‘Hope is a dangerous thing. Hope can drive a man insane.’
আশা। দুই অক্ষরের এই শব্দটার জোরেই নিত্যদিনের বেঁচে থাকা, স্বপ্ন দেখা, সহস্র গ্লানির পরেও নতুন করে বেঁচে ওঠার আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি।
১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি প্রাপ্ত দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন (The Shawshank Redemption) দুনিয়ার তাবৎ সিনেপ্রেমিদের কাছে তাই শুধু অসাধারণ চলচ্চিত্রই নয়, জীবনের প্রত্যাশারও প্রতীক।
ভাগ্যের দুর্বিপাকে যুবক অ্যান্ডির স্থান হয় শশাঙ্ক কারাগারে। সেই বন্দি জীবনের পথ মেলে রেড, ব্রুকস, জিল, জেমসদের সাথে। পরিচয় ঘটে অসংখ্য জর্জরিত প্রাণের ক্রন্দনের স্রোতে। তবে দুঃসহ জীবনের আঘাতেই থেমে যায় না সে, কষতে থাকে ভবিষ্যতের হিসেব, স্বপ্ন দেখে মুক্তির।
IMDB তালিকার শীর্ষে ৯.৩ পয়েন্ট নিয়ে দুরন্ত চিত্তে দাঁড়িয়ে থাকা দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশনের পিছনের কিছু গল্প চলুন জেনে নিই এক ঝলকে।
ফ্র্যাঙ্ক ডারাবন্ট তখন একেবারেই নবীন পরিচালক। আনাড়ির সাথে কাজ করবার সাহস দেখিয়েছিলেন ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা মরগ্যান ফ্রিম্যান আর টিম রবিনস। কিন্তু এর পেছনের কারণটা কী?
ছবির ২৫ বছর পূর্তিতে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন দুই তারকা অভিনেতা। তুখোড় স্ক্রিপ্ট গুছিয়ে মরগ্যান ফ্রিম্যানের কাছে প্রথম দ্বারস্থ হন ফ্র্যাঙ্ক। তখন কিন্তু ফ্রিম্যান ঘুণাক্ষরেও জানতেন না তাঁকে রেড চরিত্রের জন্য ইতোমধ্যেই বাছাই করা শেষ! স্ক্রিপ্টের প্রতি মায়া থেকেই এগোন এই প্রজেক্টে।
টিম রবিনস এতদিন বাদেও সেই অনন্য সাধারণ অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণে শিহরিত হন। তাঁর মতে, যারা লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত তাদের সকলের উচিত একবার হলেও ‘শশাঙ্ক রিডেম্পশন’ এর স্ক্রিপ্ট খানা পড়ে দেখা।

১। ফ্র্যাঙ্কের প্রস্তাবে বিস্মিত হয়েছিলেন লেখক স্টিফেন কিং
১৯৮২ সালে প্রকাশিত স্টিফেন কিং এর ‘Rita Hayworth and Shawshank Redemption’ উপন্যাসিকার অনুকরণে নির্মিত হয় ছবিটি। গল্প পড়বার সময়ই ফ্র্যাঙ্ক মনস্থির করে ফেলেন এ নিয়েই সিনেমা বানাবেন। তাই খুব বেশি দেরি করেননি তিনি। আটঘাট বেঁধে তৈরি করে ফেলেছিলেন চিত্রনাট্য।
তবে তাঁর প্রস্তাবে বেশ অবাকই হয়েছিলেন লেখক স্টিফেন। এই গল্পখানা যে ফিল্মের উপযুক্ত তা নাকি স্বপ্নেও ভাবেননি। আট সপ্তাহ প্রাণান্তকর খেটে চিত্রনাট্য প্রস্তুত করেন ফ্র্যাঙ্ক। চিত্রনাট্য আর ফ্র্যাঙ্কের আত্মবিশ্বাস প্রভাবিত করে কিংকে। মাত্র পাঁচ হাজার ডলারে বিক্রি করেন এর ফিল্ম স্বত্ব।
তবে সেই চেক কখনোই ভাঙাননি কিং। চেকটা ঢাউস ফ্রেমে বাঁধিয়ে গোটা অক্ষরে লিখে রেখেছেন –
“In case you ever need bail money. Love, Steve.”
২। বক্স অফিসে ফ্লপের তকমা পেয়েছিল দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন
২৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মাণের পর স্বভাবতই অন্তত পুঁজিটা ঘরে তুলতে চেয়েছিলেন প্রযোজক- পরিচালকেরা। কিন্তু কী আশ্চর্য! মাত্র ১৮ মিলিয়নেই আটকে যায় এর বক্স অফিসের অংক।
সেবছর অস্কারে ৭ বিভাগে মনোনয়ন পায় ছবিটি। সে বরাতেই বাড়তি ১০ মিলিয়ন আয় হয়।
৩। প্রাথমিক তালিকায় ছিলেন না টিম
ছবির মূল ভূমিকা অর্থাৎ অ্যান্ডি ডুফ্রেস্নের চরিত্রে প্রথম পছন্দ ছিলেন না টিম রবিনস। টম হ্যাংকস, কেভিন কস্টনার, টম ক্রুজ, নিকোলাস কেজ, চার্লি শিন, জনি ডেপ প্রমুখের কাছেই ধর্না দিয়েছিলেন ফ্র্যাঙ্ক। একই সময় ‘ফরেস্ট গাম্প’ এর শ্যুটিং থাকায় টম হ্যাংকস ছেড়ে দেন ছবিটি। কস্টনারও ‘ওয়াটারওয়ার্ল্ড’ এর খাতিরে পিছিয়ে যান।

৪। আইরিশ চরিত্রে মরগ্যান ফ্রিম্যান!
