জাতীয় সংসদের ক্ষমতা ও কার্যাবলি নিম্নে আলোচনা করা হলো।
সরকারের তিনটি বিভাগের একটি আইন বিভাগ। অন্য দুটি হলো শাসন ও বিচার বিভাগ। আইন বিভাগের প্রধান কাজ হলো দেশের জন্য নতুন আইন প্রণয়ন ও পুরনো আইন পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংশোধন করা। আইন বিভাগের একটি অংশ হলো আইনসভা। আইনসভা নির্বাচিত এবং কোন কোন ক্ষেত্রে মনোনীত সদস্যদের নিয়ে গঠিত। এটি আইন প্রণয়ন করে। আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইন রাষ্ট্রপ্রধানের সম্মতি লাভের পর কার্যকর হয়।
জাতীয় সংসদের ক্ষমতা ও কার্যাবলি
বাংলাদেশের আইনসভার নাম “জাতীয় সংসদ“। জাতীয় সংসদ আইন বিভাগের একটি প্রধান প্রতিষ্ঠান। সংসদ প্রণীত আইন রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভের পর কার্যকর হয়। আইন বিভাগ সরকারের একটি অংশ।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুসারে জাতীয় সংসদ মোট ৩৫০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত। এদের মধ্যে ৩০০ জন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। ৫০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। সংরক্ষিত আসন ছাড়াও নারীরা সাধারণ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে সদস্যদের ভোটে একজন স্পিকার ও একজন ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হবেন। সংসদের মেয়াদ ৫ বছর।
বাংলাদেশের সংবিধানে দ্বাদশ সংশোধনী (১৯৯১) এনে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর ফলে বাংলাদেশে আইন প্রণয়ন, শাসন বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ, অর্থ- সংক্রান্ত তদারকি, নির্বাচন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সংসদের ক্ষমতা ও কার্যাবলি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সংসদের বিভিন্ন রকম ক্ষমতা ও কার্যাবলি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
১। আইন প্রণয়ন ক্ষমতাঃ সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নামে একটি আইনসভা থাকবে এবং এর ওপর প্রজাতন্ত্রের আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ন্যস্ত হবে। সংবিধান অনুযায়ী সংসদ যে কোন নতুন আইন প্রণয়ন ও প্রচলিত আইন পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংশোধন করতে পারে। সংসদ আইনের মাধ্যমে যে কোন সংস্থা বা কর্তৃপক্ষকে আদেশ প্রদান, বিধি, উপবিধি ও প্রবিধান প্রনয়নের ক্ষমতা দিতে পারে। সংসদ প্রণীত আইনে রাষ্ট্রপতি ১৫ দিনের মধ্যে সম্মতি প্রদান করবেন।
২। সরকার গঠন বিষয়ক ক্ষমতাঃ সরকার গঠনে সংসদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সংসদের আস্থাভাজন ব্যক্তিই প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন এবং তিনি মন্ত্রিসভা গঠন করেন। প্রধানমন্ত্রী সংসদের আস্থা হারালে সরকারের পতন হয়।
৩। অর্থ- সংক্রান্ত ক্ষমতাঃ রাষ্ট্রের অর্থ কীভাবে ব্যয় হবে তার ওপর সংসদ নিবদ্ধ রাখে। সংসদের অনুমোদন ও কর্তৃত্ব ব্যতীত কোন প্রকার ব্যয় করা যায় না। আবার কোন কর আরোপ বা কর সংগ্রহ করতেও সংসদের অনুমতি নিতে হয়। প্রত্যেক অর্থ বছরে সরকার সংসদে বাজেট উপস্থাপন করে। সংসদ অনুমোদিত বাজেট অনুযায়ী সরকারকে চলতে হয়। সংযুক্ত তহবিলের ব্যয়সমূহের ওপরও সংসদে আলোচনা হয়। মোটকথা রাষ্ট্রীয় ও সরকারি সকল ব্যয় সংসদের সম্মতির ভিত্তিতে করতে হয়।
৪। বিচার বিষয়ক ক্ষমতাঃ সংসদ সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করতে পারে। সংবিধান লঙ্ঘন, গুরুতর অপরাধ, দৈহিক ও মানসিক অসুস্থতা ও অক্ষমতার জন্য সংসদ রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে পারে। প্রয়োজনে স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও ন্যায়পালকে অপসারণ করার ক্ষমতাও সংসদের আছে। এ জাতীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিচার সংক্রান্ত কাজ সংসদ পরিচালনা করে।
৫। নির্বাচন সংক্রান্ত কাজঃ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, ন্যায়পাল ইত্যাদি পদের নির্বাচনি ক্ষমতা জাতীয় সংসদের উপর ন্যস্ত। সংসদের বিভিন্ন কমিটি নির্বাচন করার ক্ষমতাও সংসদের রয়েছে।
৬। সংবিধান সংরক্ষণ ও সংশোধনঃ সংবিধানের আমানতদার হিসেবে সংসদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সংবিধানের যে কোন সংশোধনীও সংসদে উত্থাপিত ও গৃহীত হয়।
৭। অন্যান্য ক্ষমতাঃ সুপ্রিম কোর্ট ব্যতীত অন্যান্য আদালত প্রতিষ্ঠার জন্য সংসদ আইন প্রণয়ন করতে পারে। যুদ্ধ ঘোষণা ও আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুমোদন করার ক্ষমতাও সংসদের। স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত বিধি ও প্রবিধান সংসদ প্রণয়ন করে।
জাতীয় সংসদ কর্তৃক শাসন বিভাগ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। এ নিয়ন্ত্রণ আইন বিভাগ দ্বারা কার্যকর করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভাকে শাসন সংক্রান্ত সকল কাজের জন্য সংসদের কাছে দায়ী থাকতে হয়। সরকার সংসদের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। সংসদ সরকারের যে কোন ভালো কাজের যেমন প্রশংসা করতে পারে, তেমনি সরকারের যে কোন মন্দ কাজের সমালোচনাও করতে পারে।
সরকারকে সকল শাসন সংক্রান্ত কাজের জন্য সংসদের দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাবের প্রতি মনোযোগ দিতে হয়। সংসদীয় ব্যবস্থায় সরকারের ওপর সংসদের নিয়ন্ত্রণ থাকে। সংসদ মুলতবি প্রস্তাব, নিন্দা প্রস্তাব, প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রীদের প্রতি প্রশ্ন বা অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে শাসন বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। সংসদ সদস্যদের আস্থা হারালে যে কোন মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রীও পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের অর্থ হলো, সম্পূর্ণ মন্ত্রিসভার পদত্যাগ। এরূপ অবস্থা হলে দেশে আবার নতুন করে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন- আইন কাকে বলে? আইনের বৈশিষ্ট্য, আইনের উৎস
আরও পড়ুন- রাষ্ট্র কাকে বলে? রাষ্ট্রের উপাদান কয়টি?
আরও পড়ুন- প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি