তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন উক্তিটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের। উক্তিটি বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায়ের ‘কপাল্কুন্ডলা’ উপন্যাস হতে সংকলিত।
হিংসা-বিদ্বেষ, মারামারি, হানাহানি বর্তমান পৃথিবীর নিত্য দিনের ঘটনা। কে কার চেয়ে বেশি নিষ্ঠুর হবে সেই প্রতিযোগিতাই যেন চলছে। দুই দিনের দুনিয়াতে আমরা কেউ অমর হবো না। ক্ষমা, দয়ার মতো মানবিক গুণাবলী একটি শান্তিপূর্ণ পৃথিবীর জন্য খুবই দরকার। নিম্নে তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন ভাবসম্প্রসারণটি তুলে ধরা হলো।
তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাবঃ মানুষ এই পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল এবং বুদ্ধিমান প্রাণী। বিবেক আমাদের মানবতার একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। মানুষ কোনো বিশেষ মন্দ পথের পরিবর্তে মানবীয় শালীনতার আদর্শ অনুসরণ করে জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারে।
সম্প্রসারিত ভাবঃ আমাদের কখনোই অন্যের অন্যায়, অমানবিক বা মন্দ আচরণ অনুকরণ করার চেষ্টা করা উচিত নয়। কঠিন সময়েও আমরা সত্য, ন্যায় ও মানবতার আদর্শে আশা ও শক্তি পেতে পারি। সত্যিকারের মানুষ হতে হলে মানুষকে মানবতার সাধনা করতে হবে। বলা হয় সকল কিছুর মধ্যেই একটি ভালো দিক থাকে এবং আরেকটি খারাপ দিক থাকে। ঠিক মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ যেমন হয় তেমনই। জীবনে চলার পথে আমাদের ভালো-মন্দ সব রকম মানুষের সাথেই পরিচয় হয়। সব মানুষের চরিত্র, বৈশিষ্ট্য এবং মানসিকতা এক রকম নয়। পৃথিবীতে দুই রকম মানুষ রয়েছে- একদল আছে যারা ভালো কাজ করে এবং অপর দল খারাপ কাজ করে। কিন্তু একজন প্রকৃত ভালো মানুষ অন্যের খারাপ কাজকে উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করেন না। অন্যায়ের প্রলোভনে তারা প্রলুব্ধ হন না।
একজন সুষ্ঠু বিচার বিবেচনা সম্পন্ন মানুষ কখনোই অন্য যে কোনো মন্দ কাজের খারাপ দিককে কখনোই উদাহরণ হিসেবে নিজের জীবনে ব্যবহার করেন না। এমন মানুষেরা সব সময় চেষ্টা করেন সকল কাজের মধ্যে ভালো কিছু খুঁজে বের করতে এবং সেই ভালো চিন্তা ভাবনাকে নিজের মধ্যে ধারণ করতে। অন্যায় পথের মোহ তাদের আকৃষ্ট করতে পারে না। অন্যায় পথের অর্থ-বিত্ত অর্জনের সব রকমের মোহ থেকে এরা সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। এই জন্যই কবি সত্যেন্দ্রনাথ লিখেছেন, “কুকুরের কাজ কুকুর করেছে কামড় দিয়েছে পায়, তা বলে কুকুরে কামড়ানো মানুষের শোভা পায়? “।
একজন বিচার বিবেচনাবোধ সম্পন্ন মানুষ সর্বদা সততা, ন্যায় এবং মানবিকতার পথ অনুসরণ করেন। তারা সকলের জন্য উদাহরণস্বরূপ। এই সকল উত্তম মানুষই হলো সমাজের সকলের জন্য আদর্শ। এদের জীবনযাপন হয় সহজ সরল অনাড়ম্বর। অপরপক্ষে চিন্তা করলে দেখা যায় যারা অধম তারা থাকে স্বার্থান্বেষী এবং অর্থের লোভী। নিজের স্বার্থই তাদের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়। অন্যের সুবিধা-অসুবিধা ভালো-মন্দে এদের কিছুই আসে যায় না। ছলে বলে কৌশলে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করার প্রচেষ্টাই এদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। এদের স্বভাব এবং প্রকৃতি হলো নীচ, এরা হীনমন্য এবং অমানবিক। অবৈধ পথে উপার্জিত ধন সম্পত্তি অর্থ-বিত্ত এবং ক্ষমতার দাম্ভিকতাতে এরা ধরাকে সরা জ্ঞান করে। অন্যকে শোষণ, লুন্ঠন এবং নিপীড়নের মাধ্যমে এরা নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধিতে আনন্দ খুঁজে পায়। অন্যকে অত্যাচার করে, অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করার মাধ্যমে এই সকল মানুষ খুঁজে পায় নিজের মনের বিকৃত পরিতৃপ্তি। ঈর্ষা, বিদ্বেষ হিংসা, জিঘাংসা এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। অর্থবিত্ত, অন্যায়ভাবে অর্জিত ক্ষমতার জোরে এরা হয়তো সাময়িক সময় সাপেক্ষে দাপটে রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু সর্বোপরি বিচারে এরা সমাজের সকলের কাছে ঘৃণিত এবং অতিশয় নিন্দনীয় ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হন। ইতিহাস এদের মনে রাখে নি; আর যদি কোনো কারণে রেখেও থেকে থাকে সেটি ঘৃণার কারণে। যাতে করে ভবিষ্যতে কেউ কখনো এ ধরনের কাজ না করেন। এইসব নীচ এবং অধম লোকের জীবন কাহিনী কখনোই কোনো উত্তম মানুষের অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে গণ্য হতে পারে না। এই সকল মানুষের সঙ্গ সর্বদাই সকল স্তরের মানুষের কাছে পরিত্যাজ্য।
বস্তুত অধম না হয়ে সকল মানুষই চায় উত্তম হওয়ার সাধনা করতে। যাতে তারা মনুষ্যত্ববোধ নিজেদের মধ্যে জাগ্রত করতে পারে। সকল মানুষই চায় নিজেদের মনুষত্ববোধ, ন্যায় বিচার বিবেচনা বোধ নিয়ে একে অপরের সাহায্য করে দেশ ও জাতি এবং গোটা বিশ্বের উন্নয়নের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করার মাধ্যমে নিজের জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট সাধন করতে। মনুষ্যত্ববোধের এই সাধনায মানুষকে প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করে। মানুষ তার মানবিক গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমে সকলকে অনুপ্রাণিত করে। অনেক সময় দেখা যায় অধম মানুষ উত্তম মানুষের সাথে চলার মাধ্যমে নিজেকে উত্তমে রূপান্তরিত করার প্রচেষ্টা করে। উত্তম মানুষ থাকে প্রচন্ড শক্তিশালী ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। অপরপক্ষে দেখা যায় অধম মানুষ থাকে আত্মকেন্দ্রিক এবং দূর্বল ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন। তাই অনেক সময়ই অধম মানুষ উত্তমের মানুষের সংস্পর্শে এসে উত্তম মানুষের দেখানো পথ অনুসরণ করে নিজের মধ্যে উক্ত মানুষের গুণাবলী অর্জন করে। উত্তম ব্যক্তি তার উত্তম গুণাবলীর মাধ্যমে অধমকেও জয় করতে পারে।
মন্তব্যঃ বিশ্ব জগতের সমস্ত বিচিত্র সৃষ্টির মধ্যে মানুষ সর্বোৎকৃষ্ট। মানুষের মানবীয় গুণাবলীর কারণেই সে উত্তম রূপে গণ্য হয়। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতেই অন্যের খারাপ দিক কখনোই উদাহরণ হিসেবে গণ্য করা উচিত নয়। কেউ অন্যায় পথ অনুসরণ করলে তার পথ অনুসরণ না করে নিজের বিচার বিবেচনা বোধকে জাগ্রত করে ন্যায় পথ অনুসরণ করতে হবে। সেই সাথে অন্যায় পথ অনুসরনকারী ব্যক্তিকেও ন্যায়ের পথ, সত্যের পথ অনুসরণ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
গুরুত্বপূর্ণ সকল ভাবসম্প্রসারণ-
১। ভাবসম্প্রসারণঃ পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি
৩। ভাবসম্প্রসারণ: কীর্তিমানের মৃত্যু নেই / মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়
৪। ভাবসম্প্রসারণঃ ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ
৫। ভাবসম্প্রসারণঃ দুর্নীতি জাতীয় জীবনে অভিশাপস্বরূপ
৬। ভাবসম্প্রসারণঃ দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য
৭। পরের অনিষ্ট চিন্তা করে যেই জন
৮। ভাবসম্প্রসারণ: সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই
৯। ভাবসম্প্রসারণঃ সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত
১০। ভাবসম্প্রসারনঃ আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে..
১১। ভাবসম্প্রসারণঃ অর্থই অনর্থের মূল
১২। ভাবসম্প্রসারণঃ পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না।
১৩। ভাবসম্প্রসারণঃ গ্রন্থগত বিদ্যা পরহস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন
১৪। ভাবসম্প্রসারণঃ লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু
১৫। ভাবসম্প্রসারণঃ ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল
১৭। ভাবসম্প্রসারণঃ যে সহে সে রহে
১৮। ভাবসম্প্রসারণঃ গতিই জীবন, স্থিতিতে মৃত্যু
১৯। ভাবসম্প্রসারণঃ একবার না পারিলে দেখ শতবার
২০। ভাবসম্প্রসারণঃ যেমন কর্ম তেমন ফল
২১। ভাবসম্প্রসারণঃ যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন
২২। ভাবসম্প্রসারণঃ ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়
২৩। ভাবসম্প্রসারণঃ জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান
২৪। ভাবসম্প্রসারণঃ রাত যত গভীর হয় প্রভাত তত নিকটে আসে
২৫। ভাবসম্প্রসারণঃ ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।
২৬। ভাবসম্প্রসারণঃ সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই