‘সিনেমার মুখ্য উদ্দেশ্য হওয়া উচিত অবচেতন প্রকাশের ভাষা আবিষ্কার। সেই ভাষা হবে কাব্যিক বাতাবরণের মতো সুগভীর।‘
মেক্সিকান-স্প্যানিশ ফিল্মমেকার লুই বুনুয়েলের এই উক্তিই অল্প শব্দে বুঝিয়ে দেয় আদর্শ সিনেমার সংজ্ঞা। মর্মমূলে বিদ্ধ করাই ছিল এই ক্ষণজন্মা পরিচালকের মুনশিয়ানার পরিচয়। শুধু তাঁর সিনেমাই নয়, স্পানিশ ভাষায় বহু চলচ্চিত্রকার তাঁকে অনুসরণ করে নির্মাণ করেছে সফল সেলুলয়েডিয় কাব্য।
সিনে রিভিউ ওয়েবসাইট রোটেন টম্যাটোস প্রকাশিত সেরা ১১০ স্প্যানিশ ভাষার সিনেমার জিরাফ-লম্বা লিস্ট থেকে গোটা পাঁচেক সেরা স্প্যানিশ মুভি তো দেখে নিতেই পারেন। তাই আজকের লেখায় প্রথম পাঁচটি সেরা স্প্যানিশ মুভি নিয়েই হোক কয়েক ছত্র!
৫ সেরা স্প্যানিশ মুভি
রোমা/ Roma (২০১৮)
‘আমাদের স্মৃতিই আসলে সৃজনশীলতার বীজ। একদম শূন্য থেকে বিশাল কিছু সৃষ্টি কারুর পক্ষেই সম্ভব নয়।‘
জাপানের বিস্ময়কর মেধাবী পরিচালক নাগিসা ওশিমার সাথে আলাপচারিতায় স্পষ্টভাবে ঠিক এই কথাগুলোই বলেছিলেন আকিরা কুরোসাওয়া। সেই বক্তব্যকেই যেন কর্মে ফুটিয়ে তোলেন আলফোনসো কুয়ারন। ‘Y Tu Mama Tambien’ (২০০১) এ অনেকে কুয়ারনের জীবনের ছাপ খুঁজে পান। সেক্ষেত্রে ‘রোমা’ স্বঘোষিত ভাবেই ‘স্লাইস অফ লাইফ’।

আচ্ছা, স্বপ্নের কি রং থাকে? চোখ মুদলেই যে ঘন আবহাওয়া একসময় আমাদের গহীন ক্লান্তির দেশে নিয়ে যায়, অপরিচিত, অঘটিত ঘটনার স্বাদ দেয়- বিজ্ঞানীদের মতে তা নীরস সাদাকালো। কুয়ারনের রোমাও তাই। স্মৃতির পটে স্রেফ দুটো রং- সাদা আর কালো, কখনো মিশে গিয়ে ধূসর।
মোজাইকের চারকোণা মেঝে, মাঝে সাবান গোলা জলের বুদবুদ। কিছু সময় বাদে থিতিয়ে উঠলে আবার জলের আলোড়ন। কম্পিত জলের আয়নায় একমুঠো আকাশ, সেখানে উড়াল দিয়ে বেড়ায় অয়োময় পক্ষী- বিমান।
ছবির প্রথম দৃশ্যই সারমর্ম এঁকে দেয় গোটা অভিজ্ঞতার। মানুষের জীবন যেন এমনই, বিশেষ করে নারীর জীবন। এজন্যই ছবির প্রায় শেষভাগে অন্যতম প্রধান চরিত্র সোফিয়ার মুখে শোনা যায়,
‘আমরা একা। যে যাই বলুক না কেন, দিনশেষে আমরা, মেয়েরা প্রত্যেকেই একা।‘
সত্তরের পটভূমিতে মেক্সিকান দুই নারীর জীবনকে কেন্দ্র করে নির্মিত এই ছবিকে পুরোটাই ব্যক্তিগত মানেন কুয়ারন। কেননা তাঁর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা নারী লিবোরিয়া রদ্রিগেজের গল্পটাই দেখাতে চেয়েছেন এখানে। সমাজের দুই স্তরে থাকা দুই নারী –সোফিয়া ও ক্লেওর সাথে ঘটে যাওয়া সমস্তটাই স্মৃতি থেকে সেলুলয়েডে তুলেছেন তিনি।
