in

বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ক্ষমতা ও কার্যাবলি

বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ক্ষমতা ও কার্যাবলি
বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ক্ষমতা ও কার্যাবলি

বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র্য এবং স্বাধীনতা বাংলাদেশ সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ন্যায় ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সুসংগঠিত ও সুপরিচালিত। বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট সংবিধান বহির্ভূত বিধানকে অবৈধ ঘোষণা করে শাসনতন্ত্রকে সুনির্দিষ্ট গতিপথে পরিচালিত করতে সাহায্য করে। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের মাধ্যমে আইনের অনুশাসনকে অক্ষুণ্ণ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সজীব রাখে।

বিচার ব্যবস্থা একটি দেশের ন্যায়বিচারের মানদণ্ড। বিচার বিভাগ ন্যায় ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দক্ষ শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলে। সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হিসেবে এর ক্ষমতা ও কার্য পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। বিচার বিভাগের ক্ষমতা ও কার্যাবলি নিম্নে আলোচনা করা হলো-

১। ন্যায়বিচার করাঃ বিচার বিভাগের প্রধান কাজ প্রচলিত আইন অনুযায়ী অপরাধের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং আইন অমান্যকারীর বিচার করা। এক্ষেত্রে বিচারকগণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে আইন অনুযায়ী ন্যায়নীতির ভিত্তিতে বিচারকার্য সম্পন্ন করেন। বিচার বিভাগ সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে। দেওয়ানি, ফৌজদারি প্রভৃতি মামলায় সত্য ঘটনা অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিচার বিভাগ অপরাধীকে শাস্তি প্রদান করে।

২। আইন তৈরিঃ সাধারণত আইনের ব্যাখ্যা প্রদান ও প্রয়োগের দায়িত্ব বিচার বিভাগের ওপর ন্যস্ত থাকে। এছাড়া বিচারকগণ নতুন আইন সংযোজন করে থাকেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিচার করতে গিয়ে উপযুক্ত আইন খুজে পাওয়া না গেলে বিচারকগণ ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিচারের রায় প্রদান করেন যা আইন হিসেবে বিবেচিত হয়।

৩। মৌলিক অধিকার সংরক্ষণঃ জনগণের মৌলিক অধিকার সংবিধানে লিপিবদ্ধ থাকে। এ অধিকার সংরক্ষণের দায়িত্ব বহুলাংশে আদালতের ওপরই ন্যস্ত হয়।

৪। আইনের ব্যাখ্যা প্রদান ও প্রয়োগঃ বিচার বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কাজ আইনের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা এবং সেই ব্যাখ্যা অনুযায়ী আইন প্রয়োগ করা। আইন বলতে সাধারণত সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন, শাসনতান্ত্রিক আদেশ বা অর্ডার এবং বিভিন্ন প্রথাগত আইনকে বোঝানো হয়।

৫। সংবিধান রক্ষা করাঃ সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে বিচার বিভাগ কাজ করে। বিচার বিভাগ সংবিধানের চূড়ান্ত ব্যাখ্যা দেয়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থায় বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার গুরুত্ব অপরিসীম; সেখানে সুপ্রিম কোর্ট প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী।

৬। বিরোধের নিষ্পত্তিঃ রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিবর্গের মধ্যে বিভিন্ন সময় বিরোধ দেখা যায়। বিচার বিভাগ এ ধরনের বিরোধের মীমাংসা করে থাকে।

৭। শাসন বিভাগকে পরামর্শ প্রদানঃ শাসন বিভাগের অনুরোধে বিচার বিভাগ প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করে থাকে।

৮। বিবিধ কার্যাবলিঃ বিচার বিভাগ বিদেশি নাগরিকদের নাগরিকত্ব দান, অভিভাবকত্ব নিরূপণ, নাবালকের সম্পত্তির তত্ত্বাবধানসহ বিবিধ কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে।

অধিকার সুরক্ষা ও আইনের শাসন সংরক্ষণে বিচার বিভাগের ভূমিকা

বিচার বিভাগ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নাগরিকদের স্বাধীনতা রক্ষার ব্যবস্থা করে থাকে। ব্যক্তির মৌলিক অধিকার যাতে ক্ষুণ্ণ না হয় সেজন্য বিচার বিভাগ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। অন্যভাবে বলা যেতে পারে, বিচার বিভাগ ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষা করে। নাগরিকদের নাগরিক অধিকার ও সংবিধানে স্বীকৃত মৌলিক অধিকার রক্ষা করার মাধ্যমেই এ বিভাগ ব্যক্তি স্বাধীনতার রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। এ অধিকার সংরক্ষণ করতে গিয়ে বিচার বিভাগকে কয়েকটি বিশেষ হুকুমনামা পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। এ পদ্ধতিগুলো হচ্ছেঃ ১। ম্যানডেমাস রিট, ২। সার্টিওয়ারি রিট, ৩। প্রহিবিশন রিট, ৪। হেবিয়াস কর্পাস রিট, ৫। কোওয়ারেন্টো রিট ইত্যাদি। এ সকল রিট আবেদন বা হুকুমনামাগুলো জারি করার ক্ষমতা বিচার বিভাগের রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে অধিকার বঞ্চিত যে কোন ব্যক্তির আবেদনক্রমে বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে বিচারের জন্য আদালতে হাজির হবার নির্দেশ দিতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ মানবাধিকার সংরক্ষণে স্বপ্রণোদিত হয়ে বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ রিট জারি করেছে, যা জনমহলে বেশ প্রসংশিত হয়েছে।

কিভাবে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয় সেটি নিয়ে আমাদের অনেকেরই আগ্রহ আছে। নিম্নে বিচারপতি কিভাবে নিয়োগ দেয়া হয় সে ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে।

বিচারপতি নিয়োগ ব্যবস্থা

বিচারপতি নিয়োগ পদ্ধতি বাংলাদেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার প্রথম পদক্ষেপ। বিভিন্ন দেশের উচ্চ বিচারালয়ের বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, যথা- জনসাধারণ কর্তৃক নির্বাচন, আইনসভা কর্তৃক নির্বাচন, শাসন বিভাগের প্রধান কর্তৃক নিয়োগ প্রভৃতি। বাংলাদেশ সংবিধানে বিচারকদের নিয়োগ সংক্রান্ত যোগ্যতার শর্তাবলি উল্লেখ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি কতিপয় শর্ত পূরণ সাপেক্ষে প্রধান বিচারপতির পরামর্শক্রমে বিচারকদের নিয়োগ প্রদান করেন। এটাই হলো এদেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। অন্যান্য দুটি পদ্ধতিতে বিভিন্ন জটিলতা থাকায় বর্তমানে অধিকাংশ রাষ্ট্র সাধারণত শাসন বিভাগের প্রধান কর্তৃক বিচারপতি নিয়োগ করে থাকে। প্রধান বিচারপতি ও উচ্চ আদালতের বিচারপরিতদের নিয়োগ সাধারণত রাষ্ট্রপতি দিয়ে থাকেন। তবে অধস্তন আদালতসমূহের বিচারকগণ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।

আরও পড়ুন- সরকারের বিভিন্ন অঙ্গ কি কি?