ভূগোলের শাখা ও পরিধি এবং ভূগোলের শাখা সমূহ নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো।
ভূগোলের পরিধি
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ, নতুন নতুন আবিষ্কার, উদ্ভাবন, চিন্তা-ধারণার বিকাশ, সমাজের মূল্যবোধের পরিবর্তন ভূগোলের পরিধিকে অনেক বিস্তৃত করেছে। এখন নানান রকম বিষয় যেমন ভূমিরূপবিদ্যা, আবহাওয়াবিদ্যা, সমুদ্রবিদ্যা, মৃত্তিকাবিদ্যা, প্রাণীবিদ্যা, সমাজবিদ্যা, অর্থনীতি, রাজনীতি ইত্যাদি ভূগোলের বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
ভূগোলের শাখা
ভূগোলের প্রধান শাখা মূলত দুটি। প্রাকৃতিক ভূগোল ও মানব ভূগোল। আবার প্রাকৃতিক ও মানব ভূগোলের আলাদা আলাদা শাখা রয়েছে। নিম্নে প্রাকৃতিক ভূগোল ও মানব ভূগোলের শাখাগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
প্রাকৃতিক ভূগোল
ভূগোলের যে শাখায় ভৌত পরিবেশ ও এর মধ্যে কার্যরত বিভিন্ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত থাকে তাকে প্রাকৃতিক ভূগোল বলে। পৃথিবীর ভূমিরূপ, এর গঠন প্রক্রিয়া, বায়ুমন্ডল, বারিমন্ডল, জলবায়ু ইত্যাদি প্রাকৃতিক ভূগোলের আলচ্য বিষয়। নিম্নে বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক ভূগোলের শাখা তুলে ধরা হলো।
১। ভূমিরূপবিদ্যা (Geomorphology): ভূমিরূপবিদগণ একটি গ্রহের নগ্নীভবন এবং ক্ষয়ীভবনের ভূমিরূপের পরিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করে।
২। জলবায়ুবিদ্যা (Climatology): জলবায়ুবিদ্যা পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়ার ধরন এবং এর প্রেক্ষিতে পৃথিবীর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করে।
৩। জীবভূগোল (Biogeography): পৃথিবীপৃষ্ঠের প্রাণীজগৎ এবং উদ্ভিদের বণ্টন নিয়ে জীবভূগোল আলোচনা করে।
৪। মৃত্তিকা ভূগোল (Soil geography): মৃত্তিকা ভূগোলবিদগণ আশ্মমন্ডলের উপরিভাগের মৃত্তিকা এবং এর বণ্টন ও বিন্যাস সম্পর্কে আলোচনা করে।
৫। সমুদ্রবিদ্যা (Oceanography): পৃথিবীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সমুদ্র। বিভিন্ন মহাদেশের মধ্যে সমুদ্রপথে যোগাযোগ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থান, অবনমন, সমুদ্রের পানির রাসায়নিক গুনাগুণ ও লবণাক্ততা নির্ধারণ, সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা সমুদ্রবিদ্যার আলোচ্য বিষয়।
মানব ভূগোল
পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন পরিবেশে মানুষ কীভাবে বসবাস করছে, কীভাবে জীবনযাত্রা নির্বাহ করছে, কেন এভাবে জীবনযাত্রা নির্বাহ করছে তার কার্যকরণ অনুসন্ধান মানব ভূগোলের আলোচ্য বিষয়। নিম্নে বেশ কয়েকটি মানব ভূগোলের শাখা তুলে ধরা হলো।
১। অর্থনৈতিক ভূগোল (Economic geography): প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য মানুষ যেসব অর্থনৈতিক কাজ করে তা অর্থনৈতিক ভূগোলের আলোচ্য বিষয়। এসব কাজ হলো কৃষিকাজ, পশুপালন, বনজ সম্পদ, খনিজ সম্পদ সংগ্রহ, ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা ইত্যাদি।
২। জনসংখ্যা ভূগোল (Population geography): জনসংখ্যা, জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি-প্রকৃতি, তার কার্যকরণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের উপর এর প্রভাব জনসংখ্যা ভূগোলের আলোচ্য বিষয়।
৩। আঞ্চলিক ভূগোল (Regional geography): অঞ্চলভেদে পৃথিবীর ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, উদ্ভিদ, জীবজন্তু, মানুষ ও মানুষের জীবনধারণ প্রণালি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের হয়ে থাকে। আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ভৌগলিক বিষয়বস্তু অনুশীলন করা আঞ্চলিক ভূগোলের প্রধান বিষয়।
৪। রাজনৈতিক ভূগোল (Political geography): রাজনৈতিক বিবর্তন, রাজনৈতিক বিভাগ ও পরিসীমা এবং বিভাগের মধ্যস্থিত ভৌগলিক বিষয় রাজনৈতিক ভূগোলের প্রধান বিষয়।
৫। সংখ্যাতাত্ত্বিক ভূগোল (Quantitative geography): ভূগোলের এই শাখায় সংখ্যাতাত্ত্বিক কৌশল এবং মডেল ব্যবহার করে প্রমাণার্থ পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া সংখ্যাতাত্ত্বিক পদ্ধতি ভূগোলের অন্যান্য শাখায় ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কিছু ভূগোলবিদ শুধু সংখ্যাতাত্ত্বিক পদ্ধতিতে বিশেষজ্ঞ হন।
৬। পরিবহণ ভূগোল (Transport geography): পরিবহন ভূগোলবিদরা সরকারি, বেসরকারি, যাতায়াত ব্যবস্থা এবং মানুষ ও পণ্যের একস্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তর সম্পর্কে আলোচনা করে।
৭। নগর ভূগোল (Urban geography): ভূগোলের এই শাখায় নগরের উৎপত্তি ও বিকাশ, নগর ও শহরের শ্রেণীবিভাগ, নগর পরিবেশ, নগরের কেন্দ্রীয় এলাকা, নগরীর বস্তি ইত্যাদি বিষয় চর্চা করা হয়।
৮। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা (Disaster management): দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস, দুর্যোগ থেকে পরিবেশ ও সমুদ্রকে রক্ষার কৌশল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার আলোচ্য বিষয়।
ভূগোলকে যত ভাগেই ভাগ করা হোক না কেন, সকল ভূগোলের সঙ্গে পরিবেশ অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত। বর্তমানে ভূগোল ও পরিবেশ সম্পৃক্ত করে পড়ানো হয়। প্রাকৃতিক ও সামাজিক উভয় পরিবেশই ভূগোল বিজ্ঞানে সমান গুরুত্ব বহন করে।
আরও পড়ুন- ভূগোল কি? ভূগোল কাকে বলে? ভূগোল শব্দের অর্থ কি?
আরও পড়ুন- পরিবেশ কাকে বলে? পরিবেশের উপাদানগুলো কি কি? পরিবেশের প্রকারভেদ
আরও পড়ুন- ভূগোল ও পরিবেশ পাঠের গুরুত্ব