in ,

বাংলাদেশে জাতিসংঘের ভূমিকা ও কার্যক্রম

বাংলাদেশে জাতিসংঘের ভূমিকা ও কার্যক্রম
বাংলাদেশে জাতিসংঘের ভূমিকা ও কার্যক্রম

বাংলাদেশের অগ্রগতিতে বাংলাদেশে জাতিসংঘ বেশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। নিম্নে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হলো।

বাংলাদেশে জাতিসংঘের ভূমিকা

বাংলাদেশে জাতিসংঘের সবকটি অঙ্গ সংস্থার মিশন আছে। জাতিসংঘের ১৩৬তম সদস্য বাংলাদেশ সবসময়ই জাতিসংঘের বিশেষ নজর পেয়ে থাকে। ১৯৭৪ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা প্রদানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গভীর মনোযোগ আকর্ষণ করেন। জাতিসংঘের সবকটি অঙ্গ সংস্থা শুরু থেকেই বাংলাদেশের আর্থ- সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে। এ বিশ্ব সংস্থাটির চার জন মহাসচিব পাঁচ বার বাংলাদেশ সফর করে গেছেন।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের আর্থিক অবদান কম হলেও বাংলাদেশের সৈন্যরা প্রাণ উৎসর্গ করে শান্তিরক্ষা মিশন পরিচালনায় কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। এছাড়া জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করার পর থেকে বাংলাদেশ এই বিশ্ব সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ১৯৭৯-৮০, এ সময়ের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদে বাংলাদেশের নির্বাচন তার এ ভূমিকার স্বীকৃতি এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের আস্থার স্বাক্ষরবাহী। ১৯৮৪ সাল থেকে জাতিসংঘের কার্যপ্রণালিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার আমাদের জন্য খুবই গৌরবের। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৪১তম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। তাঁর এই সভাপতি নির্বাচিত হওয়া বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের বিশেষ ভূমিকার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। বিবাদের শান্তিপূর্ণ মীমাংসায় জাতিসংঘ ঘোষিত নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন বিষয়ক দীর্ঘকালের সমস্যা নিরসনে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সংঘাতময় পরিস্থিতির সুষ্ঠু সমাধানে সফল হয়েছে।

বাংলাদেশে জাতিসংঘের নিম্নোক্ত অঙ্গ সংস্থাগুলো কাজ করছেঃ

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি বা ইউএনডিপি (UNDP)- বাংলাদেশের আর্থিক ও সামাজিক তথা অর্থাৎ- সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ইউএনডিপি দেশব্যাপী অসংখ্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ইউএনডিপি সহাস্রাব্দ (মিলেনিয়াম) উন্নয়নের ৮টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করেছে। বর্তমানে টেকসই উন্নয়নের ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছে।

জাতিসংঘ শিশু তহবিল বা ইউনিসেফ (UNICEF)- দেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মৌলিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বিশেষত শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য ইউনিসেফ কাজ করছে।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (UNESCO)- বাংলাদেশের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি উন্নয়নের লক্ষ্যে সংস্থাটি কাজ করছে।

জাতিসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা বা এফএও (FAO)- বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা কাজ করছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও (WHO)- স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। যেমন- বাংলাদেশের পোলিও নিবারণের জন্য শিশুদের বিভিন্ন ধরনের ঔষধ খাওয়াচ্ছে এবং টিকা দিচ্ছে।

উদ্বাস্তু বিষয়ক জাতিসংঘ হাইকমিশনারের কার্যালয় বা ইউএনএইচসিআর (UNHCR)- বাংলাদেশ-মিয়ানমার ইস্যুতে এই কার্যালয় মধ্যস্থতা করছে। বিশাল শরণার্থী পালনের খরচেও অবদান রাখছে। তাছাড়া বাংলাদেশে বিহারী জনগোষ্ঠীর আবাসনসহ অন্যান্য ইস্যুতে এই সংস্থা ব্যাপক অবদান রেখেছে।

জাতিসংঘ নারী উন্নয়ন তহবিল বা ইউনিফেম (UNIFEM)- বাংলাদেশে নারীদের উন্নয়নে এ সংস্থাটি বিভিন্না ধরনের কর্মসূচি পালন করছে। নারীদের বিভিন্ন ধরনের অধিকার আদায়ে ভূমিকা রাখছে এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে তাদের সংশ্লিষ্ট করছে। নারীদের নিরাপদ শ্রম অভিবাসনসহ বিভিন্ন ইস্যুতেও এ সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে।

জাতিসংঘের জনসংখ্যা কার্যক্রম তহবিল (UNFPA)- সংস্থাটি বাংলাদেশের জনসংখ্যা পরিস্থিতি উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে জাতিসংঘের কার্যাবলি খুবই প্রশংসনীয়।

আরও পড়ুন- জাতিসংঘ কেন গঠিত হয়েছিল? জাতিসংঘের উদ্দেশ্য কি?