in ,

জন্মহার ও মৃত্যুহার কাকে বলে? জন্মহার ও মৃত্যুহার নির্ণয়ের সূত্র

জন্মহার ও মৃত্যুহার কাকে বলে? জন্মহার ও মৃত্যুহার নির্ণয়ের সূত্র
জন্মহার ও মৃত্যুহার কাকে বলে? জন্মহার ও মৃত্যুহার নির্ণয়ের সূত্র

জন্মহার ও মৃত্যুহার কাকে বলে, জন্মহার ও মৃত্যুহার নির্ণয়ের সূত্র নিম্নে তুলে ধরা হল।

জন্মহার ও মৃত্যুহার

জন্মহার (Birth Rate)

ধরুন, একটি দেশে দুই হাজার নারী বসবাস করে। তারা সবাই সন্তান জন্মদানের সামর্থ্য রাখে। স্বাভাবিক জন্মহার নারীদের সন্তান ধারণের সামর্থ্য নির্দেশ করে। আমরা যখন জন্মহার নির্ণয় করবো তখন কিন্তু জন্মদানে সক্ষম সকল নারী আমাদের হিসাবের আওতায় আসবে না। কোন নির্দিষ্ট এক বছরে প্রতি হাজার নারীর সন্তান জন্মদানের মোট সংখ্যাকে সাধারণ জন্মহার বলে৷ সাধারণত, ১৫- ৪৫ বা ১৫-৪৯ বছর বয়স পর্যন্ত নারীদের প্রজনন ক্ষমতা থাকে। দেশের বিশেষ কোন বছরের জন্ম নেয়া সন্তানের মোট সংখ্যাকে উক্ত বছরের গণনাকৃত প্রজননক্ষম নারীর মোট সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে সাধারণ জন্মহার নির্ণয় করা যায়ঃ

স্থূল জন্মহার (Crude Birth Rate): সাধারণ জন্মহারের তুলনায় স্থূল জন্মহার অধিক প্রচলিত ও গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি৷ এই পদ্ধতি প্রকাশ করা হয় হাজারে৷ কোন বছরে জন্মিত সন্তানের মোট সংখ্যাকে উক্ত বছরের মধ্যকালীন মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে স্থূল জন্মহার নির্ণয় করা হয়। স্থূল জন্মহার নির্ণয়ের সূত্র নিম্নরূপঃ

 

স্থূল জন্মহার নির্ণয়ে শুধুমাত্র দুটো তথ্যের প্রয়োজন হয়। কোন স্থান বা দেশের মোট জনসংখ্যা এবং ঐ বছরে জন্মিত সন্তান ও জনসংখ্যা।

পৃথিবীর এক এক দেশের জন্মহার এক এক রকম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রজননশীলতার মধ্যে ব্যাপক তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। তবে, এর পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। আর্থ-সামাজিক অবস্থানের ভিন্নতা এর মধ্যে প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত। যে সকল কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জন্মহারের মধ্যে ভিন্নতা দেখা যায় তা নিম্নে উপস্থাপন করা হলোঃ

১. বৈবাহিক অবস্থানগত বৈশিষ্ট্যঃ নিম্নোক্ত কয়েকটি বিষয়ের কারণে জন্মহার কম বা বেশি হতে পারেঃ বিবাহের বয়স, বহুবিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ প্রভৃতি।

২. শিক্ষাঃ সাধারণত শিক্ষার মান যখন বৃদ্ধি পায় তখন সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়। ফলে প্রজননশীলতা হ্রাস পায়। আবার শিক্ষার মান ও হার হ্রাস পেলে প্রজননশীলতার হার বেড়ে যায়।

৩. পেশাঃ সাধারণত, শিক্ষক, ডাক্তার, আইনজীবি, প্রশাসক, ব্যবস্থাপক সহ চাকরিজীবিদের মধ্যে জন্মহার কম দেখা যায়। আবার, কৃষিকাজে নিয়োজিত শ্রমিক ও কর্মীদের মধ্যে জন্মহার বেশি দেখা যায়।

৪. গ্রাম-শহর আবাসিকতাঃ সাধারণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, শহর এলাকায় জন্মহার কম ও গ্রাম এলাকায় জন্মহার বেশি থাকে৷ এই উপাদানটি আবার শিক্ষা ও পেশার সঙ্গে সম্পর্কিত।

