাশ করতে চান। হুমায়ূন আহমেদ তখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। টেলিভিশন নাটক, উপন্যাস সব মিলিয়ে হুমায়ূনের সেরা সময় চলছে। হুমায়ূনের পেছনে প্রকাশকদের লাইন লেগে থাকে। এমন ব্যস্ত সময়ে এই চার যুবককে সিরিয়াসলি নেয়ার মতো সময় হুমায়ূনের ছিল না। তিনি তাদের এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বলেন, ‘একটা বইয়ের জন্য আমাকে ১০ লাখ টাকা অগ্রিম দিতে হবে।’

১৯৯২-৯৩ সালে ১০ লাখ অনেক টাকা। কিন্তু এই চার যুবক দমে না গিয়ে পরদিনই হুমায়ূন আহমেদের বিজয়নগরের অফিসে গিয়ে বাজার করা চটের একটি ব্যাগ নিয়ে হাজির হন। হুমায়ূন আহমেদকে অবাক করে দিয়ে ব্যাগ উপুড় করে তারা বলেন, ‘স্যার, এই যে ১০ লাখ টাকা। বই দেবেন কবে?’

এরপরের ইতিহাস সবার জানা। এই ঘটনার পর থেকেই ধীরে ধীরে অন্যপ্রকাশ হুমায়ূন আহমেদের প্রধান প্রকাশক হয়ে উঠে। হুমায়ূন আহমেদের কল্যাণে বাংলা একাডেমির বই মেলায় পাঠকদের সবচেয়ে বড় লাইন অন্যপ্রকাশের স্টলের সামনেই দেখা যায়। এছাড়া অন্যপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম, সিরাজুল কবির চৌধুরী (কমল) এর সাথে হুমায়ূন আহমেদের পারিবারিক সম্পর্কও গড়ে উঠে। হুমায়ূন আহমেদের ধানমন্ডির ফ্ল্যাট “দখিনা হাওয়া”র পাশের ফ্ল্যাটেই থাকতেন মাজহারুল ইসলামের পরিবার। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অন্যপ্রকাশের সাথে তার এই সম্পর্ক অটুট ছিল। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর দিন পর্যন্ত মাজহারুল ইসলাম তার ছায়া সঙ্গী হিসেবে পাশে ছিলেন।