লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু ভাবসম্প্রসারণটি শুধু পরীক্ষার খাতায় লেখার জন্য নয়, নিজেদের জীবনের জন্যও পড়া দরকার। এটি অন্তর দিয়ে বোঝা দরকার। অনেক ছাত্রছাত্রীই আছে, যারা কিনা ছাত্রজীবন থেকেই লোভের বশবর্তী হয়ে নকল, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত হয়ে যায়। তাদের জন্য লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু ভাবসম্প্রসারণটি আরও বেশি করে বোঝা দরকার।
লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাবঃ “লোভ আপনার বাড়িতে খুব নিঃশব্দে প্রবেশ করে / অবশেষে এটি আপনার মাস্টার হয়ে যায় / এবং আপনি নিজের লোভের দাস হয়ে যান / একদিন এটি আপনাকে একটি অজানা কবরে টেনে তুলবে।”
– ডেভিল পোয়েট
মানুষ যখন তার যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারেনা, পরের ধন সম্পদ আত্মসাৎ এর চিন্তায় যখন কেউ মশগুল থাকে তখন সেটিকে বলা হয় লোভ৷ লোভী মানুষ সমাজের জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমনি বিষাক্ত কোন দেশের জন্য। লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু অনিবার্য।
সম্প্রসারিত ভাবঃ কথায় আছে যে কোন অসৎ উদ্দেশ্যের সূত্রপাত ঘটে লোভের কারণে। কারণ লোভ একবার যাকে গ্রাস করে সে ব্যক্তি হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে৷ তার বিবেক, নীতিবোধ, সততা সব কিছুকে সে লোভের কালিমার কাছে বিক্রি করে দেয়। সে তার লোভকে তখন আর কিছুতেই দমন করতে পারে না৷ নিজের কাছে অঢেল ধন-সম্পদ থাকার সত্ত্বেও কিছুতে তার পাওয়ার ইচ্ছের উপর সে ইতি টানতে পারে না৷ কারণ লোভ তার মগজে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে দিয়েছে। লোভ এমন এক জিনিস যা একটি মানুষকে ধীরে ধীরে ধধংসের দিকে ঠেলে দেয়৷ দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান সবসময় উপরের সারিতেই থাকে৷ এর প্রধান কারণ হচ্ছে কিছু মানুষের অসততা ও লোভ৷ খবর নিয়ে দেখা যায়, এসব দুর্নীতিবাজ লোকদের প্রচুর প্রাচুর্য থাকার পরেও এদের আশ মেটেনা। এদের আরো চাই। আর এই ধরনের লোভী মানুষদের কারণে সমাজের দরিদ্র মানুষেরা তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু কথাটি কেবল কথার কথা নয়। লোভী মানুষেরা অর্থ আত্মসাৎ করে ঠিকই, কিন্তু নিজেদের তারা বঞ্চিত করে মানসিক শান্তি থেকে। শুধু তাই নয়, কোন না কোনদিন আইনের হাতে কিংবা প্রকৃতির নিয়মে তাদের সাজা ভোগ করতেই হয়।
আমাদের চারপাশে এমন অনেক অসৎ ও লোভী মানুষ রয়েছে যারা অন্যের স্বেচ্ছায় দান করা রক্ত অবধি কোন অসহায় রোগীর কাছে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে। লোভ যে একটা মানুষকে কতটা নিচে নামাতে পারে এটি হচ্ছে তার বাস্তব উদাহরণ। লোভী মানুষের অমানবিকতার প্রমাণ আমাদের চারপাশেই রয়েছে। রেশনের জন্য দেওয়া চাল চুরি, বন্যার্তদের জন্য দেওয়া অর্থ, সামগ্রী অন্য কোথাও বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে লোভী মানুষের কার্যকলাপ। এ ধরনের মানুষ ভদ্রতার মুখোশ পড়ে আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। এদের বিষাক্ত ছোবল কবে কার উপর এসে পড়ে সেটি কেউ বলতে পারে না৷ লোভী মানুষ দ্বারা নিজের আপনজনেরাও ক্ষতি গ্রস্থ হতে পারে৷ এরা শুধু সর্বদা নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে। অথচ এক সময় লোভের গর্তে এরা নিজেরাই পতিত হয়৷ সম্পদের লোভের কারণে অনেক সন্তান বাবা মায়ের গায়ে হাত তুলতে দ্বিধা বোধ করে না, ভাইয়ের হাতে ভাইকে খুন হতে হয়৷ হিংসা, অহংকার ও লোভ এই তিনটি জিনিস যে ব্যক্তি মনে পোষণ করে রাখে তার পতন অনিবার্য। এডওয়ার্ড অ্যাবে বলেছেন, “লোভের উপর নির্মিত বাড়িটি বেশি দিন সহ্য করতে পারে না।”
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় মীরজাফর বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভের কারণে। ফলে ভারতীয় উপমহাদেশে নেমে এসেছিল পরাধীনতার অন্ধকার। চিনি শরীরে প্রবেশের পরপরই ক্যান্সারের কোষগুলো সক্রিয় হয়ে উঠে এবং চিনিকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে ক্যানসারের কোষ শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এই ভয়ংকর তথ্যটি দুজন গবেষক গোপন করেছিলেন শুধুমাত্র অর্থের লোভের কারণে। অতী লোভে তাঁতী নষ্ট কথাটি আমরা ছোটবেলায় পড়লেও বাস্তবে আর এই শিক্ষা জীবনে প্রয়োগ করতে পারছি কজন! একটু চোখ মেলে তাকালে দেখা যায় মহামারীর সময় যে যেভাবে পারছে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। বাজার সয়লাব ফরমালিন যুক্ত খাবারে৷ এমনকি জীবনরক্ষাকারী ঔষুধ পর্যন্ত লোভীদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। আইনের রক্ষকেরা অর্থের লোভে হয়ে উঠছে ভক্ষক। অন্যায়কে তারা প্রশয় দেওয়ার কারণে অপরাধীরা বুক ফুলিয়ে সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর ভুক্তভোগীরা প্রাণের ভয়ে লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। লোভ আমাদের সমাজকে নিজের মুঠোয় আবদ্ধ করে রেখেছে বলে এখনো যৌতুক প্রথার শিকার হয়ে হাজারো নারীকে প্রাণ হারাতে হচ্ছে৷ দিন শেষে দেখা যায়, লোভী মানুষ লোভের কারণে কোন না কোনভাবে নিজেকেই ঠকাচ্ছে। এরা লোভের কারণে নিজের ইহকাল, পরকাল তো হারাচ্ছেই, সেই সাথে দুনিয়াতেও একদিন না একদিন তাদের নিজেদের কর্মফল ভোগ করে মরতে হয়।
লোভের আরেকটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ পরীক্ষায় নকল ও প্রশ্নপত্র ফাঁস। পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো করার জন্য কিংবা পাস করার জন্য অনেকেই প্রশ্নপত্র কেনে, অনেকে নকল করে। বিনা পরিশ্রমে ভালো ফলাফল করার লোভ ছাত্রজীবনে অনেকেই সামলাতে পারে না। কিন্তু এতে ক্ষণিকের ফলাফল আসলেও, জীবনযুদ্ধে তারা পিছিয়ে যায়। কেননা চাকরির ইন্টারভিউয়ের সময় দেখা যায় তারা অন্তঃসারশূন্য। চাকরি করার মতো যোগ্যতা তাদের নেই। লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু কাকে বলে সেটা তখন ভুক্তভোগীরা টের পায়।
মন্তব্যঃ লোভ কখনো ব্যক্তিজীবনে সুফল বয়ে আনতে পারেনা। কারণ, লোভ হচ্ছে এক ধরনের মানসিক সমস্যা। আমাদের সকলের উচিত লোভ পরিহার করে সততার সাথে জীবন ধারণ করা। হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন, “সেই ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা ধনী, যে লোভের বন্দি নয়।”
গুরুত্বপূর্ণ সকল ভাবসম্প্রসারণ-
১। ভাবসম্প্রসারণঃ পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি
৩। ভাবসম্প্রসারণ: কীর্তিমানের মৃত্যু নেই / মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়
৪। ভাবসম্প্রসারণঃ ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ
৫। ভাবসম্প্রসারণঃ দুর্নীতি জাতীয় জীবনে অভিশাপস্বরূপ
৬। ভাবসম্প্রসারণঃ দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য
৭। পরের অনিষ্ট চিন্তা করে যেই জন
৮। ভাবসম্প্রসারণ: সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই
৯। ভাবসম্প্রসারণঃ সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত
১০। ভাবসম্প্রসারনঃ আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে..
১১। ভাবসম্প্রসারণঃ অর্থই অনর্থের মূল
১২। ভাবসম্প্রসারণঃ পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না।
১৩। ভাবসম্প্রসারণঃ গ্রন্থগত বিদ্যা পরহস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন