in ,

স্থানীয় সময় ও প্রমাণ সময় কাকে বলে?

স্থানীয় সময় ও প্রমাণ সময় কাকে বলে?
স্থানীয় সময় ও প্রমাণ সময় কাকে বলে?

এই লেখা থেকে যা জানতে পারবেন-  স্থানীয় সময় কাকে বলে, প্রমাণ সময় কাকে বলে, সৌদির সাথে বাংলাদেশের সময়ের পার্থক্য, সময়ের পার্থক্য মূলত কিসের কারনে হয়।

স্থানীয় সময় ও প্রমাণ সময়

আমাদের পৃথিবীকে ৩৬০ ডিগ্রী দ্রাঘিমারেখা দিয়ে ভাগ করা হয়েছে। এই ৩৬০ ডিগ্রীকে আমার মূল মধ্যরেখা থেকে দুই দিকে অর্থাৎ পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ১৮০ ডিগ্রী ভাগ করা হয়েছে। এই ৩৬০ ডিগ্রী দ্রাঘিমা পুরোটাই আসলে কাল্পনিক। আমরা জানি পৃথিবী নিজ অক্ষের উপর পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরছে। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একবার পুরোটি ঘুরে আসে। হিসাব করলে দেখা যাবে ৩৬০ ডিগ্রী ঘুরে আসতে সময় লাগছে ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ ২৪*৬০ = ১৪৪০ মিনিট। এই ১৪৪০ মিনিটকে ৩৬০ ডিগ্রী দিয়ে ভাগ করলে দাঁড়ায় ১৪৪০ / ৩৬০ = ৪। অর্থাৎ প্রতি ডিগ্রী দ্রাঘিমা রেখার পার্থক্যের জন্য সময় লাগছে ৪ মিনিট।

স্থানীয় সময়

পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরছে। পৃথিবীর যে অংশটি পূর্ব দিকে সেই অংশটিতে আগে সূর্যোদয় বা সকাল হয়। পৃথিবীর আবর্তনের ফলে কোন একটি স্থানে সূর্য যখন ঠিক মাথার উপরে আসে তখন সেই স্থানে মধ্যাহ্ন। ঐ স্থানের ঘড়িতে তখন দুপুর ১২টা ধরা হয়। এই মধ্যাহ্ন থেকেই দিনের অন্যান্য সময়গুলো ঠিক করা হয়। আকাশে সূর্যের অবস্থান থেকে যে সময় স্থির করা হয় তাঁকে স্থানীয় সময় বলে। ঐ স্থান থেকে যত দূরের স্থান হবে সে হিসেবে প্রতি ১ ডিগ্রী দ্রাঘিমার জন্য সময় বাড়বে বা কমবে। স্থানটি যদি সেই স্থানের পশ্চিমের দিকের স্থান হয় তবে এর ১ ডিগ্রী ব্যবধানের জন্য ৪ মিনিট কম হবে। স্থানটি পূর্ব দিকের হলে ১ ডিগ্রী ব্যবধানের জন্য.৪ মিনিট বেশি হবে। অর্থাৎ পূর্ব দিকের স্থানের সময় নির্ণয়ের জন্য ঐ স্থানের সময়ের সঙ্গে প্রতি ডিগ্রী ব্যবধানের জন্য ৪ মিনিট যোগ করতে হবে। কারণ সেই স্থানটি যেহেতু পূর্বে অবস্থিত তাই সেখানে আগেই মধ্যাহ্ন হয়েছে অর্থাৎ ১২টা বেজেছে।

প্রমাণ সময়

দ্রাঘিমারেখার উপর সূর্যের অবস্থানের ভিত্তিতে আমরা সময় নির্ধারণ করি। এভাবে মধ্যাহ্ন সূর্যের অবস্থানকে সেই স্থানের দুপুর ১২টা ধরে স্থানীয় সময় নির্ধারণ করলে সাধারণত একটি বড় দেশের মধ্যে সময়ের গণনার বিভ্রাট হয়। এই সময়ের বিভ্রাট থেকে বাঁচার জন্য প্রত্যেক দেশে একটি প্রমাণ সময় নির্ধারণ করা হয়। সাধারণ কোন একটি দেশের মধ্যভাগের দ্রাঘিমারেখা অনুযায়ী যে সময় নির্ধারণ করা হয় যে সময়কে ঐ দেশের প্রমাণ সময় ধরা হয়।

দেশের আয়তনের উপর ভিত্তি করে প্রমাণ সময় একাধিক হতে পারে। আমরা জানি যুক্তরাষ্ট্রে ৪টি এবং কানাডাতে ৬টি প্রমাণ সময় আছে। সেসব দেশগুলোর প্রশাসনিক ও অন্যান্য কাজের সুবিধার জন্য তারা একাধিক প্রমাণ সময় ব্যবহার করে।

যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরের অদূরে অবস্থির গ্রিনিচের (০ ডিগ্রী দ্রাঘিমায়) স্থানীয় সময়কে সমগ্র পৃথিবীর প্রমাণ সময় হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের পূর্ব দিকে অবস্থির তাই আমাদের দেশে প্রমাণ সময় গ্রিনিচের সময়ের অগ্রবর্তী অর্থাৎ আমাদের এখানে গ্রিনিচের মধ্যাহ্নের পূর্বে মধ্যাহ্ন হয়। গ্রিনিচের দ্রাঘিমা শূন্য ডিগ্রী, অন্যদিকে আমাদের বাংলাদেশের ঠিক মাঝখান দিয়ে ৯০ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমারেখা অতিক্রম করেছে। আর আমরা জানি প্রতি ১ ডিগ্রীর জন্য সময়ের পার্থক্য হয় ৪ মিনিট। তাই ৯০ ডিগ্রী এর জন্য সময়ের পার্থক্য হবে ৯০*৪ = ৩৬০ মিনিট বা ৬ ঘণ্টা। ৯০ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমার স্থানীয় সময়কে বাংলাদেশের প্রমাণ সময় ধরে কাজ করা হয়। আমাদের এখানে যখন দুপুরে ১২টা তখন যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে সকাল ৬টা বাজে।

স্থানভেদে সময়ের পার্থক্য

আমরা জানি প্রতি ডিগ্রি দ্রাঘিমার জন্য সময়ের পার্থক্য হচ্ছে ৪ মিনিট এবং পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরছে। এজন্যই পূর্ব দিকের স্থানগুলোতে আগে দিন হচ্ছে এবং পশ্চিম দিকের স্থানগুলোতে পরে দিন হচ্ছে। এতে আমরা বুঝতে পারি আমাদের বাংলাদেশ থেকে যেসব দেশ পূর্ব দিকে অবস্থিত সেসব দেশে আগে সকাল হবে এবং আমাদের পশ্চিম দিকের দেশগুলোতে পরে সকাল হবে।

আমরা জানি প্রতি ডিগ্রি দূরত্বের জন্য সময়ের ব্যবধান হচ্ছে ৪ মিনিট। এই প্রতিটি ডিগ্রিকে ৬০ মিনিটে ভাগ করা হয় এবং প্রতি ১ মিনিট দূরত্বের জন্য ৪ সেকেন্ড সময়ের পার্থক্য হয়। এখানে একটি বিষয় লক্ষ করতে হবে দূরত্বের ব্যবধানের মিনিটকে অনেকে সময়ের মিনিট হিসেবে ধরে ভুল করে। আসলে দূরত্বের মিনিট হচ্ছে প্রতি ১ ডিগ্রিকে ৬০ মিনিটে ভাগ করা হয়। এই দূরতবের ৬০ মিনিটের প্রতি মিনিটের জন্য সময়ের ৪ সেকেন্ড লাগে। এভাবে দূরত্বের ব্যবধানের ৬০ মিনিটের জন্য লাগে ৬০*৪ = ২৪০ সেকেন্ড অর্থাৎ ৪ মিনিট সময়।

স্থানভেদে সময়ের পার্থক্য ভালোভাবে বুঝতে হলে কিছু গাণিতিক সমাধান করতে হবে।

উদাহরণ ১ঃ ঢাকা থেকে পূর্বে অবস্থির একটি স্থানের দ্রাঘিমার পার্থক্য ৫০°৩০’ । ঢাকায় যখন ভোর ৬টা তখন সেই স্থানের স্থানীয় সময় কত?

সমাধানঃ

ঢাকা থেকে স্থানটির ব্যবধান = ৫০°৩০’
= (৫০*৪)মিনিট + (৩০*৪)সেকেন্ড (পূর্ব দ্রাঘিমায় এই ব্যবধানের জন্য সময়ের পার্থক্য যোগ হবে)
= ২০০ মিনিট + ১২০ সেকেন্ড
= ২০০ মিনিট + ২ মিনিট
= ২০২ মিনিট
সময়ের ব্যবধান হবে ২০২ মিনিট বা ৩ ঘণ্টা ২২ মিনিট।

এখানে যে স্থানটির স্থানীয় সময় নির্ণয় করতে হবে সেটা ঢাকার পূর্ব দিকে অবস্থিত। সুতরাং স্থানীয় সময় ঢাকার সময়ের চেয়ে বেশি হবে কারণ পূর্ব দিকে সূর্য আগে উদিত হয়েছে। তাই ঢাকার সময়ের সঙ্গে ৩ ঘণ্টা ২২ মিনিট যোগ করতে হবে।

অতএব, স্থানটির সময়,
= ঢাকার সময় + সময়ের পার্থক্য
= ৬টা + ৩ ঘণ্টা ২২ মিনিট
= ৯ ঘণ্টা ২২ মিনিট

অতএব স্থানটির নির্ণেয় স্থানীয় সময় ৯টা ২২ মিনিট।

উদাহরণ ২ঃ ঢাকার দ্রাঘিমা ৯০° পূর্ব এবং রিয়াদের দ্রাঘিমা ৪৫° পূর্ব। ঢাকার স্থানীয় সময় দুপুর ২টা হলে সেই সময় রিয়াদের স্থানীয় সময় কত?

সমাধানঃ
আমরা জানি, প্রতি ডিগ্রি দ্রাঘিমার জন্য সময়ের পার্থক্য ৪ মিনিট।
ঢাকা ও রিয়াদের দ্রাঘিমার পার্থক্য ৯০° – ৪৫° = ৪৫°
সময়ের পার্থক্য হবে ৪৫*৪ = ১৮০ মিনিট অর্থাৎ ৩ ঘণ্টা।
প্রশ্নে উল্লেখিত ৪৫° পূর্ব দ্রাঘিমা দেখে আমরা বুঝতে পারি, রিয়াদ ঢাকার পশ্চিমে অবস্থিত। তাই ঢাকার স্থানীয় সময় থেকে এই ৩ ঘণ্টা বাদ যাবে।
অতএব, রিয়াদের স্থানীয় সময় হবে = দুপুর ২টা – ৩ ঘণ্টা [এখানে দুপুর দুইটা বলতে ১৪টা হবে]
= ১৪টা – ৩ ঘণ্টা
= ১১টা

উত্তরঃ রিয়াদের স্থানীয় সময় হবে সকাল ১১টা।