in

সৌরজগৎ কি? সৌরজগৎ এর গ্রহ কয়টি ও এদের বর্ণনা

সৌরজগৎ কি? সৌরজগৎ এর গ্রহ কয়টি ও এদের বর্ণনা
সৌরজগৎ কি? সৌরজগৎ এর গ্রহ কয়টি ও এদের বর্ণনা

অসীম মহাবিশ্বের অতিক্ষুদ্র একটি অংশ হলো আমাদের সৌরজগৎ। সূর্য, গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণুপুঞ্জ, অসংখ্য ধূমকেতু ও অগণিত উল্কা নিয়ে সৌরজগৎ গঠিত। সূর্য সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থান করছে। গ্রহগুলো মহাকর্ষ বলে প্রভাবে সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে। আমাদের সৌরজগতের যাবতীয় গ্রহ-উপগ্রহের নিয়ন্ত্রক হলো সূর্য। সূর্যকে ভিত্তি করেই সৌরজগতের যাবতীয় কাজ-কর্ম চলে। মহাবিশ্বের বিশালতার কাছে আমাদের সৌরজগৎ একটি ছোট্ট বিন্দু ছাড়া কিছুই না।

সৌরজগৎ এর গ্রহ কয়টি, বৃহত্তম গ্রহ কোনটি, ক্ষুদ্রতম গ্রহ কোনটি, শীতলতম গ্রহ কোনটি- এমন সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া এই লেখাটিতে।

আমাদের সৌরজগৎ

সূর্য (Sun): সূর্য একটি মাঝারি আকারের হলুদ বর্ণের নক্ষত্র। সূর্যের ব্যাস প্রায় ১৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলমিটার এবং ভর প্রায় ১.৯৯ * ১০১৩ কিলোগ্রাম। এই সূর্যই সৌরজগতের মূল চালিকাশক্তি। সূর্যের সাথে আমাদের সম্পর্ক অতি ঘনিষ্ঠ। পৃথিবীসহ সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ, উপগ্রহের তাপ ও আলোর মূল উৎস সূর্য। সূর্যের আলো ছাড়া পৃথিবী চির অন্ধকার থাকতো এবং পৃথিবীতে জীবজগৎ ও উদ্ভিদজগতের কিছুই বাঁচত না।

আমাদের সৌরজগৎ এর গ্রহ মোট আটটি। অর্থাৎ সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে আটটি গ্রহ। একটা সময় পর্যন্ত প্লুটোকে গ্রহ হিসেবে ধরা হলেও প্লুটোকে এখন বামন গ্রহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সূর্য থেকে দূরত্ব অনুযায়ী গ্রহগুলোর অবস্থান হলো- বুধ (Mercury), শুক্র (Venus), পৃথিবী (Earth), মঙ্গল (Mars), বৃহস্পতি (Jupiter), শনি (Saturn), ইউরেনাস (Uranus) এবং নেপচুন (Neptune)।

সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহস্পতি, আর সবচেয়ে ছোট গ্রহ বুধ। বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি গ্রহ বেশ উজ্জ্বল। তাই পৃথিবী থেকে এদের খালি চোখেই দেখা যায়। ইউরেনাস ও নেপচুন অপেক্ষাকৃত কম উজ্জ্বল। তাই এদের দূরবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না।

বুধ (Mercury): বুধ সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম এবং সূর্যের নিকটতম গ্রহ। সূর্য থেকে বুধ গ্রহের গড় দূরত্ব ৫.৮ কোটি কিলোমিটার। ব্যাস ৪,৮৫০ কিলোমিটার। বুধ সূর্যের খুবই কাছাকাছি থাকায় সূর্যের আলোর তীব্রতার কারণে সবসময় একে দেখা যায় না। সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে বুধের সময় লাগে ৮৮ দিন। অর্থাৎ বুধ গ্রহে ৮৮ দিনে এক বছর হয়। বুধের মাধ্যাকর্ষণ বল এত কম যে এটি কোন বায়ুমন্ডল ধরে রাখতে পারে না। এই গ্রহে কোন মেঘ, বৃষ্টি, বাতাস ও পানি নেই। ১৯৭৪ সালে মার্কিন মহাশূণ্যযান মেরিনার-১০ বুধের যে ছবি পাঠায় তা থেকে দেখা যায় যে, বুধের উপরিতল একদম চাঁদের মতো। ভূত্বক অসংখ্য গর্তে ভরা, এবরো-থেবড়ো। বুধের কোন উপগ্রহ নেই।

শুক্র (Venus): বুধের মতো শুক্র গ্রহকেও ভোরের আকাশে শুকতারা এবং সন্ধ্যার আকাশে সন্ধ্যাতারা হিসেবে দেখা যায়। শুকতারা বা সন্ধ্যাতারা আসলে কোন তারা নয়। কিন্তু নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করে বলেই আমরা একে ভুল করে তারা ভাবি।

শুক্র গ্রহটি ঘন মেঘে ঢাকা। তাই এর উপরিভাগ থেকে সূর্যকে কখনোই দেখা যায় না। শুক্রের মেঘাচ্ছন্ন বায়ুমন্ডল প্রধানত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের তৈরি। শুক্র সৌরজগতে সবচেয়ে উজ্জ্বল ও উত্তপ্ত গ্রহ। সূর্য থেকে শুক্র গ্রহের দূরত্ব ১০.৮ কোটি কিলোমিটার। এই গ্রহের দিন ও রাতের মধ্যে তেমন কোন তারতম্য হয় না। এখানে বৃষ্টি হয়। তবে সেটি এসিড বৃষ্টি। শুক্র গ্রহের ব্যাস ১২,১০৮ কিলোমিটার। সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে শুক্রের সময় লাগে ২২৫ দিন। অর্থাৎ শুক্র গ্রহে ২২৫ দিনে এক বছর হয়। শুক্রের কোন উপগ্রহ নেই। সকল গ্রহ এদের নিজ অক্ষের উপর পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরলেও একমাত্র শুক্র গ্রহ পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে ঘুরে।

পৃথিবী (Earth): পৃথিবী সূর্যের তৃতীয় নিকটতম গ্রহ। সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার। পৃথিবীর ব্যাস প্রায় ১২,৬৬৭ কিলোমিটার। পৃথিবী সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড। তাই পৃথিবীতে ৩৬৫ দিনে এক বছর ধরা হয়।

চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ও সহনশীল তাপমাত্রা আছে যা উদ্ভিদ ও জীবজন্তু বসবাসের উপযোগী। সৌরজগতের গ্রহগুলোর মধ্যে একমাত্র পৃথিবীতেই প্রাণের অস্তিত্ব আছে।

মহাবিশ্বের বিশালতার তুলনায় সৌরজগৎ একটি বিন্দু মাত্র। এই ছবিতে সূর্যের তুলনায় বাকি গ্রহগুলো কত ছোট সেটি দেখানো হয়েছে।
মহাবিশ্বের বিশালতার তুলনায় সৌরজগৎ একটি বিন্দু মাত্র। এই ছবিতে সূর্যের তুলনায় বাকি গ্রহগুলো কত ছোট সেটি দেখানো হয়েছে।

মঙ্গল (Mars): মঙ্গল পৃথিবীর নিকটতম প্রতিবেশী। বছরের অধিকাংশ সময়েই মঙ্গল গ্রহকে দেখা যায়। খালি চোখে এই গ্রহকে লালচে দেখায়। তাই একে “রেড প্ল্যানেট” বলা হয়ে থাকে। সূর্য থেকে মঙ্গল গ্রহের গড় দূরত্ব ২২.৮ কিলোমিটার। ব্যাস ৬,৭৮৭ কিলোমিটার, যা পৃথিবীর ব্যাসের অর্ধেক। মঙ্গল গ্রহে দিনরাত্রির হিসেব অনেকটা পৃথিবীর মতোই। সূর্যের চারিদিকে একবার ঘুরতে মঙ্গলের সময় লাগে ৬৮৭ দিন। মঙ্গল গ্রহের উপরিভাগে রয়েছে গিরিখাত ও আগ্নেয়গিরি। মঙ্গল গ্রহে অক্সিজেন ও পানির পরিমাণ খুবই কম এবং কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ এত বেশি (শতকরা ৯৯ ভাগ) যে প্রাণীর অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। মঙ্গল গ্রহের ফোবস ও ডিমোস নামে দুটি উপগ্রহ আছে

বৃহস্পতি (Jupiter): বৃহস্পতি সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ। তাই একে গ্রহরাজ বলা হয়। বৃহস্পতি গ্রহের ব্যাস ১,৪২,৮০০ কিলোমিটার। বৃহস্পতি আয়তনে পৃথিবীর চেয়ে ১,৩০০ গুণ বড়। সূর্য থেকে বৃহস্পতির দূরত্ব প্রায় ৭৭.৮ কোটি কিলোমিটার।

বৃহস্পতির বায়ুমন্ডল হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস দিয়ে তৈরি। বায়ুমন্ডলের উপরিবিভাগের তাপমাত্রা খুবই কম এবং অভ্যন্তরের তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি (প্রায় ৩০,০০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস)। সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে বৃহস্পতির সময় লাগে ৪,৩৩১ দিন। বৃহস্পতির উপগ্রহের সংখ্যা ৬৭টি

শনি (Saturn): শনি সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ। সূর্য থেকে শনি গ্রহের দূরত্ব প্রায় ১৪৩ কোটি কিলোমিটার। এটি গ্যাসের তৈরি একটি বিশাল গোলক। শনি গ্রহের ব্যাস ১,২০,০০০ কিলোমিটার। এই গ্রহের ভূত্বক বরফে ঢাকা। এর বায়ুমন্ডলে আছে হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের মিশ্রণ, মিথেন ও অ্যামোনিয়া গ্যাস। সূর্যের চারিদিকে একবার ঘুরতে শনির সময় লাগে ২৯.৫ বছর। শনি গ্রহ এক ধরণের উজ্জ্বল বলয় দ্বারা বেষ্টিত। শনির উপগ্রহের সংখ্যা ৬২টি

ইউরেনাস (Uranus): ইউরেনাস সৌরজগতের তৃতীয় বৃহত্তম গ্রহ। ইউরেনাস সূর্য থেকে প্রায় ২৮৭ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থান করে। সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে ইউরেনাসের সময় লাগে ৮৪ বছর। এই গ্রহের ব্যাস ৪৯,০০০ কিলোমিটার। এটি হালকা পদার্থ দিয়ে গঠিত। বায়ুমন্ডলে মিথেন গ্যাসের পরিমাণ বেশি। শনি গ্রহের মতো ইউরেনাসেরও কয়েকটি বলয় আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু শনি গ্রহের বলয়ের মতো এই বলয়গুলো উজ্জ্বল নয়।

ইউরেনাস সৌরজগৎ এর সবচেয়ে শীতলতম গ্রহ। ইউরেনাস যখন সূর্যের সবচেয়ে বেশি কাছে আসে, তখনো সূর্য থেকে এর দূরত্ব পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের ২০ গুণ হয়ে থাকে। ইউরেনাসে সবচেয়ে কম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২২৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ইউরেনাসের উপগ্রহের সংখ্যা ২৭টি

নেপচুন (Neptune): সৌরজগতের শেষ গ্রহ নেপচুন। সূর্য থেকে নেপচুনের দূরত্ব প্রায় ৪৫০ কোটি কিলোমিটার। এই গ্রহে সূর্যে আলো ও তাপ পৌঁছায় না বললেই চলে। নেপচুনের ব্যাস ৪৮,৪০০ কিলোমিটার। নেপচুন আয়তনে প্রায় ৭২টি পৃথিবীর সমান এবং ভর ১৭টি পৃথিবীর ভরের সমান। এই গ্রহের বায়ুমন্ডলের বেশিরভাগই মিথেন ও অ্যামোনিয়া গ্যাস। নেপচুনের উপগ্রহের সংখ্যা ১৪টি

সৌরজগৎ এ এই আটটি গ্রহের বাইরে প্লুটোকেও দীর্ঘ দিন ধরে মানুষ গ্রহ হিসেবে জেনে এসেছে। প্লুটো কেন গ্রহ নেয় সেটি জানতে পড়ুন – প্লুটো কি গ্রহ? প্লুটোকে কেন বামন গ্রহ বলা হয়?