in

হুমায়ূন আহমেদের উক্তি

হুমায়ূন আহমেদ এর বিখ্যাত সব উক্তি

হুমায়ূন আহমেদের উক্তি
হুমায়ূন আহমেদের উক্তি

হুমায়ূন আহমেদ চলে যাওয়ার এক দশক পরেও হুমায়ূন আহমেদের উক্তি নিয়ে পাঠকদের আগ্রহের শেষ নেই। কারো মন খারাপ হলেই দেখা যায় হুমায়ূন আহমেদের দুঃখের উক্তি ফেসবুকে শেয়ার করতে। আবার প্রেমে পড়লেই সবাই খুঁজে হুমায়ূন আহমেদের প্রেমের উক্তি, হুমায়ূন আহমেদের ভালোবাসার উক্তি। কারো মন উদাস হলে সমুদ্র নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের উক্তি শেয়ার দেয়, কেউবা আবার হুমায়ূন আহমেদের জীবন নিয়ে উক্তি শেয়ার দেয়। তাই হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত কিছু উক্তি নিয়ে আমরা আমাদের এই লেখাটি সাজিয়েছি।

হুমায়ূন আহমেদের উক্তি জানার আগে চলুন হুমায়ূন আহমেদের জীবনী ছোট করে জেনে নেই।

হুমায়ূন আহমেদের জীবনী

হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে খালি পায়ে হেঁটে চলা হিমু কিংবা যুক্তিবাদী মনস্তত্ত্ববিদ, আবেগের চেয়ে যুক্তিকে প্রাধান্য দেয়া সত্যসন্ধানী মিসির আলী – এই চরিত্রগুলো সকল বইপ্রেমীদের মনে বারংবার দাগ কেটে যায়। কোথাও কেউ নেই নাটকের ’বাকের ভাই’ চরিত্রটি আজও বাংলা নাটকের দর্শকদের নিকট অতিপ্রিয়। এই সব চরিত্রের স্রষ্টা যিনি সেই হুমায়ূন আহমেদের বাংলা সাহিত্যে পদচারণা শুরু হয় “নন্দিত নরকে” শিরোনামের উপন্যাসের মধ্য দিয়ে।

হুমায়ূন আহমেদের জন্ম ১৯৪৮ সালে নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জে তাঁর মাতামহের বাড়িতে। তবে হুমায়ূনের পৈত্রিক ভিটা নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে। শিশুতোষ গ্রন্থ, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, আত্মজৈবনিক রচনা, সায়েন্স ফিকশন সব মিলিয়ে হুমায়ূন আহমেদের গ্রন্থের সংখ্যা তিন শতাধিক। হুমায়ূন আহমেদকে বলা হয় বাংলাদেশের সায়েন্স ফিকশনের পথিকৃৎ।

নাটক, চলচ্চিত্র নির্মাণেও তিনি ছিলেন সফল৷ সৃজনশীলতার স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক (১৯৯৪), বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৮১) এর মত অনেক পুরষ্কার রয়েছে তার ঝুলিতে৷ NHK নামক জাপান টেলিভিশনে তাকে নিয়ে “Who is who in Asia” শিরোনামের একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রচারিত হয়।

১৯৭৩ সালে প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খানের নাতনি গুলতেকিন খানের সাথে হুমায়ূন আহমেদ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর ২০০৩ সালে গুলতেকিনের সাথে তার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে ও ২০০৫ সালে তিনি অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

হুমায়ূন আহমেদের উক্তি

হুমায়ূন আহমেদ তার প্রতিটি উক্তিতে মানব জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার গল্প, আনন্দ-বেদনা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, আবেগ-অভিমান, হতাশা-বঞ্চনা, মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা সহজ ও সাবলীল ভাষায় তুলে ধরেছেন। হুমায়ূন আহমেদের উক্তিগুলো শুনলে মনে হয় প্রত্যেকটি উক্তি যেন আমাদের জীবন থেকে নেওয়া। হুমায়ূন আহমেদের তেমনই সব কালজয়ী উক্তি নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।

হুমায়ূন আহমেদের জীবন নিয়ে উক্তি / হুমায়ূন আহমেদের দুঃখের উক্তি

❝আমরা সব সময় বলি— সব মানুষ সমান। একজনের সঙ্গে আরেকজনের কোনো প্রভেদ নেই। কার্যক্ষেত্রে কখনোই সেরকম দেখা যায় না। শুধু শেষ সময়ে, মৃত্যুর খুব কাছাকাছি এসে সব মানুষ এক হয়ে যায়। শুধু তখনই দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং রাস্তায় ইট ভাঙে যে মেয়ে তার মধ্যে কোনো তফাৎ থাকে না।❞

—(তোমাদের এই নগরে)

❝চলে যায় বসন্তের দিন! কী অদ্ভুত কথা। বসন্তের দিন কেন চলে যাবে? কোনো কিছুই তো চলে যায় না। এক বসন্ত যায়, আরেক বসন্ত আসে। স্বপ্ন চলে যায়, আবারো ফিরে আসে।❞

—(চলে যায় বসন্তের দিন)

ভোর বেলা মেজাজ মোটামুটি ভালো থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খারাপ হতে থাকে, বিকাল বেলায় মেজাজ সবচে’ বেশি খারাপ হয়, সন্ধ্যার পর আবার ভালো হতে থাকে। এটাই সাধারণ নিয়ম।

—(তন্দ্রাবিলাস)

❝রাগলে মানুষের চোখ ছোট হয়ে যায়। আনন্দিত মানুষের চোখ হয় বড় বড়।❞

— (হিমুর রূপালী রাত্রি)

❝বিত্তবান মানুষরা কল্পনা করতে পারেনা। তারা বাস্তব নিয়ে এত ব্যাস্ত থাকেন যে কল্পনা করার সময় পাননা।কল্পনা না করতে করতে তাদের কল্পনা করার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।❞

—(বৃষ্টি ও মেঘমালা)

❝বড় বড় সমস্যার সমাধান অতি সহজেই করা যায়। ছোট ছোট সমস্যার সমাধান করাই কঠিন।❞

—(একজন হিমু কয়েকটি ঝিঁ ঝিঁ পোকা)

❝ইউনিভার্সিটির পুরানো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে, হাসি হাসি করে জিজ্ঞেস করা হয়— তারপর কি খবর ভালো আছেন? এখন কি করছেন?

কলেজের পুরানো বন্ধুর সঙ্গে বলা হয়— আরে তুমি? কেমন আছো?

আর স্কুল লেভেলের বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে— একজন আরেকজনের উপর ঝাপিয়ে পড়ে— তাই নিয়ম।❞

—(হিমুর রূপালী রাত্রি)

❝যাদের ঘরে কোনো আকর্ষণ নেই তারা সন্ধ্যাবেলা ঘরে ফেরে না। ঠিক সন্ধ্যায় তারা একধরনের অস্থিরতায় আক্রান্ত হয়।❞

–(হিমু)

“মুজিবকোট বঙ্গবন্ধুকেই মানায়। এই কোট বেঁটে এবং মোটারা পরলে তাদের লাগে পেঙ্গুইন পাখির মতো।”

— (হিমুর নীল জোছনা)

যারা কম বুঝতে পারে, এই পৃথিবীতে তারাই সবচে সুখি।

—(তন্দ্রাবিলাস)

‘কল্পনায় দেখেছি নুহাশ পল্লীর সবুজের মধ্যে সাদা ধবধবে শ্বেত পাথরের কবর। তার গায়ে লেখা চরণ ধরিতে দিয়ো গো আমারে নিয়ো না, নিয়ো না সরায়ে।’

— (কাঠপেন্সিল)

“প্রকৃতি যাকে দেবার তাকে উজার করেই দেয়। যাকে দেবার না তাকে কিছুই দেয় না। এই জন্যেই একজন হয় রবীন্দ্রনাথ, একজন হয় ঠেলাগাড়ির ড্রাইভার মুকাদ্দেছ।”

—(অপেক্ষা)

“সব মানুষের ভেতরে কিছু আদিম ভয় লুকিয়ে থাকে। মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এই ভয় লালন করে। খুব অল্পসংখ্যক মানুষই সেই আদিম ভয়ের মুখোমুখি হয়।”

— (মৃন্ময়ী)

“সব দলের মন্ত্রীই একই। তাদের মধ্যে গুণগত প্রভেদ যেমন নেই, দোষগত প্রভেদও নেই। তাদের সঙ্গে গ্রাম্য বাউলদের কিছু মিল আছে। বাউলরা যেমন বন্দনা না গেয়ে মূল গান গাইতে পারেনা, মন্ত্রীরাও সেরকম নিজ নিজ নেত্রীর বন্দনা না গেয়ে কোনো কথা বলতে পারেনা।”

—(কিছুক্ষণ)

“যারা প্রচুর অর্থ উপার্জন করে তারা কখনো অর্থ উপার্জন বন্ধ করতে পারে না। কখনো অবসর নিতে পারে না।”

—(সেদিন চৈত্রমাস)

“মানুষের আগ্রহকে উপেক্ষা করা ঠিক না।”

— (দরজার ওপাশে)

“সুন্দর দৃশ্য একা বা দোকা দেখা যায় না। তিনজন লাগে ৷ Three is company.”

— (এই শুভ্র! এই)

“টাকা বোকা মানুষকেও বুদ্ধিমান বানিয়ে দেয়।”

—(হিমু)

ভালো কাজ চিন্তা ভাবনা করে করতে হয় না। মন্দ কাজ অনেক চিন্তাভাবনা করে করতে হয়।

—(হিমু এবং একটি রাশিয়ান পরী)

মাঝেমধ্যে চিন্তার জগতে যেতে হয়। চিন্তার জগত বড়ই বিচিত্র!

—(হিমু এবং একটি রাশিয়ান পরী)

মানব জাতির সমস্যা হচ্ছে তাকে কোনো না কোনো সন্ধানে জীবন কাটাতে হয়। অর্থের সন্ধান, বিত্তের সন্ধান, সুখের সন্ধান, ভালোবাসার সন্ধান, ঈশ্বরের সন্ধান।

— (হিমু এবং একটি রাশিয়ান পরী)

ঢাকা শহরের পথেঘাটে চাকরি পরে থাকেনা। কেউ এলো, পথ থেকে একটা চাকরি কুড়িয়ে তার হাতে দিয়ে দেয়া হলো, হাসিমুখে চাকরি নিয়ে সে বাড়ি চলে গেলো। ঘটনা সেরকম না। বি.এ., এম.এ. পাস করা শতশত ছেলে শুকনো মুখে পথেঘাটে ঘুরছে!

— (দ্বিতীয় মানব)

কোনোকিছু দেখে হকচকিয়ে গেলেই যে জিনিসটা সত্যি, তা কিন্তু না। আমরা যখন স্টেজে ম্যাজিক শো দেখতে যাই তখন কী দেখি? তখন দেখি জাদুকর জুয়েল আইচ ইলেকট্রিক করাত দিয়ে একটা মেয়েকে কেটে দু’ভাগ করেছেন। ঘটনাটা সবার চোখের উপর ঘটলেও ঘটনা সত্যি না।

— (দ্বিতীয় মানব)

যে বাড়ীতে টিভি নেই, সে বাড়িতে কোনো কাজের লোক থাকেনা; এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য।

—(কুটু মিয়া)

একজন মানুষের অনেকগুলি চেহারা থাকে। একটি চেহারার সাথে অন্য চেহারার কিছুমাত্র মিল থাকেনা।

— (এইসব দিনরাত্রি)

“মন খারাপের ব্যাপারটা হল একটা খারাপ গ্যাসের মতো। দরজা জানালা বন্ধ ঘরে এই গ্যাসটা আটকে থাকে। কাউকে মন খারাপের কথা বললে বন্ধ ঘরের জানালা খুলে যায়। তখন মন খারাপ নামক গ্যাসটা বের হতে পারে।”

— (মৃন্ময়ী)

“আমি মানুষ। আমি তো ভুল করবোই। আমি কি ফেরেশতা যে আমার ভুল হবেনা?”

—(আমার আপন আঁধার)

“রুচির রহস্য ক্ষুধায়। যেখানে ক্ষুধা নেই সেখানে রুচিও নেই।”

― (বৃহন্নলা)

“মিথ্যা দু’রকমের আছে। হঠাৎ মুখে এসে যাওয়া মিথ্যা, আর ভেবে চিন্তে বলা মিথ্যা। হঠাৎ মিথ্যা আপনা আপনি মুখে এসে যায়। কোনাে পরিশ্রম করতে হয় না। ভেবে চিন্তে মিথ্যা বলাটাই কঠিন। এই মিথ্যা সহজে গলায় আসে না।”

— (বৃষ্টি বিলাস)

“যে মানুষ নিঃশব্দে হাসে তাহার বিষয়ে খুব সাবধান। দুই ধরনের মানুষ নিঃশব্দে হাসে- অতি উঁচু স্তরের সাধক এবং অতি নিম্নশ্রেণীর পিশাচ চরিত্রের মানুষ।”

– (তোমাদের এই নগরে)

“রিকশায় চড়ায় একটা রাজকীয় ব্যাপার আছে। মাথা সামান্য উচু করলেই আকাশ দেখতে দেখতে যাওয়া যায়।”

― (কবি)

❝মানুষের করুণা গ্রহণ করার মতো লজ্জা পৃথিবীর অন্য কোনো কিছুতে নেই।❞

—(এপিটাফ)

“ঢাকা শহরে বাতাসে পয়সা ওড়ে। কেউ ধরতে পারে, কেউ ধরতে পারেনা।”

— (জনম জনম)

দেশে প্রেমের অভাব নেই। দেশে অভাব হচ্ছে ভাতের।

— (পারুল ও তিনিটি কুকুর)

“পুলিশের কি কিছু ঠিক আছে? এরা জালিম! এরা করতে পারেনা এমন কাম নাই।”

—(মৃন্ময়ী)

“বুড়া মাইনষের রক্তে কোনো টেস নাই গো বউ। শইল্যে মশা বয় ঠিকই, কামুড় দেয় না।”

—(অপেক্ষা)

কারণে মিথ্যা বলার চেয়ে অকারণে মিথ্যা বলতে মানুষ বেশি পছন্দ করে।

—(মিসির আলীর অমিমাংসিত রহস্য)

“আমরা সবাই কেমন অন্যরকম হয়ে যাচ্ছি! শুধুই উল্টো কাজ করতে ইচ্ছে করে।”

—(রজনী)

একদল মানুষ আছে, যারা অন্যদের বিরক্ত করেই আনন্দ পায়।

— (মিসির আলীর অমিমাংসিত রহস্য)

“একেকজন মানুষ যেন একেকটা বই। কোনো বই সহজ, তরতর করে পড়া যায়। কোনো বই অসম্ভব জটিল। আবার কোনো কোনো বই এর হরফ অজানা। সেই বই পড়তে হলে আগে হরফ বুঝতে হবে। আবার কিছু কিছু বই আছে যার পাতাগুলি সাদা। কিচ্ছু সেখানে লেখা নেই, বড়ই রহস্যময় সে বই।

আমার নিজের বইটা কেমন? খুব জটিল নয় বলেই আমার ধারণা। সরল ভাষায় বইটি লেখা। যে কেউ পড়েই বুঝতে পারবে। কিন্তু সত্যি কি পারবে?

সারল্যের ভেতরেও তো থাকে ভয়াবহ জটিলতা।”

—হুমায়ূন আহমেদ

এভারেস্ট জয় করা যায় কিন্তু লোভ জয় করা যায় না।

—হুমায়ূন আহমেদ

বিরাট বুদ্ধিমান এবং বিরাট বোকা এই দুধরনের মানুষের সঙ্গ আনন্দময়।

—হুমায়ূন আহমেদ

মানুষ শুধু যে মানুষের কাছ থেকে শিখবে তা না। পশু পাখির কাছ থেকে অনেক কিছু শেখা যায়।

―হুমায়ূন আহমেদ

পুলিশরা উঁচুদরের আসামিদের ভাল খাতির করে। চা সিগারেট খাওয়ায়।”

—হুমায়ূন আহমেদ

“ধুমপানও অভ্যাসের ব্যাপার। অভ্যাস না থাকলে সিগারেটের ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে আসবে। আবার যারা অভ্যস্ত তারা পাগল হয়ে থাকে এই ধোঁয়াটার জন্য।”

―হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদের প্রেমের উক্তি

❝পুরুষ জাতির অনেক দুর্বলতার এক দুর্বলতা হচ্ছে, তারা মনে করে মেয়ে মাত্রই তার প্রেমে পড়ার জন্যে পাগল হয়ে আছে।❞

—(তোমাদের এই নগরে)

❝মেয়ে মানুষের দুঃখ তো বলে বেড়াবার নয়; ঢেকে রাখবার।❞

—(শঙ্খনীল কারাগার)

❝সুন্দরী মেয়েদের হাতের লেখা সুন্দর। এটা হল নিপাতনে সিদ্ধ। সুন্দরীরা মনে প্রাণে জানে তারা সুন্দর। তাদের চেষ্টাই থাকে— তাদের ঘিরে যা থাকবে সবই সুন্দর হবে।❞

—(হিমুর রূপালী রাত্রি)

❝বউ মানেই তো কোমল একটা ব্যাপার। স্বপ্ন এবং কল্পনা মেশানো ছবি।❞

—(বাসর)

❝যে পাখি উড়ে যায়, তাকে ফিরে আসতে হয়। খাঁচায় বন্দি পাখিরই শুধু উড়ে যাওয়া বাঁ ফিরে আসার ব্যাপার থাকে না।❞

—(চলে যায় বসন্তের দিন)

“মেয়েরা বিয়ের আগে কোনো পুরুষকেই স্বামী ভেবে আনন্দ পায় না। প্রেমিককেও তারা বিয়ের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত স্বামী ভাবে না।”

— (কিছুক্ষণ)

“ছেলে পাগলের চেয়ে মেয়ে পাগল বেশি ভয়ংকর।”

—(অপেক্ষা)

“গুণী মানুষের প্রেমে মেয়েরা যুগে যুগে পাগল হয়েছে। কারণ প্রকৃতির সেই পুরানো খেলা, প্রকৃতি চাচ্ছে পুরুষদের গুণ যেন পরবর্তী প্রজন্মে ‘ডি এন এ’ র মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। প্রকৃতি প্রাণপণে চাচ্ছে মানব সম্প্রদায়ের গুণগুলো যেন নষ্ট না হয়ে যায়। যেন প্রবাহিত হতে হতে এক সময় পূর্ণ বিকশিত হয়। তৈরি হয় অসাধারণ একটা মানব সম্প্রদায়।”

—(রুমালী)

“কিছু মানুষ মনে করে নারীজাতির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনার ফল একটাই; সময় নষ্ট করা। কী দরকার সময় নষ্ট করার।”

— (বীণার অসুখ)

“প্রেমের ধর্ম হচ্ছে অগ্নি। আগুন যেমন সব পুড়িয়ে দেয়, প্রেমও সব ছাড়খার করে দেয়।”

—(তন্দ্রাবিলাস)

“মানুষ যখন একা থাকে তখন কিন্তু আসলে সে একা থাকে না, তার মনের ভেতরের মানুষগুলো তাকে ঘিরে থাকে। একা থাকার এক মাত্র উপায় হল অনেক মানুষের সাথে থাকা। কারন জনতার মধ্যেই আছে নির্জনতা।”

— (নক্ষত্রের রাত)

“একজন খারাপ মানুষ অতি দ্রুত একজন ভালো মানুষকে খারাপ বানিয়ে ফেলতে পারে।”

— (শুভ্র)

তোমাকে আমি কতটা ভালবাসি সেটা কি তুমি জান? জান না, তাই না?

আমিও জানি না। ভালবাসা যদি তরল পানির মত কোনো বস্তু হত তাহলে সেই ভালবাসায় সমস্ত পৃথিবী তলিয়ে যেত। এমনকি হিমালয় পর্বতও।

—(এপিটাফ)

চোখের দেখাতে প্রেম গল্প উপন্যাসে হয়। বাস্তবে প্রেমে পড়ার জন্য একজনকে অন্যজনের কাছাকাছি যেতে হয়।

— (আশাবরী)

অস্বস্তি কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের বেশি। তারা যেকোনো পরিস্থিতি অতি দ্রুত সামাল দিতে পারে। পরম শত্রুকেও হাসিমুখে জিজ্ঞেস করতে পারে -তারপর ভাই কী খবর?

―(মেঘ বলেছে যাব যাব)

মেয়েদের আমি কখনো খুশি হলে সেই খুশি প্রকাশ করতে দেখিনি। একবার একটা মেয়ের সাথে সঙ্গে কথা হয়েছিল। সে ইন্টারমিডিয়েটে ছেলে-মেয়ে সবার মধ্যে ফার্স্ট হয়েছে। আমি বললাম, কি খুশি তো? সে ঠোঁট উল্টে বলল, উঁহু বাংলা সেকেন্ড পেপারে যা পুওর নাম্বার পেয়েছি। জানেন, মার্কশিট দেখে কেঁদেছি।

— (এলেবেলে)

“মেয়েরা অনেক শক্ত ধরনের হয়। ছেলেরা তা হয় না। বাইরে থেকে তাদের শক্ত মনে হলেও আসলে তারা তা না।”

— (এপিটাফ)

“আজকাল অধিকাংশ মায়েরাই মেয়েদের ভয় পায়।”

— (ময়ূরাক্ষী)

“সব কষ্টই মানুষের একসময় শেষ হয়ে যায়। মানুষের কষ্ট গ্যাস বেলুনের মতো, উঁচুতে উঠে থাকে – এক সময় না এক সময় সেই বেলুন নেমে আসতে থাকে। বেলুনভর্তি গ্যাস থাকে ঠিকই, তবে গ্যাসের বেলুনকে উড়িয়ে রাখার ক্ষমতা থাকে না।”

―(মেঘ বলেছে যাব যাব)

আমি কখনো রূপাকে চিঠি লিখি নি। একবার হঠাৎ একটি চিঠি লিখতে ইচ্ছা হলো। লিখতে বসে দেখি কী লিখব ভেবে পাচ্ছি না। অনেকবার করে একটি লাইন লিখলাম: রূপা তুমি কেমন আছ? সমস্ত পাতা জুড়ে একটি মাত্র বাক্য। সেই চিঠির উত্তর রূপা খুব রাগ করে করে লিখল: তুমি এত পাগল কেন? এতদিন পর একটা চিঠি লিখলে, তারমধ্যেও পাগলামি । কেন এমন কর? তুমি কি ভাবো এইসব পাগলামি দেখে আমি তোমাকে আরো বেশি ভালোবাসব?

— (ময়ুরাক্ষী)

“আলো যেমন চারপাশ আলো করে তোলে একজন পবিত্র মানুষও তার চারপাশ আলো করে তুলবেই।”

― (পারাপার)

“হঠাৎ দেখলাম তোমার চোখ ভর্তি পানি! তখন আমার যে কী আনন্দ হলো! ভাবলাম, তোমাকে কিছুদিন কষ্ট দিয়ে দেখি। আনন্দেকে তীব্র করার জন্য কষ্টের প্রয়োজন আছে। তাই না?”

—(তেতুল বনে জোসনা)

মেঘ দেখতে সব মেয়েদেরই বোধ হয় ভালো লাগে।

— (জনম জনম)

আমরা যাদের পছন্দ করি, তাদের কড়া কথাও আমাদের ভালো লাগে।

— (এইসব দিনরাত্রি)

“পুরুষ এবং মহিলার মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। একজন পুরুষের রাগ করার যতটা অধিকার, একজন মেয়ের কিন্তু ততটা অধিকার নেই।”

— (মৃন্ময়ী)

“কাওকে খুশি হতে দেখলে আমার ভালো লাগে।”

—(আমার আপন আঁধার)

“খুব ঘনিষ্ঠ দুজন মানুষের মাঝখানেও বোধহয় পর্দা থাকে। কারো পর্দা খুব ভারি, কারো পর্দা খুব হালকা স্বচ্ছ মসলিনের। সব দেখা যায়, তারপরও অনেক কিছু দেখা যায়না।”

—(এপিটাফ)

প্রেম বলিয়া জগতে কিছু নাই। ইহা শরীরের প্রতি শরীরের আকর্ষণ। এই আকর্ষণ প্রকৃতি তৈরি করিয়াছেন যাহাতে তাঁহার সৃষ্টি বজায় থাকে। নর-নারীর মিলনে শিশু জন্মগ্রহণ করিবে- প্রকৃতির সৃষ্টি বজায় থাকিবে।

—(হিমুর বাবার কথামালা)

“প্রেমিকা হাত ধরে রাখলে সেই হাত ছাড়িয়ে নেয়া যায়। কিন্তু পুলিশ হাত ধরে রাখলে ছাড়িয়ে নেয়া যায় না।”

―হুমায়ূন আহমেদ (একজন হিমু এবং কয়েকটি ঝিঁ ঝিঁ পোকা)

“মেয়েদের উপর বেশিক্ষণ রাগ করে থাকা উচিৎ না। মেয়েদের কাজই হচ্ছে ভুল করা। তারা ভুল করবেই।”

—(জনম জনম)

“বিয়ে করার জন্য দরকার হাসি খুশি ধরনের একটি মেয়ে, যে খুব রাগ করবে আবার পরমুহূর্তেই সবকিছু ভুলে হেসে ফেলবে। রাত ১ টার সময় ছাদে উঠে বৃষ্টিতে ভিজতে যার আপত্তি থাকবেনা।”

— (এইসব দিনরাত্রি)

মেয়েরা যদি জানতো গোসলের পর মাথায় টাওয়েল জড়ানো অবস্থাতেই তাদের সবচে সুন্দর লাগে। তাহলে সব মেয়ে বিয়ে বাড়িতে কিংবা জন্মদিনের উৎসবে মাথায় টাওয়েল জড়িয়ে যেতো।

– (তিথির নীল তোয়ালে)

বুদ্ধিমান লোকের সাথে কথা বলে আনন্দ পাওয়া যায়, গাধা টাইপ লোকের সাথেও কথা বলে আনন্দ পাওয়া যায়। যাদের বুদ্ধি মাঝামাঝি, এদের সাথে কথা বলে আনন্দ নেই।

—(মিসির আলীর অমিমাংসিত রহস্য)

যে মানুষ যত বেশি গম্ভীর, সে মানুষ ততবেশি রাগী, তবে তার মধ্যে ভালোবাসাও থাকে বেশি।

—হুমায়ূন আহমেদ

মানুষকে আদর করলে ভাবে আদরের পেছনে স্বার্থ আছে!

—হুমায়ূন আহমেদ

চিঠি ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত। যতক্ষণ পড়া হয় না ততক্ষণ আঁকিবুঁকি টানা সামান্য এক টুকরাকাগজ। পড়তে শুরু করলেই সে একজন রক্ত মাংসের মানুষ। মানুষের মতোই সে রাগ করে। অভিমান করে।

—হুমায়ূন আহমেদ

মেয়েদের কান্নায় ঘুমপাড়ানী কিছু আছে। শুনলেই ঘুম পেতে শুরু করে। ঘুম আসার সময় টা বেশ সুন্দর। গভীর কোন নির্জন দিঘিতে ডুবে যাওয়ার সঙ্গে এর একটা মিল আছে।

—হুমায়ূন আহমেদ

বুদ্ধিমতীরা নিজেকে ভালোবাসে অন্য কাউকে তারা ভালোবাসতে পারে না। ভালোবাসার ভান করে।

—হুমায়ূন আহমেদ

যে সুন্দর সে সব সময়েই সুন্দর। মাথা ভর্তি চুল থাকলেও সুন্দর, চুল না থাকলেও সুন্দর।

—হুমায়ূন আহমেদ

ভালোবাসায় যেমন স্বর্গের সুখের মতো কিছু মুহূর্ত থাকে। ঠিক তেমনি নরকের কষ্টের মতোও কিছু দুঃখ থাকবে। এটাই স্বাভাবিক।

―হুমায়ূন আহমেদ

এই পৃথিবীতে প্রিয় মানুষগুলোকে ছাড়া বেঁচে থাকাটা কষ্টকর কিন্তু অসম্ভব কিছু নয়। কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না, জীবন তার মতই প্রবাহিত হবে।

―হুমায়ূন আহমেদ

প্রেম হয় শুধু দেখা ও চোখের ভাল লাগা থেকে, রাগ থেকে প্রেম হয়, ঘৃণা থেকে প্রেম হয়, প্রেম হয় অপমান থেকে, এমনকি প্রেম হয় লজ্জা থেকেও। প্রেম আসলে লুকিয়ে আছে মানবসম্প্রদায়ের প্রতিটি ক্রোমসমে। একটু সুযোগ পেলেই সে জেগে উঠে।

―হুমায়ূন আহমেদ

ঘুমন্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলা খুব আনন্দের ব্যাপার। যার সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে সে পাশেই আছে অথচ কিছুই শুনছেনা।

—হুমায়ূন আহমেদ

কান্নার সঙ্গে তো সমুদ্রের খুব মিল আছে। সমুদ্রের জল নোনা। চোখের জল নোনা। সমুদ্রে ঢেউ ওঠে। কান্নাও আসে ঢেউয়ের মতো।

—হুমায়ূন আহমেদ

বোকা মেয়েরা ঝামেলা করে না। বাবা-মায়ের কথা মেনে নেয়। ঝামেলা করে বুদ্ধিমতীরা।

—হুমায়ূন আহমেদ

“একালের মেয়েগুলী ফাজিলের চুড়ান্ত, সহজ কথারও তিন রকম অর্থ করে মজা পায়।”

—হুমায়ূন আহমেদ

“ভাগ্য ফেরাবার জন্যে হলেও পুরুষ মানুষের বিয়ে দিতে হয়। কথায় আছে না স্ত্রীভাগ্যে ধন।”

—হুমায়ূন আহমেদ

❝রাতের ট্রেনে উঠলে তিথির সব সময় মনে হয়- ট্রেনে ট্রেনে জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারলে মন্দ হতনা। তবে একা না। একজন পাশে দরকার। এমন একজন যাকে দেখতে ভাল লাগে। যার পাশে বসতে ভাল লাগে। যার কথা শুনতে ভাল লাগে।

এমন একজন যে কথা বলতে বলতে চোখ ফিরিয়ে নিলে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে, ‘তুমি চোখ ফিরিয়ে নিলে কেন? খবরদার আর কখনো এরকম করবে না।❞

—হুমায়ূন আহমেদ

“ঘুমাবার আগে আয়নায় নিজেকে দেখার বাসনা সব তরুণীর মনেই থাকে।”

—হুমায়ূন আহমেদ

❝হাসলে মেয়েদের যত সুন্দর লাগে হাসি চেপে রাখলে তারচে দশ গুন বেশি সুন্দর লাগে।❞

—হুমায়ূন আহমেদ

❝সঙ্গপ্রিয় মানুষের জন্য নিঃসঙ্গতার শাস্তি কঠিন শাস্তি। এই শাস্তি মানুষকে বদলে দেয়।❞

—হুমায়ূন আহমেদ

ভাল ছেলেদের জন্য মেয়েদের মনে প্রেম জাগে না, যেটা জাগে তার নাম সহানুভুতি।

—হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদের উক্তি এক লেখায় সব ধারণ করা সম্ভব নয়। হুমায়ূন আহমেদের উক্তিগুলো নিয়ে পুরো একটি বই লেখাই সম্ভব।

আরও পড়ুন- ভালোবাসা নিয়ে হুমায়ূন ফরিদীর উক্তি