in ,

জাতিসংঘ কেন গঠিত হয়েছিল? জাতিসংঘের উদ্দেশ্য কি?

জাতিসংঘ সৃষ্টির পটভূমি

জাতিসংঘ কেন গঠিত হয়েছিল? জাতিসংঘের উদ্দেশ্য কি?
জাতিসংঘ কেন গঠিত হয়েছিল? জাতিসংঘের উদ্দেশ্য কি?

জাতিসংঘ কেন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, জাতিসংঘের উদ্দেশ্য ও সদস্যপদ নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো।

জাতিসংঘ কেন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল/ জাতিসংঘ সৃষ্টির পটভূমি

যুদ্ধ কখনও জাতিতে জাতিতে সংকট নিরসনের পথ হতে পারে না। যুদ্ধ ডেকে আনে ভয়ঙ্কর ধ্বংসলীলা এবং মানবজাতির জন্য অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও অশান্তি। বিশ শতকের ইতিহাসে পৃথিবী জুড়ে দুটি বিশ্বযুদ্ধ ঘটে গেছে। গত শতকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৯১৮) এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫) সংঘটিত হয়। মূলত জাতিগত দ্বন্দ্ব নিরসনে মধ্যস্থতাকারী শান্তিকামী জনতা যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় চুপ করে থাকেনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯২০ সালের ১০ জানুয়ারি বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘লীগ অব ন্যাশনস’ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু ‘লীগ অব ন্যাশনস’- এর সাংগঠনিক দুর্বলতা ও অন্যান্য কারণে বিশ্বশান্তি বিধানে তা ব্যর্থ হয়।

১৯৩৯ সালে পুনরায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা পৃথিবীকে গ্রাস করে। লক্ষ লক্ষ মানুষ নিহত ও আহত হয়। অনেকে গৃহহারা হয় ও পঙ্গুত্ব বরণ করে। প্রতিটি দেশ হারায় তাদের কর্মক্ষম যুবসম্প্রদায়কে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা বিশ্ব বিবেককে ভীষণভাবে নাড়া দেয় ও আতঙ্কিত করে তোলে। এ প্রেক্ষাপটে বিশ্বের তৎকালীন নেতৃবৃন্দ শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের জন্য আর একটি নতুন আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। এরপর ১৯৪৩ সালে তেহরানে ও মস্কোতে সমসাময়িক বিশ্বের ৪টি প্রধান শক্তির একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ফ্রান্সের প্রতিনিধিবৃন্দ সম্মিলিত জাতিসংঘ গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অবশেষে ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘ আত্মপ্রকাশ করে। এজন্য প্রতি বছর ২৪ অক্টোবরকে জাতিসংঘ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বিশ্বের স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ জাতিসংঘের সদস্য।

পাঁচটি প্রধান অঙ্গ এবং একটি সেক্রেটারিয়েট নিয়ে জাতিসংঘ গঠিত। পাঁচটি অঙ্গ হচ্ছেঃ সাধারণ পরিষদ, নিরাপত্তা পরিষদ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ, অছি (তত্ত্বাবধায়ক) পরিষদ এবং আন্তর্জাতিক বিচারালয় বা আদালত। জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে সাধারণ পরিষদ গঠিত। সাধারণ পরিষদকে “বিতর্ক সভা” বলেও অভিহিত করা যায়। নিরাপত্তা পরিষদ হচ্ছে জাতিসংঘের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী পরিষদ। ৫টি স্থায়ী ও ১০টি অস্থায়ী মোট ১৫টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে এটি গঠিত। ৫টি স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র হচ্ছেঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন। এদের প্রত্যেকের “ভেটো” প্রদান বা কোন প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়ার ক্ষমতা আছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কাজ হচ্ছে বিশ্বের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধন করা। স্বাধীনতাপ্রাপ্ত নয়- এরূপ বিশেষ এলাকার তত্ত্বাবধানের জন্য অছি পরিষদ গঠিত। আন্তর্জাতিক বিবাদ মীমাংসা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের কাজ। নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের কার্যালয় অবস্থিত। সেক্রেটারিয়েট হচ্ছে জাতিসংঘের প্রশাসনিক বিভাগ। সেক্রেটারি জেনারেল বা মহাসচিব জাতিসংঘের প্রধান নির্বাহী। আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে জাতিসংঘের সদরদপ্তর অবস্থিত

জাতিসংঘের সদস্যপদ

জাতিসংঘ চার্টার বা সনদের নিয়মকানুন মেনে চলতে আগ্রহী বিশ্বের যে কোন শান্তিকামী দেশ জাতিসংঘের সদস্য হতে পারে। বর্তমানে বিশ্বের ১৯৩টি দেশ জাতিসংঘের সদস্য। বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের ১৩৬তম সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়

জাতিসংঘের উদ্দেশ্য

জাতিসংঘ সনদে সুস্পষ্টভাবে বিশ্বশান্তি ও সহযোগিতা বিধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘের উদ্দেশ্য লিপিবদ্ধ আছে। জাতিসংঘের উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরুপঃ

১। শান্তি ভঙ্গের হুমকি, আক্রমণাত্মক প্রবণতা ও কার্যকলাপ দূর করে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা

২। সকল মানুষের সমান অধিকারের প্রতি সন্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতির মধ্যে সহযোগিতা ও বন্ধুত্ব জোরদার করা।

৩। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সকল জাতির মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তোলা।

৪। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারের প্রতি সন্মান ও শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তোলা।

৫। আন্তর্জাতিক আইনের সাহায্যে আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান নিশ্চিত করা।

৬। প্রত্যেক জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের স্বীকৃতি ও তা সমুন্নত রাখা এবং

৭। উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নের জন্য জাতিসংঘের কার্যধারা অনুসরণ করা।

আরও পড়ুন- উন্নত দেশ কাকে বলে? উন্নত দেশের বৈশিষ্ট্য

আরও পড়ুন- উন্নয়নশীল দেশ কাকে বলে? উন্নয়নশীল দেশের বৈশিষ্ট্য

আরও পড়ুন- অনুন্নত দেশ কাকে বলে? অনুন্নত দেশের বৈশিষ্ট্য