in

যে নদী হারায়ে স্রোত চলিতে না পারে, সহস্র শৈবালদাম বাঁধে আসি তারে

যে নদী হারায়ে স্রোত চলিতে না পারে, সহস্র শৈবালদাম বাঁধে আসি তারে
যে নদী হারায়ে স্রোত চলিতে না পারে, সহস্র শৈবালদাম বাঁধে আসি তারে

যে নদী হারায়ে স্রোত চলিতে না পারে
সহস্র শৈবালদাম বাঁধে আসি তারে
যে জাতি জীবনহারা অচল অসাড়
পদে পদে বাঁধে তার জীর্ণ লোকাচার

যে নদী হারায়ে স্রোত চলিতে না পারে, সহস্র শৈবালদাম বাঁধে আসি তারে

মূলভাবঃ যে সকল নদী একবার তার নিজস্ব গতি পথ হারিয়ে ফেলে কালের পরিক্রমায় সে সব নদীতে ক্রমে ক্রমে জন্ম নেয় নানা প্রকার শৈবাল সহ লতাগুল্মের। ঠিক একইভাবে কোন জাতিতে যখন দেখা দেয় অস্থিতিশীলতা, অলসতা এবং কর্মবিমুখতা তখন সে জাতি ক্রমে ক্রমে ধ্বংসের পথে অগ্রসর হয়।

সম্প্রসারিত ভাবঃ আমাদের এই ধরণীর বিশাল ভাগ জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন রকমের জলাশয়। যার মধ্যে ছোট বড় নদ-নদী অন্যতম। কোন কোন নদীতে থাকে প্রচণ্ড প্রবাহমানতা, অপরদিকে কোন নদী থাকে একদম নিস্তব্ধ। সকল নদী বয়ে চলে সমুদ্রের দিকে। আর এই বয়ে চলার পথে কোন প্রকার বাধা-বিপত্তিকে সে গ্রাহ্য করে না। সকল প্রকার বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে নদী সদা চঞ্চল স্রোতধারায় বয়ে চলে সমুদ্রের দিকে। যেন তার বয়ে চলার একমাত্র লক্ষ্য হলো সমুদ্র মোহনায় পৌঁছানো। আর এই স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নদীর দুই পাড়ে গড়ে ওঠে মানবসভ্যতা। সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে এই সকল নদী হয়ে যায় নতুন সভ্যতা গড়ে ওঠার এবং পুরনো সভ্যতা ধ্বংসের একমাত্র সাক্ষী।

কোন কিছুর বিনিময়ে নদী তার নিজস্ব তরঙ্গ ধারা এবং তার গতিপথের ছন্দময়তার পরিবর্তন করে না। বরং তাঁর পথে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে তাকে মোকাবেলা করতে হয় নদীর তীব্র স্রোতের, যা বর্ষাকালে ধ্বংসাত্মক রুপ নিয়ে ধ্বংস করে দেয় তার ছুটে চলার পথের সকল বাধা-বিপত্তিকে। কিন্তু অপরপক্ষে কোনো কারণবশত নদী যদি তার নিজস্ব গতি পথ এবং গতিধারা হারিয়ে ফেলে তখন তার বহ্যতা শক্তির অভাব ঘটে। যার ফলস্বরূপ সে হারিয়ে ফেলে তার স্রোতধারা। তার জীবনে জন্ম নেয় নতুন কিছু শৈবাল বা গুল্ম জাতীয় লতার। ফলে নদী তার স্বকীয়তা এবং ছন্দময়তা হারিয়ে ফেলে, অবলুপ্তি ঘটে তার শত শত বছরের উন্মুক্ত গতি চাঞ্চল্যের।

নদী যেন একটি সমগ্র মানব জীবনে উদাহরণস্বরূপ। শৈশব থেকেই বৃদ্ধকাল পর্যন্ত মানুষ তার জীবনে প্রতিনিয়ত নানা বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে জীবনে এগিয়ে যায়, ঠিক যেমন নদী সমগ্র বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে সাগরের মোহনায় এগিয়ে যায়। কিন্তু মানব জীবনে এগিয়ে চলার পথে দুঃখ দারিদ্র্য হতাশা সহ নানা প্রতিকূল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। যে সব মানুষ নিজের আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে এবং কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের সাহায্যে এই সকল বাধা বিপত্তিকে সুষ্ঠুভাবে অতিক্রম করতে সক্ষম, কেবল মাত্র তারাই জীবনের সফলতা শিখরে পৌছাতে পারে। তাদের জীবন হয়ে ওঠে সৌন্দর্য এবং সৌহার্দ্য মন্ডিত। অপরপক্ষে যে সকল মানুষ এই জীবনের প্রবাহমানতা বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে পারে না, তাদের জীবনে ঘটে ছন্দপতন। তাদের জীবন হয়ে ওঠে গতি চাঞ্চল্যহীন, নিষ্প্রাণ। ব্যক্তি জীবনের ক্ষেত্রে যেমন এটি প্রযোজ্য, ঠিক একইভাবে বৃহত্তর জাতীয় জীবনের ক্ষেত্রেও এটি সমানভাবে প্রযোজ্য। যে সব জাতি তাদের নিজস্ব বিচারবোধ, স্বাধীন বুদ্ধিমত্তা এবং কর্ম বিমুখ হয়ে পড়ে তারা জীবনের স্বাভাবিক গতি পথ থেকে দূরে সরে যায়। তাদের জীবনে নেমে আসে ব্যর্থতার গ্লানি এবং ব্যর্থতার কালো অন্ধকার। যা তাদের সমগ্র জাতি জীবনকে এবং সর্বোপরি দেশকে দুঃখ-দুর্দশা নিমজ্জিত করে তোলে। ক্রমে ক্রমে সেই জাতির অস্থিমজ্জায় জন্ম নেয় সংকীর্ণ চিন্তা ধারা এবং নিষ্প্রয়োজনীয় প্রথার। যা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং মুক্ত চিন্তা-চেতনাকে বাধা প্রদান করে। ফলে সে জাতি তাদের স্বাভাবিক বিকাশের স্পন্দন হারিয়ে ফেলে। এমন পরিস্থিতি একটি দেশ ও জাতির ধ্বংসের অন্যতম সূচক।

