in

স্কুইড গেমের ভক্ত? দেখুন আরও ৫ লাইফ-গেম থ্রিলার

স্কুইড গেমের ভক্ত? দেখুন আরও ৫ লাইফ-গেম থ্রিলার
স্কুইড গেমের ভক্ত? দেখুন আরও ৫ লাইফ-গেম থ্রিলার

হারবার্ট স্পেন্সার সেই ১৮৬৪ সালে তাঁর The Principles of Biology বইয়ে সর্বপ্রথম ‘সারভাইভাল ফর দ্য ফিটেস্ট’ বাক্যটি ব্যবহার করেছিলেন। সেই ‘সারভাইভাইল ফর দ্য ফিটেস্ট’ মূলনীতিই যেন এখন রাজত্ব করছে যুদ্ধ, কূটনীতি, সমাজনীতি প্রতি ক্ষেত্রে।

সেই তত্ত্বের ব্যবহারিক ধারণা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বৈষম্য ও ঋণ সমস্যাই পর্দায় উঠে এসেছে অধুনা জনপ্রিয় সিরিজ স্কুইড গেমে।

বিশ্বব্যাপী তরতরিয়ে বাড়ছে ‘স্কুইড গেমে’র ভক্তসংখ্যা। রিলিজের ২৮ দিনের মাথায় ১১১ মিলিয়ন দর্শকের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেছে সাউথ কোরিয়ান ড্রামা থ্রিলারটি। টানটান উত্তেজনার স্বাদ ফের পেতে হলে দেখুন আরও পাঁচ চলচ্চিত্র।

Battle Royale (2000)

নব্বইয়ের প্রথমভাগ থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব শুধু বর্তমানকেই নয়, ভবিষ্যতের নীতি নির্ধারণেও ভূমিকা রেখেছে। আর সেভাবেই উদ্ভব ব্যাটেল রয়াল এক্টের। এই এক্টের মূল উদ্দেশ্যই হলো ভবিষ্যতের চাকরির বাজারে প্রতিযোগীর সংখ্যা কমানো।

তবে সেই প্রতিযোগের মাত্রা হ্রাসের পেছনেও চলে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। প্রতি বছর যেকোনো হাইস্কুলের একটি শ্রেণি শিক্ষার্থীকে নিয়ে আসা হয় জনমানব শূন্য দ্বীপে। ৭২ ঘণ্টার মাঝে একমাত্র জীবিত ছাত্র অথবা ছাত্রীকেই বিজেতা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বাকিদের ভাগ্যে কী ঘটে? বিনা দোষে মৃত্যু নাকি আরও ভয়ংকর কোন পরিণতি?

জাপানের আর্থ-সামাজিক অস্থিরতা কীভাবে টিনেজারদের প্রভাবিত করছে তার একটা ক্ষুদ্র ধারণা পাবার জন্য আদর্শই বলা চলে ১১৩ মিনিটের এই একশন-থ্রিলারটি। ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত কউশুন তাকামির একই নামের উপন্যাস থেকে জাপানের স্বনামধন্য পরিচালক কিনজি ফুকাসাকু নির্মাণ করেন এটি। মুক্তির আগে থেকেই সমালোচনা দগ্ধ হচ্ছিল এটি।

টারান্টিনোর অন্যতম পছন্দের ছবি এই কাল্ট-ক্লাসিক ব্যাটল রয়াল; Photo:IMDb
টারান্টিনোর অন্যতম পছন্দের ছবি এই কাল্ট-ক্লাসিক ব্যাটল রয়াল; Photo:IMDb

৬০০০ অভিনেতার মধ্য থেকে ৮০০ জনকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয় এই সিনেমার জন্য। পরবর্তীতে সেই সংখ্যা নেমে দাঁড়ায় ৪২ এ। মাসামিচি আমানোর সুরায়োজনও এই ছবির ক্ষিপ্ত নান্দনিকতা বাড়িয়ে তুলেছে বহুগুণ।

৪.৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই ছবির আয় ৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা জাপানি চলচ্চিত্র ইতিহাসে অন্যতম ব্যবসাসফল হিসেবে বিবেচিত। তাকেশি কিটানো, তাতসুয়া ফুজিওয়ারা, আকি মায়েদা, চিয়াকি কুরিয়েমা অভিনীত ছবিটির আইএমডিবি রেটিং ৭.৬।

As the God’s Will (2014)

মনে করে দেখুন তো, বোরিং প্রাত্যহিক জীবন নিয়ে শেষ কবে অভিযোগ করেছেন? হেসে বলবেন, ‘আরে মশাই, এই আধা ঘণ্টা আগেই তো টঙয়ে এই নিয়ে সরেস বক্তৃতা দিয়ে আসলাম।‘

হ্যাঁ, এটা তো অনস্বীকার্যই বটে। কিন্তু আপনার এই নির্দোষ অভিযোগ যদি ঈশ্বর সিরিয়াসলি নিয়ে বসেন, তখন কেমনটা হবে বলুন তো?

গ্রাফিক ভায়োলেন্সের তীব্রতার জন্য নাম কুড়িয়েছে As the God’s Will; Photo: TMDB
গ্রাফিক ভায়োলেন্সের তীব্রতার জন্য নাম কুড়িয়েছে As the God’s Will; Photo: TMDB

হাইস্কুলে মেধাবী হিসেবেই নামডাক শুন তাকাহাতার। যাপিত জীবন সরল হলে কী হবে, প্রায়শই ঈশ্বরকে লক্ষ্য করে তার দীর্ঘশ্বাস ভেসে ওঠে কণ্ঠে। ঘটনাহীন জীবন তাকে তুষ্ট করতে পারে না কিছুতেই।

তবে একদিনের ব্যবধানেই বদলে যায় সকল হিসেব। আচমকা শুন আবিষ্কার করে তার শ্রেণীকক্ষেই শুরু হয়েছে মরণপণ দারুমা-সান গো কোরোন্দা খেলা; সামান্য নড়নচড়নেই মৃত্যু অবধারিত! রক্তবন্যা পেরুবার পর শুন টের পায় এক হত্যাযজ্ঞের টুর্নামেন্টে নাম লিখিয়ে নিয়েছে কেউ।

একে একে মানেকি নেকো, কাগোমে কাগোমে, শিরোকুমা এবং কিক দ্য ক্যান খেলার মধ্য দিয়ে ফাইনালে পৌঁছে শুন এবং তারই সহপাঠী আমায়া। এর মাঝে রক্তক্ষয়ী ক্ষ্যাপাতে খেলার মধ্যে তারা হারায় ইচিকা, শোকো, ইউকিও সহ অজস্র বন্ধুকে। কিন্তু এই ঘৃণ্য, জঘন্য খেলার অর্থ কী? কে-ই বা এর পেছনের কলকাঠি নাড়ছে? তবে কি ঈশ্বর এতটাই ক্ষমাহীন!

তাকাশি মিকে পরিচালিত অতিপ্রাকৃত হরর As the God’s Will মুক্তি পায় ২০১৪ সালে। তবে এর মূল কাহিনি মুনেওকি কানেশিরো ও আকেজি ফুজিমারার একই নামের মাঙ্গা সিরিজ থেকে নেয়া। বক্স অফিসে ২ মিলিয়ন আয় করা এই ছবি গ্রাফিক ভায়োলেন্স এবং বিচিত্র অনুষঙ্গের কারণে সমালোচিতও বটে। এই ছবির আইএমডিবি রেটিং ৬.৪।

Nerve (2016)

দৈনিক ঘুম ভাঙার পর আপনার প্রথম কাজ কী? পাশে রাখা স্মার্টফোন খুলে একে একে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, মেইল খুলে দিনের আরম্ভটা করা নাকি চায়ের কাপে তৃপ্ত চুমুক অথবা শারীরিক কসরতে মেতে ওঠা?

যান্ত্রিক জীবনের সীমাটা এখন আর শহর-গ্রামের ভেতর আটকে নেই। গ্রামের নব্য কিশোর থেকে শহুরে কর্পোরেট- সকলের মুঠোতেই চৌকস মুঠোফোন। সেখানে নিত্যদিনের খবর, টিকটকের উল্লাস সবটাই মেলে। কঠোর জীবনকে সহজ করবার প্রয়াসেই মোবাইল বা টেকনোলোজিকাল গেজেটের যাত্রা হয়েছিল। তবে যুগের তালে তালে এর জটিলতার মাত্রাটাও কম নয়।

‘You are an accessory to Murder.’ 

২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘নার্ভে’র শেষ ভাগে লাইনটা ভেসে ওঠে প্রত্যেকটা মোবাইল স্ক্রিনে। সংবিৎ ফিরে পাবার জন্য এটুকুই যথেষ্ট ছিল মরণ খেলায় মেতে ওঠা তরুণতরুণীদের জন্য।

গল্পের শুরুটা হয় বেশ মিষ্টি হাইস্কুল খুনসুটির ছলেই। কিন্তু অচিরেই বেরিয়ে আসে এই টিনেজারেরা মেতে উঠেছে অনলাইনের এক মৃত্যু কূপের খেলায়। নার্ভ নামক এই অনলাইন গেমে যে কেউ অংশ নিতে পারবে দর্শক অথবা প্রতিযোগী হিসেবে। দর্শকদের দেয়া চ্যালেঞ্জ অনুসারে প্রতিযোগীরা অভাবনীয় সব টাস্কের মুখোমুখি হয় এতে। এর বিনিময়ে মেলে মোটা অংকের অর্থ।

আপাতদৃষ্টিতে সরল মনে হলেও ধীরে ধীরে চ্যালেঞ্জের ভয়াবহতা বাড়তে থাকে, সাথে বাড়ে অর্থের পরিমাণও। কিন্তু অর্থের জন্য কি জীবন বাজি রাখাটা সুস্থ সভ্যতার প্রমাণ বহন করে?

হেনরি জোস্ট ও এরিয়েল শুলম্যান পরিচালিত নার্ভ এই প্রশ্নটাই ছুঁড়ে দেয় দর্শকের কাছে। ছবির চিত্রনাট্য জেসিকা শারজার লিখলেও এটি মূলত ২০১২ সালে প্রকাশিত জিন রায়ানের ‘নার্ভ’ উপন্যাস থেকে নির্মিত।

টিনেজ ড্রামা থেকে ক্রমে গহীন অন্ধকারে প্রবেশ করে নার্ভ; Photo: Film Affinity
টিনেজ ড্রামা থেকে ক্রমে গহীন অন্ধকারে প্রবেশ করে নার্ভ; Photo: Film Affinity

স্রেফ জনপ্রিয়তার তরঙ্গেই সিডনি যোগ দেয় নার্ভ গেমে। জেদের বশে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ভেনাসও নেমে পড়ে তাতে। অপরিচিতকে চুমু খাওয়া থেকে শুরু করে ক্রমে চুরি, চোখ বেঁধে মোটর সাইকেল চালানো আর শেষে… খুনোখুনিতে পৌঁছে যায় সেই নির্দোষ খেলা।

তবে এর ফলাফল কী? জানবার জন্য দেখে ফেলুন ৯৬ মিনিটের টেকনো-থ্রিলার চলচ্চিত্রটি। ছবিটি ১৯ মিলিয়ন বাজেটের বিপরীতে আয় করে নেয় ৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আইএমডিবি তে এর রেটিং ৬.৫।

Escape Room (2019)

জোয়ি ডেভিস- পদার্থবিজ্ঞানের তুখোড় শিক্ষার্থী, বেন মিলার-সাধারণ এক দোকান কর্মচারী, আমান্ডা হারপার- ইরাক যুদ্ধের এক সৈনিক, মাইক নোলান- মধ্যবয়সী ট্রাক চালক, ড্যানি খান- এস্কেপ রুম বিশারদ আর জেসন ওয়াকার- স্টক ব্রোকার; এই ছয় জনের কাছে হুট করেই পৌঁছে এস্কেপ রুমের আমন্ত্রণ। পুরষ্কার নগদ ১০ হাজার ডলার!

স্বভাবতই আমন্ত্রণে সাড়া দেয় ভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ছয় ব্যক্তি। স্বাভাবিক এস্কেপ রুমের ধারণা নিয়েই যোগ দেয় খেলায়। তবে ক্রমে তারা টের পায় এ শুধু রোমাঞ্চের জন্য তৈরি কোন খেলা নয়, মৃত্যু অথবা যুদ্ধই এর নিয়তি। একেক পাজলের সাথে জড়িয়ে আছে প্রত্যেক সদস্যের ভয়াবহ কোন না কোন স্মৃতি।

The Maze ছিল ছবির প্রাথমিক নাম; Photo: Movies Anywhere
The Maze ছিল ছবির প্রাথমিক নাম; Photo: Movies Anywhere

এডাম রবিটেল পরিচালিত আমেরিকান এই হরর সাইকোলজিকাল থ্রিলারের বিশ্বব্যাপী আয় ১৫৫.৭ মিলিয়ন ডলার। আইএমডিবিতে এর রেটিং ৬.৪।

Circle(2015)

কেমন হবে যদি হুট করে নিজেকে আবিষ্কার করেন এক অন্ধকারে ঠাসা ঘরে? যেখানে আপনার মতো আরও জনা পঞ্চাশেক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে নিজ নিজ বৃত্তে!

এভাবেই আরম্ভটা হয় এই সাইফাই থ্রিলারের। আচমকাই আধা শতক মানুষ নিজেদের আবিষ্কার করে এক বিশালাকার বৃত্তের চতুর্দিকে। বিস্ময়ের ঘোর কাটবার আগেই তারা টের পায় এক অতিপ্রাকৃত নির্বাচনের মাধ্যমে প্রত্যেক সদস্যকে খুন করা হচ্ছে।

মৃত্যুর কোলেও বেরিয়ে আসে মানুষের আত্মিক কদর্যতা; Photo: Grave Reviews
মৃত্যুর কোলেও বেরিয়ে আসে মানুষের আত্মিক কদর্যতা; Photo: Grave Reviews

ঘটনার সূত্রপাত, অববাহিকা বুঝবার আগেই বেঁচে থাকবার তাড়না পেয়ে বসে প্রত্যেকের মাঝে। বিরাট বৃত্তে শুধুমাত্র একজনের বেঁচে থাকবার অধিকার আছে টের পাবার পরপরই জাতধর্ম, ব্যক্তিগত সংস্কারে বিভক্ত হয়ে পড়ে সকলে। মৃত্যুর ঠিক পূর্ব মুহূর্তে বেরিয়ে আসে প্রত্যেকের অন্তরের কদর্য সত্য।

সিডনি লুমেটের অবিস্মরণীয় কোর্ট রুম ড্রামা 12 Angry Men থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই কাহিনীটা লিখেছিলেন এরন হান এবং মারিও মিসসিওনে। ১ ঘণ্টা সাতাশ মিনিটের এই সিনেমায় নির্মাতাদ্বয়ের লক্ষ্যই ছিল সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বাক স্বাধীনতা ও প্রতিকূলতাকে তুলে ধরা। কার্টার জেনকিন্স, জুলি বেঞ্জ, মাইকেল নারদেলি অভিনীত ছবিটির আইএমডিবি রেটিং সাকুল্যে ৬।

– সারাহ তামান্না 

আরও পড়ুন- মুন্সিগিরিঃ আয়নাবাজি ম্যাজিক নাকি নিষ্প্রভ থ্রিলার?

আরও পড়ুন- ইরানি সিনেমায় সেরা পাঁচ