in

নির্বাচনি আচরণবিধি

নির্বাচনি আচরণবিধি
নির্বাচনি আচরণবিধি

নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় নির্বাচনি আচরণবিধি নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

নির্বাচনি আচরণবিধি

১। নির্বাচন সংক্রান্ত বিধিবিধান পালনঃ নির্বাচন সংক্রান্ত আইনকানুন ও বিধিবিধান অবশ্যই সকলকে মেনে চলতে হবে।

২। কোন প্রতিষ্ঠানে চাঁদা বা অনুদান প্রদান নিষিদ্ধঃ নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোট গ্রহণের দিন পর্যন্ত কোন প্রার্থী তাঁর নির্বাচনি এলাকার কোন প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে বা গোপনে চাঁদা বা অনুদান প্রদান বা প্রদানের অঙ্গীকার করতে পারবেন না। নির্বাচনি এলাকার কোন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের অঙ্গীকার প্রদান করাও যাবে না।

৩। নির্বাচনি প্রচারণাঃ

৩.১ রাজনৈতিক দল ও প্রার্থী নির্বিশেষে প্রচারণার ক্ষেত্রে সমান অধিকার ভোগ করবে। প্রতিপক্ষের কোন সভা, শোভাযাত্রা ও প্রচারে কোনরূপ বাধা দেওয়া যাবে না।

৩.২ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে কোন সড়ক বা মহাসড়কে জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে জনসভা করা যাবে না।

৩.৩ সভা বা মিছিলে কেউ বাধা প্রদান করলে তার বিরুদ্ধে পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করতে হবে। প্রার্থী নিজে এবং তার সমর্থকরা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কিছু করতে পারবে না।

৩.৪ রাজনৈতিক দল বা প্রার্থী সরকারি প্রচারপত্র, সরকারি যানবাহন, সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীর সহায়তা কিংবা রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করতে পারবে না।

৩.৫ কোন প্রার্থীর পোস্টার, লিফলেট ও হ্যান্ডবিলের ওপর কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পোস্টার, লিফলেট ও হ্যান্ডবিল লাগানো যাবে না।

৩.৬ রাস্তা বা সড়কের উপর নির্বাচনি ক্যাম্প স্থাপন করা যাবে না।

৩.৭ সরকারি ডাকবাংলো, সার্কিট হাউজ, রেস্টহাউজ ও সরকারি কার্যালয়কে কোন দল বা প্রার্থীর নির্বাচনি কার্যক্রম পরিচালনার স্থান হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।

৩.৮ নির্বাচন উপলক্ষে কোন নাগরিকের জমি, ঘর-বাড়ি বা কোন স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষতি সাধন করা যাবে না। কারও শান্তি ভঙ্গ হয় এমন কোন কাজ করা যাবে না।

৩.৯ সকল প্রকার দেয়াল লিখন হতে সকলকে বিরত থাকতে হবে।

৩.১০ ভোট কেন্দ্রের নির্ধারিত সীমার মধ্যে মোটরসাইকেলসহ যান্ত্রিক যানবাহন নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য বহন আইনত দণ্ডনীয়।

৩.১১ প্রভাবশালী কোন ব্যক্তি বা সরকারি কর্মকর্তা নির্বাচনি কার্যক্রমে অবৈধ হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।

৩.১২ ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এরূপ উস্কানিমূলক কোন বক্তব্য প্রদান করা যাবে না।

৪। নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখাঃ অর্থ, অস্ত্র, পেশিশক্তি কিংবা স্থানীয় ক্ষমতা দ্বারা নির্বাচনকে প্রভাবিত করা যাবে না।

৫। ভোট কেন্দ্রে প্রবেশাধিকারঃ কেবল নির্বাচনি কর্মকর্তা, কর্মচারী, প্রার্থী, নির্বাচনি এজেন্ট এবং ভোটারগণ ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন। কোন প্রার্থীর বা দলের কর্মীগণ ভোটকেন্দ্রে ঘোরাফেরা করতে পারবে না।

৬। নির্বাচনি অনিয়মঃ আচরণ বিধিমালার যে কোন বিধানের লঙ্ঘন নির্বাচনপূর্ব অনিয়ম হিসেবে গণ্য হবে। কোন প্রার্থী বা দল এর প্রতিকার চাইলে নির্বাচনি এলাকাধীন “ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি” বা নির্বাচন কমিশন বরাবর আবেদন করতে হবে।

নির্বাচনি অপরাধ ও অপরাধের দণ্ড

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ অনুযায়ী নির্বাচনি আচরণবিধিতে নির্বাচনি অপরাধ ও এর দন্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। সংক্ষেপে অপরাধসমূহ ও দণ্ডগুলো আলোচনা করা হলোঃ

ক. নির্ধারিত নির্বাচনি ব্যয়ের বিধান লঙ্ঘন করা।

খ. ঘুষ গ্রহণ করা।

গ. জাল ভোট দেওয়া বা ছদ্মনামে ভোট দেওয়া।

ঘ. নির্বাচনে প্রভাব খাটানো, জোর জবরদস্তি করে ভোট আদায় করা বা ভোটদানে বাধা সৃষ্টি করা।

ঙ. প্রার্থী বা তার আত্মীয়স্বজনের চরিত্র সম্পর্কে মিথ্যা বলা।

চ. কোন প্রার্থীর প্রতীক সম্পর্কে মিথ্যা বলা।

ছ. কোন প্রার্থীর প্রার্থিতা প্রত্যাহার সম্পর্কে মিথ্যা বলা।

জ. জাতি, ধর্ম, বর্ণ ইত্যাদি কারণে কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে ভোটদান সম্পর্কে বলা।

ঝ. ভোটকেন্দ্রের কোন ভোটারকে ভোট না দিয়ে যেতে বাধ্য করা।

ঞ. বেআইনি আচরণ করা এবং

ট. সভা ও মিছিলের ওপর আরোপিত নিষেধ লঙ্ঘন দুর্নীতিমূলক অপরাধ। এছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যালট পেপার বা ব্যালট বাক্স নষ্ট করা, কেন্দ্র হতে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া, ব্যালট পেপার জাল করা, ভোট কেন্দ্র দখল এবং ভোট প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাও গুরুতর নির্বাচনি অপরাধ।

অপরাধের দণ্ড

উপরোক্ত যে কোন অপরাধের জন্য জরিমানাসহ ক্ষেত্র বিশেষ সর্বোচ্চ ১০ বছর এবং কমপক্ষে ২ বছর সশ্রম কারাদন্ড হতে পারে। এ সকল নির্বাচন সংক্রান্ত অপরাধের জন্য উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়ের করা যায়। তবে নির্বাচন কমিশনের লিখিত অনুমোদন ব্যতীত নির্বাচনি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আলাদতে মামলা দায়ের করা যাবে না। নির্বাচনি আচরণবিধি না মেনে চললে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হয় না।

আরও পড়ুন- নির্বাচন কমিশনের গঠন, ক্ষমতা ও কাজ