in ,

সালোকসংশ্লেষণ কাকে বলে? সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া কি? সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াটি কয়টি পর্যায়ে সম্পন্ন হয় এবং কি কি?

সালোকসংশ্লেষণ কাকে বলে? সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া কি? সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াটি কয়টি পর্যায়ে সম্পন্ন হয় এবং কি কি?
সালোকসংশ্লেষণ কাকে বলে? সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া কি? সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াটি কয়টি পর্যায়ে সম্পন্ন হয় এবং কি কি?

এই লেখায় যেসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে- সালোকসংশ্লেষণ কাকে বলে? সালোকসংশ্লেষণের বিক্রিয়া, সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া কি? সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াটি কয়টি পর্যায়ে সম্পন্ন হয় এবং কী কী? সালোকসংশ্লেষণের আলোক পর্যায়, সালোকসংশ্লেষণের অন্ধকার পর্যায়।

সালোকসংশ্লেষণ কাকে বলে?

সবুজ উদ্ভিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো যে এরা সূর্যালোকের উপস্থিতিতে কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং পানি থেকে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করে। সবুজ উদ্ভিদে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য তৈরি হওয়ার এ প্রক্রিয়াকে সালোকসংশ্লেষণ বলা হয় (Photosynthesis)।

সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় আলোকশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রুপান্তরিত হয়। সবুজ উদ্ভিদে প্রস্তুতকৃত খাদ্য উদ্ভিদ নিজে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় বিপাকীয় প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে ব্যবহার করে এবং অবশিষ্ট খাদ্য ফল, মূল, কান্ড, অথবা পাতায় সঞ্চিত রাখে। উদ্ভিদে সঞ্চিত এই খাদ্যের উপরেই মানবজাতি ও অন্যান্য জীবজন্তুর অস্তিত্ব নির্ভর করে।

সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো হলোঃ ক্লোরোফিল, আলো, পানি এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড। সালোকসংশ্লেষণ একটি জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া। সালোকসংশ্লেষণের বিক্রিয়াটি নিম্নে দেয়া হলো-

সালোকসংশ্লেষণ রাসায়নিক বিক্রিয়া
সালোকসংশ্লেষণ রাসায়নিক বিক্রিয়া

পাতার মেসোফিল টিস্যু সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার প্রধান স্থান। স্থলজ সবুজ উদ্ভিদ মাটি থেকে মূলের মাধ্যমে পানি শোষণ করে পাতার মেসোফিল টিস্যুর ক্লোরোপ্লাস্টে পৌঁছায় এবং স্টোমা বা পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে বায়ু থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে, যা মেসোফিল টিস্যুর ক্লোরোপ্লাস্টে পৌঁছে। জলজ উদ্ভিদ পানিতে দ্রবীভূত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে, যা মেসোফিল টিস্যুর ক্লোরোপ্লাস্টে পৌঁছে। জলজ উদ্ভিদ পানিতে দ্রবীভূত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে। বায়ুমন্ডলে ০.০৩% এবং পানিতে ০.৩% কার্বন ডাই-অক্সাইড আছে। তাই জলজ উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণের হার স্থলজ উদ্ভিদের থেকে বেশি।

সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া
সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া

অক্সিজেন এবং পানি সালোকসংশ্লেষণের উপজাত দ্রব্য (by product)। এটি একটি জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় H20 জারিত হয় এবং CO2 বিজারিত হয়।

সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া

সালোকসংশ্লেষণ একটি জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া। ১৯০৫ সালে ইংরেজ শরীরতত্ত্ববিদ ব্ল্যাকম্যান সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করেন। সালোকসংশ্লেষণের পর্যায় দুটি হলো, আলোক পর্যায় (Light dependent phase) এবং অন্ধকার পর্যায় (Light independent phase)।

আলোকনির্ভর পর্যায়

সালোকসংশ্লেষণের আলোকনির্ভর পর্যায়ের জন্য আলো অপরিহার্য। এ পর্যায়ে সৌরশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এ প্রক্রিয়ায় ATP (অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেট), NADPH (বিজরিত নিকোটিনামাইড অ্যাডনিন ডাইনিউক্লিওটাইড ফসফেট) এবং H+ (হাইড্রোজেন আয়ন বা প্রোটন) উৎপন্ন হয়। এই রুপান্তরিত শক্তি ATP- এর মধ্যে সঞ্চিত হয়। এই বিক্রিয়ায় ক্লোরোফিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্লোরোফিল অণু আলোকরশ্মির ফোটন শোষণ করে এবং শোষণকৃত ফোটন থেকে শক্তি সঞ্চয় করে ADP (অ্যাডিনোসিন ডাইফসফেট) অজৈব ফসফেটের সাথে মিলিত হয়ে ATP তৈরি করে। ATP তৈরির এই প্রক্রিয়াকে ফটোফসফোরাইলেশন বলে।

