in

জাতীয় সম্পদ কাকে বলে? সম্পদের শ্রেণিবিভাগ ও জাতীয় সম্পদের উৎস কয়টি?

সম্পদ কাকে বলে? সম্পদের শ্রেণিবিভাগ ও জাতীয় সম্পদের উৎস কয়টি?
সম্পদ কাকে বলে? সম্পদের শ্রেণিবিভাগ ও জাতীয় সম্পদের উৎস কয়টি?

জাতীয় সম্পদ কাকে বলে?

আমরা সাধারণত অর্থ, জমিজমা, বাড়িঘর, নানারকম প্রয়োজনীয় ও স্থায়ী দ্রব্যসামগ্রী, স্বর্ণ- রৌপ্য প্রভৃতিকে সম্পদ বলে থাকি। প্রকৃত অর্থে কোন বস্তু বা দ্রব্যকে সম্পদ বলতে হলে সে বস্তুর উপযোগ, অপ্রাচুর্য, বাহ্যিকতা এবং হস্তান্তরযোগ্যতা থাকতে হবে। এগুলো সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-

উপযোগঃ কোন দ্রব্যের মানুষের অভাব পূরণের ক্ষমতাকে উপযোগ বলে। যেমন, মানুষের বস্ত্রের প্রয়োজন বা অভাব আছে। শার্ট, প্যান্ট, শাড়ি- এসব দ্রব্যের বস্ত্রের অভাব পূরণ করার ক্ষমতা আছে। অর্থাৎ এগুলোর উপযোগ আছে।

অপ্রাচুর্যঃ কোন দ্রব্য বা সেবার চাহিদার তুলনায় যোগান বা সরবরাহের পরিমাণ কম হলে দ্রব্যটির অপ্রাচুর্য দেখা দেয়। যেমন- খাদ্য। যে কোন দেশে যে কোন সময়ে খাদ্যের সরবরাহ এর চাহিদার তুলনায় কম। সেই জন্য খাদ্য পেতে হলে এর দাম পরিশোধ করতে হয়। অর্থাৎ খাদ্যের অপ্রাচুর্য আছে। আবার, নিশ্বাস- প্রশ্বাসের জন্য মানুষের প্রতি মুহুর্তেই বাতাসের প্রয়োজন। কিন্তু প্রকৃতিতে বাতাস অফুরন্ত হওয়ায় প্রয়োজনের তুলনায় এর সরবরাহ বেশি। তাই বাতাসের জন্য মানুষকে কোন দাম দিতে হয় না। অর্থাৎ বলা যায়, বাতাসের অপ্রাচুর্য নেই। শুধু উপযোগ ও অপ্রাচুর্য থাকলে একটি জিনিস সম্পদ নাও হতে পারে, যেমন- স্বাস্থ্যের অপ্রাচুর্য এবং উপযোগিতা আছে কিন্তু বাহ্যিকতা ও হস্তান্তরযোগ্যতা না থাকায় একে সম্পদ বলা যাবে না। তবে কোন স্বাস্থ্যবান পুরুষ যখন দেহ স্বাস্থ্য প্রদর্শনের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনে সক্ষম হবেন তখন তার ঐ বিশেষ ধরনের স্বাস্থ্যটি সম্পদ বলে গণ্য হবে।

সম্পদের শ্রেণিবিভাগ নিম্নে তুলে ধরা হলো।

সম্পদের শ্রেণিবিভাগ

সম্পদকে ব্যক্তিগত, একান্ত ব্যক্তিগত, সমষ্টিগত, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক- এই পাঁচ শ্রেণিতে বিন্যস্ত করা যায়। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জায়গা-জমি, বাড়িঘর, কলকারখানা, অর্থসম্পদ, গাড়ি, দ্রব্যসামগ্রী ইত্যাদি ব্যক্তিগত সম্পদ। নিজস্ব প্রতিভা, ব্যক্তির দক্ষতা ইত্যাদি যদিও হস্তান্তরযোগ্য নয় কিন্তু ব্যক্তি এগুলো ব্যবহার করে সম্পদ সৃষ্টি করতে পারে। তাই এগুলো একান্ত ব্যক্তিগত সম্পদের অন্তর্ভুক্ত।

সমাজের সকলে সম্মিলিতভাবে যে সকল সম্পদ ভোগ করে, সেগুলো সমষ্টিগত সম্পদ। এই সম্পদের ওপরে সকল নাগরিকের সমান অধিকার থাকে এবং এগুলোর প্রতি তাদের সমান দায়িত্বও রয়েছে। রাস্তাঘাট, রেলপথ, বাঁধ, পার্ক, সরকারি হাসপাতাল ও স্কুল, রাষ্ট্রের মালিকানাধীন সকল প্রাকৃতিক সম্পদ (যেমন- বনাঞ্চল, খনিজসম্পদ, নদ-নদী ইত্যাদি) প্রভৃতি সমষ্টিগত সম্পদ।

রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের ব্যক্তিগত সম্পদ এবং সমাজের সমষ্টিগত সম্পদকে একত্রে জাতীয় সম্পদ বলে। তাছাড়া কোন জাতির নাগরিকের গুণবাচক বৈশিষ্ট্য, যেমন- কর্মদক্ষতা, উদ্ভাবনী শক্তি, প্রযুক্তিগত জ্ঞান ইত্যাদি জাতীয় সম্পদের অন্তর্ভুক্ত।

কোন কোন সম্পদ আছে, যা বিশেষ কোন রাষ্ট্রের মালিকানাধীন নয়। বিশ্বের সকল জাতিই সেগুলো ভোগ করতে পারে। এগুলো আন্তর্জাতিক সম্পদ। উদাহরণ হিসেবে সাগর-মহাসাগর, পেটেন্টবিহীন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, প্রযুক্তি ইত্যাদির কথা বলা যায়।

জাতীয় সম্পদের উৎস

জাতীয় সম্পদের উৎস প্রধানত দুটি। প্রথমটি প্রকৃতি প্রদত্ত আর দ্বিতীয়টি মানবসৃষ্ট।

কোন দেশের ভৌগলিক সীমানার ভিতরের ভূমি, ভূমির উপরিস্থিত এবং অভ্যন্তরস্থ যা কিছু সবই প্রকৃতির দান। প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ও বনের গাছপালা-ফলমূল-প্রাণী ও পাখিকুল, নদ-নদী ও প্রাকৃতিক জলাশয় এবং এগুলোর মৎস্যসম্পদ, অন্যান্য জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ, ভূমির অভ্যন্তরস্থ পানি ও সকল রকম খনিজ সম্পদ- এ সবই প্রকৃতি প্রদত্ত জাতীয় সম্পদ।

কোন দেশের অধিবাসীরা তাদের শ্রম ও মূলধনের সাহায্যে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার, সংগ্রহ ও উত্তোলন করে এবং সেগুলোর রুপান্তর বা স্থানান্তর করে যে নতুন সম্পদ সৃষ্টি করে তা মানবসৃষ্ট সম্পদ। মানুষ ভূমি আবাদ করে শস্য-ফল-ফুল-গাছপালা উৎপাদন করে। জলাশয়ে মাছ চাষ করে, খনিজ সম্পদ উত্তোলন করে ব্যবহার উপযোগী করে। এছাড়া ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে বা সরকারের অর্থ ও পরিচালনায় রাস্তাঘাট, কলকারখানা, যন্ত্রপাতি, যানবাহন, বাঁধ, সেতু এবং নানারকম স্থাপনা নির্মাণ করে এবং নানারকম শিল্পদ্রব্য উৎপাদন করে। এভাবে দেশের নাগরিকেরা সারা বছরব্যাপী নানারকম অর্থনৈতিক দ্রব্য ও সেবা অর্থাৎ সম্পদ সৃষ্টির কাজে নিয়োজিত থাকে। এসব মানব সৃষ্ট সম্পদ।

আরও পড়ুন- অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলতে কি বোঝো?