in

ভাবসম্প্রসারণঃ ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ 

ভোগে প্রকৃত সুখ নাই, ত্যাগেই মনুষ্যত্বের প্রকাশ

ভাবসম্প্রসারণঃ ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ 
ভাবসম্প্রসারণঃ ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ 

ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ / ভোগে প্রকৃত সুখ নাই, ত্যাগেই মনুষ্যত্বের প্রকাশ

মূলভাবঃ ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ। মানুষ হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত কিছু চাহিদা থাকে। এটা যেমন সত্যি তেমনি সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে আমাদের সর্বপ্রথম দায়িত্ব হচ্ছে মানুষ হওয়া, অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া। আর সহানুভূতি ও মনুষ্যত্ব প্রকাশ পায় কোন ব্যক্তির ত্যাগী মনোভাবের মাধ্যমে। নিজেকে স্বার্থের দেয়ালে আবদ্ধ করে রাখাতে হয়তো কিছুটা পার্থিব সুখ অনুভূত হতে পারে। কিন্তু যে ব্যক্তি অন্যের কল্যাণ হেতু নিজের স্বার্থ ত্যাগ করতে পারে তিনিই হচ্ছেন সর্বশেষ্ঠ মানবিক গুণাবলীর অধিকারী। কথায় আছে “সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে মোরা পরের তরে “।

সম্প্রসারিত ভাবঃ মানুষ সামাজিক জীব এটা আমাদের কারো অজানা নয়। কিন্তু, সামাজিক জীব হিসেবে আমাদের সকলেরই সমাজের প্রতি, সমাজে বসবাসরত অন্যান্য মানুষের প্রতি কিছু দায়িত্ব থাকে সেটি আমরা অনেক সময় ভুলে যাই। ভোগাকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি থেকে যতক্ষণ না কোন মানুষ নিজেকে মুক্ত করতে পারে ততক্ষণ সে প্রকৃত মনুষ্যত্ব অর্জন করতে পারেনা। যখন আমরা কেবল নিজেকে নিয়ে ভাবতে ব্যস্ত থাকি তখন আমরা হয়ে পড়ি আত্নকেন্দ্রীক। আর যখন অন্যের জন্য ভাবতে শিখে যাই তখন জীবন হয়ে উঠে অর্থবহ।

ধরুন, আপনি ঠিক করলেন বেশ জাঁকজমকভাবে আপনার জন্মদিন পালন করবেন। দামী রেস্তোরাঁয় কাটা জন্মদিনের কেক আপনাকে যতখানি না আনন্দ দেবে তার চেয়ে বেশি খুশি আপনি খুঁজে পাবেন যদি রেস্তোরাঁর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ক্ষুধার্ত শিশুদের ক্ষুধা নিবারণ হয় আপনার সেই জন্মদিনের কেক দিয়ে। ভোগের কোন সীমা নেই। কথায় আছে মানুষ যত পায় তত চাই। ভোগের সীমারেখা টানা অসম্ভব। পরের তরে নিজের স্বার্থ বলিদান বর্তমানে এক প্রকার রূপকথার গল্পের মত শোনায়৷ ইতিহাসের পাতায় একটু উঁকি দিলে দেখা যায় রফিক, সালাম, জব্বারেরা নিজেদের মায়ের ভাষা রক্ষার্থে নিজেদের প্রাণ অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছিল। আর তাদের এই আত্নত্যাগ তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখবে যুগের পর যুগ৷

আমাদের প্রথম শিক্ষক আমাদের মাতা-পিতা এবং পরিবার আমাদের প্রথম বিদ্যালয়। ঈদ হোক কিংবা পূজা, পরিবারের সব সদস্যদের নতুন পোশাক কেনা হলেও বাবারা নিজের জন্য নতুন কাপড় কেনার কথা যেন ইচ্ছে করেই ভুলে যান৷ পরিবারের অন্য সদস্যদের মুখের হাসিতেই যেন তার সুখ৷ পরিবারের অন্য সদস্যদের ক্লান্তি থাকলেও মা নামের রেলগাড়ী সারাদিন চলতেই থাকে, যেন পরিবারের অন্যদের কিঞ্চিৎ অসুবিধা না হয়। ত্যাগ মানুষকে কতটা মহিয়ান করতে পারে তার সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ আমাদের বাবা-মা।

অনেকেই মনে করে থাকে জীবন মানে প্রচুর ধন সম্পদ অর্জন। আর সেই সব ধন সম্পদ ভোগ করা মানেই জীবন। আসলে এমন ধারণা পোষণ করা মানে সংকীর্ণ মনের পরিচয় দেওয়া৷ যদি শুধু মাত্র দামী দামী পোশাক, খাবার ভক্ষণের মধ্যেই জীবনের স্বার্থকতা নিহিত থাকতো তবে মানবিকতা নামের শব্দটা শুধুমাত্র ডিকশনারীতেই সীমাবদ্ধ থাকতো৷ জীবনের প্রকৃত সুখ অর্জন করা যায় মহৎ কর্মের মাধ্যমে। কোন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, আবেগ ও মননশীলতার প্রকাশ ঘটে তার কর্মের মাধ্যমে। অন্যের কল্যাণে নিজের স্বার্থ যে ত্যাগ করতে পারে সে হয়ে উঠে সকলের ভীষণ প্রিয় একজন। আর শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা মানুষেরা নিজেদের চারপাশে এমনভাবে স্বার্থপরতার দেওয়াল তুলে রাখে একসময় সে দেয়ালে তারা নিজেরাই আটকা পড়ে যায়। তাদের চারপাশ জুড়ে কেবল থাকে সুনশান নিরবতা।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যেক বাঙ্গালীর জন্য একটি আবেগের জায়গা। সেই মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজেদের কথা না ভেবে লাখো মানুষ প্রাণ হারানোর ভয়কে কোণঠাসা করে যুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলো বলে আজ আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের বাসিন্দা। ত্যাগের মহিমা ঠিক কতখানি তার একটি বড় প্রমাণ আমাদের শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের কারণেই আজ আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশ।

মন্তব্যঃ যদি সত্যি জীবনকে স্বার্থক ও অর্থবহ করে তুলতে হয় তবে মনে রাখতে হবে শুধু ভোগের নাম জীবন নয়। ত্যাগ নামের এই দুই অক্ষরের শব্দের মধ্যে নিহিত রয়েছে মানব জনমের প্রকৃত স্বার্থকতা। কবির ভাষায়

‘নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তাঁর ক্ষয় নাই।’

আরও পড়ুন- ভাবসম্প্রসারণ: কীর্তিমানের মৃত্যু নেই / মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়

আরও পড়ুন- ভাবসম্প্রসারণঃ একতাই বল

আরও পড়ুন- ভাবসম্প্রসারণঃ পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি