আইসিসি ইভেন্টে ভারত-পাকিস্তান দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর দ্বৈরথ মানে যেখানে ভারতের একপেশে জয়ের কীর্তিগাঁথা, ২০২১ টি-২০ বিশ্বকাপে ভারতকে ১০ উইকেটে হারিয়ে সেটিকে একেবারেই উড়িয়েই দিয়েছে পাকিস্তান।
বাবর আজম আর মোহাম্মদ রিজওয়ানের অসামান্য ব্যাটিং আলাদাভাবে আলোচনায় এলেও ম্যাচের সবটা জুড়েই পাকিস্তানের আধিপত্য ছিলো স্পষ্ট। বিশ্বকাপের দুই ফরম্যাট মিলিয়ে বারো ম্যাচ আর প্রায় তিন দশকের অপেক্ষা শেষে ভারতের বিপক্ষে এটিই ছিলো পাকিস্তানের প্রথম জয়। সেই ইমরান খান, জাঁভেদ মিয়াদাদের ১৯৯২ বিশ্বকাপ থেকে শুরু। মাঝে ওয়াসিম-ওয়াকার, সাঈদ আনোয়ার, ইউসুফ-ইউনুস ঘুরে মিসবাহ, শহিদ আফ্রিদি, শোয়েব মালিকদের যুগ পার হলো। সেই অধরা জয়টা আর আসেইনি।
সেই সুবাদে ক্রিকেট মহলে রীতিমতো কিংবদন্তির আসনেই জায়গা পাচ্ছেন পাকিস্তান দলের এই নবীন সদস্যরা। তবে যাদের হাত ধরে এতবড় সাফল্য তারা কি বলছেন এই দাপুটে জয়কে ঘিরে? ম্যান অফ দ্য ম্যাচ শাহিন আফ্রিদি বা অধিনায়ক বাবর আজমের বক্তব্য সরাসরি মাঠ থেকে পাওয়া গেলেও দলের বাকিদের কথা উঠে এসেছে টিম বাসে হাসান আলির ক্যামেরায়।
হাসান আলির ভিডিওতে দেখা মিলেছিল কয়েক প্রজন্মের খেলোয়াড়দের। কোচ হিসেবে থাকা সাকলায়েন মুশতাক নিজেও খেলেছেন ভারতের বিপক্ষে। ৩টি বিশ্বকাপে ভারতের কাছে নাস্তানাবুদ হওয়া সাকলায়েন কোচ হিসেবে এনে দিয়েছেন এই দারুণ জয়। কম কথার সাকলায়েন ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে কেবল একটি শব্দই বলেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ্!’

পাকিস্তান দলের সবচেয়ে সিনিয়ার দুই খেলোয়াড় শোয়েব মালিক আর প্রফেসর খ্যাত মোহাম্মদ হাফিজ। ভারতের কাছে হার বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট সম্ভবত পেয়েছিলেন শোয়েব মালিক। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরে ফাইনালে ওঠা দলটার অধিনায়ক ছিলেন তিনি। জানালেন, নিজের আনন্দের কথা। দলে না থাকলেও সিনিয়ার এই ক্রিকেটারের হাসিমুখই বলে দিচ্ছিলো জয়ের আনন্দ ঠিক কতটা। সেই সঙ্গে দারুণ এই জয়ে দেশের সকল মানুষদের জানালেন আন্তরিক শুভেচ্ছা। চাইলেন দেশের সকলের দোয়া। আর জয়টাকে দেশের মানুশের কাছে উৎসর্গ করেছেন মোহাম্মদ হাফিজ। দিয়েছেন চিরায়ত স্লোগান পাকিস্তান জিন্দাবাদ।

এই ম্যাচে জয়ের নায়ক ছিলেন রিজওয়ান। দারুণ ব্যাটিংয়ে দিশেহারা করেছেন ভারতের বোলিং লাইনআপ। ক্যামেরার সামনে প্রাণখোলা হাসিতে জানালেন, ‘প্রথমবার ভারতের বিপক্ষে পাওয়া এই জয়টা ছিলো দারুণ উপভোগ্য!’ তার ওই এক কথাতেই বোঝা গেল, চাপ নয়, বরং বেশ আনন্দ নিয়েই মাঠে ভারতীয় বোলারদের শাসন করেছিলেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। আর ম্যাচ জয়ের ক্ষেত্রে পুরো দলকেই কৃতিত্ব দিয়েছেন তিনি।
দলের মাঝে সবচেয়ে ভালো স্মৃতি আছে শাদাব খানের। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালেও ছিলেন দলে। গতকালও করেছেন কার্যকরী এক স্পেল। ফিরিয়েছেন ভয়ংকর হতে থাকা ব্যাটার ঋষভ পান্থকে। তার কণ্ঠে পুরোটা সময়েই ছিল সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা।
আগের দিনই পুরো দলকে খাইয়েছিলেন তিনি। পরদিন বল হাতে নায়ক হয়েছেন। ম্যাচসেরার পুরস্কারও তারই হাতে। স্বাভাবিকভাবেই শাহিন আফ্রিদি ছিলেন হাস্যজ্জ্বোল। দেশের মানুষকে অভিনন্দন আর সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা ফুটে উঠেছে তার কণ্ঠেও। জানালেন, সবার চেষ্টাতেই এসেছে দারুণ এই জয়। সেই সঙ্গে ক্যামেরার সামনে জানালেন, পরদিন আবারো পুরো দলের খাবারের দায়িত্ব নিতে রাজি তিনি।
লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট যাকে বলে ঠিক সেটাই ছিলেন বাবর আজম। প্রয়োজনমতো বোলার ব্যবহার করেছেন। মাঠে ছিলেন দারুণ ছন্দে। ব্যাটও কথা বলেছে ঠিকঠাক। ক্যামেরার কাছে তার সরল স্বীকারোক্তি, দলের সবাই নিজেদের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করেছে। আর ফলাফলটা আপনাদেরই সামনে। সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভুল করেননি সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার। টিম বাসের পাকিস্তান খেলোয়াড়দের সবশেষ চিৎকারটা কেবল ভারত বধের আনন্দই না, বরং পুরো টুর্নামেন্ট ছন্দে থাকার বার্তাই যেন দিয়ে গেল ভক্তদের কাছে।