জীবজগতে সালোকসংশ্লেষণের গুরুত্ব নিম্নে তুলে ধরা হল।
জীবজগতে সালোকসংশ্লেষণের গুরুত্ব
সালোকসংশ্লেষণ বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া। এ বিক্রিয়ার মাধ্যমেই সূর্যালোক এবং জীবনের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে। নিচের আলোচনা থেকে জীবজগতে সালোকসংশ্লেষণের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যাবে। বিশ্বজুড়ে এ বিক্রিয়ার ব্যাপকতা লক্ষ করে কোনো কোনো বিজ্ঞানী এ প্রক্রিয়াকে জৈব রাসায়নিক কারখানা নামে অভিহিত করেছেন।
সমস্ত শক্তির উৎস হলো সূর্য। একমাত্র সবুজ উদ্ভিদই সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত করে খাদ্যের মধ্যে আবদ্ধ করতে পারে। কোনো প্রাণীই তার নিজের খাদ্য নিজে প্রস্তুত করতে পারে না। আমরা খাদ্য হিসেবে ভাত, রুটি, ফলমূল, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ইত্যাদি যা-ই গ্রহণ করি না কেন, তার সবই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সবুজ উদ্ভিদ থেকে পেয়ে থাকি। কাজেই কাদ্যের জন্য সমগ্র প্রাণীকুল সবুজ উদ্ভিদের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল, আর সবুজ উদ্ভিদ এ খাদ্য প্রস্তুত করে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায়। কাজেই বলা যায়, পৃথিবীর সকল উদ্ভিদ এবং প্রাণীর খাদ্য প্রস্তুত হয় সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে।
পরিবেশে ভারসাম্য রক্ষায়, বিশেষ করে 02 ও CO2– এর সঠিক অনুপাত রক্ষায় সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বায়ুতে অক্সিজেন গ্যাসের পরিমাণ ২০.৯৫ ভাগ এবং কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ ০.০৩৩ ভাগ। পৃথিবীতে উদ্ভিদ ও প্রাণীর স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং জীবনযাপনের জন্য বায়ুতে এ দুটি গ্যাসের পরিমাণ স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকতে হয়। এ পরিমাণের তারতম্য ঘটলে বায়ুমন্ডল জীবজগতের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠবে।
আমরা জানি, সব জীবেই (উদ্ভিদ ও প্রাণী) সব সময়ের জন্য শ্বসন ক্রিয়া চলতে থাকে। শ্বসন প্রক্রিয়ায় জীব অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে। কেবল শ্বসন প্রক্রিয়া চলতে থাকলে বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন গ্যাসের স্বল্পতা এবং কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের আধিক্য দেখা দিত। কিন্তু সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন গ্যাস ত্যাগ করে বলে এখনও বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের সঠিক অনুপাত রক্ষিত হচ্ছে। তবে বর্তমানে অধিক হারে বন-জঙ্গল ধ্বংস করার ফলে বায়ুমন্ডলে এ দুটি গ্যাসের অনুপাত নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কাজেই আমাদের অধিক হারে গাছ লাগাতে হবে।
মানবসভ্যতার অগ্রগতি অনেকাংশে সালোকসংশ্লেষণের উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। অন্ন, বস্ত্র, শিল্পসামগ্রী (যেমন নাইলন, রেয়ন, কাগজ, সেলুলোজ, কাঠ, রাবার), ঔষধ (যেমন কুইনাইন, মরফিন), জ্বালানী কয়লা, পেট্রল, গ্যাস প্রভৃতি উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। তাই সালোকসংশ্লেষণ না ঘটলে মানবসভ্যতা ধ্বংস হবে, বিলুপ্ত হবে জীবজগৎ। সুতরাং সালোকসংশ্লেষণ জীবজগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া।
শুধু তাই নয়, আজ থেকে প্রায় ৫ বিলিয়ন বছর আগে যখন পৃথিবী সৃষ্টি হয়, তখন এখানে কোন গ্যাসীয় অক্সিজেন ছিল না। পৃথিবীতে আদি উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন তৈরি করে এই পৃথিবীকে আমাদের জন্য বাসযোগ্য করে দিয়েছিল। তাই সব মিলিয়ে আমরা বলতেই পারি জীবজগতে সালোকসংশ্লেষণের গুরুত্ব অপরিসীম।
আরও পড়ুন– সালোকসংশ্লেষণে ক্লোরোফিলের ভূমিকা ব্যাখা কর | সালোকসংশ্লেষণে আলোর ভূমিকা কি?