রেডের চরিত্রের পেছনেও কম ঘাম ঝরায়নি ‘দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন’ টিম। ক্লিন্ট ইস্টউড, হ্যারিসন ফোর্ড, পল নিউম্যান থেকে শুরু করে রবার্ট রেডফোর্ড- সমস্ত বাঘা তারকাকে নিয়ে ভেবেছিল কাস্টিং টিম।
গল্পের সূত্রে রেড মধ্যবয়সী সাদা চামড়ার এক আইরিশ, চুলের রঙও লালচে। কিন্তু ডারাবন্টের ভাবনায় একমাত্র মরগ্যানই ছিল উপযুক্ত রেড। জলদগম্ভীর কণ্ঠ, সুস্থির উপস্থিতির জন্য এর বাইরে অন্য কাউকে ভাবতেই পারেননি পরিচালক।
৫। কারাগার সন্ধান
প্রোডাকশন ডিজাইনার টেরেন্স মারশের কাছে বিশাল চ্যালেঞ্জ ছিল নিখুঁত কয়েদখানা তৈরি। নিরন্তর খোঁজাখুঁজির পর মিলেও যায় ওহাইও রাজ্যের কেন্দ্রীয় কারাগার। ১৯৯০ সালেই বন্ধ হয়েছিল কারাগারটি। বসবাসের অযোগ্য পরিবেশ এং অব্যবস্থাপনার কারণে রাজ্য সরকার তালা লাগিয়েছিল এতে। সেই কারাগারকেই ঘষেমেজে সেটে পরিণত করেন টেরেন্স।
পাশে ছিল আরেক নির্মাণাধীন ভবন। ইনডোর শ্যুটিংয়ের জন্য সেট সাজিয়ে কাজ চালাতে হয়েছিল। কারাগারের বিষণ্ণ শীতল পরিবেশ টের পেতেন অভিনেতারাও। টিম রবিনস পরবর্তীতে বলেন, বছরের পর বছর কারারুদ্ধ জীবনের প্রতিধ্বনি টের পেতাম সেখানে। কত বন্দির কান্না, বেদনা তাড়া করে ফিরতো আমাদের।
গ্রীষ্মের রুদ্র তাপেই টানা তিন মাস শুটিং চলে। রুটিন ছিল সপ্তাহে ৬ দিন, ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ। সেই অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে ডারাবন্ট বলেন ‘প্রতিদিন যখন শ্যুটিংয়ের কাজ করতাম, তখন মনে হতো আমি প্রতিনিয়ত ব্যর্থ হচ্ছি। কিন্তু যখনই এডিটিং রুমে বসতাম, তখন সেসব যন্ত্রণার কথা ভুলে যেতাম।’
৬। স্করসেসির প্রভাব
মার্টিন স্করসেসির Goodfellas থেকেই এই ছবির তৈরির অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন ডারাবন্ট।
৭। এক দৃশ্যেই আধা দিন
অ্যান্ডি আর রেডের বেসবলের দৃশ্যটি নিশ্চয়ই মনে আছে। শুধু ওই দৃশ্যের চিত্রায়নেই টানা ৯ ঘণ্টা কেটেছিল গোটা দলের!
৮। রেকর্ডে ভিডিও
লাভের খাতা শূন্য থাকলেও অস্কার মনোনয়ন আর জনশ্রুতিতে ৩,২০,০০০ কপি ভিডিও ক্যাসেট বিক্রি হয় দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশনের।
৯। চিত্রনাট্যে পরিবর্তন
চলচ্চিত্র আর মূল সাহিত্যের মাঝে কিছ তফাৎ থেকেই যায়। এর ব্যতিক্রম নয় শশাঙ্কও। উপন্যাসিকায় বৃদ্ধ ব্রুকসের মৃত্যু ঘটে একলা ঘরে, বার্ধক্যে। ফ্র্যাঙ্ক তা বদলে ব্রুকসের একাকীত্বকেই বৃহদাকারে দেখান, বোঝান কারাবন্দি জীবনের অভ্যস্ততাই থাকে হতাশাগ্রস্ত করেছিল।
ছবির শেষ দৃশ্যে দুই প্রধান চরিত্রের পুনরায় মিলিত হবার কথাও ছিল না। এমনকি মূল গল্পানুসারে দিগন্তে বাস যাবার দৃশ্য দিয়েই সমাপ্তি টেনেছিলেন ফ্র্যাঙ্ক। পরবর্তীতে পরিবর্তন আসে স্ক্রিপ্টে।
১০। স্ক্রিপ্টের দাম তিন মিলিয়ন
কিংবদন্তি পরিচালক রব রেইনার ( When Harry Met Sally, A few Good Men খ্যাত) তিন মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে স্ক্রিপ্ট কেনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ফ্র্যাঙ্ককে। তবে নিজের প্রথম ফিচার ফিল্মের জন্য লোভনীয় অফারও বাতিল করে দেন ফ্র্যাঙ্ক।
এতো গেল টুকটাক পেছনের গল্প। গোটা মুভিটা দেখে নিতে পারেন নেটফ্লিক্সেই। আর বোনাস কিছু জানতে ক্লিক করুন নিচের লিংকে। মিলে যাবে ডকুমেন্টরি আর সাক্ষাৎকার দুটোই।
লিখেছেন- সারাহ তামান্না
আরও পড়ুন- শিল্পের জন্য অর্থের বরাদ্দ নেই, ওয়েব সিরিজেই আশার আলো দেখেন চঞ্চল চৌধুরী