in

ফিরিয়ে দিয়েছেন রং ফর্সাকারী ক্রিমের ২ কোটির প্রস্তাব, প্রচলিত সৌন্দর্য ধারণার বিপরীতে সাই পল্লবী

সাই পল্লবী
সাই পল্লবী

এলেন, দেখলেন, জয় করলেন!

সাই পল্লবীর আরম্ভের সারমর্ম এমনই। প্রথম থেকেই সাই পল্লবীর ক্যারিয়ার গ্রাফ উঠতির দিকে। ২০১৫ সালে  সুপারস্টার নিভিন পৌলির বিপরীতে ‘প্রেমাম’ এর কল্যাণে হয়ে উঠেছিলেন জাতীয় ক্রাশ। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি।

আটপৌরে স্নিগ্ধতা, সরল হাসি, মেখলা কেশ আর ব্রণের লালচে আভাময় গাল- এ নিয়েই যেন জীবন্ত কাব্য হয়ে উঠেছেন এই ডাক্তার কাম অভিনেত্রী। তবে অভিনয় জগতে আসা কিন্তু মোটেই পরিকল্পনায় ছিল না সাই পল্লবীর।

প্রেমামের মিষ্টি মালার রূপেই যিনি কোটি দর্শকের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন এক ধাক্কায়, সেই পল্লবীও কিন্তু নিজেকে নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগতেন। অথচ তাঁর হাত ধরেই বিউটি স্ট্যান্ডার্ডের সংজ্ঞাটাই বদলে গেছে রাতারাতি।

মালায়লাম, তামিল, তেলেগু- তিন ইন্ডাস্ট্রিতেই পাল্লা দিয়ে অভিনয় করে চলেছেন আটাশ বছর বয়সী এই তিলোত্তমা। অল্প সময়েই সফল, কিন্তু স্রোতে গা ভাসাননি। জাতীয় পুরস্কার জয়ী ফাহাদ ফাসিল, ধানুশের বিপরীতে কাজ করেছেন মাত্র বছর পাঁচের ক্যারিয়ারেই।

বলিউড হাঙ্গামার আয়োজনে এক সাক্ষাৎকারে প্রচলিত সৌন্দর্যের সংজ্ঞা নিয়ে সাই পল্লবী জানান তাঁর অভিজ্ঞতার কথা।

‘আমি নিজেও শত শত ক্রিম ব্যবহার করেছি, আমার ব্রণ নিয়ে এতটাই হীনমন্যতায় ভুগতাম যে ঘর থেকে বেরই হতাম না। মনে হতো, মানুষ শুধু আমাকে নিয়ে সমালোচনা করবে। কিন্তু ‘প্রেমাম’ এর পর উপলব্ধি হল, না, লোকে আমাকে আমার মত করেই গ্রহণ করছে, ভালোবাসছে। কিশোরীরা, শিশুরা যারা একই সমস্যার ভুক্তভোগী তারাও দেখল, এভাবেও নিজেকে গ্রহণ করা সম্ভব।‘

প্রেমামের কোমল সাফল্যের হাত ধরেই যেহেতু যাত্রা তাই নিজেকে দায়িত্বশীল কাজের সাথেই যুক্ত করতে আগ্রহী তিনি। যোগ করেন,

’সাধারণ মানুষ আমাকে যেই আত্মবিশ্বাসটা দিয়েছে, আমি মনে করি আমারও উচিত তাদের প্রতিদানে কিছু দেয়া আমার কর্তব্য। শুধু বাহ্যিক কারণে নিজেকে ছোট ভাবার কোন কারণ নেই।‘

দুই কোটির অফার, টাকার পরিমাণটা অল্প নয়। তবে কেন ফিরিয়ে দিলেন অবলীলায়? আলাপকালে জানালেন, অর্থের চাইতে নীতির মূল্যই তাঁর কাছে অধিক। এর সাথে পারিপার্শ্বিক অবস্থাও এই সিদ্ধান্ত নেয়ায় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছিল।

‘দেখুন, এটা সম্পূর্ণই আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। প্রচারণা বা আলোচনায় আসার চিন্তা মোটেই ছিল না। আমি নিজের ঘরেই এই অবস্থা দেখেছি। আমার বোন কিছুটা শ্যাম বর্ণের। সে যখন সবজি খেতে চাইত না, মা সবসময় গায়ের রং ফর্সা হবার কথা বলে তাকে সেসব খেতে বাধ্য করত। আমার মনে হয়েছে, স্রেফ সামাজিক গ্রহণ যোগ্যতার খাতিরে তাকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাজ করতে হচ্ছে। অথচ এর কোন যৌক্তিক ভিত্তি নেই।‘

ঘর থেকেই সেই স্টেরিওটাইপ ধারণা ভাঙার প্রেরণা পেয়েছিলেন। স্বকীয় গুনাবলি আর মেধাতেই মানুষের প্রকৃত মূল্য বলে বিশ্বাস করেন তিনি। তাই তো ফিল্মে গ্ল্যামার সর্বস্ব শোপিস হয়ে না থেকে বেছে নেন সেসব স্ক্রিপ্টই যেখানে নিজস্ব মূল্যবোধকে তুলে ধরতে পারেন।

নাচের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন ২০০৮ সালে। পরিচালক আলফোনসো পুথারেনের চোখে পড়েছিলেন তখনই। তাই প্রেমামের মালার চরিত্রের জন্য প্রথম থেকেই তাঁকে চাইছিলেন পুথারেন। মেডিকেলের চতুর্থ বর্ষে থাকতেই অভিষিক্ত হন কামিং অফ এজ- রোমান্টিক ফিল্মটিতে। প্রথম ছবিতেই এশিয়াভিশন, ফিল্মফেয়ারসহ অজস্র পুরস্কার হাতে আসে।

পরপর কালি, আথিরান, ফিদা, পারি পারি লেচে মানাসু, দিয়া, মারি ২, পাভা কাড়াইগাল সহ বেশ কিছু ব্যবসাসফল ছবিতে কাজ করেছেন। তবে শুধু ব্যবসার স্বার্থেই অভিনয় করে যাচ্ছেন না সাই পল্লবী। রাজনৈতিক ও সামাজিক  সচেতনতা তৈরির জন্যও বেছে বেছে স্ক্রিপ্ট হাতে নিচ্ছেন। নেটফ্লিক্সের এন্থলজি ‘পাভা কাড়াইগাল’- তেও জাতপ্রথার বিরোধী বার্তাতেই পাওয়া যায় সাইকে। প্রকাশ রাজের সাথে পাল্লা দিয়ে তাঁর পারফরম্যান্স ছিল এন্থলজির অন্যতম সেরা প্রাপ্তি।

এ বছরেই মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে নাগা চৈতন্যের সাথে ‘লাভ স্টোরি’, ‘ভিরাটা পারভাম’ এবং ‘শ্যাম সিংহ রয়’ তিনটি তেলেগু ছবি।

ফারিদুন শাহরিয়ারের সাথে সাক্ষাৎকারে উঠে আসে তিন ইন্ডাস্ট্রির তফাৎ, নারীপ্রধান ছবির বাজার এবং মি টু আন্দোলনের কথাও। সাইয়ের মতে, কন্টেন্ট উপযুক্ত হলেই দর্শক সিনেমা হলে আসবে, সেখানে নারী বা পুরুষ প্রধান চলচ্চিত্র বলে আলাদা করে ট্যাগ লাগানো অনুচিত। তবে তিনি এটাও মানেন, মি টু আন্দোলন এবং অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রিতে পূর্বাপর অভিনেত্রীদের অবদানই তাঁর ভিতকে শক্ত করেছে।

লিখেছেন- সারাহ তামান্না

সাই পল্লবীর সাক্ষাৎকার