in

ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কাকে বলে? ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য

ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য
ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য

মোট উৎপাদিত সম্পদের অর্থমূল্য কীভাবে উৎপাদনের উপাদানগুলোর মধ্যে বণ্টন করা হয়, তা নির্ভর করে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বা Economic System  এর উপর। যে ব্যবস্থা বা কাঠামোর আওতায় উৎপাদনের উপাদান- সমূহের মালিকানা নির্ধারিত হয় এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া, উৎপাদিত সম্পদের বণ্টন ও ভোগ প্রক্রিয়া সম্পাদিত হয় তাকে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলে। এ ব্যবস্থা জনগণের অর্থনৈতিক কার্যাবলি এবং অর্থনীতি বিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনগত কাঠামোর সমন্বয়ে গড়ে ওঠে।

বর্তমান বিশ্বে প্রধানত চার ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কার্যকর আছেঃ ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী, সমাজতান্ত্রিক, মিশ্র ও ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা।

নিম্নে ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো।

ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ

উৎপাদনের উপাদানসমূহের মালিকানাঃ ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের উপাদানসমূহ, যথা- ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন ব্যক্তিমালিকানাধীন। অর্থাৎ ব্যক্তি তার সম্পদ/ আয়ের সাহায্যে ভূমির মালিকানা অর্জন করতে পারে, শ্রমিককে নিয়োগ দিতে পারে, মূলধন বা পুঁজি গঠন করতে পারে। ব্যক্তি তার নিজস্ব সম্পদ স্বাধীনভাবে ভোগ ও হস্তান্তর করতে পারে। এসব বিষয়ে ব্যক্তি নিজেই সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

উদ্যোগ গ্রহণের স্বাধীনতাঃ ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যক্তি এককভাবে বা গোষ্ঠীবদ্ধভাবে যে কোন দ্রব্য/ সেবা উৎপাদনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে এবং সেজন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করতে পারে। এক্ষেত্রে কোন রকম বিধিনিষেধ নেই। এ ব্যবস্থায় প্রায় সকল অর্থনৈতিক কার্যাবলি ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত হয়।

ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিকে অনেক সময় মুক্ত বাজার অর্থনীতি বলা হয়। এ অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় দ্রব্যের উৎপাদন, বণ্টন, ভোগ সবই বাজারে দ্রব্যের চাহিদা ও যোগানের পারস্পরিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া দ্বারা পরিচালিত হয়। ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সম্পদের ব্যক্তি মালিকানা এবং উৎপাদন ও ভোগের ক্ষেত্রে ব্যক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা। এসব ক্ষেত্রে সরকারের হস্তক্ষেপ নাই বললেই চলে।

অবাধ প্রতিযোগিতাঃ যে কোন ব্যক্তি যে কোন দ্রব্য বা সেবা উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে পারে। তাই বাজারে একই দ্রব্যের বহুসংখ্যক উৎপাদক বা বিক্রেতা থাকে এবং তাদের মধ্যে অবাধ প্রতিযোগিতা থাকে। বিক্রেতা এবং দ্রব্যের ক্রেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দ্রব্যের দাম নির্ধারিত হয়।

ভোক্তার স্বাধীনতাঃ মানুষের অভাব পূরণের জন্য কোন দ্রব্যের উপযোগিতা ব্যবহার করার প্রক্রিয়াকে ভোগ বলে। খাদ্য দ্বারা মানুষের ক্ষুধা মেটায়। সুতরাং খাদ্যবস্তু মানুষ ভোগ করে। কিন্তু কোন কারণে খাদ্যবস্তু নষ্ট হলে তা ভোগ হবে না। মানুষের অভাব পূরণের জন্য ব্যবহার করা হলেই ভোগ হবে। ভোক্তা কোন দ্রব্য কী পরিমাণে ক্রয় ও ভোগ করবে, এ বিষয়ে সে নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে তার পছন্দ, আয় ও দ্রব্যের বাজার মূল্যের দ্বারা এ সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হয়।

সর্বাধিক মুনাফা অর্জনঃ ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যেই উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। উৎপাদন কাজে নিয়োজিত অর্থ হচ্ছে বিনিয়োগ। বিদ্যমান মূলধন সামগ্রীর সাথে নতুন মূলধন (অর্থ বা যন্ত্রপাতি, সাজসরঞ্জাম, উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল প্রভৃতি) যুক্ত হওয়াকে বলে বিনিয়োগ। যেসব দ্রব্যের ক্ষেত্রে মুনাফার সম্ভাবনা বেশি, ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উৎপাদনকারীরা সেসব দ্রব্যেই বেশি বিনিয়োগ করে।

শ্রমিক শোষণঃ সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য থাকে বিধায় উদ্যোক্তা বা পুঁজিপতিরা দ্রব্যের উৎপাদন ব্যয় কম রাখতে ও বিক্রয় মূল্য বেশি পেতে চেষ্টা করে। উৎপাদন ব্যয় কম রাখার জন্য শ্রমিককে তার ন্যায্য মজুরির চেয়ে কম মজুরি দেওয়া হয়। এই উদ্বৃত্ত মজুরি পুঁজিপতি ও উদ্যোক্তার কাছে মুনাফা হিসেবে সঞ্চিত হয়। এভাবে উৎপাদিত সম্পদ বণ্টনে অসমতা ও বৈষম্য সৃষ্টি হয়। শ্রমিক প্রাপ্যের চেয়ে কম মজুরি পান আর পুঁজিপতি ও উদ্যোক্তা তাদের প্রাপ্যের চেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করেন। যেহেতু পুঁজিপতির সংখ্যা কম, তাই একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর হাতেই সমাজের অধিকাংশ সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়। আর যেহেতু শ্রমিক অগণিত, তাই সমাজের বিশাল জনগোষ্ঠী মোট সম্পদের ক্ষুদ্র অংশের সুবিধা ভোগ করে।

আরও পড়ুন- সম্পদ কাকে বলে? সম্পদের শ্রেণিবিভাগ ও জাতীয় সম্পদের উৎস কয়টি?