in

প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি

প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি
প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি

রাষ্ট্রপতি সংসদের অধিকাংশ সদস্যের আস্থাভাজন সাংসদকেই প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকার প্রধান। প্রধানমন্ত্রী সরকারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। প্রধানমন্ত্রী সংসদ নেতা ও মন্ত্রিসভার প্রধান। প্রধানমন্ত্রীই মন্ত্রিসভা গঠন করেন। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে বা সংসদের আস্থা হারালে সরকারের পতন ঘটে। প্রধানমন্ত্রীকে কেন্দ্র করে শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়।

সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা অনেক উপরে। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হলেও রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেন। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার মূলস্তম্ভ। তিনি অত্যন্ত সন্মানজনক পদমর্যাদার অধিকারী। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী তাঁর শাসন পরিচালনার জন্য সংসদের কাছে দায়ী থাকেন।

প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি

১। শাসন বিষয়ক ও নির্বাহী ক্ষমতাঃ প্রধানমন্ত্রী পুরো শাসন ব্যবস্থায় নেতৃত্ব প্রদান করেন। সকল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী গ্রহণ করেন। সকল নির্বাহী ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির নামে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীদের নিয়োগ ও তাঁদের দপ্তর বন্টন করেন। বিচার, অর্থ, পররাষ্ট্র এবং শাসন বিষয়ক সকল কাজ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ও মতামত অনুযায়ী পরিচালিত হয়। প্রধানমন্ত্রী উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগ করেন।

২। আইন সংক্রান্ত ক্ষমতাঃ আইন প্রণয়নে প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি জাতীয় সংসদে সরকারি বিলের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। প্রধানমন্ত্রীকে কেন্দ্র করে সংসদের আইন প্রণয়ন বিষয়ক কার্যাবলি পরিচালিত হয়।

৩। সংসদ পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাঃ প্রধানমন্ত্রী সংসদের নেতা। তিনি সংসদের সাফল্যজনক সুষ্ঠু পরিচালনায় কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। বিরোধী দলের আস্থা অর্জন ও সহযোগিতা পেতে তিনি নেতৃত্ব দান করেন। সংসদে সকল সদস্যদের অধিকার সংরক্ষণে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব অনেক। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে সংসদ আহ্বান, স্থগিত বা ভেঙ্গে দেন।

৪। অর্থ বিষয়ক ক্ষমতাঃ প্রধানমন্ত্রী আর্থিক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী। তাঁর পরামর্শ ও নির্দেশক্রমে অর্থমন্ত্রী বাজেট প্রণয়ন ও সংসদে তা উপস্থাপন করেন। বাজেটে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক নীতির প্রতিফলন ঘটে। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রশাসনিক ব্যয় নির্বাহে অর্থ মঞ্জুরি প্রদান করেন।

৫। রাষ্ট্রীয় কাজের সমন্বয়ে প্রধানমন্ত্রীঃ রাষ্ট্রীয় সকল কাজের সমন্বয় প্রধানমন্ত্রী করে থাকেন। তিনি যেহেতু প্রশাসনের কেন্দ্রে অবস্থান করেন তাই সকল মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও অধিদপ্তরের কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধনে তাঁর নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তিনি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সভাপতিত্ব করেন।

৬। জাতির মুখপাত্র হিসেবে প্রধানমন্ত্রীঃ প্রধানমন্ত্রী জাতির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন। বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন এবং দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। যে কোন জাতীয় সংকট সম্পর্কে দেশবাসীকে অবহিত করেন। দেশের হয়ে বিবৃতি ও বক্তৃতা দেন।

৭। দলের নেতাঃ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী সরকারি দলের নেতা। সংসদ ও সংসদের বাইরে দলের নীতি নির্ধারণ ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখেন। দলীয় নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী ভূমিকা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিরোধী দলের সাথে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী দেশের শাসন পরিচালনা, আইন প্রণয়ন, অর্থ ব্যবস্থার তদারকি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষাসহ সর্বক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। তিনিই সংসদ নেতা, মন্ত্রীসভার নেতা। তদুপরি শাসন ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু।

আরও পড়ুন- আইন কাকে বলে? আইনের বৈশিষ্ট্য, আইনের উৎস

আরও পড়ুন- রাষ্ট্র কাকে বলে? রাষ্ট্রের উপাদান কয়টি?