এই লেখায় যেসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে- জনসংখ্যার ঘনত্ব কাকে বলে বা জনসংখ্যার ঘনত্ব বলতে কি বোঝায়? জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ণয়ের সূত্র।
জনসংখ্যার ঘনত্ব কাকে বলে?
কোন দেশের মোট জনসংখ্যা ও মোট ভূমির পরিমাণ বা আয়তনের যে অনুপাত (Ratio) তা জনবসতির ঘনত্ব । ধরা যাক কোন দেশের কোন একটি অঞ্চলে ১ বর্গ কিলোমিটারে মাত্র ১৫ জন বাস করেন। সেই ক্ষেত্রে সেই অঞ্চলের জনসংখ্যা ঘনত্ব দাঁড়াবে ১৫ জন প্রতি বর্গ কিলোমিটার। সহজ ভাষায়, কোন অঞ্চলের বা কোন দেশের প্রতি বর্গ কিলোমিটারে মোট জনবসতির পরিমাণকে বলা হয় জনসংখ্যার ঘনত্ব।
জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ণয়ের সূত্র
কোন দেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব জানতে হলে সে দেশের মোট জনসংখ্যা ও দেশের আয়তন জানতে হবে৷ জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ণয়ের সূত্রটি নিম্নরূপঃ
জনসংখ্যার ঘনত্ব = মোট জনসংখ্যা ÷ মোট ভূমির আয়তন।
জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বাংলাদেশ
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৪,৯৭,৭২,৩৬৪ জন ও এর আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার।
সুতরাং, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব= ১৪,৯৭,৭২,৩৬৪÷১,৪৭,৫৭০= ১,০১৫ জন (প্রতি বর্গকিলোমিটার)।
উপরের তথ্য আমাদের কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেয়৷ প্রথমত, দেশের জনসংখ্যার তুলনায় আয়তন বড় হলে তার জনসংখ্যা ঘনত্ব কমে আসে। দ্বিতীয়ত, ঘনত্ব বেশি হলে তা ভূমির উপর চাপ সৃষ্টি করে।
মানুষ-ভূমি অনুপাত (Man land ratio): একটি দেশের মোট ভূমির সমস্তটা কিন্তু ব্যবহার উপযোগী হয় না। যে সকল ভূমি মানুষের কাজে লাগে ও সম্পদ সৃষ্টি করতে পারে, তাকে কার্যকর ভূমি বলে৷ মানুষ-ভূমি অনুপাত বলতে এই কার্যকর ভূমির অনুপাতকে বলা হয়৷ প্রকৃতপক্ষে, কোন দেশের ভূমির উপর জনসংখ্যার চাপ কি রূপ তা জানতে হলে সেই দেশের জনসংখ্যা ভূমির পরিবর্তে মানুষ-ভূমি অনুপাত কত তা জানা দরকার।
কাম্য জনসংখ্যা (Optimum Population): যদি কোন দেশের মোট জনসংখ্যা ও কার্যকর ভূমির অনুপাতে ভারসাম্য থাকে তবে সেটিকে বলা হবে কাম্য জনসংখ্যা। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে, একটি দেশে কত সময়কাল অবধি কাম্য জনসংখ্যা বিদ্যমান থাকতে পারে। উত্তরে বলা যায়, যতদিন দেশের উৎপন্ন সম্পদ দিয়ে জনগণের ভোগ সুখের বন্দোবস্ত বজায় থাকবে ততদিন সে দেশে কাম্য জনসংখ্যা বিদ্যমান থাকবে। মোট জনসংখ্যা ও কার্যকর ভূমির আদর্শ অনুপাতের ভারসাম্য নষ্ট হলে কোথাও জনসংখ্যা স্বল্পতা আবার কোথাও অতি জনাকীর্ণতা দেখা দেয়৷
অতি-জনাকীর্ণতা (Over Population): জনসংখ্যার তুলনায় কার্যকর ভূমির পরিমাণ অল্প থাকলে তাকে অতি-জনাকীর্ণতা বলে। এর ফলে মোট উৎপাদিত সম্পদের পরিমাণ তথা মাথাপিছু উৎপাদিত সম্পদের পরিমাণ অল্প হয়৷ যা মাথাপিছু উৎপাদন ও ভোগের পরিমাণ হ্রাস করে।
জনস্বল্পতা (Under Population): পৃথিবীর এমন অনেক দেশ আছে যেখানে কার্যকর ভূমি ও সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা অনেকাংশে কম৷ জনসংখ্যার তুলনায় কার্যকর ভূমির পরিমাণ বেশি থাকলেও জনসংখ্যার স্বল্পতার কারণে পর্যাপ্ত সম্পদ ও ভূমি ব্যবহার করা না গেলে উৎপাদন ব্যহত হয়। এই অবস্থাকে জনস্বল্পতা বলে। যেমন- অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা বিভিন্ন দেশে ভূমির তুলনায় জনসংখ্যা কম৷
জনসংখ্যা বন্টন (Population distribution): জনসংখ্যার ঘনত্ব বা আকারগত তারতম্য থেকে এটি পরিষ্কার যে পৃথিবীর জনসংখ্যা সমভাবে বিস্তৃত নয়৷ স্থানভেদে জনসংখ্যার অবস্থানগত বিস্তৃতি বা বিন্যাস হচ্ছে জনসংখ্যা বন্টন। কিছু অঞ্চল অতি-জনাকীর্ণ আবার কোন কোন অঞ্চল জনমানবহীন। ভূপৃষ্ঠের ৫০-৬০ শতাংশের মত এলাকায় শতকরা প্রায় ৫ ভাগ লোকের বসতি। স্থলভাগের মাত্র শতকরা ৫ ভাগ এলাকায় পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বসবাস।
আরও পড়ুন- নগরায়ন কাকে বলে? নগরায়নের প্রভাব ও অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে সৃষ্ট সমস্যা
আরও পড়ুন- মানব বসতি কাকে বলে? বসতির শ্রেণী বিভাগ। বসতি স্থাপনের নিয়ামকগুলো কি কি?