in

বাংলাদেশ তথ্য অধিকার আইন

বাংলাদেশ তথ্য অধিকার আইন
বাংলাদেশ তথ্য অধিকার আইন

বাংলাদেশ তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো।

বাংলাদেশ তথ্য অধিকার আইন

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে চিন্তা, বিবেক ও বাকস্বাধীনতা নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। তথ্য প্রাপ্তির অধিকার এরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশ সরকার ৫ এপ্রিল ২০০৯ তথ্য অধিকার আইন জারি করে। জনগণের তথ্য প্রাপ্তির অধিকারকে সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এই আইন প্রণীত হয়।

পৃথিবীর বহু রাষ্ট্রেই তথ্য অধিকার আইন রয়েছে। সাধারণভাবে বলা যায়, যেকোন ধরনের রেকর্ডই তথ্য। তথ্য অধিকার আইনে তথ্য বলতে কোন কর্তৃপক্ষের গঠন, কাঠামো ও দাপ্তরিক কর্মকান্ড সংক্রান্ত যে কোন স্মারক, বই, মানচিত্র, চুক্তি, তথ্য-উপাত্ত, লগবহি, আদেশ-বিজ্ঞপ্তি, দলিল, নকল কপি, পত্র, প্রতিবেদন, হিসাব বিবরণী, প্রকল্প প্রস্তাব, আলোকচিত্র, অদিও-ভিডিও, অঙ্কিত চিত্র, ফিল্ম, ইলেকট্রনিক প্রক্রিয়ায় প্রস্তুতকৃত যেকোন ইনস্ট্রুমেন্ট, যান্ত্রিকভাবে পাঠযোগ্য দলিলাদি এবং ভৌত গঠন ও বৈশিষ্ট্য নির্বিশেষে সকল তথ্যবহ বস্তু বা এদের প্রতিলিপিকে বুঝানো হয়েছে। তবে দাপ্তরিক নোটশিট বা নোটশিটের প্রতিলিপি এর অন্তর্ভুক্ত হবে না।

বর্তমান বাংলাদেশ তথ্য অধিকার আইনে “তথ্য কমিশন” নামে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা হয়েছে। তথ্য কমিশনে একজন প্রধান তথ্য কমিশনারসহ দু’জন তথ্য কমিশনার রয়েছেন। আইনে বলা হয়েছে, প্রতেক নাগরিকের কর্তৃপক্ষের নিকট হতে তথ্য পাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং কর্তৃপক্ষও একজন নাগরিককে তথ্য প্রদানে বাধ্য থাকিবে। আইন অনুযায়ী সরকারের কোন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা কার্যালয়ের সাথে সংযুক্ত বা অধীন কোন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর বা দপ্তরের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় কার্যালয়, আঞ্চলিক কার্যালয়, জেলা কার্যালয় বা উপজেলা কার্যালয় তথ্য প্রদান ইউনিট হিসেবে কাজ করবে।

বাংলাদেশ তথ্য অধিকার আইন অনুসারে তথ্য জানার জন্য লিখিতভাবে বা ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে বা ই-মেইলে আবেদন করতে হবে। যারা লেখাপড়া জানে না তাদের ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহযোগিতা প্রদান করবেন এবং আবেদনে টিপসই নিয়ে দাখিল করতে পারবেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তথ্য প্রদান না করলে তথ্য প্রদানের সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পরবর্তী ত্রিশ দিনের মধ্যে অনুরোধকারী আপিল করতে পারবেন। আবেদনকারী আপিল কর্তৃপক্ষের নিকট সুবিচার না পেলে তথ্য কমিশনের নিকট অভিযোগ পাঠাতে পারবেন। এক্ষেত্রে তথ্য কমিশনের কাজ হচ্ছে মূলত অভিযোগ গ্রহণ করা ও সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া। তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তথ্যের সংরক্ষক বা ভাণ্ডার হয়ে উঠতে হবে। তার প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে- আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জনগণকে জানানো, কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তথ্য প্রাপ্তির সুবিধা সৃষ্টি, তথ্যের উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ ও তথ্য সরবরাহে ব্যর্থতা নির্ধারণ।

সুতরাং, তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আমাদের তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। বাংলাদেশ তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে দরিদ্র, প্রান্তিক এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের উন্নয়ন নিশ্চিত করা যাবে। প্রতিটি সংস্থার কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে, সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে ও দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব হবে। জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হওয়ার মাধ্যমে মানবাধিকার ও দারিদ্র্য বিমোচনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সর্বোপরি গণতন্ত্রের ভিত মজবুত হবে।

আরও পড়ুন- রাষ্ট্র কাকে বলে? রাষ্ট্রের উপাদান কয়টি?

আরও পড়ুন- আইন কাকে বলে? আইনের বৈশিষ্ট্য, আইনের উৎস