পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি/ পরিশ্রম সফলতার চাবিকাঠি
পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি কিংবা পরিশ্রম সফলতার চাবিকাঠি- এই কথাটি আমরা কম বেশি সবাই জানি। কিন্তু কয়জন এই কথাটি অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করতে পারি? কঠোর পরিশ্রম যে আসলেই সফলতার চাবিকাঠি এটা আমরা যেদিন উপলব্ধি করতে পারবো সেদিন থেকে আমরা আমাদের জীবনে সফলতার পথে যাত্রা শুরু করবো।
মূলভাবঃ
পরিশ্রম তোমার চরিত্রকে পরিস্ফুটিত করে তোলে।
— স্যাম এউইং
পরিশ্রম ও সফলতা – এই দুটো শব্দ একসূত্রে গাঁথা। সহজ কথায় যে মানুষ নিজের লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিশ্রম করতে পিছপা হয়না, সফলতা তার কাছে নিজ থেকে ধরা দেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে৷ পরিশ্রম ব্যতীত উন্নতির শিখর আরোহনের চিন্তা দিবাস্বপ্ন ব্যতীত আর কিছুই নয়।
সম্প্রসারিত ভাবঃ আমাদের সমাজে এমন অনেক লোক আছে যারা সফল লোকদের দেখে ভাবতে থাকে সফল ব্যক্তিরা বোধহয় ভাগ্যের জোরে সাফল্যকে নিজেদের বশ করেছে। কিন্তু, এই সফলতা অর্জনের পেছনের পরিশ্রমের গল্পটি অনেকটা অগোচরেই থেকে যায়। সৃষ্টিকর্তা তাকেই সাহায্য করে যে নিজেকে নিজে সাহায্য করে। পরিশ্রমকে সাথে নিয়ে যে তার মেধাশক্তিকে কাজে লাগায় সে তার লক্ষ্য অর্জনের পথে অনেকটা এগিয়ে থাকে৷ একটি কথা প্রচলিত আছে,
“Allah helps those who help themselves.”
ধরুন, কেউ একজন চায় সে অনেক বড় গায়ক হবে। কিন্তু, সে রেওয়াজ করতে রাজি নয়। তার বিশ্বাস ভাগ্যের জোরে একদিন সে ঠিক তার ইচ্ছে পূরণ করতে পারবে৷ আমাদের সমাজে এমন আকাশ কুসুম চিন্তা করে দিন কাটিয়ে দেওয়া লোকের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। তারা ভুলেই যায় লক্ষ্য পূরণের প্রথম ধাপ হচ্ছে পরিশ্রম। অনেক সময় শুধুমাত্র অলসতার কারণে অনেক প্রখর মেধাবীরাও তার মেধাকে কাজে লাগাতে পারেনা।
সফলতার জন্য পরিশ্রমের বিকল্প নেই সেটি যেমন ঠিক তেমনি পরিশ্রম করতে হবে পরিকল্পনা মাফিক। যদি আমরা সারাদিন কোন দেয়ালকে হাত দিয়ে ভাঙ্গার চেষ্টা করি সেটি হবে গাধার শ্রম। অনেক সময় শুধুমাত্র পরিকল্পনা মাফিক কাজ না করার কারণে আমরা আমাদের পরিশ্রমের পূর্ণ সুফল প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হই। শৈশবে পড়া পিঁপড়া ও ঘাসফড়িংয়ের গল্পটি আমাদের নিশ্চয় মনে আছে৷ পিঁপড়া ভবিষ্যতের কথা ভেবে বর্তমানে পরিশ্রম করে খাদ্যশস্য জমা করেছিল ও আর ঘাসফড়িং বর্তমানে খাদ্য মজুদ আছে বলে ভবিষ্যতের কথা ভাবেনি। ফলশ্রুতিতে সে খাদ্যের অভাবে প্রাণ হারিয়েছিল।
প্রাচীনকালে মানুষ প্রকৃতির কাছে অসহায় ছিল ছিল৷ পরে তারা ধীরে ধীরে গুহা খনন করতে শুরু করলো। আগুন জ্বালাতে শিখলো, শিকার করা শুরু করলো। পরিশ্রমের মাধ্যমে তারা জঙ্গলের প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে নিজেদের টিকিয়ে রেখেছিল বলে মানবসমাজ ধীরে ধীরে সভ্য হয়েছে এবং আজ আমরা উন্নত বিশ্ব পেয়েছি বসবাসের জন্য।
পরিশ্রমের মাধ্যমে একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার যে কতটা আমূল পরিবর্তন সম্ভব তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে চীন, জাপান। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ হয়েও জাপান পরিশ্রমের মাধ্যমে পুরো বিশ্বের মধ্যে নিজেদের একটি শক্ত অবস্থান তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে। চীনে একসময় বেকারত্ব এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে সে দেশের সরকার বাধ্য হয়েছিল দেশটির সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ ঘোষণা করতে। সে সময় তারা পরিশ্রমের মাধ্যমে দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরী করেছিল বলে আজ বিশ্বের অনেক দেশের অর্থনীতি চীন নির্ভর।
ভোজন রসিকদের কাছে কেএফসি নামটি খুব পরিচিত৷ কেএফসির প্রতিষ্ঠাতা স্যান্ডার্সকেও একসময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকেন ফ্রাই বিক্রি করতে হয়েছিল৷ পরিশ্রম করেছিল বলেই সাফলতা তার কাছে ধরা দিতে বাধ্য হয়েছিল।
পরিশ্রমের সুফল শুধু মানবজাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ, তেমনটি কিন্তু নয়৷ প্রাণীকূলেও পরিশ্রমের মাধ্যমে সুফল প্রাপ্তির অনেক উদাহরণ আছে৷ যেমনঃ বাবুই পাখি অনেক দূর দুরান্ত থেকে খড় ঠোঁটে করে নিয়ে এসে গাছে ঘর বুনে। ফলে, ঝড়েও সে ঘর ভাঙ্গেনা।
মন্তব্যঃ সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশ্ব বিখ্যাত ব্যক্তিত্ত্ব সকলেই পরিশ্রমের ফলে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। মোট কথা, ভাগ্যের চাকা নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্যা, যশ, মান, প্রতিপত্তিকে নিজের মুঠোয় বন্দী করতে হলে পরিশ্রমের বিকল্প নেই৷ উরিজাহ ফাবের বলেছেন,
“স্বপ্ন বড় দেখো, সব সময় ভালো চিন্তা কর, পরিশ্রম কর এবং যাত্রা পথকে উপভোগ করো।”
আরও পড়ুন- দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান / প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
আরও পড়ুন- চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান / চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান