in

ভাবসম্প্রসারণঃ যেমন কর্ম তেমন ফল

ভাবসম্প্রসারণঃ যেমন কর্ম তেমন ফল
ভাবসম্প্রসারণঃ যেমন কর্ম তেমন ফল

ইংরেজিতে একটি প্রবাদ বাক্য আছে, “As you sow, so shall you reap”। যার বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় যেমন কর্ম তেমন ফল। শুনতে খুবই সহজ মনে হলেও এই একটি লাইনের মর্মার্থ অনেক গভীর। নিম্নে ‘যেমন কর্ম তেমন ফল’ ভাবসম্প্রসারণটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।

যেমন কর্ম তেমন ফল ভাবসম্প্রসারণ 

মূলভাবঃ মানুষ তার কর্মের দ্বারা যে রকম বীজ রোপন করবে, ভবিষ্যতে তার সেই কর্মের উপর ভিত্তি করে ঠিক সে রকমই ফল লাভ করবে। এর কোন বত্যয় ঘটবে না। এজন্য দৃঢ় সংকল্প এবং প্রবল আগ্রহ সহকারে যে কর্ম সম্পাদন করা হয়, তার ফল হয় সুমিষ্ট। অপরপক্ষে দুষ্কর্মের ফল সব সময়ই মন্দ হয়।

সম্প্রসারিত ভাবঃ মানুষের জীবনের এক প্রাচীন চিরাচরিত ধারণা হলো মানুষের নিয়তি নির্ধারণ হয় তার ভাগ্যের মাধ্যমে। এই ক্ষেত্রে কারো যদি ভাগ্য ভালো থাকে, তাহলে তার নিয়তিতে দেখা মিলে সুখ ও সমৃদ্ধি। আর অপরপক্ষে কারো যদি ভাগ্য খারাপ থাকে সে ক্ষেত্রে তার জীবনে লাভ হয় অসীম দুর্ভোগ, দুঃখ এবং দুর্দশা। মানুষ তার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যের জন্য অদৃষ্ট বা ভাগ্যকেই সব সময়ই দায়ী করে এসেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মানবজীবনে এই কথার কোন ভিত্তি নেই। মানুষ অতীতে বা বর্তমানে যে ধরনের কর্ম করবে, ভবিষ্যতে ঠিক সেই রকমই ফল লাভ করবে। কেবল এবং কেবলমাত্র কোন মানুষের কর্ম দ্বারাই তার ফল নির্ধারণ করা সম্ভব। কর্মের উপরই কর্মফল সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল। আপাতদৃষ্টিতে কোন মানুষের উন্নতি এবং সুখকে যদি কেউ ভাগ্যের চাকা ঘোড়ার ফল হিসেবে ধরে নেয়, তাহলে তা হবে সেই ব্যক্তির চরম মূর্খতার পরিচয়।

প্রকৃতপক্ষে সফল ব্যক্তির সুখ-সমৃদ্ধির পেছনে থাকে তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়। সে তার কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায় এর সাহায্যে তার জীবনের অন্ধকারাচ্ছন্ন পথকে আলোর পথে ধাবিত করতে পেরেছে। অলস এবং কর্মবিমুখ ব্যক্তিরা কখনোই তাদের জীবনের বাধা বিপত্তি এবং সমস্যা অতিক্রম করতে পারে না। অলস এবং কর্মবিমুখ ব্যক্তিরাই ভাগ্যের উপর নির্ভর করে কোন কাজ সম্পাদনের প্রচেষ্টা থেকে সরে আসে। কোন কাজে একবার অসফলতা লাভ করলেই তারা দ্বিতীয়বার সেই কাজ সম্পূর্ণভাবে সম্পাদনের চেষ্টা থেকে নিজেকে বিরত রাখে। অথচ চিন্তা করলে দেখা যায় সৌভাগ্য বা উন্নতি কেউ রাতারাতি লাভ করে নি, প্রত্যেক উন্নতি এবং সমৃদ্ধি লাভের পেছনে আছে অক্লান্ত পরিশ্রম। আমাদের এই পার্থিব সংসার নানা সংকট এবং দুঃখে পরিপূর্ণ। কেবলমাত্র একনিষ্ঠ সাধনা এবং পরিশ্রমী হওয়ার মাধ্যমেই এসব সংকট এবং দুঃখ মোকাবেলা করে জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়া সম্ভব।

পৃথিবীতে যারা সফলতার চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছেছেন, তারা নিঃসন্দেহে ছিলেন পরিশ্রমী এবং ধৈর্যশীল। অধ্যবসায় মানুষকে আত্মপ্রত্যয়ী করে তোলে। ফলে সামান্য দুঃখ-দুর্দশায় তারা তাদের মনোবল ভেঙ্গে যায় না। সামান্য প্রতিকূলতায় কর্ম সম্পাদনের পথ থেকে তারা সরে আসে না বরং একবার অসফলতা লাভ করলে দ্বিতীয়বার দ্বিগুণ উদ্দীপনার সাথে সেই কার্য সম্পাদনের প্রচেষ্টায় লেগে থাকে। আর পরিশেষে সেই কাজে সফলতা লাভ করে তার জীবন হয়ে উঠে আনন্দময়, মর্যাদাসম্পন্ন এবং সফল। একইভাবে দেখা যায়, যে জাতি যত বেশি অধ্যবসায়ী এবং পরিশ্রমী সেই জাতি তত উন্নত। এর অন্যতম উদাহরণ হিসেবে আমরা ধরে নিতে পারি এশিয়ার দেশ চীন এবং জাপান। চীন এবং জাপানের প্রতিটি মানুষ প্রচন্ড রকমের পরিশ্রমী এবং অধ্যবসায়ী। যার ফলস্বরূপ চীন এবং জাপান পৃথিবীর অন্যতম দুটি উন্নত দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়ে চীন-জাপান অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক এগিয়ে আছে। বর্তমান বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তি বা নিত্যনতুন আবিষ্কারের দিক থেকে এগিয়ে থাকা অন্যতম দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় চীন এবং জাপানকে। অবিরাম প্রচেষ্টা দ্বারাই যে কোন জাতি উন্নত জাতিতে পরিণত হতে পারে।

মানুষের জীবন অনেক ক্ষুদ্র পরিসরের। ক্ষণস্থায়ী এই জীবন আমরা অমর এবং মহিমান্বিত করে তুলতে পারি আমাদের কর্মের মাধ্যমে। উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক অতি প্রভাব-প্রতিপত্তি সম্পন্ন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তার জন্ম পরিচয় তাকে বিশ্ব দরবারে সকলের কাছে পূজনীয় এবং বরণীয় করে তুলে নি। তিনি তাঁর কর্ম তথা তাঁর অনবদ্য সৃষ্টির মাধ্যমেই সকলের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। বাস্তবিকপক্ষে সৃষ্টিকর্তার অপরূপ সৃষ্টি মানুষের মাঝে কোন ভেদাভেদ নেই। মানুষ যে পেশাই বা যে কাজই করুক না কেন তা কখনোই সমাজের পক্ষে গুরুত্বহীন নয়। প্রতিটি কাজের পেছনে রয়েছে নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্য। মানুষ যেখানেই জন্ম নিক না কেন বা যে কার্য সম্পাদন করুন না কেন সে সততা এবং নিষ্ঠার সহিত তার কার্যসম্পাদন করছে কিনা সেটাই মূল বিবেচ্য বিষয়। এক্ষেত্রে মানুষ যদি অক্লান্ত পরিশ্রম এবং নিষ্ঠার সহিত তার কার্য সম্পাদনের চেষ্টায় লেগে থাকে, তাহলে কোন না কোন সময়ে তার কাজে সফলতা লাভ করবেই। মানুষের কর্মের ওপর নির্ভর করে তার কর্মফল। তাই বলা হয়ে থাকে যেমন কর্ম তেমন ফল। কোন ব্যক্তির জীবনে সফলতা বা অসফলতা লাভের জন্য সে ব্যক্তি নিজেই দায়ী। এক্ষেত্রে কোনভাবেই ভাগ্যকে দোষারোপ করা উচিত নয়।

মন্তব্যঃ জীবন যুদ্ধে জয়ী সৈনিক হতে হলে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রমী এবং ধৈর্যশীল হতে হবে। পরিশ্রমী ব্যক্তি তার কর্ম সাধনার মাধ্যমে জীবন সংগ্রামে জয়ী হয়ে সৌভাগ্যকে বরণ করতে পারে। অপরপক্ষে অলস এবং কর্মবিমুখ ব্যক্তি তার নিজের শ্রমবিমুখতার কারণে জীবনে উন্নতির ধারা থেকে ছিটকে পেছনে পড়ে যায়।

গুরুত্বপূর্ণ সকল ভাবসম্প্রসারণ-

১। ভাবসম্প্রসারণঃ পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি

২। ভাবসম্প্রসারণঃ একতাই বল

৩। ভাবসম্প্রসারণ: কীর্তিমানের মৃত্যু নেই / মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়

৪। ভাবসম্প্রসারণঃ ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ

৫। ভাবসম্প্রসারণঃ দুর্নীতি জাতীয় জীবনে অভিশাপস্বরূপ

৬। ভাবসম্প্রসারণঃ দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য

৭। পরের অনিষ্ট চিন্তা করে যেই জন

৮। ভাবসম্প্রসারণ: সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই

৯। ভাবসম্প্রসারণঃ সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত

১০। ভাবসম্প্রসারনঃ আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে..

১১। ভাবসম্প্রসারণঃ অর্থই অনর্থের মূল

১২। ভাবসম্প্রসারণঃ পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না।

১৩। ভাবসম্প্রসারণঃ গ্রন্থগত বিদ্যা পরহস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন

১৪। ভাবসম্প্রসারণঃ লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু

১৫। ভাবসম্প্রসারণঃ ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল

১৬। ভাবসম্প্রসারণঃ এ জগতে হায়, সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি। রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।

১৭। ভাবসম্প্রসারণঃ যে সহে সে রহে

১৮। ভাবসম্প্রসারণঃ গতিই জীবন, স্থিতিতে মৃত্যু

১৯। ভাবসম্প্রসারণঃ একবার না পারিলে দেখ শতবার