পৃথিবীতে যুগে যুগে বহু জাতি ও সভ্যতা ইতিহাসের পাতা থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়েছে। যেমন এর নিদর্শন হিসেবে দেখা যায়, ওলমেক সভ্যতা, মায়া সভ্যতা, প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা, প্রাচীন গ্রিসের সভ্যতা ইত্যাদি। এসব সভ্যতা হারিয়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে তাদের নানা জটিলতা এবং তিমিরাচ্ছন্ন নানা সংকট, যা তারা মোকাবেলা করতে সক্ষম ছিলেন না। মানবজীবনের চলমান প্রবাহিকায় শৈবালের ন্যায় কুসংস্কার, অবাস্তব কল্পনা এবং তথাকথিত নানা ধরনের অনুশাসন ও বিধি-নিষেধের জন্ম নেয় তখন জীবনের এগিয়ে যাওয়ার পথ বাধাগ্রস্ত হয়। তখন সে জাতিকে কুসংস্কারমুক্ত করে, কঠোর পরিশ্রমী হয়ে তার গতিময় জীবনের সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পথে অগ্রসর হতে হবে। তখন সে জাতির মধ্যে নতুন উদ্যম এবং নতুন করে কাজ করার উদ্দীপনা যোগাতে হবে। যাতে তারা তাদের সংকীর্ণ চিন্তা ধারা থেকে বেরিয়ে এসে মুক্তমনা চর্চা এবং বিকশিত চিন্তাধারার অংশ হতে পারে। কোনভাবেই কোন জাতিতে অলসতা বা কর্মবিমুখতার পথে আসতে দেয়া যাবে না। যদি কোন জাতির মধ্যে কর্মবিমুখতা দেখা দেয় তাহলে সে জাতি তাদের নিজেদের চলার পথে নিজেরাই রুদ্ধ করে নেয়। যা পদে-পদে জাতিকে ধাবিত করে পরাজয় ,হতাশা এবং নিরাশার দীর্ঘশ্বাসের দিকে।

মন্তব্যঃ নদী যেমন তার চলার পথের সমগ্র বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে প্রবাহিত হয়, ঠিক তেমনভাবেই যে কোনো জাতিতে স্থবিরতা আনতে হলে সে জাতিকে কুসংস্কারের বেড়া জাল ছিঁড়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জীবনের বহমান ধারায় নিজেদের বয়ে নিতে হবে। শিক্ষা সহ বিভিন্ন কর্মমুখী ধারায় জাতিকে নিজেদের নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য ধরে রেখে অগ্রগতির পথে অগ্রসর হতে হবে। তবেই সে জাতি হবে প্রাণস্পন্দন সম্পন্ন, গতিশীল এবং মুক্ত বিচার বিবেচনাবোধ সম্পন্ন বলিষ্ঠ জাতি।

গুরুত্বপূর্ণ সকল ভাবসম্প্রসারণ-

১। ভাবসম্প্রসারণঃ পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি

২। ভাবসম্প্রসারণঃ একতাই বল

৩। ভাবসম্প্রসারণ: কীর্তিমানের মৃত্যু নেই / মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়

৪। ভাবসম্প্রসারণঃ ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ

৫। ভাবসম্প্রসারণঃ দুর্নীতি জাতীয় জীবনে অভিশাপস্বরূপ

৬। ভাবসম্প্রসারণঃ দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য

৭। পরের অনিষ্ট চিন্তা করে যেই জন

৮। ভাবসম্প্রসারণ: সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই

৯। ভাবসম্প্রসারণঃ সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত

১০। ভাবসম্প্রসারনঃ আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে..

১১। ভাবসম্প্রসারণঃ অর্থই অনর্থের মূল

১২। ভাবসম্প্রসারণঃ পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না।

১৩। ভাবসম্প্রসারণঃ গ্রন্থগত বিদ্যা পরহস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন

১৪। ভাবসম্প্রসারণঃ লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু

১৫। ভাবসম্প্রসারণঃ ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল

১৬। ভাবসম্প্রসারণঃ এ জগতে হায়, সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি। রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।

১৭। ভাবসম্প্রসারণঃ যে সহে সে রহে

১৮। ভাবসম্প্রসারণঃ গতিই জীবন, স্থিতিতে মৃত্যু

১৯। ভাবসম্প্রসারণঃ একবার না পারিলে দেখ শতবার

২০। ভাবসম্প্রসারণঃ যেমন কর্ম তেমন ফল

২১। ভাবসম্প্রসারণঃ যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন

২২। ভাবসম্প্রসারণঃ ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়

২৩। ভাবসম্প্রসারণঃ জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান

২৪। ভাবসম্প্রসারণঃ রাত যত গভীর হয় প্রভাত তত নিকটে আসে

২৫। ভাবসম্প্রসারণঃ ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।

২৬। ভাবসম্প্রসারণঃ সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই

২৭। ভাবসম্প্রসারণঃ তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন

২৮। ভাবসম্প্রসারণঃ আলস্য এক ভয়ানক ব্যাধি