বিলিয়ন রুপির ছড়াছড়ি যেই বলিউডে, সেখানে প্রতি বছর ৮৬% চলচ্চিত্র বিনিয়োগের অর্থ ঘরে তুলতেই হিমশিম খায়। সিংহভাগের কপালেই জোটে ফ্লপ তকমা।
লগ্নিকৃত অর্থই যেখানে ওঠে না। মুনাফা তো দূর কি বাত। তবে সব হিসেব নিকেশ পাল্টে দিতে সিদ্ধহস্ত আমির খান। নিজ কাঁধেই ইন্ডাস্ট্রির সাফল্যে যেমন অবদান রাখেন, তেমনি সামাজিক বার্তা পৌছাতেও পিছপা হন না। প্রযোজক, পরিবেশক নিশ্চিন্তে বিনিয়োগ করেন তাঁর প্রজেক্টে। এর পেছনের রহস্য কী?
রহস্য নয়, কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং সদিচ্ছাটাকেই মূল চালিকাশক্তি মানেন তিন দশক ধরে বলিউড দাপিয়ে বেড়ানো মিস্টার পারফেকশনিস্ট। তবে সাফল্যের একেবারে গোড়ার কারণ খুঁজতে বললে বিনীত সুরে জানান, ‘যখন কোন গল্প আমার পছন্দ হয়, আমি ঠিক করে নেই এটাই আমি করব। প্রযোজককে সেই নিশ্চয়তাও দেই। এই দায়িত্বটা আমি কাঁধে তুলে নেই। দেখুন, আমি পারফর্মিং আর্টসের একদম মৌলিক অবস্থান থেকে শুরু করি। সেখানে কী হতো? পথে ঘাটে একটা তামাশা বা অভিনয় দেখানো হতো, লোকজন সে অনুসারে পয়সা দিতো। আমিও এই নিয়মটাই অনুসরণ করি।‘
‘আমি একটা দায়িত্ব বোধ করি প্রতিটি সিনেমার জন্য। এক রুপিও পারিশ্রমিক নেই না সে কারণেই। যদি সেই ছবি ব্যবসা করে, বিনিয়োগ, খরচ উঠে যায় তখন আমি একটা লভ্যাংশ গ্রহণ করি। সিনেমা সফল না হলে আমি নিজে আয় করবো না, কিন্তু কারো ক্ষতি হতে দেব না।‘
সে কারণেই যখন ৬০০ কোটির ক্লাবে পৌঁছায় দাঙ্গাল (২০১৬), তখন নির্দ্বিধায় লভ্যাংশের ১৭৫ কোটি ঘরে ওঠে আমিরের।
বাবা ছিলেন খ্যাতনামা প্রযোজক তাহির খান, তাঁর ছায়াতেই বেড়ে ওঠা। শৈশবেই বাবার কল্যাণে ছবির চিত্রনাট্য, গল্প নিয়ে তুমুল আড্ডা বসতে দেখেছেন বৈঠকখানায়। সেই অভ্যাসটাই পরিণত বয়সটাকে প্রভাবিত করেছে।
- প্রথম ফিল্মের চিত্রনাট্য লিখেছিলেন আমির
- লগনের প্রস্তাব প্রথম দফায় ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আমির, পরে ইতিহাস গড়ে সেই ছবিই
শত কোটির ক্লাব ছাড়ায় তো অনেকের ছবিই। সেদিকে আমিরের ভিন্নতা কোথায়? ভিন্নতা উদ্দেশ্যে। দৃঢ় কণ্ঠে দাবি করেন মাত্র তিনটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে একটি ফিল্মের কাজে হাত দেন তিনি। প্রথমত, ছবির গল্প শুনে মন থেকে সেটি বানাবার ইচ্ছে, দ্বিতীয়ত, দর্শকের সন্তুষ্টি এবং সর্বশেষে, বিনিয়োগকারীর ক্ষতির মুখ থেকে নির্ভার অবস্থান।
আমিরের মতে, সিনেমা সংশ্লিষ্ট সকলের লাভজনক অবস্থা নিশ্চিত করতে পারলেই উন্নতি ঘটবে ইন্ডাস্ট্রির। সেজন্যই নিজের কোন ছবি লাভ করলে প্রথমেই বিপণন বিভাগকে, এরপর প্রযোজকের হাতে তুলে দেন অর্থ। এরপর যদি কোন লভ্যাংশ বাকি থাকে তবেই নিজের পকেটে পোরেন তা।
আলাপচারিতায় তাঁর চিত্রনাট্য নিয়ে পর্যালোচনার রকমফের উঠে আসে। বস্তুত গল্প আর গল্পকারকেই কৃতিত্ব দেন সম্পূর্ণটাই। তবে বিস্মিত করেন আরেক তথ্যে। প্রথম ছবি ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তাক’ (১৯৮৮) আর ‘জো জিতা বোহি সিকান্দার’ (১৯৯২) এর চিত্রনাট্যও আংশিক লেখা তাঁর।
তবে স্ক্রিপ্ট নিয়েও খেদ আছে। আফসোসের সুরে জানান, শুধু তাঁর কথা ভেবে লেখা চরিত্রে কাজ করে স্বচ্ছন্দ্য নন, তবুও অনুরোধ- উপরোধে যা করেছেন তাতে তৃপ্তি পাননি।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত মুম্বাই স্ক্রিনরাইটার কনফারেন্সে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির বাইরেও তিনি তুলে ধরেন সিনেমার খুঁটিনাটি।
গল্প আর চিত্রনাট্যের মধ্যকার তফাৎ প্রসঙ্গে বেরিয়ে আসে চমকপ্রদ তথ্যও। লগনের গল্প শুনে নাকি আশুতোষ গোয়াড়িকরকে মুখের ওপর ‘না’ই করেছিলেন একদম। তবে দমে যাননি আশু, তিন মাস পর তাগড়া স্ক্রিপ্ট হাতে ঠিকই আমিরের দ্বারস্থ হন। এর ফলশ্রুতি তো দর্শকের জানাই।
তাঁর মত এতটা নিয়মানুবর্তিতার সাথে বছরের পর বছর দাপিয়ে বেড়ানো অভিনেতার সংখ্যা নগণ্যই। এই অবিচল ধারা বজায় রাখায় চমৎকার স্ক্রিপ্টের পাশাপাশি সাহসটাও প্রয়োজনীয়। লগনের বেলাতেও নির্ভীকতাই এগিয়ে রেখেছিল আমিরকে। অন্য প্রযোজকেরা সেসময় এত বিশাল পরিসরের কাজে হাত দেবার সাহস রাখেনি, সেদিকে আমিরের দূরদৃষ্টিই বদলে দেয় বলিউডের রুচি।
লিখেছেন- সারাহ তামান্না
আরও পড়ুন- দাঙ্গাল সিনেমায় আমির খান ওজন কীভাবে কমালেন?
আমির খানের সাক্ষাৎকারটি উপভোগ করুন-