দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য
মূলভাবঃ
নানাভাবে শিক্ষা পেলেও দুর্জন কখনও সাধু হয় না, নিমগাছ যেমন আমূল জলসিক্ত করে কিংবা দুধে ভিজিয়ে রাখলেও কখনও মধুর হয় না। -চাণক্য
শিক্ষা আমাদের পাঁচটি মৌলিক চাহিদাগুলোর একটি। মানুষের উন্নত চরিত্র গঠন শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু, কিছু কিছু মানুষ আমাদের মনে করিয়ে দেয় সুশিক্ষিত মানেই স্বশিক্ষিত নয়। নিচুমনা ব্যক্তি যতই বিদ্বান হোকনা কেন তার সঙ্গ সদা পরিত্যাজ্য। দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য।
সম্প্রসারিত ভাবঃ
শৈশবে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আমাদের শিক্ষা জীবনের সূচনা হয়৷ শিক্ষা অমূল্য সম্পদ হিসেবে সর্বত্র বিবেচিত হয়। শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে মানুষ সৎ, নীতিবান হয়ে জীবনযাপন করবে এটিই সকলের কাম্য৷ বিদ্বান ব্যক্তিকে সকলেই সম্মান করে। কিন্তু, মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হচ্ছে তার চরিত্র। একজন চরিত্রবান ব্যক্তি সমাজের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।
একজন বিদ্বান ব্যক্তি যদি চরিত্রহীন হয় তবে সে প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করতে পারেনি। তার শিক্ষা শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। একজন চরিত্রবান ব্যক্তির কাছে যদি বড় বড় ডিগ্রি নাও থাকে তবে তার দ্বারা সমাজের কোন ক্ষতি হবেনা। বরং, একজন চরিত্রহীন ব্যক্তি তার অর্জিত শিক্ষা কাজে লাগায় অন্যের অনিষ্ট সাধনের উদ্দেশ্যে। সাপের মাথায় মণি থাকলেও যেমন আমরা সাপকে বিষধর প্রাণী হিসেবে চিনি তেমনি অসৎ চরিত্রের বিদ্বান অনেকটা সাপের মতই বিষধর। মহানবী (সাঃ) বলেছেন-
”মানুষের মধ্যে সেই ব্যাক্তি উত্তম, যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর।“
আত্মকেন্দ্রিক, লােভী এবং স্বার্থপর মানুষ কখনোই কারো প্রকৃত বন্ধু হতে পারেনা। এরা শুধু কার্যসিদ্ধির জন্য মিথ্যে বন্ধুত্বের অভিনয় করতে পারে। এই ধরনের লোকেরা চায় শুধু নিজেদের আখের গোছাতে। নিজের স্বার্থের জন্য এরা যেকোন অপরাধের আশ্রয় নিতে পারে। এরা চায় শুধুমাত্র নিজেদের ভালো রাখতে। সমাজের অন্যদের উন্নতি এদের কখনোই কাম্য নয়।
একবালতি জলকে নোংরা করতে যেমন একমুঠো ধুলো যথেষ্ট তেমনি একটি সমাজকে ধধংস করতে গুটিকয়েক দুষ্ট চরিত্রে লোক যথেষ্ট। নীতিহীন শিক্ষিতদের প্রধান হাতিয়ার তার শিক্ষা। কারণ, সে জানে শিক্ষিত জনের কদর সমাজে সবসময় থাকে। তার কথা সকলে মেনে চলে। আর তথাকথিত হীনমনা শিক্ষিতরা সকলের এই বিশ্বাসকে কাজে লাগায়।
শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর। কিন্তু,পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেবে এ ভয় দেখিয়ে কোন শিক্ষক যদি কোন ছাত্রকে বাধ্য করে তার কাছে কোচিং করতে। তবে সে শিক্ষক হচ্ছে দুর্জনের সবচেয়ে বড় প্রমাণ। বর্তমানে, প্রশ্নফাঁস কান্ডে অনেক শিক্ষকের নাম উঠে আসছে যা সত্যি অনাকাঙ্ক্ষিত। “শিক্ষকের হাতে ছাত্রী লাঞ্চিত ” পত্রিকার এমন শিরোনাম মনে করিয়ে দেয় শুধু ডিগ্রি থাকলেই সৎ মানুষ হওয়া যায় না৷
“ডাক্তার ” এই শব্দটির সাথে জড়িয়ে থাকে অনেক শ্রদ্ধা। চিকিৎসা সেবা মহৎ পেশাগুলোর একটি। কিন্তু, যখন এই চিকিৎসকেরা জ্বরের মত সামান্য অসুখেও লম্বা টেস্ট এর লিস্ট ধরিয়ে দেয় তখন এই মহৎ পেশার উপর থেকে শ্রদ্ধা জিনিসটা আপনা আপনিই উঠে যায়। ধরুন, কোন কারণে আপনার রক্তচাপ বেড়ে গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার বললেন আপনাকে আইসিউতে ভর্তি করাতে হবে। আবার,আপনি অন্য এক ডাক্তারের কাছে গেলেন। তিনি বললেন চিন্তার কিছু নেই। একটু বিশ্রাম নিলে সব ঠিক হয়ে যাবে। প্রথম ডাক্তার টাকার কাছে নিজের সততাকে অনেক আগেই বিক্রি করে দিয়েছেন। আমাদের চারপাশে এমন উদাহরণের সংখ্যা নেয়াহেত কম নয়।
রেদোয়ান মাসুদ বলেছেন, “যখন দেখবেন কোনো দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিরা নিজের পরিবারেও তার রাজনৈতিক প্রভাব খাটায় তখন বুঝে নিবেন সে দেশের পুরো রাজনীতিক অবস্থাই কুলষিত হয়ে গেছে।” অসৎ রাজনীতিবিদরা শুধু ব্যক্তির জন্য নয় পুরো সমাজের জন্যই ক্ষতিকর। এই ধরনের লোকেরা যতই শিক্ষিত বা মিষ্টভাষী হোক না কেন এদের মুখে মধু আর অন্তরে বিষ থাকে। আমরা জনগণেরা যদি বিশেষ কোন দলের প্রতি অন্ধ বিশ্বাস থেকে এই ধরনের প্রার্থী নির্বাচিত করি তবে তার ফল আমাদেরই ভোগ করতে হয়।
মন্তব্যঃ
দুর্জন ব্যক্তি আমাদের যতই নিকট আত্মীয় কিংবা যতই প্রভাবশালী হোকনা কেন আমাদের উচিত তার সহচর্য ত্যাগ করা। কারণ, এই ধরনের ব্যক্তি যে কোন সময় আচমকা ছোবল দিয়ে তার বিষাক্ত রূপ দেখিয়ে দিতে পারে। তাই একথার সাথে দ্বিমত করার কোন সুযোগ নেই যে, দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য।
আরও পড়ুন- ভাবসম্প্রসারণঃ ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ
আরও পড়ুন- ভাবসম্প্রসারণঃ দুর্নীতি জাতীয় জীবনে অভিশাপস্বরূপ
আরও পড়ুন- ভাবসম্প্রসারণ: কীর্তিমানের মৃত্যু নেই / মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়
আরও পড়ুন- ভাবসম্প্রসারণঃ পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি
আরও পড়ুন- ভাবসম্প্রসারণঃ একতাই বল