in

সম্পদের কাকে বলে? সম্পদের শ্রেণিবিন্যাস ও সম্পদ সংরক্ষণের উপায়

সম্পদের কাকে বলে? সম্পদের শ্রেণিবিন্যাস ও সম্পদ সংরক্ষণের উপায়
সম্পদের কাকে বলে? সম্পদের শ্রেণিবিন্যাস ও সম্পদ সংরক্ষণের উপায়

সম্পদের ধারণা, সম্পদের শ্রেণিবিন্যাস ও সম্পদ সংরক্ষণের উপায় সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো।

সম্পদ কাকে বলে?

যা কিছু নির্দিষ্ট প্রযুক্তি, অর্থনীতি এবং সামাজিক অবস্থায় ব্যবহার করা যায় তাই সম্পদ। পেট্রোলিয়াম (খনিজ তেল) এর ব্যবহার ও উত্তোলন জানার সঙ্গে সঙ্গে এটি একটি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদে পরিণত হয়েছে। অবস্থানগত কারণে কোন ভূমির মূল্য কমবেশি হয়। তেমনি ব্যবহার জানার পর অপ্রয়োজনীয় বস্তুর প্রয়োজন হয়। এভাবেই কোন বস্তু মূল্যবান সম্পদে পরিণত হয়। এক কথায় বস্তুর কার্যকারিতাই সম্পদ।

সম্পদের শ্রেণিবিন্যাস (Classification of resources)

সম্পদকে প্রাথমিকভাবে তিন ভাগে ভাগ করা যায়- (১) প্রাকৃতিক সম্পদ, (২) মানব সম্পদ ও (৩) অর্থনৈতিক সম্পদ।

প্রাকৃতিক সম্পদকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায়। বিজ্ঞানীদের মতে, অনবায়নযোগ্য সম্পদ খুব ধীর গতিতে সৃষ্টি হয় এবং তাদের সরবরাহের পরিমাণ সীমাবদ্ধ। অনেক সম্পদ আছে যেগুলো সময়ের উত্তরণে কোনভাবেই প্রভাবিত হয় না, যেমন- কয়লার মজুদ বা আকরিক ধাতু। আবার অনেক সম্পদ সময়ের উত্তরণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, যেমন- চোয়ানোর মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। নবায়নযোগ্য সম্পদ বলতে বোঝাবে সেই জাতীয় সম্পদ, যা মূলত পুনঃসংগঠনশীল, কিন্তু সময়ের ব্যবধানে তারা বিশেষভাবে পরিবর্তনশীল। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে জলবিদ্যুৎ। জনসংখ্যাকে উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানব সম্পদে পরিণত করা হয়।

সম্পদ সংরক্ষণের উপায়

সম্পদ সংরক্ষণের অর্থ প্রাকৃতিক সম্পদের এমন ব্যবহার, যাতে ঐ সম্পদ যথাসম্ভব অধিকসংখ্যক লোকের দীর্ঘ সময়ব্যাপী সর্বাধিক মঙ্গল নিশ্চিত করতে সহায়ক হয়। সংরক্ষণ ধারণার অপার নাম জীবনাচরণ। শিক্ষা, মানবিক বৃত্তি, সত্যাচারণ, ন্যায়বিধান, সত্যানুসন্ধান, কর্তব্যপরায়ণতা বা প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার অপর নাম সংরক্ষণ। অর্থনীতিবিদদের মতে সম্পদ অসীম নয়, সসীম। তাই সম্পদ ব্যবহারের উত্তম ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। উত্তম ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নবায়নযোগ্য সম্পদের বৃদ্ধি সম্ভব। পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনাই উত্তম ব্যবস্থাপনা। অনবায়নযোগ্য সম্পদ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হতে পারে, যেমন- তেল পড়ানো। কিন্তু নবায়নযোগ্য সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে সৌরবিদ্যুৎ এবং পানিশক্তিকে কাজে লাগিয়ে জলবিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন করলে পরিবেশের কোন ক্ষতি হয় না। এছাড়া বিভিন্ন ব্যবহৃত বস্তুকে রিসাইক্লিং করে পুনরায় সম্পদরূপে ব্যবহার করা যায়, এতে সম্পদের অপচয় কম হয়। আবর্জনা থেকে তেল উৎপাদন করে আবর্জনা বহনকারী চলছে।

সৌর এবং মহাজাগতিক বিকিরণ ব্যতীত পৃথিবী একটি ক্লোজ সিস্টেম, তাই সম্পদের বাছাইকরণের মাধ্যমে, অর্থাৎ একের পরিবর্তে অন্যটির গুরুত্ব অনুধাবনে সম্পদের উপযোগিতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। অজৈব সারের প্রয়োগে প্রাথমিকভাবে ফলন বাড়লেও, পরবর্তীতে অধিক সারের প্রয়োগে জমির ক্ষতি সাধিত হয়। এরূপ ক্ষেত্রে জৈবিক সারের বৃদ্ধি সাধনের ব্যাপারটি চিন্তা করা যায়। কৃষি মৃত্তিকা রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন রকমের মৃত্তিকা সংরক্ষণ পদ্ধতির ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন- সোপান চাষ, শস্য আবর্তন। এছাড়া অকৃষি অঞ্চলে বনায়নের মাধ্যমে মৃত্তিকাকে সংরক্ষণ করা যায়। তাই বাংলাদেশের ভূমি, পানি, বিভিন্ন খনিজ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় সকলকে সচেতন হওয়া উচিৎ এবং এগুলোর অপচয় রোধ করা গেলে আমাদের সম্পদের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পাবে। এক্ষেত্রে সম্পদ সংরক্ষণে সম্পদের ব্যবহার হ্রাস, সম্পদের পুনব্যবহার ও সম্পদের পুননবায়ন এই তিন পদ্ধতির ব্যবহার জরুরি।

আরও পড়ুন- অর্থনৈতিক কার্যাবলি কাকে বলে? অর্থনৈতিক কার্যাবলি কত প্রকার?