জেলা প্রশাসন বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোর তৃতীয় স্তর। প্রত্যেক বিভাগ কয়েকটি জেলায় বিভক্ত। বর্তমানে বাংলাদেশে ৬৪টি জেলা রয়েছে। জেলা প্রশাসককে কেন্দ্র করে জেলার সমগ্র শাসন আবর্তিত হয়। জেলা প্রশাসক বা ডেপুটি কমিশনার হলেন জেলা প্রশাসনের মধ্যমণি। তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন অভিজ্ঞ সদস্য। তিনি প্রশাসনের উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা। বিভাগীয় কমিশনারের পরই জেলা প্রশাসকের অবস্থান।
জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কেন্দ্রের যোগসূত্র বিদ্যমান। বাংলাদেশ সচিবালয়ে জেলা-সংক্রান্ত গৃহীত যাবতীয় সিদ্ধান্ত সরাসরি জেলা প্রশাসকের নিকট প্রেরিত হয়। জেলা প্রশাসক কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক জেলা প্রশাসন পরিচালনা করেন। আর জেলা প্রশাসকদের কেন্দ্র করেই জেলার প্রশাসন পরিচালিত ও আবর্তিত। জেলা প্রশাসক তাঁর কাজের জন্য বিভাগীয় কমিশনারের কাছে দায়ী। বিভাগীয় কমিশনার আবার যাবতীয় কার্যাবলির জন্য কেন্দ্রে নিকট দায়ী। বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে জেলা ও কেন্দ্রের মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টি হয়। জেলা প্রশাসকের কার্যাবলি ব্যাপক।
জেলা প্রশাসকের কার্যাবলি
জেলা প্রশাসকদের কার্যাবলি ব্যাপক ও বহুমুখী। নিম্নে তা সংক্ষেপে আলোচনা করা হলোঃ
১। প্রশাসন সংক্রান্ত কাজঃ বাংলাদেশ সচিবালয়ে গৃহীত শাসন সংক্রান্ত সকল সিদ্ধান্ত ও নীতিমালা বাস্তবায়ন করা, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কাজ তদারক করা, সরকারি নীতি নির্ধারণ এবং সুষ্ঠুভাবে শাসনকার্য পরিচালনায় সরকারকে সার্বিক সাহায্য সহযোগিতা করা জেলা প্রশাসনের শাসন সংক্রান্ত কাজ।
২। রাজস্ব সংক্রান্ত কাজঃ জেলা প্রশাসক ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর হিসেবে জেলার ভূমি রাজস্ব ও অন্যান্য কর ধার্য ও আদায় করেন। এ সকল কাজে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তাঁকে সাহায্য করেন।
৩। সমন্বয় সংক্রান্ত কাজঃ সমন্বয় সাধন সংক্রান্ত বিষয়ে জেলা প্রশাসকের ভূমিকা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তিনি জেলার অভ্যন্তরে অবস্থিত সরকারি সকল দপ্তরের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করেন। জেলা প্রশাসক জেলার উন্নয়নের জন্য জেলার গণ্যমান্য লোকদের সাথে এলাকার বিভিন্ন সমস্যা ও সেসবের সমাধানের লক্ষ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন।
৪। স্থানীয়শাসন সংক্রান্ত কাজঃ স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত বিষয়ে জেলা প্রশাসকের ভূমিকা অপরিসীম। তিনি স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেখাশোনা করেন। জেলার আওতাধীন উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রে তিনি তত্ত্বাবধায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
৫। সেবামূলক কাজঃ ডেপুটি কমিশনার বা জেলা প্রশাসক মানব সেবামূলক কাজও করে থাকেন। তিনি জেলার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে জনগণের জন্য সেবামূলক কাজের দ্বারা তাঁদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে সচেষ্ট হন। এসময় কেন্দ্রীয়ভাবে বরাদ্দকৃত অর্থ, খাদ্য, বস্ত্র ও ঔষধ জেলার জনগণের মধ্যে বিতরণ করেন।
৬। শিক্ষা ও সংস্কৃতি সংক্রান্ত কাজঃ জেলার শিক্ষা বিষয়ক সকল প্রকার কর্মসূচির তত্ত্বাবধান এবং জাতীয় দিবসসমূহ উদযাপন ও বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড জেলা প্রশাসক পরিচালনা করেন।
৭। শান্তি রক্ষামূলক কাজঃ জেলার পুলিশ সুপারের সহযোগিতায় নিজ জেলায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করেন।
৮। বিবিধঃ জেলা প্রশাসক জেলার প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে বহুবিধ দায়- দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জেলার প্রকাশনা ও সংবাদপত্র বিভাগের নিয়ন্ত্রক। তিনি জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়ান। আগ্নেয়াস্ত্র, স্পিরিট ও বিষ প্রভৃতির লাইসেন্স প্রদানের দায়িত্ব তাঁর উপরেই ন্যস্ত। জেলা প্রশাসক জেলার প্রতিরোধমূলক বিচারকার্য সম্পন্ন করেন। তিনি জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট কাজ পরিচালনা, তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় করে থাকেন। কাজেই জেলা প্রশাসককে জেলার পরিচালক, তত্ত্বাবধায়ক ও নিয়ন্ত্রক বলা চলে।
উপজেলা প্রশাসন
উপজেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক স্তর। প্রতিটি জেলা কয়েকটি উপজেলায় বিভক্ত। বর্তমানে দেশে ৪৯২টি উপজেলা রয়েছে। উপজেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা হলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। তিনি জেলা প্রশাসকের আদেশ বাস্তবায়ন এবং উপজেলার অন্যান্য কাজে সমন্বয় করে থাকেন। তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন সদস্য। উপজেলা পর্যায়ের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সহায়তায় উপজেলার সকল উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেন। এছাড়া উপজেলার শাসন ব্যবস্থা ও শান্তি- শৃঙ্খলার কাজও তিনি দেখাশোনা করেন। মূলত উপজেলার সকল উন্নয়ন ও প্রশাসনিক কাজ তদারক করা তাঁর দায়িত্ব।
আরও পড়ুন- প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি
আরও পড়ুন- রাষ্ট্রপতির পদমর্যাদা, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলি, রাষ্ট্রপতির জরুরি ক্ষমতা