in

সালোকসংশ্লেষণ কি? সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার গুরুত্ব

সালোকসংশ্লেষণ কি? সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার গুরুত্ব
সালোকসংশ্লেষণ কি? সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার গুরুত্ব

যা শিখবেনসালোকসংশ্লেষণ কি / কাকে বলে || সালেকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া || সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার গুরুত্ব || সালোকসংশ্লেষণ কোথায় সম্পন্ন হয় || সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় উপজাত হিসেবে কোন গ্যাস নির্গত হয় || শ্বসন কি

সালোকসংশ্লেষণ কি?

উদ্ভিত ও প্রাণী উভয়ই খাদ্যের উপর নির্ভরশীল। প্রাণীরা নিজেদের খাদ্যের জন্য অন্যের উপর নির্ভর করলেও উদ্ভিদরা নিজেদের খাদ্য নিজেরাই তৈরি করতে পারে। সালোকসংশ্লেষণ হচ্ছে সবুজ উদ্ভিদের খাদ্য তৈরির রাসায়নিক বিক্রিয়া। গ্রিক শব্দ photos (অর্থ: আলোক; এখানে সূর্যালোক) ও synthesis (অর্থ: সংশ্লেষণ, বা তৈরি করা) এর সমন্বয়ে এই শব্দটি গঠিত হয়েছে।

সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান গুলো হচ্ছে সূর্যের আলো, কার্বন ডাই অক্সাইড, ক্লোরোফিল ও পানি৷ গাছের শিকড় মাটি থেকে পানি ও খনিজ উপাদান গ্রহণ করে কান্ডের সাহায্যে পাতায় পৌঁছে দেয়৷ কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস পরিবেশ থেকে শোষিত হয়৷ কার্বন ডাই অক্সাইডের সাহায্যে উদ্ভিদের সবুজ পাতার ক্লোরোফিল গ্লুকোজ ও অক্সিজেন উৎপন্ন করে।

যে শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ ক্লোরোফিল ও সূর্যালোকের উপস্থিতিতে কার্বন ডাই অক্সাইড ও পানির বিক্রিয়ায় শর্করা বা গ্লুকোজ ও অক্সিজেন উৎপন্ন করে তাকে সালোকসংশ্লেষণ বলা হয়।

সালেকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া

বিক্রিয়া: 6CO2 + 12H2O + তাপ→ C6H12O6 + 6H2O + 6O2

এই প্রক্রিয়া ২টি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়- ক) আলোক নির্ভর পর্যায় খ) অন্ধকার পর্যায়

সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার গুরুত্ব:

শক্তি সংরক্ষণ: সূর্যের আলো থেকে প্রাপ্ত শক্তি উদ্ভিদ সর্বপ্রথম রাসায়নিক শক্তি হিসেবে নিজের মধ্যে আবদ্ধ রাখে৷ পরবর্তীতে উদ্ভিদ এই রাসায়নিক শক্তিকে খাদ্যে রূপান্তরিত করে ও খাদ্য থেকে প্রাপ্ত শক্তি গ্রহণ করে। সূর্য থেকে প্রাপ্ত শক্তি ধারণে সালোকসংশ্লেষণ প্রধান ভূমিকা পালন করে।

উদ্ভিদের খাদ্য তৈরি: আমরা জানি যে, উদ্ভিদের খাদ্য তৈরির প্রধান উৎস হচ্ছে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া। সবুজ উদ্ভিদ এর মাধ্যমে শর্করা জাতীয় খাদ্য উৎপন্ন করে এবং সে খাদ্য দিয়ে তার যাবতীয় চাহিদা পূরণ করে৷

প্রাণীর খাদ্য তৈরি: প্রাণীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে খাদ্যের জন্য উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল কারণ একমাত্র উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে। এক্ষেত্রে বলা যায়, প্রাণীজগতে খাদ্য সরবারহে এই প্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিপাকীয় প্রক্রিয়া পরিচালনা করা: উদ্ভিদ ও প্রাণী দেহে প্রতিনিয়ত হরেক রকম জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে থাকে। আর এই জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে প্রচুর পরিমাণে শক্তির প্রয়োজন হয়৷ সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত খাদ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী দেহে এই শক্তি সরবরাহ করে। সুতরাং, দেখা যাচ্ছে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া পরোক্ষভাবে বিপাকীয় প্রক্রিয়া পরিচালনা করে৷

