in

দাঙ্গাল সিনেমায় আমির খানের ভাঙ্গা গড়া

দাঙ্গাল সিনেমায় আমির খান ওজন কীভাবে কমালেন?

দাঙ্গাল সিনেমায় আমির খানের ভাঙ্গা গড়া
দাঙ্গাল সিনেমায় আমির খানের ভাঙ্গা গড়া

পরিচালক নিতেশ তিওয়ারী ঠিক করলেন কুস্তিগির মহাবীর সিং ফোগাট চরিত্রকে কেন্দ্র করে তার দর্শকদের নতুন স্বাদের একটি চলচ্চিত্র উপহার দেবেন৷ আর মহাবীর সিং এর চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ডাক পড়লো বলিউডের মি. পারফেকশনিস্ট খ্যাত আমির খানের৷

আমির খান বরাবরই চ্যালেঞ্জিং কাজ করতে ভালোবাসেন সে কথা কারোই অজানা নয়। তাই তিনি ঠিক করলেন ৫২ বছর বয়সী মহাবীর সিংকে তিনি পর্দায় এমনভাবে ফুটিয়ে তুলবেন যেন তার দর্শকদের মনে হয় তারা সত্যিকারের মহাবীর সিংকে দেখছেন। তাই নিজের বডি ফিটসেনের কথা ভুলে আমির খান দর্শকদের সামনে উপস্থিত হলেন ৩৭% বডি ফ্যাট সমেত ৯৭ কেজি ওজন নিয়ে।

২০১৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর মুক্তি পায় সে বছরের সবচেয়ে আলোচিত সিনেমা “দাঙ্গাল”। মুক্তির পরেই সর্বত্র দাঙ্গালের জয়জয়কার। ৭০ কোটি রুপি ব্যয়ে নির্মিত ছবিটির মোট আয় ২ হাজার কোটি রুপির বেশি। এই সিনেমাটি ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আয়কারী সিনেমা। এটি প্রতিবেশী দেশ চীনেও ব্যাপক আলোচিত হয়েছিল। চীনে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করা বিদেশী ২০টি সিনেমার ভিতরে দাঙ্গাল অন্যতম।

অন্যান্য ছবির মত দাঙ্গাল ছবিতেও আমির খান দুর্দান্ত অভিনয় করে কুড়িয়েছিলেন ভূয়সী প্রশংসা। তবে, সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল এই ছবির জন্য আমির খানের ওজন বাড়ানো। ৯৭ কেজি ওজন থেকে কিভাবে আমাদের এই প্রিয় অভিনেতা তার শরীরের বাড়তি মেদ ঝড়িয়েছিলেন? শুরুটা কিভাবে করেছিলেন তিনি? এখন শোনাব সেই গল্প।

ছবিটির শতকরা ৮০ ভাগ অংশে আমির খানকে অভিনয় করতে হয়েছে মহাবীর সিং এর বয়স্ক চরিত্রে। বাকি মাত্র ২০ ভাগ সময়ে মহাবীর সিং এর মধ্য বয়সের কিছু অংশ দর্শক পর্দাতে দেখেছে। আমির খান চাইলেই পারতেন মেকিভাবে নিজেকে পর্দায় উপস্থাপন করতে। এক্ষেত্রে তাকে কিছু বলার সাহস পরিচালক করতেন বলে মনে হয় না। কিন্তু পারফেকশনিস্ট বলে কথা! আমির নিজেই চাইলেন ওজন বাড়িয়ে মহাবীর সিং এর চরিত্রে নিজেকে সমর্পণ করতে।

আমির খান সিদ্ধান্ত নেন চরিত্রের মোটা অংশের কাজ আগে করে নেবেন। পরে ওজন ঝড়িয়ে বাকি অংশের কাজ করবেন। যেমন কথা, তেমন কাজ। মোটা অংশের কাজ শেষ করে ওজন কমানোর মিশন নিয়ে আমির প্রথমে যান আমেরিকার অ্যারেজোনা প্রদেশের ক্যানিয়ন রেঞ্জ অঞ্চলে। তার লক্ষ্য তখন শুধু একটাই -” শরীরের বাড়তি ওজন ঝরিয়ে ফেলা”।

সপ্তাহে দুই কেজি ওজন কমানোর লক্ষ্য নিয়ে শুরু হয় আমিরের মিশন। এক সাক্ষাৎকারে আমির খান জানান, দিনের প্রায় ৭ থেকে ৮ ঘন্টা তিনি কোন না কোন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন। খুব সকালে তিনি বেরিয়ে পড়তেন মাউন্ট ট্র্যাকিং এর জন্য। সকাল ৭টায় বেরিয়ে প্রায় সাড়ে এগারোটার সময় তিনি পাহাড়ের উপরে পৌঁছতেন। এর মধ্যে প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘন্টা তিনি কাটাতেন ট্র্যাকিং করে। এমনকি সকালের খাবারও তিনি ব্যাগে ভরে সাথে করে নিয়ে যেতেন।

কি ভাবছেন? সাড়ে তিন ঘন্টা মাউন্ট ট্র‍্যাকিং করে নিশ্চয় আমির ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন আর ক্লান্তির রেশ কাটাতে দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্রাম নিয়েছেন? অন্য কেউ হলে নিশ্চয় এমনটিই করতো। কিন্তু নামটি যে আমির খান!!! যিনি বরাবরই ছক ভেঙ্গে নিজের ব্যক্তিত্বকে ভিন্নরূপে উপস্থাপন করতে পছন্দ করেন। আমির মাউন্ট ট্র‍্যাকিং থেকে দুপুর ১২টায় ফিরে এসে খাবার খেয়ে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিশ্রাম নিতেন। এরপর আবার শুরু হতো কর্মযজ্ঞ।

দুপুর ২টা থেকে ৩টা অবধি চলতো তার জিম ট্রেনিং। পরবর্তী গন্তব্যস্থল ছিল সুইমিংপুল। বিকেল ৩টা থেকে  ৪ টা অবধি কার্ডিও এক্সাসাইজের জন্য আমিরকে সুইমিংপুলে যেতে হত। সুইমিংপুল থেকে ফিরে এসে তিনি ৪ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত সাইকেলিং নয়তো টেনিসে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন। তিনি তার এই ব্যস্ততম প্রশিক্ষণ শেষ করতেন দু’ঘন্টা হাঁটাহাটি দিয়ে।

আমাদের ওজন কমানোর হিসেবটা অতি সরল। আমরা খাবারের মাধ্যমে যে পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করি তার চেয়ে বেশি ক্যালরি যদি কাজের মাধ্যমে খরচ করি তবে আমাদের ওজন আপনা আপনি কমতে শুরু করবে৷ এ থিওরি নিশ্চয়ই আমাদের সকলের জানা আছে৷ আমির এক সাক্ষাৎকারে জানান, আমেরিকা থাকাকালীন তিনি ১৫০০ ক্যালরির সমপরিমাণ খাবার গ্রহণ করতেন আর সারাদিনের প্রশিক্ষণের ফলে তার খরচ হতো ৩৫০০-৫০০০ ক্যালরির মতো। অর্থাৎ প্রতিদিন তিনি নিজের শরীর থেকে ২০০০-৩৫০০ ক্যালরি ঝড়িয়ে ফেলতেন। উল্লেখ্য, মানুষের শরীর থেকে বাড়তি ৩৫০০ ক্যালরি ঝড়িয়ে ফেললে কেবল আধা কেজি ওজন কমে।

সপ্তাহে যদি কোন মানুষের আধা কেজি ওজন কমে তবে সেটিকে বলা হয় নরমাল রেট। আর যদি এক কেজি ওজন কমে তবে সেটিকে বলা হয় ফাস্ট রেট। আমির খান আমেরিকা থাকাকালীন সময়ে সপ্তাহে কমাতেন দুই কেজি, মানে ডাবল ফাস্ট রেট। নরমাল রেট অনুসারে যে পরিমাণ ওজন ১৪ সপ্তাহে কমে সেটি তিনি কমিয়েছিলেন মাত্র ৩ সপ্তাহে!!!

এতক্ষণ বলছিলাম আমির খানের ফ্যাট টু ফিট মিশনের আমেরিকা পর্ব। নিজ দেশে ফিরে আসার পরেও তাকে কঠোর প্রশিক্ষণের মধ্যে সময় পার করতে হয়েছিল। সে প্রশিক্ষণের কিছুটা অংশ ইউটিউবের কল্যাণে আমরা দেখেছি৷ সব মিলিয়ে বলা যায় আমির খানের মতো অভিনেতা একদিনে জন্ম নেয়না, এর পেছনে থাকে অনেক দিন, অনেক বছরের ত্যাগ ও শ্রম।