সূর্যালোক এবং ক্লোরোফিলের সাহায্যে পানি বিয়োজিত হয়ে অক্সিজেন, হাইড্রোজেন ও ইলেকট্রন উৎপন্ন হয়। এ প্রক্রিয়াকে পানির ফটোলাইসিস বলা হয়।

আলোক নিরপেক্ষ বা অন্ধকার পর্যায়

সালোকসংশ্লেষণের আলোক নিরপেক্ষ পর্যায়ে আলোর প্রত্যক্ষ প্রয়োজন পড়ে না। তবে আলোর উপস্থিতিতেও এই প্রক্রিয়া চলতে পারে। বায়ুমন্ডলের কার্বন ডাই-অক্সাইড পত্ররন্ধ্রের মধ্য দিয়ে কোষে প্রবেশ করে। আলোক পর্যায়ে তৈরি ATP, NADPH এবং H+ এর সাহায্যে আলোক নিরপেক্ষ পর্যায়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড বিজরিত হয়ে কার্বোহাইড্রেটে পরিণত হয়। সবুজ উদ্ভিদে কার্বন ডাই-অক্সাইড বিজারণের তিনটি গতিপথ শনাক্ত করা হয়েছে। যথা- ক্যালভিন চক্র, হ্যাচ ও স্ল্যাক চক্র এবং ক্রেসুলেসিয়ান এসিড বিপাক। এদের মধ্যে প্রথম দুটির সংক্ষিপ্ত আলোচনা নিম্নে উপস্থাপন করা হলো।

C3 উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণের দুটি ধাপ- আলোকনির্ভর পর্যায় ও ক্যালভিন চক্র
C3 উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণের দুটি ধাপ- আলোকনির্ভর পর্যায় ও ক্যালভিন চক্র

ক্যালভিন চক্র বা C3 গতিপথঃ কার্বন ডাই-অক্সাইড আত্তীকরণের এ গতিপথকে আবিষ্কারকদের নামানুসারে ক্যালভিন-বেনসন ও ব্যাশাম চক্র বা সংক্ষেপে ক্যালভিন চক্র বলা হয়। ক্যালভিন তার এ আবিস্কারের জন্য ১৯৬১ সালে নোবেল পুরষ্কার পান। অধিকাংশ উদ্ভিদে এই প্রক্রিয়ায় শর্করা তৈরি হয় এবং প্রথম স্থায়ী পদার্থ ৩ কার্বনবিশিষ্ট ফসফোগ্লিসারিক এসিড বলে এই ধরণের উদ্ভিদকে বলে C3 উদ্ভিদ।

হ্যাচ ও স্ল্যাক চক্র বা C4 গতিপথঃ অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানী M.D. Hatch ও C.R. Slack ১৯৬৬ সালে কার্বন ডাই-অক্সাইড বিজারণের একটি গতিপথ আবিষ্কার করেন। এই গতিপথের প্রথম স্থায়ী পদার্থ হলো ৪ কার্বনবিশিষ্ট অক্সালো এসিটিক এসিড। তাই একে C4 গতিপথ বলে।

C4 উদ্ভিদে একই সাথে হ্যাচ ও স্ল্যাক চক্র এবং ক্যালভিন চক্র পরিচালিত হতে দেখা যায়। C3 উদ্ভিদের তুলনায় C4 উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণের হার বেশি এবং উৎপাদন ক্ষমতাও বেশি। সাধারণত ভুট্টা, আখ, অন্যান্য ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ, মুথা ঘাস ইত্যাদি উদ্ভিদে C4 পরিচালিত হয়।

আরও পড়ুন- সালোকসংশ্লেষণ কি? সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার গুরুত্ব

আরও পড়ুন- সালোকসংশ্লেষণে ক্লোরোফিলের ভূমিকা ব্যাখা কর | সালোকসংশ্লেষণে আলোর ভূমিকা কি?