জ্বালানি উৎপাদন: উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে উৎপাদিত খাদ্যের কিছুটা খরচ করে সিংহভাগ নিজের জন্য সঞ্চিত রাখে৷ উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশে (পাতা, ফলমূল, কান্ড) খাদ্য সঞ্চিত থাকে৷ উদ্ভিদ মারা যাওয়ার পর এই সঞ্চিত খাদ্যগুলো জ্বালানিতে রূপান্তরিত হয়। কয়লা, পেট্রোল, তেল এই জ্বালানিগুলো আমরা সাধারণত উদ্ভিদ থেকে পেয়ে থাকি৷

উদ্ভিদের শারীরিক বর্ধন: উদ্ভিদ দেহে বিপাক প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার কারণে উদ্ভিদ পুষ্টি লাভ করে। এই পুষ্টি উদ্ভিদ দেহের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সালোকসংশ্লেষণর মাধ্যমেই মূলত উদ্ভিদের পুষ্টি লাভের প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন হয়৷

বায়ুমন্ডলের অক্সিজেন কার্বনডাইঅক্সাইডের ভারসাম্য রক্ষা: উদ্ভিদ বায়ুমন্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে ও অক্সিজেন ত্যাগ করে৷ এটি সম্ভব হয় শুধুমাত্র সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার কারণে। আমরা শ্বসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করি ও অক্সিজেন গ্রহণ করি৷ শুধুমাত্র শ্বসন প্রক্রিয়া থাকলে দেখা যেত বায়ুমন্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে ও কার্বনডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হতো৷ কেবলমাত্র, এই প্রক্রিয়ার কারণে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড ও অক্সিজেনের ভারসাম্য বজায় আছে।

সালোকসংশ্লেষণ কোথায় সম্পন্ন হয়?

ক্লোরোফিল হচ্ছে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। উদ্ভিদের সবুজ অংশ, বিশেষ করে পাতাতেই ক্লোরোফিল উপস্থিত থাকে। কান্ড বা মূল এসবে ক্লোরোফিল  থাকে না। তাই সালোকসংশ্লেষণ উদ্ভিদের পাতায় সম্পন্ন হয়।

কোন আলোতে সালোকসংশ্লেষণ বেশি হয়?

উত্তর: লাল আলোতে

কোন আলোতে সালোকসংশ্লেষন হয় না?

উত্তর: হলুদ ও সবুজ।

সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় উপজাত হিসেবে নির্গত হয় কোন গ্যাস?

উত্তর : কার্বন-ডাই-অক্সাইড

শ্বসন কি?

শ্বসন এক ধরণের জৈবিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় খাদ্যবস্তু শরীরে প্রবেশ করার পর, জৈব রাসায়নিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে খাদ্যবস্তু শক্তি ও তাপ উৎপন্ন করে।

শ্বসন এক প্রকার দহন বিক্রিয়া। দহন হলো অক্সিজেনের সাথে কোন বস্তুর বিক্রিয়া। অক্সিজেনের সাথে যদি কখনো কোন বস্তুর বিক্রিয়া হয় সে বিক্রিয়া আমরা বলি দহন বিক্রিয়া। আমাদের দেহের অভ্যন্তরেও এমন দহন বিক্রিয়া সম্পন্ন হয়৷ উদাহরণস্বরূপ, আমরা যখন খাবার খাই সে খাবার পাকস্থলীতে হজম হয়। হজম হওয়ার ফলে খাদ্যগুলো ভেঙে গিয়ে এটিপিতে পরিণত হয় এবং আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে পরিবাহিত হয়। আমাদের কোষে পরিবাহিত হয়৷ এই কোষস্থ বস্তুর মধ্যে অক্সিজেনের বিক্রিয়া সংগঠিত হয়৷ সে বিক্রিয়ায় মাধ্যমে যে খাদ্যবস্তু ছিল সেটি জারিত হয়।

জারিত হওয়ার ফলে খাদ্যস্থ রাসায়নিক শক্তি নির্গত হয়। নির্গত হওয়া রাসায়নিক শক্তি গতিশক্তি ও তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং আমরা কাজ করার সামর্থ্য লাভ করি। আর এই কাজ করার সামর্থ্য লাভ হয় শ্বসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।

অক্সিজেনের উপস্থিতির বিচারে শ্বসনকার্যকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।

এই ভাগ দুটি হলো- সবাত শ্বসন, অবাত শ্বসন

আরও পড়ুন– জোয়ারভাটা কি? জোয়ারভাটা কেন হয়?