in

উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক

উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক
উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক

অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাত্রা বা স্তর অনুসারে বিশ্বের দেশগুলোকে উন্নত, উন্নয়নশীল এবং উনুন্নত বা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ভাগ করা হয়। এ ভাগ অনুসারে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের অন্তর্ভুক্ত। তবে অব্যাহত উন্নয়ন প্রচেষ্টা ও কার্যক্রম এবং আর্থ- সামাজিক কিছু সূচকের (যেমন- শিক্ষায় জেন্ডার সমতা, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, প্রাথমিক শিক্ষায় ভর্তির হারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি প্রভৃতি) উচ্চমানের কারণে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ভুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

আমরা জানি যে, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ইউরোপের দেশগুলোর অধিকাংশই উন্নত দেশের শ্রেণিভুক্ত। দক্ষিণ এশিয়া এবং সাব- সাহারান আফ্রিকার দেশগুলো প্রধানত নিম্ন আয়ের দেশ। এছাড়া পূর্ব ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলো, ল্যাটিন আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকান দেশগুলো প্রধানত “মধ্য আয়ের দেশ”। এসবের মধ্যে “নিম্ন মধ্য আয়” ও ‘উচ্চ মধ্য আয়’ উভয়ই অন্তর্ভুক্ত।

পৃথিবীতে কোন দেশই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক কারণেও প্রতিটি দেশকে প্রতিবেশী দেশসহ অন্যান্য দেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে হয়। আমরা এ পাঠে পৃথিবীর উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি আলোচনা করবো।

অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি আমরা দুটি প্রধান শিরোনামে আলোচনা করতে পারিঃ ১) বৈদেশিক বাণিজ্যের সম্পর্ক ও ২) ঋণ সহায়তা ও অনুদান দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক।।

বৈদেশিক বাণিজ্যের সম্পর্ক

বাণিজ্যের দুটি দিক আছে- রপ্তানি ও আমদানি। রপ্তানি হচ্ছে কোন দেশের আয়ের উৎস আর আমদানি হচ্ছে ব্যয়ের খাত। বাংলাদেশের রপ্তানি আয় দীর্ঘ সময় ধরেই আমদানি ব্যয়ের চেয়ে কম। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবসময়ই একটি ঘাটতির দেশ। তবে সাম্প্রতিককালে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, প্রবাসীদের আয়প্রবাহ বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে ঘাটতি হ্রাস পাচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রধান প্রধান রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক ও নিটওয়্যার, কাঁচা পাট, পাটজাত পণ্য, চিংড়ি মাছ, হিমায়িত খাদ্য, চা, চামড়া, কৃষিজাত পণ্য, সিরামিক ইত্যাদি।

দেশভিত্তিক রপ্তানি বাণিজ্যের পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, বিগত এক দশক যাবত বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরের অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ইত্যাদি দেশ। এছাড়া ইতালি, নেদারল্যান্ডস, কানাডা এসব দেশেও আমাদের পণ্য রপ্তানি হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য প্রধানত উন্নত দেশগুলোতেই বিস্তৃত।

আমাদের রপ্তানির একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো আমরা একটি জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমরা অদক্ষ ও আধা- দক্ষ শ্রমিক রপ্তানি করি। এসব দেশে নানারকম কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে। যেসব দেশে বাংলাদেশি শ্রমিকদের কর্মসংস্থান হয়েছে সেগুলোর মধ্যে প্রধান দেশগুলো হচ্ছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো, যেমন- সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, বাহরাইন ও কুয়েত। এছাড়া আফ্রিকা, পূর্ব ইউরোপ ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশসমূহে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি করার লক্ষ্যে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

উন্নত দেশসমূহ ছাড়া সার্ক (SAARC: South Asian Association for Regional Cooperation) দেশসমূহের সাথেও বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য রয়েছে।

২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ভারতে বাংলাদেশী পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ছিল ৬৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

ভারত ছাড়াও সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশ, যেমন- ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে আমাদের পণ্য রপ্তানি হয়।

আমাদের প্রধান আমদানি পণ্যের তালিকায় আছে মূলধনি যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল, খাদ্যপণ্য, পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য, তুলা, ভোজ্যতেল, সার, সুতা ইত্যাদি।

দেশভিত্তিক আমদানি পণ্যের পর্যালোচনা থেকে দেখা যায় যে, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে জুলাই-ডিসেম্বর সময়কালে দেশের আমদানি ক্ষেত্রে চীনের অবস্থান শীর্ষে। এ সময়ে দেশের মোট আমদানির শতকরা ২১.৭২ ভাগ চীন থেকে এসেছে। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ভারত ১২.১৯, জাপান ৪.১১ ও সিঙ্গাপুর ৩.৮৩%। (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৮)

বিগত এক দশকের পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, বাংলাদেশ পণ্য আমদানি করে এমন দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে কখনো চীন কখনো ভারত। বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানিকারক অন্যান্য দেশের মধ্যে রয়েছে সিঙ্গাপুর, জাপান, হংকং, তাইওয়ান, যুক্তরাষ্ট্র ও মালয়েশিয়া।

বৈদেশিক ঋণ সহায়তা ও অনুদান

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জনের জন্য এদেশ পরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রচুর অর্থ দরকার হয়। এই অর্থের সবটা দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে জোগান দেওয়া সম্ভব হয় না। উন্নয়ন তহবিল সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে ঋণ সহায়তা ও অনুদান গ্রহণ করে। উন্নয়ন কার্যক্রমে ঋণ সহায়তা ও অনুদান দানকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা, যেমন- বিশ্ব ব্যাংক, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (IMF), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB), ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (EU), জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ, ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (IDA) প্রভৃতি থেকেও বাংলাদেশ ঋণ ও অনুদান গ্রহণ করে।

বাংলাদেশ যেসব দেশ থেকে বৈদেশিক সাহায্য পায়, সেগুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, নরওয়ে ও ডেনমার্ক। এশীয় দেশগুলোর মধ্যে সাহায্যদাতা দেশ হিসেবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জাপান। ভারত থেকেও সাহায্য পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন- অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলতে কি বোঝো?