in

ভাবসম্প্রসারণঃ দশের লাঠি একের বোঝা

ভাবসম্প্রসারণঃ দশের লাঠি একের বোঝা
ভাবসম্প্রসারণঃ দশের লাঠি একের বোঝা

দশের লাঠি একের বোঝা

মূলভাবঃ অনেক ক্ষেত্রে কোন কাজ একা একজন মানুষের পক্ষে করা খুবই দুষ্কর বা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠে।কিন্তু সেই একই কাজ যখন অনেকে মিলে করার প্রচেষ্টা করা হয় তখন কাজটি হয়ে ওঠে সর্বাঙ্গসুন্দর এবং সহজসাধ্য। এজন্যই বলা হয়ে থাকে দশের লাঠি একের বোঝা

সম্প্রসারিত ভাবঃ একজন মানুষকে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কোনো না কোনো কাজের মধ্য দিয়েই যেতে হয়। এ ক্ষেত্রে জীবিকা নির্বাহের জন্য হোক বা অন্য যে কোন প্রয়োজন মেটাতে হোক, প্রতিনিয়তই ছোট-বড়, সহজসাধ্য, কষ্টসাধ্য, দুষ্কর বিভিন্ন রকমের কাজ আমাদের করতে হয়। শ্রমসাধ্য এবং বড় বড় কাজ অনেক সময় কোনো একা মানুষের ক্ষেত্রে করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। আর যদি কোনো কারণে কাজটি একজনের পক্ষে করা সম্ভব হয়ে উঠে তারপরেও কাজটি সুন্দরভাবে সমাপ্ত করতে অনেক সময় লেগে যায়। কিন্তু যখন দশজন মিলে সে কাজটি করতে যায় তখন কাজটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়। সম্মিলিত কাজের মধ্যে আছে সকলের অসীম উৎসাহ, দুর্দান্ত চেষ্টা, কাজটিকে সঠিক এবং উত্তম ভাবে সম্পন্ন করার উদ্দীপনা। তখন কাজটি সকলের নিকট সহজসাধ্য হয়ে উঠে। সকলে মিলে একসাথে কাজ করার ফলে  কাজটি দ্রুত সম্পন্ন হয়, ফলে সময় কম লাগে।

সকলে যদি একজোট হয়ে কোন কাজে লাগে তখন তাদের পরাস্ত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি, কাউকে যদি একটি মাত্র লাঠি দিয়ে তা ভাঙতে বলা হয় তাহলে যে কেউ তা অতি সহজেই ভেঙে ফেলতে পারে। কিন্তু একই ধরণের দশটি লাঠি যদি একজোট করে একসাথে ভাঙতে বলা হয় তাহলে তা যে কারো পক্ষে ভাঙ্গা দুরূহ ব্যাপার হয়ে যায়। এককভাবে কোনো কাজের ক্ষেত্রে অসফলতা হয়ে ওঠে ব্যক্তিগত দুঃখ ও দুর্ভোগের কারণ। এক্ষেত্রে কাজটি সঠিকভাবে সুসম্পন্ন না করার কারণে সৃষ্ট সমস্যা থেকে সহজে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু সকলে মিলে একজোট হয়ে কাজ করার পরেও যদি সে কাজে সফলতা না আসে, তখন তা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির অসফলতা হিসেবে গণ্য হয় না। তখন কাজটি অসম্পূর্ণ বা ত্রুটি যুক্ত হলেও সকলে মিলেই এর থেকে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা করা সম্ভব। যেহেতু সকলে মিলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়, এক্ষেত্রে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান হয়ে উঠে সহজসাধ্য এবং কম সময় সাপেক্ষ।

সব মানুষেরই সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকে যে কোনো কাজ শুরু করলে তা সর্বাঙ্গ সুন্দরভাবে সুসম্পন্ন করা। কিন্তু সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কোন কাজের ক্ষেত্রে হার বা জিত গৌণ বিষয় হয়ে উঠে। তখন সকলে মিলে একত্রে কাজ করাটাই মুখ্য বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সমবেত কাজ জয়-পরাজয় এর অনেক ঊর্ধ্বে। তখন বিজয়ের আনন্দ সকলের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়া যায়, সেই সাথে কাজের ব্যর্থতার গ্লানিও একা বহন করতে হয় না। তখন সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, ব্যর্থতা সকলের উপরেই সমান প্রভাব ফেলে। এজন্যই হয়তো কবি বলেছেন, “দশে মিলি করি কাজ। হারি জিতি নাহি লাজ”।

কোন জাতি যখন ঐক্যবদ্ধ থাকে না, তখন তাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা এবং অরাজকতা সৃষ্টি করা খুবই সহজ কাজ হয়ে যায় শত্রুদের কাছে। তাই কোন দেশ এবং জাতির উন্নয়ন এর জন্য সেই দেশবাসীকে একত্রে একযোগে কাজ করতে হবে। পৃথিবীর প্রত্যেকটি উন্নত দেশ সাক্ষী, তাদের দেশের অগ্রগতির জন্য সমগ্র জাতি একযোগে প্রচেষ্টা, পরিশ্রম এবং কঠোর সাধনা করেছে। কেবলমাত্র সরকার বা গুটি কয়েক ব্যক্তির পক্ষে কোনো দেশ বা জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া একেবারেই সম্ভব নয়। এই জন্য সকলের সার্বিক অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক। দেশ ও জাতির জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এর জন্য সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। সমগ্র জাতি একত্র হলেই কেবল মাত্র দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব এবং সে জাতি একটি শক্তিশালী জাতিতে রূপান্তরিত হতে পারে। এর অসংখ্য উদাহরণ ইতিহাসের পাতায় পাতায় রয়েছে। যেমন উদাহরণ হিসেবে ধরে নিতে পারি, ১৯৫২সালের ভাষা আন্দোলনের কথা। যখন পাকিস্তানের সামরিক শাসক আমাদের মাতৃভাষাকে কেড়ে নিতে চেয়েছিল, তখন সমগ্র বাঙালি জাতি একত্র হয়ে লড়েছিল নিজের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য। যার ফলস্বরূপ আজ আমরা বাংলাকে পেয়েছি আমাদের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও বীর বাঙ্গালী একত্রিত হয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকবাহিনী থেকে নিজের দেশকে স্বাধীন করার জন্য।

মন্তব্যঃ সকলে মিলেমিশে কাজ করার মধ্যেই আছে অসীম আনন্দ। সম্মিলিতভাবে কোন কাজ করলে সেই কাজের সফলতা বা ব্যর্থতা আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠে না। তখন কাজে অংশগ্রহণ করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে সকলের কাছে বিবেচ্য হয়ে থাকে। তখন সফলতার গৌরব এবং ব্যর্থতার গ্লানি সকলের উপর সমান পরিমাণ প্রভাব বিস্তার করে। তাই আমরা বলে থাকি দশের লাঠি একের বোঝা।

গুরুত্বপূর্ণ সকল ভাবসম্প্রসারণ-

১। ভাবসম্প্রসারণঃ পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি

২। ভাবসম্প্রসারণঃ একতাই বল

৩। ভাবসম্প্রসারণ: কীর্তিমানের মৃত্যু নেই / মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়

৪। ভাবসম্প্রসারণঃ ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ

৫। ভাবসম্প্রসারণঃ দুর্নীতি জাতীয় জীবনে অভিশাপস্বরূপ

৬। ভাবসম্প্রসারণঃ দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য

৭। পরের অনিষ্ট চিন্তা করে যেই জন

৮। ভাবসম্প্রসারণ: সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই

৯। ভাবসম্প্রসারণঃ সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত

১০। ভাবসম্প্রসারনঃ আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে..

১১। ভাবসম্প্রসারণঃ অর্থই অনর্থের মূল

১২। ভাবসম্প্রসারণঃ পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না।

১৩। ভাবসম্প্রসারণঃ গ্রন্থগত বিদ্যা পরহস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন

১৪। ভাবসম্প্রসারণঃ লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু

১৫। ভাবসম্প্রসারণঃ ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল

১৬। ভাবসম্প্রসারণঃ এ জগতে হায়, সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি। রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।

১৭। ভাবসম্প্রসারণঃ যে সহে সে রহে

১৮। ভাবসম্প্রসারণঃ গতিই জীবন, স্থিতিতে মৃত্যু

১৯। ভাবসম্প্রসারণঃ একবার না পারিলে দেখ শতবার

২০। ভাবসম্প্রসারণঃ যেমন কর্ম তেমন ফল

২১। ভাবসম্প্রসারণঃ যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন

২২। ভাবসম্প্রসারণঃ ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়

২৩। ভাবসম্প্রসারণঃ জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান

২৪। ভাবসম্প্রসারণঃ রাত যত গভীর হয় প্রভাত তত নিকটে আসে

২৫। ভাবসম্প্রসারণঃ ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।

২৬। ভাবসম্প্রসারণঃ সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই

২৭। ভাবসম্প্রসারণঃ তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন

২৮। ভাবসম্প্রসারণঃ আলস্য এক ভয়ানক ব্যাধি

২৯। ভাবসম্প্রসারণঃ যে নদী হারায়ে স্রোত চলিতে না পারে, সহস্র শৈবালদাম বাঁধে আসি তারে