মানব জন্মহারের তারতম্য একটি সামাজিক বিষয়। সমাজ, ব্যক্তিজীবনের বহুবিধ বিষয়, বিশেষ করে সামাজিক অবস্থান, সামাজিক ভূমিকা, ভৌগোলিক অবস্থা, অর্থনৈতিক অবস্থা, বৈবাহিক ধারা, ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন, সমাজবৈশিষ্ট্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয় মানব প্রজননশীলতা তথা জন্মহারের সঙ্গে সম্পর্কিত।

মৃত্যুহার (Death Rate)

পৃথিবীতে কোন মানুষের পক্ষে চিরকাল বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। জন্মের মত মৃত্যুও সত্য৷ এই মরণশীলতা জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রক্রিয়াকেই শুধু প্রভাবিত করেনা, সেই সাথে সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রক্রিয়াকেও প্রভাবিত করে৷ যদি জনসংখ্যার বৃদ্ধির পরিমাপ করতে হয় তবে মৃত্যুহার অবশ্যই জানতে হবে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করার জন্যেও মৃত্যু্হার জানা জরুরী।

স্থূল মৃত্যুহার (Crude Death Rate): স্থূল মৃত্যুহার মরণশীলতা (Mortality) পরিমাপের বহুল প্রচলিত ও গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিগুলোর একটি। নির্দিষ্ট কোন বছরের মৃত্যুবরণকারীদের মোট সংখ্যাকে উক্ত বছরের মধ্যকালীন মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে স্থূল মৃত্যুহার নির্ণয় করা হয়।

কোন স্থান বা দেশের মৃত্যু সংখ্যা এবং মোট জনসংখ্যার তথ্য পাওয়া গেলে স্থূল মৃত্যুহার নির্ণয় করা যায়। বয়স নির্দিষ্ট মৃত্যুহার, মৃত্যুহার নির্ণয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যা বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন সংখ্যার মৃত্যুকে নির্দেশ করে। ফলে এই হার থেকে বার্ধক্য ও অকালমৃত্যু প্রভৃতি বোঝা যায়।

পরিণত বয়সে সামান্য অসুখ বিসুখ বা সামান্য আঘাতে মৃত্যু অস্বাভাবিক কিছু নয়। একে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে। আবার অনেকে পরিণত বয়সের পূর্বেই মৃত্যুবরণ করে। একে অকাল বা অস্বাভাবিক মৃত্যু বলে। নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর কারণে স্থানভেদে মৃত্যুহারে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়ঃ

প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ বন্যা, ভূমিকম্প, ঝড়, দুর্ভিক্ষ, মহামারী প্রভৃতি অস্বাভাবিক মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ।

যুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাঃ যুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক হানাহানির কারণে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পায়। কুয়েত, আফগানিস্তান, ইরাক যুদ্ধে দেখা যায় যুদ্ধকালীন সময়ে ঐ সকল দেশের মৃত্যুহার অনেক বেশি ছিল৷ আমাদের বাংলাদেশে নয় মাস ধরে চলমান যুদ্ধে প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছিল৷

রোগ ও দুর্ঘটনাঃ সংক্রামক, শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত রোগ, ক্যান্সার, রক্ত সঞ্চালন সংক্রান্ত রোগ, আঘাত বা প্রভৃতি কারণে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পায়৷

অঞ্চলভেদেও মরণশীলতার পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনুন্নত দেশগুলোতে মৃত্যুহার অনেক বেশি৷ উন্নত দেশগুলোতে মৃত্যুহার স্বাভাবিক থাকে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মৃত্যুহার কিছুটা কমে এসেছে। আবার নারী-পুরুষের মৃত্যুহারে পার্থক্য দেখা যায়। সাধারণত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রজননকালীন মৃত্যুহার বেশি দেখা যায়। অনুন্নত দেশগুলোতে শিশু মৃত্যুহার বেশি পরিলক্ষিত হয়।

আরও পড়ুন- জনসংখ্যার ঘনত্ব কাকে বলে? জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ণয়ের সূত্র

আরও পড়ুন- প্রাকৃতিক সম্পদের উপর অতিরিক্ত জনসংখ্যার প্রভাব

আরও পড়ুন- অভিবাসন কি? অভিবাসনের কারণ, অভিবাসনের সুফল ও কুফল