in

রচনাঃ কৃষি কাজে বিজ্ঞান

রচনাঃ কৃষি কাজে বিজ্ঞান
রচনাঃ কৃষি কাজে বিজ্ঞান

কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা ঘুরেফিরে আমাদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বারবার আসে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগে এই রচনা মুখস্ত না করেই নিজের মতো লেখা যায়। ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার্থে কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনাটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট তুলে ধরা হল।

রচনাঃ কৃষি কাজে বিজ্ঞান

ভূমিকাঃ
কৃষি অর্থনীতি উন্নয়নের বিজ্ঞান অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ কৃষি উদ্বৃত্তের ক্রমাগত স্তর প্রযুক্তিগত এবং বাণিজ্যিক বৃদ্ধির অন্যতম উৎস। কৃষিকাজে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি দিন দিন মজবুত হচ্ছে। বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এই অগ্রগতিকে টেকসই করতে প্রয়োজন কৃষি সংক্রান্ত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারকে সহজলভ্য করা। কৃষি বিজ্ঞান হল কৃষিক্ষেত্রের সাথে জড়িত অনুশীলনের অধ্যয়ন।  কৃষি বিজ্ঞান এবং কৃষি, একে অপরের সাথে সম্পর্কিত হলেও, মূলত একে অপরের থেকে খুব আলাদা। কৃষি হল মানুষের ব্যবহারের জন্য গাছপালা, ফল ও সবজি উৎপাদনের শিল্প। অন্যদিকে কৃষি বিজ্ঞান সেচ ব্যবস্থাপনা, কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদির মতো উৎপাদন কৌশলগুলিতে গবেষণা, উন্নতি এবং উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে। এতে কৃষি পণ্যের গুণমান এবং পরিমাণের উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

কৃষি বিজ্ঞানঃ
কৃষি বিজ্ঞান কৃষি কাজের প্রাথমিক পণ্যগুলিকে সমাপ্ত, ব্যবহার-প্রস্তুত পণ্যে রূপান্তর করার সাথে সম্পর্কিত। কৃষি বিজ্ঞান ফসলের উৎপাদনশীলতাকে বাধাগ্রস্তকারী প্রতিকূল কারণগুলির প্রতিরোধ এবং সংশোধনেও জড়িত। স্থানীয় এলাকার সাথে এর দৃঢ় সম্পর্কের কারণে এটিকে স্থানীয় বিজ্ঞান হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।  এটি প্রায়শই ইকো-অঞ্চলের সাথে সম্পর্কিত একটি বিজ্ঞান হিসাবে বিবেচিত হয়। কারণ এটি মূলত একটি নির্দিষ্ট এলাকার জলবায়ু এবং মাটির বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে। এই কারণগুলি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। অনেক লোকের অভিমত যে কৃষি বিজ্ঞান স্থানীয় আবহাওয়া এবং স্থানীয় মাটির বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে, তাই নির্দিষ্ট ফসল স্থানীয়ভাবে অধ্যয়ন করা প্রয়োজন।

কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নঃ
বাংলাদেশ মূলত কৃষি খাতের উপর নির্ভরশীল একটি দেশ। এছাড়াও কৃষি এদেশের মানুষের শুধু জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম নয়, বরং তাদের জীবন যাপনের একটি উপায়। তাছাড়া গোটা জাতি খাদ্যের জন্য কৃষির ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় সরকার কৃষি খাতের উন্নয়নে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। হাজার হাজার বছর ধরে আমরা কৃষি চর্চা করছি কিন্তু তবুও এটি দীর্ঘকাল ধরে অনুন্নত ছিল। স্বাধীনতার পর আমরা আমাদের খাদ্য চাহিদা মেটাতে অন্যান্য দেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানি শুরু করি। কিন্তু সবুজ বিপ্লবের পর আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠি এবং আমাদের উদ্বৃত্ত অন্যান্য দেশে রপ্তানি শুরু করি।

আগে আমরা খাদ্যশস্য চাষের জন্য বর্ষার ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করতাম কিন্তু এখন আমরা বাঁধ, খাল, নলকূপ, পাম্প সেট নির্মাণ করেছি। আমাদের কাছে এখন সার, কীটনাশক এবং বীজের আরও ভাল বৈচিত্র্য রয়েছে, যা আমাদের পুরানো সময়ে আমরা যা উৎপাদন করেছি তার তুলনায় আরও বেশি খাদ্য বাড়াতে সাহায্য করে। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে উন্নত যন্ত্রপাতি, উন্নত সেচ সুবিধা এবং কৃষির বিশেষ জ্ঞানের উন্নতি হতে থাকে। অধিকন্তু আমাদের কৃষি খাত অনেক দেশের তুলনায় শক্তিশালী হয়েছে এবং আমরা অনেক খাদ্যশস্যের বৃহত্তম রপ্তানিকারক।

কৃষি কাজে প্রযুক্তির ব্যবহারঃ
কৃষি বিজ্ঞান, খাদ্য এবং ফাইবার উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াকরণের সাথে সম্পর্কিত বিজ্ঞান।  এর মধ্যে রয়েছে মাটি চাষের প্রযুক্তি, শস্য চাষ ও ফসল কাটা, পশু উৎপাদন, এবং মানুষের ব্যবহার ও ব্যবহারের জন্য উদ্ভিদ ও প্রাণীজ পণ্যের প্রক্রিয়াকরণ। প্রযুক্তি এবং আইওটি অনেক দিক থেকে কৃষিকে রূপান্তরিত করার সম্ভাবনা রাখে। যথা- আইটি  কৃষিকে উন্নত করতে পারে এমন পাঁচটি উপায় রয়েছে: ডেটা, টন ডেটা, স্মার্ট এগ্রিকালচার সেন্সর দ্বারা সংগৃহীত, যেমন  আবহাওয়া পরিস্থিতি, মাটির গুণমান, ফসলের বৃদ্ধির অগ্রগতি বা গবাদি পশুর স্বাস্থ্য।

GMOS হল প্রযুক্তির ব্যবহার। যখন একটি নির্দিষ্ট উদ্ভিদ বা প্রাণী থাকে, ব্যবহারকারীর প্রয়োজনে জেনেটিকালি পরিবর্তিত হয়। জেনেটিকালি পরিবর্তিত খাবার সাধারণত বেশি উপাদান এবং বড় আকার দিয়ে তৈরি করা হয়। GMOS-এর উদাহরণ হল ভুট্টা, সয়া, ক্যানোলা এবং সুগার বিট।

বৈজ্ঞানিক জ্ঞান জিএমওএস ব্যবহার করে কৃষিতে অনুশীলনের বিকাশকে প্রভাবিত করেছে। GMOS হল প্রযুক্তির ব্যবহার যখন একটি নির্দিষ্ট উদ্ভিদ বা প্রাণী থাকে, ব্যবহারকারীর প্রয়োজনে জেনেটিকালি পরিবর্তিত হয়। ভুট্টার মতো খাবার এখন জেনেটিক্যালি পরিবর্তিত হয়ে বড় হতে পারে, বেশি প্রোটিন থাকে।

কৃষি কাজে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা:
একবিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে বিশ্ব ও বিশ্ববাসীর কোনাে কাজেই বিজ্ঞানের অনুপস্থিতি নেই। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা আজ সর্বত্র অব্যাহত। বিজ্ঞানের বদৌলতে অন্ধকার ধরণী আজ আলোকিত। জগৎ ও জীবনের কর্মপ্রবাহের প্রতিটি স্তরে বিজ্ঞান তার অবদানের স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। কৃষিবিজ্ঞানীরা বর্তমান শতাব্দীতে কৃষিকাজে বিজ্ঞানের ব্যবহারকে সাফল্যজনক পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। অল্প জমিতে অধিক ফসল উৎপাদনের প্রয়াসে নিবিড় চাষের জন্যে যান্ত্রিক সরঞ্জামের আবিষ্কার কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লবের সূচনা করেছে। ট্রাক্টর ও পাওয়ার-টিলারের সঙ্গে আরও নানা ধরনের যান্ত্রিক সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির আবিষ্কার মানুষ ও পশুশ্রমকে মুক্তি দিয়েছে।

গােবর সার, কম্পােস্ট সার ও সবুজ সারের স্থলে রাসায়নিক সার; যেমন- ইউরিয়া, টিএসপি, এসএসপি ইত্যাদির আবিষ্কারের ফলে একর প্রতি উৎপাদন দ্বিগুণের ওপরে চলে গেছে। একই সঙ্গে উল্লেখ করা যায়, বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত্রে উচ্চ ফলনশীল বীজ আবিষ্কারের কথা। ফিলিপাইনের আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্রে ইরি ধান আবিস্কৃত হয়। ফলনশীল ধান আবিষ্কার করে এদেশের কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করে। কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রয়ােগজনিত সাফল্য শুধু ধান ও গমের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। বিজ্ঞানের এ সাফল্য প্রায় সকল ফসলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রয়ােগের মাধ্যমে পােকা-মাকড় দমন ও নির্মূল করার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়ােগ ঘটেছে অন্য সকল ক্ষেত্রের মতােই। নানা ধরনের পােকার আক্রমণ থেকে শস্যকে রক্ষার জন্যে ইনসেকটিসাইড বা পােকা দমনকারী রাসায়নিক দ্রব্য আবিস্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে এড্রিন, ডায়াজিন, ক্লোর ছাড়াও রয়েছে অনেক পােকা ধ্বংসকারী ওষুধ।

উন্নত দেশসমূহের মতাে আমরাও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অধিক উৎপাদন করে আমাদের খাদ্য সমস্যার সমাধান করতে পারি। বলতে গেলে মানুষের মৌলিক চাহিদার সবটাই যােগান দেয় কৃষি। তাই কৃষিকে অবহেলা করে বেঁচে থাকা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি দেশ ও জাতির সামগ্রিক কল্যাণসাধনও অসম্ভব। আশার কথা, এদিকে লক্ষ রেখেই সরকার কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে সচেতন হয়ে উঠছে। কৃষিব্যবস্থার সামগ্রিক কল্যাণের স্বার্থে এদেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

বাংলাদেশে কৃষির ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবঃ
আমরা যে খাবার খাই তা কৃষিকাজ এবং বাংলাদেশের কৃষকদের উপহার। তারা তাদের ঘাম ঝরিয়ে আমাদের এই খাবার সরবরাহ করে। এছাড়া কৃষি খাত দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) এবং জাতীয় আয়ের অন্যতম প্রধান অবদানকারী। কৃষি কাজের জন্য একটি বৃহৎ শ্রমশক্তি এবং মোট নিযুক্ত লোকের প্রায় ৮০% কর্মচারী প্রয়োজন। তাছাড়া আমাদের মোট রপ্তানির প্রায় ৭০% কৃষি পণ্য। আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য হল চা, তুলা, বস্ত্র, তামাক, চিনি, পাটজাত দ্রব্য, মসলা, চাল এবং অন্যান্য অনেক পণ্য।

কৃষি কাজ অর্থনীতি ও জনগণের জন্য খুবই উপকারী হলেও এর কিছু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। এই প্রভাবগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। বন উজাড় হল কৃষির প্রথম নেতিবাচক প্রভাব। কারণ অনেক বন কেটে কৃষি জমিতে পরিণত করা হয়েছে। এছাড়াও, সেচের জন্য নদীর পানি ব্যবহারের ফলে অনেক ছোট নদী ও পুকুর শুকিয়ে যায় যা প্রাকৃতিক আবাসস্থলকে ব্যাহত করে। অধিকন্তু কৃষি কাজে ব্যবহার করা বেশিরভাগ রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক জমির পাশাপাশি কাছাকাছি জলাশয়গুলিকে দূষিত করে।  শেষ পর্যন্ত এটি মাটির উপরের ক্ষয় এবং ভূগর্ভস্থ পানির দূষণের দিকে পরিচালিত করে। কৃষি সমাজকে অনেক কিছু দিয়েছে। তবে এর নিজস্ব সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে যা আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। তদুপরি সরকার কৃষির প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে সর্বাত্মক সহায়তা করছে। তবুও কৃষির নেতিবাচক প্রভাবগুলির জন্য কিছু করা দরকার।

আমাদের দেশে কৃষি ও কৃষকঃ
বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য যে কোনো পরিকল্পনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল একজন ক্ষুধার্ত, অসন্তুষ্ট মানুষকে সুখী, সুস্বাস্থ্যের মানুষে পরিণত করা।  খাদ্য আমদানির মাধ্যমে বা ঘরে উৎপাদনের মাধ্যমে পাওয়া যেতে পারে।

বাংলাদেশকে তার নিজের খাদ্য তৈরি করতে হবে। তাই কৃষি উন্নতির জন্য পরিশ্রম করে আমাদের আরও খাদ্য বাড়াতে হবে। বৈজ্ঞানিকভাবে অন্যান্য পদ্ধতি রয়েছে। রসায়নবিদ, জীববিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এমনকি পদার্থবিদদেরও বিজ্ঞানকে বৃহৎ আকারের উৎপাদনে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে একটি মহান ভূমিকা পালন করতে হবে এবং তাদের অবশ্যই পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত সুযোগ দিতে হবে।
মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি, প্রতি একরে ফসলের উচ্চ ফলন নিশ্চিত করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে।  আগের দিনে কৃষকরা গোবরের মতো সহজলভ্য সারের উপর নির্ভর করত। তাকে অবশ্যই বুঝতে শেখানো উচিত যে রাসায়নিক সার জমির উৎপাদনশীলতাকে অনেকাংশে উন্নত করতে পারে। জৈব ও অজৈব সারের অনুপাত মাটির প্রকৃতির উপর নির্ভর করে।

আমাদের দেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। দেশের শতকরা ৮০ ভাগ লােকই কৃষিজীবী। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, উন্নত দেশগুলােতে কৃষিকাজের সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠলেও আমাদের দেশে এ ব্যাপারে তেমন কোনাে অগ্রগতি সাধিত হয়নি। এখনও প্রাচীন আমলের মতাে কৃষকেরা কৃষিকাজের জন্যে জীর্ণ-শীর্ণ গরু আর লাঙল ব্যবহার করছে। কৃষকদের অবস্থাও শােচনীয়। কৃষি কাজের জন্যে তারা প্রয়ােজনীয় মূলধন যােগাতে পারে না। তারা নিরক্ষর তাই উন্নত ও আধুনিক কৃষিব্যবস্থা প্রবর্তনের উপযােগী জ্ঞান ও অর্থ তাদের নেই। ফলে আমাদের কৃষিব্যবস্থা ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে সংগতি রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিবর্তনের সিঁড়ি বেয়ে গােটা বিশ্ব আজ অপ্রতিহত গতিতে ধেয়ে চলেছে উন্নয়নের স্বর্ণ-শিখরের পানে। দিনবদলের পালায় বাংলার কৃষক আর কৃষি আজও সেই তিমিরেই ঘুরপাক খাচ্ছে। যুগ-তরঙ্গ তাদের মাঝে কোনাে আলােড়ন সৃষ্টি করতে পারেনি। তাই আজও বাংলার কৃষক প্রকৃতির খেয়াল-খুশির খেলনা হয়ে ধুকে ধুকে মরছে।। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হতভাগ্য কৃষকদের ইতিবৃত্তে বলেছেন, “ওই যে দাড়ায় নত শির মূক সবে, ম্লানমুখে লেখা শুধু শত শতাব্দীর বেদনার করুণ কাহিনি, স্কন্ধে যত চাপ তার বহি চলে মন্থরগতি যতক্ষণ থাকে প্রাণ তার।’

উন্নত বিশ্বে কৃষিঃ
উন্নত দেশগুলাের কৃষি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিজ্ঞাননির্ভর। জমিতে বীজ বপন থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তােলা পর্যন্ত সমস্ত কাজেই রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার। বিভিন্ন ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন মােয়ার (শস্য ছেদনকারী যন্ত্র), রপার (ফসল কাটার যন্ত্র), বাইন্ডার (ফসল বাঁধার যন্ত্র), থ্রেশিং মেশিন (মাড়াই যন্ত্র), ফিড গ্রাইন্ডার (পেষক যন্ত্র), ম্যানিউর স্পেডার (সার বিস্তারণ যন্ত্র), মিল্কার (বৈদ্যুতিক দহন যন্ত্র) ইত্যাদি উন্নত দেশগুলাের কৃষিক্ষেত্রে অত্যন্ত জনপ্রিয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া প্রভৃতি দেশের খামারে ট্রাক্টরের মাধ্যমে একদিনে ১০০ একর পর্যন্ত জমি চাষ করা সম্ভব হয়। একই ট্রাক্টর আবার একসঙ্গে ফসল কাটার যন্ত্র হিসেবেও কাজ করে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চীন, জাপান, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশও কৃষি ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর করে গড়ে তুলেছে।

উপসংহারঃ
কৃষি ছাড়া মানব সভ্যতা কল্পনা করা যায় না। কৃষিকাজে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি দিন দিন মজবুত হচ্ছে। বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষির উন্নতির উপরেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই কৃষি-বিজ্ঞান ও কৃষি-প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণার কোনাে বিকল্প নেই। এটা অত্যন্ত আশার কথা যে, বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা ইতিমধ্যে বহু নতুন নতুন উচ্চ ফলনশীল ফসল উদ্ভাবন করেছে, বহু কৃষিবান্ধব প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছে।

আরও পড়ুন-

১। চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান / চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান

২। দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান

৩। রচনাঃ স্বদেশপ্রেম (২১ পয়েন্ট)

৪। রচনা: আমার প্রিয় শিক্ষক

৫। রচনা: সমাজ গঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা

৬। রচনা: শ্রমের মর্যাদা

৭। রচনাঃ আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ

৮। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা (২০ পয়েন্ট)