সেসময়ের মেক্সিকো, ’৬৮ এর লাতেলোল্কো গণহত্যা, করপাস ক্রিসটি গণহত্যা –ঐতিহাসিক বিভিন্ন ঘটনাই উঠে এসেছে এই ১৩৫ মিনিটের এই চলচ্চিত্রে। প্রথমে কোন চিত্রনাট্য লিখতেই রাজি ছিলেন না ‘চিলড্রেন অফ দ্য মেন’ পরিচালক। প্রধান দুই চরিত্রের খোঁজে বেগার খেটেছেনও খুব। মারিনা দে তাভিরা (সোফিয়া) মেক্সিকোর খ্যাতিমান অভিনেত্রী হলেও জালিতসা আপারিসিও ছিলেন একদম আনাড়ি। স্কুল শিক্ষিকা হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন আপারিসিও, এর মধ্যেই পেয়ে গেলেন এই বিগ-ব্রেক।
নেটফ্লিক্সের প্ল্যাটফর্মে সারাবিশ্বে মুক্তি পাওয়ার আগে বেশ জল্পনা কল্পনা চলছিল একে নিয়ে। অবশ্য এর আগেই ৭৫তম ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়েছিল। সাথে জয় করে নিয়েছিল গোল্ডেন লায়নও। অস্কারের মঞ্চে ১০ বিভাগে মনোনয়ন পেলেও মাত্র তিনটি বিভাগে জিতে নেয় স্বর্ণ মূর্তি। এর মধ্যে সেরা সিনেমাটোগ্রাফি, সেরা বিদেশি ভাষার ফিল্ম এবং সেরা পরিচালকের পুরষ্কার আসে কুয়ারনের শেলফে!
অপূর্ব সিনেমাটোগ্রাফি, স্থবির অথচ বিশ্লেষণাত্মক ভঙ্গিমার এক অনন্য নিবেদন রোমা, যা কাল-জাত-সময়ের বৈতরণীকেও নিমেষে মিইয়ে দেয়। ‘গ্র্যাভিটি’, ‘চিলড্রেন অফ দ্য মেন’ পরিচালক তাই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বলতেই পারেন ‘ ঠিক এই রকম চলচ্চিত্রই আমি সবসময় বানাতে চেয়েছি। এটাই আমার প্রকাশভঙ্গি।‘
রটেন টোম্যাটোর সেরা স্প্যানিশ মুভির তালিকায় প্রথমে আছে এটি। IMDb রেটিং ৭.৭।
প্যানস ল্যাবিরিন্থ/ Pan’s Labyrinth (২০০৬)
১৯৪৪ এর স্পেন, বছর পাঁচেক আগে গৃহযুদ্ধ শেষ হলেও এর রেশ রয়ে গেছে। ফ্যালাঞ্জি পার্টির একজন সক্রিয় কমান্ডার ভিন্ডাল, তার পৈশাচিক কর্মকাণ্ডের জন্য যেমন নিন্দিত তেমনি নন্দিত চতুর রণ কৌশলে। বিদ্রোহী দলের সাথে বিরোধের ঝঞ্চাবিক্ষুদ্ধ সময়েই গর্ভবতী হয়ে পড়ে তার স্ত্রী,কারমেন।
এতটুকু পড়ে হয়তো ভাবছেন, এ নিশ্চয়ই স্প্যানিশ যুদ্ধের কোন মুভি। একদমই না। বরং একে ফ্যান্টাসি আর মানবতার অনবদ্য সংমিশ্রণ বলা যায়।
অন্যতম সেরা স্প্যানিশ মুভি বলে বিবেচিত এই সিনেমার মূল গল্প আবর্তিত হয় অফেলিয়াকে ঘিরে। যে কিনা সেই খুনে ভিন্ডালের সৎ কন্যা। ঘৃণা, যুদ্ধের উত্তালে যখন পুরো পৃথিবী রসাতলে তখন দশ বছরের অফেলিয়ার জগতে শুধু রূপকথাই সত্য। সেই গল্পের আরকে অফেলিয়া ধীরে ধীরে প্রবেশ করে পাতালপুরীর রাজ্যে, পরিচয় ঘটে দুঁদে শিংওয়ালা দৈত্যের সাথে।
একসময় সেই পাতায় লেখা গল্প প্রবেশ করে বাস্তবে, অফেলিয়া আবিষ্কার করে সহস্র বছরের প্রাচীন এক সত্যকে। কী করবে সে এখন? মানুষের জীবন নিয়ে পরাজয় মেনে নেবে না সহস্র প্রাচীন পাতালপুরকে আপন করে নেবে?
যুদ্ধ, বিশ্বাসঘাতকতা আর পরাবাস্তবতার জগতে ঢুঁ মেরে আসতে চাইলে চটজলদি দেখে নিতে পারেন দুই ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস এই ছবিটি। গ্রিক পুরাণের ফন হলো জঙ্গলের দেবতা, সে অনুসারেই এই ছবির মূল নাম El Laberinto Del Fauno । কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি দেয়ার সময়ে এর নাম বদলে দেয়া হয় ‘প্যানসে’।
Hellboy খ্যাত পরিচালক গিয়েরমো দেল তোরোর ব্যক্তিগত ফ্যান্টাসি, শৈশবের টুকটাক অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করেই লেখা হয় চিত্রনাট্য। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র দশ বছরের মেয়ে হলেও দেল তোরো কিন্তু ভেবেছিলেন ভিন্ন আঙ্গিক।
তাঁর প্রথম চিত্রনাট্য অনুসারে কারমেন আর ফনের প্রেম দেখানো হতো, যার সমাপ্তি ঘটতো সন্তানের বলিদানের মাধ্যমে। মাত্র ১৯ মিলিয়ন ডলারে নির্মিত ছবিটি সারাবিশ্বে আয় করে ৮৪ মিলিয়ন ডলার। অস্কারের ছয় বিভাগে মনোনীত হবার পাশাপাশি অর্জন করে সেরা সিনেমাটোগ্রাফি, সেরা মেকআপ ও সেরা মৌলিক চিত্রনাট্যের পুরস্কার।
মজার ব্যাপার হলো, দেল তোরোর গল্পানুসারে অফেলিয়ার বয়স হবার কথা ৮-৯ বছর। কিন্তু অডিশনে বছর এগারোর ইভানা বাকেরার অসাধারণ অভিব্যক্তি দেখে তড়িঘড়ি চিত্রনাট্যই পাল্টে ফেলেন পরিচালক-লেখক। ইভানা ছাড়াও এতে রয়েছেন ডগ জোন্স, সার্জেই লোপেজ, মারিবেল ভেরদু প্রমুখ।
রটেন টোম্যাটোর সেরা স্প্যানিশ মুভির তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে এটি। IMDb রেটিং ৮.২।

লা সিয়েনাগা/ La Cienaga (২০০১)
ছবিখানা দেখতে বসেই কিছুক্ষণ চোখ রগড়ে নিলাম। হচ্ছেটা কী? কাঁপা কাঁপা দৃশ্যায়ন, শ্রীহীন মধ্যবয়সীদের মদ্যপান, তাও আবার কাঁপা কাঁপা হাতে। এ যে আমার গ্যাজেটের সমস্যা নয়, পরিচালক লুক্রেসিয়া মারতেলের কারসাজি তা বুঝতেই আধা মিনিট লেগে গেল।
স্প্যানিশ ভাষায় সিয়েনাগা শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘জলাভূমি’ বা সোয়াম্প। ছবির চরিত্রগুলোও যেন একেকটা জলাভূমির মতো, টলমলে অনুভূতি সকলের, পাশে জড়িয়ে থাকা জঙ্গলের জালের মতো গোপনীয়তা সবার। অপ্রকাশিত, অব্যক্ত জীবনযাপন হলেও জলের ঠিক অতলে শেকড় গজিয়েছে এদের প্রত্যেকের, কোন না কোনভাবে জড়িয়ে গেছে একসাথে। মৃত্যুর ন্যায় এই পারিবারিক সম্পর্কও তাদের অমোঘ নিয়তি।

উত্তর-পশ্চিম আর্জেন্টিনার চিরায়ত সৌন্দর্যের ছাঁচ পাওয়া যায় এই সিনেমায়। খুব সরলীকরণের মোড়কে গল্প বলে গেছেন পরিচালক। স্বাভাবিক দৈনন্দিন ঘটনার মধ্য দিয়ে টেনশন তৈরি করেছেন বারবার। তবে এটাও ঠিক ছবির দুই পরিবারের আন্তঃসম্পর্ক বুঝতেই মিনিট বিশেক কেটে যাবে দর্শকের।
মারতেলের প্রথম ফিচার ফিল্ম ছিল এটি। প্রথম চেষ্টাতেই সমালোচকদের মন জয় করে নেন তিনি। প্রধানত সাংসারিক আসবাব, সামান্য ফোন, দরজা, তোয়ালেকেও একেকটা চারিত্রিক ভঙ্গিমা দেবার জন্য প্রশংসিত হয় এর সিনেমাটোগ্রাফি। হুগো কোলাসের ক্যামেরার সামনে সাবলীল অভিনয় করেন গ্রাসিয়েলা বরজেস, মারসেদেস মোরান,ড্যানিয়েল ভালেনজুয়েলা প্রমুখ।
আর্জেন্টাইন গ্রীষ্মের ছটা, পারিবারিক আবহের সাথে এক পশলা জীবনবোধও আর টানাপোড়েনের বাস্তবিক রসায়নই ‘লা সিয়েনাগা’। ড্রামা জনরার ভক্ত হলে সানন্দে দেখতে পারেন মাত্র ১০৩ মিনিটের এই ছোটগল্প। IMDb রেটিং ৭.১।
অল অ্যাবাউট মাই মাদার/ Todo sobre mi madre (১৯৯৯)
‘খ্যাতির স্বাদ সুবাস কোনটাই আসলে নেই। কি জানো, ওতে একবার অভ্যস্ত হয়ে পড়লে আলাদা কোন অনুভূতি হয় না।‘
সাদা চোখে আমরা যাকে সফল দেখি, সে কি আদতেই কানায় কানায় সফল? অতৃপ্তি কি তাকে তাড়া করে না? এর উত্তর হয়তো উপরের উক্তিতেই পেয়ে যাবেন আপনি। কাঠ কঠিন দর্শন এড়িয়ে জানিয়ে দেই, সংলাপটা ‘অল অ্যাবাউট মাই মাদার’ থেকে টোকা!
মানুষের এই সুবিশাল সংসারে দুর্ভাগ্য চিরন্তন। অন্যের দুর্ভাগ্য কখনো আমাদের বিহ্বল করে দেয়,কখনো আপন দুখে হতাশার অতলে হারিয়ে যাই আমরা। সকলের ওপরে যেই বিধাতা নিখুঁত অঙ্কে নাটক লিখে চলেছেন, অনেক সময় তাঁর অভাবনীয় দক্ষতায় চমকে উঠতে হয়। যেই মন্দভাগ্য একদিন সংকীর্ণতার কারাগারে আমাদের নিক্ষেপ করে, সেই ভাগ্যই আবার নতুন গতি আনে জীবনে।
ভাগ্যের অদ্ভুত দোলাচালেই যেন নিয়ত বয়ে চলেছে ম্যানুয়েলা। অসমাপ্ত দাম্পত্য, কিশোর সন্তানের অপমৃত্যু আর অতীতের বিষাদ বুকে চেপেই নতুন করে জীবনকে শুরু করতে চায় সে। কিন্তু পরম পিতার কি তাই চান? নাকি আরও প্রহসন অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য?
১০৪ মিনিটের মধ্যেই অনিন্দ্য এক ট্র্যাজেডি এঁকেছেন প্রখ্যাত পরিচালক পেদ্রো আলমদোভার। হৃদয়গ্রাহী সংলাপ, সিনেমাটোগ্রাফির জন্য স্বভাবতই তাঁর কাজগুলো জনপ্রিয়। সেক্ষেত্রে এটিও ব্যতিক্রম নয়। সরল গতিতে চললেও গল্পের বাঁকে বাঁকে চমকে উঠবার মতো রসদে ভরপুর এই সিনেমা। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, স্বল্প টাইমফ্রেমের মধ্যেই পেদ্রো অঙ্গ প্রতিস্থাপন থেকে শুরু করে এইডস, রুপান্তরকামীদের সংগ্রাম-সবকিছুই মোলায়েম ভাবে তুলে ধরেছেন।
এই সেরা স্প্যানিশ মুভির মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সিসিলিয়া রথ, আর সাথে ছিলেন পেনেলোপ ক্রুজ, আন্তোনিয়া সান হুয়ান, মারিসা পারেদেস প্রমুখ। গোল্ডেন গ্লোব, বাফটা, অস্কার প্রতিটি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানেই সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতে নেয় পেদ্রোর এই অসামান্য সৃষ্টি।
সেরা স্প্যানিশ মুভি হিসেবে এটি রটেন টোম্যাটোর তালিকায় চতুর্থ স্থানে আছেI MDb রেটিং ৭.৯।

সাইমন অফ দ্য ডেসার্ট/ Simón del desierto (1965)
‘বয়স কোন ধর্তব্যের বিষয় নয়, যদি না সেটা পনির হয়।‘
এভাবেই বয়সের হিসেবকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতেন কিংবদন্তী স্প্যানিশ-মেক্সিকান পরিচালক লুই বুনুয়েল। সারাবিশ্বে যার চলচ্চিত্র আজও চর্চার বিষয়, সেই বুনুয়েল নিজেকে বরাবরই ভাঙ্গাগড়ার মধ্য দিয়ে নিয়ে গেছেন। আরেক অভিজাত পরিচালক ইংমার বার্গম্যান বলেছিলেন, ‘বুনুয়েল সর্বদা নিজস্ব ধারার ছবি নির্মাণ করেন।‘
রটেন টোম্যাটোর সেরা স্প্যানিশ মুভির তালিকায় পাঁচ নম্বরে রয়েছে বুনুয়েল ‘সাইমন অফ দ্য ডেসার্ট’। মাত্র ৪৬ মিনিটের এই সিনেমার মূল প্রতিপাদ্যই হলো মন্দ আর ভালোর চিরন্তন দ্বৈরথ। তবে মৌলিক কোন গল্প নয় এটি। ৪০০ খ্রিস্টাব্দের ঈশ্বরভক্ত তপস্বী সাইমন দ্য স্টাইলাইটের জীবনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এটি নির্মাণ করা হয়। কথিত আছে যে, সেই সন্ন্যাসী সিরিয়ান এক স্তম্ভের উপর টানা ৩৯ বছর অতিবাহিত করেছিলেন।
আক্ষরিক সত্য বা ইতিহাসকে উপস্থাপনের বদলে বুনুয়েল আশ্রয় নিয়েছেন মেটাফোরের। এজন্যই আমরা শয়তানকে দেখতে পাই কখনো ঈশ্বরের দূত রূপে, কখনো অসহায় বৃদ্ধা রূপে। চিত্রায়নের চমকপ্রদ ব্যাপার হচ্ছে, ইতিহাস নির্ভরতাকে গুরুত্ব না দিয়ে অধুনা সময়ের সাথে সন্নিবেশ করার সফল প্রচেষ্টা চালিয়েছেন পরিচালক। আর ঠিক সেই কারণেই চলচ্চিত্র পাঠের অন্যতম গুরুত্ব বিষয় এই সিনেমা।

ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বিশেষ জুরি পুরস্কার জেতা এই ছবিতে অভিনয় করেছেন সিল্ভিয়া পিনাল, ক্লদিও ব্রুক, এনরিক আল্ভারেজ সহ আরও অনেকে। IMDb রেটিং ৮.০।
গত কয়েক বছরে ইন্টারনেট, স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের কল্যাণে বিশ্ব সিনেমার আরও গতিময় স্বাদ পাচ্ছেন বাঙালি দর্শকেরা। ফলে তাদের আকাঙ্ক্ষার মাত্রাটাও ঊর্ধ্বমুখী। এর মাঝে কোরিয়ান, স্প্যানিশ এই দুই ভাষার থ্রিলার প্রেমীর সংখ্যাই এগিয়ে। স্প্যানিশ থ্রিলারের অনির্বচনীয় প্লট, শিহরণ জাগানিয়া কাহিনী ইতোমধ্যেই আলাদা ভক্তকুল তৈরি করেছে। তবে উপরের পাঁচখানা ছবি শুধু স্প্যানিশ প্রেমিদের জন্যই নয়, তাবৎ সিনে-লাভারদের জন্যই ‘অবশ্য-উপভোগ্য’।
আপনার দেখা সেরা স্প্যানিশ মুভির কয়টি এই তালিকায় খুঁজে পেলেন?
লিখেছেন- সারাহ তামান্না
আরও পড়ুন- ইরানি সিনেমায় সেরা পাঁচ