in

ভাবসম্প্রসারণঃ ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল

ভাবসম্প্রসারণঃ ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল
ভাবসম্প্রসারণঃ ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল

বলা হয়ে থাকে ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল। আমাদের সমাজ আমাদেরকে ছোট কিংবা ক্ষুদ্রকে যথাযথ মর্যাদা দিতে শিখায় না। কিন্তু ছোট বা ক্ষুদ্র বলেই যে কোন কিছুকে তাচ্ছিল্য করতে হবে এমন ধারণা নিয়ে যারা চলে তারা প্রকৃতপক্ষে বোকার স্বর্গে বসবাস করে। শিক্ষার্থীদের জন্য “ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল” ভাবসম্প্রসারণটির দুই সংস্করণ নিম্নে তুলে ধরা হচ্ছে।

ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল,
গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল।
মুহূর্তে নিমেষ কাল, তুচ্ছ পরিমাণ,
গড়ে যুগ যুগান্তর-অনন্ত মহান।
প্রত্যেক সামান্য ত্রুটি, ক্ষুদ্র অপরাধ,
ক্রমে টানে পাপপথে, ঘটায় প্রমাদ
প্রিত করুণার দান, স্নেহপূর্ণ বাণী,
এ ধারায় স্বর্গসুখ নিত্য দেয় আনি।

ভাবসম্প্রসারণঃ ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল…

মূলভাবঃ এই পৃথিবীতে যা কিছু বৃহৎ সৃষ্টি হয়েছে, সে সৃষ্টির মূলে রয়েছে ক্ষুদ্রতম বস্তুর অবদান৷ তাই আমাদের কখনো ক্ষুদ্র কিছু তুচ্ছজ্ঞান করা উচিত নয়।

সম্প্রসারিত ভাবঃ আমরা বর্তমানে বাস করছি সভ্য এক পৃথিবীতে। বিজ্ঞান আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে৷ কিন্তু ভাবুন তো সভ্যতার শুরুতে এই পৃথিবী কেমন ছিল? পৃথিবীর সৃষ্টি হলো। তারপর সৃষ্টি হলো মানুষ সহ আরো বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী, গাছপালার। ধীরে ধীরে মানুষ গুহা খনন শিখলো। তারপর শিখলো শিকার। আগুনের আবিষ্কার, কৃষিকাজ নগ্ন মানুষকে ধীরে ধীরে শেখালো সভ্য হতে। একটু একটু করে সভ্যতার পথে এগুনোর গল্প আজ আমাদের উপহার দিয়েছে আধুনিক এক দুনিয়া। এই থেকে বোঝা যায় বৃহৎ কিছু কখনো একদিনে গড়ে উঠতে পারে না। ধীরে ধীরে ক্ষুদ্র কিছু থেকেই বৃহৎ এর সৃষ্টি। বিজ্ঞানী চার্লস রবার্ট ডারউইন সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে বলেছেন – “সরল এবং ছােট প্রাণীগুলাে থেকে জটিল ও বড় প্রাণীর উৎপত্তি ঘটেছে।”

একটি ছোট বাচ্চা যখন একটু একটু করে হাঁটতে শুরু করে তখন সে অনেকবার মাটিতে পড়ে যায়৷ আবার উঠে দাঁড়ায়৷ এভাবে ধীরে ধীরে একসময় সে হাঁটতে শিখে যায়। বাচ্চার মুখে প্রথম ফোটা আধো আধো বুলি পরিবারের সদস্যদের তার প্রতি স্নেহের উন্মেষ ঘটায়। প্রথমে এক শব্দ, তারপর দুটো শব্দ এভাবে সে একসময় কথা বলতে শিখে যায়। আমাদের জীবনের ছোট ছোট চেষ্টাগুলো আমাদেরকে আমাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্যের পানে এগিয়ে নিয়ে যায়। আমাদের চারপাশে এমন অনেকে আছে যারা প্রথমদিকে খুবই অল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছে৷ সময়ের সাথে সততা ও পরিশ্রম আজ তাদের প্রতিষ্ঠিত করেছে সফল ব্যবসায়ী হিসেবে৷ তারা যদি আত্মবিশ্বাসের সাথে অল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা আরম্ভ না করতো তবে আজ সফলতা কখনো তাদের ঝুলিতে ধরা দিতো না৷ বর্তমানে চীন বিশ্বের অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলোর একটি। আজ থেকে ৭০ বছর আগেও কিন্তু দেশটির চিত্র এমন ছিলনা। সে দেশের কোটি কোটি মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করতো। কোটি কোটি মানুষকে দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারাতে হতো৷ সকলের সম্মলিত প্রচেষ্টা আজ তাদের গড়ে তুলেছে উন্নত দেশগুলোর একটিতে৷ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টার কথা কেই না জানে। তিনি রাতভর রাস্তার লাইটপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে সে আলোতে পড়ালেখা করতেন।

মানুষের জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাগুলোই আমাদের এগিয়ে নিয়ে যায় আমাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্যের পানে৷ আমাদের ছাত্রজীবনের গল্পটাও কিন্তু শুরু হয় শৈশবে একটা একটা করে অক্ষর শেখার মাধ্যমে। এক ধাপ এক ধাপ করে পার করে একসময় ছাত্রজীবনের ইতি টানার সময় এসে উপস্থিত হয়। আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যারা নতুন কিছু শুরু করতেই ভয় পায়। ক্ষুদ্র থেকেই বৃহৎ এর সৃষ্টি এ সহজ কথাটি তাদের বোধগম্য হয় না। ফলে দেখা যায় সফলতা শব্দটি এদের জীবন থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে৷ এর জন্য তারা নিজেদের দায়ী না করে দায়ী করে তাদের ভাগ্যকে৷ আজকের আধুনিক বিশ্বে হাজারো উঁচু উঁচু দালান, রাস্তাঘাট। এসব স্থাপত্য কিন্তু একদিনে গড়ে উঠেনি। ছোট ছোট ইট পাথর জড়ো হতে হতে একদিন তা মাটির উপর দালানের রূপ পায়৷ সম্রাট শাহজাহানের আগ্রার তাজমহলের কথা কারোরই অজানা নয়। বিশ্বের সেরা স্থাপনার মধ্যে জায়গা করে নেওয়া এই তাজমহলে জড়িয়ে আছে বহু শ্রমিকের পরিশ্রম। একটি একটি করে পাথর জড়ো করে তারা গড়ে তুলেছে এই তাজমহল। পাখি একটি একটি করে খড় ঠোঁটে করে নিয়ে জড়ো করে তারপর তার বাসা বুনে। মূলত, কোন কাজ হোক বা কোন বস্তু গড়া, সবকিছুর সূচনা হয় ক্ষুদ্র থেকে। বরং, ক্ষুদ্র কিছু তুচ্ছজ্ঞান করা মানে বুদ্ধিহীনতার পরিচয় দেওয়া।

মন্তব্যঃ একজন মানুষ তখনই সফল হয় যখন সে কোন চেষ্টাকে ছোট মনে না করে আত্মবিশ্বাস ও সততার সাথে এগিয়ে যায়। যে ব্যক্তি নিজেকে সাহায্য করে সৃষ্টিকর্তাও তাকে সাহায্য করে।

ভাবসম্প্রসারণঃ ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল…

মূলভাবঃ ক্ষুদ্র কিছু থেকেই বৃহত্তর কিছু সৃষ্টি হয়। কোনো কিছুকে ক্ষুদ্র বলে অবজ্ঞা করা উচিত নয়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা মহাদেশের সৃষ্টি করে। বিন্দু বিন্দু জল থেকেই সৃষ্টি হয় মহাসাগরের।

সম্প্রসারিত ভাবঃ যে কোন ক্ষুদ্র কিছুকে আমরা অনেক সময় তাচ্ছিল্য করি। কিন্তু এ রকম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিস থেকেই বড় কিছুর জন্ম হয়। জগতের বড় যত কিছু আছে তার পেছনে আছে ক্ষুদ্রের অবদান। যে কোন জিনিস প্রথমে ছোট থাকলেও ধীরে ধীরে সেটা বড় আকার ধারণ করে। ছোটবেলায় আমাদের জ্ঞানের পরিধি থাকে ছোট, কিন্তু যখন আমরা ধীরে ধীরে বড় হই সাথে আমাদের জ্ঞানের পরিধিও বাড়তে থাকে।
ছোট ছোট ইটের গাঁথুনি দিয়ে বিশাল অট্টালিকা তৈরি হয়। এখানেও সেই ছোট্ট ইট থেকেই এত বড় অট্টালিকার সৃষ্টি। ঠিক একইভাবে ছোট ছোট দুঃখ বেদনা আমাদের মনে একসময় বিশাল বড় ক্ষতের সৃষ্টি করে। পরিবারের ছোট ছোট অশান্তি থেকে একসময় বড় ঝামেলা তৈরি হয়। সংসারে আসে অশান্তি। কোন জিনিস শুরুতে ক্ষুদ্র হলেও আস্তে আস্তে সেটা বিশাল আকার ধারণ করে। তাই ক্ষুদ্র বা তুচ্ছ কিছুকে অবহেলা করা উচিত নয়।

কোনো একটা জিনিস শুরুতেই বড় হয় না, ছোট থেকেই বড় হয়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিসের সমষ্টিই বৃহৎ আকারে রূপ নেয়। একজন মানুষ যখন কোনো একটা ব্যবসা করে তখন সে অল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করে। তারপর ধীরে ধীরে সেটা বড় হয়। আমরা অনেক সময় বিন্দু বিন্দু পানিকে গুরুত্ব দিই না। কিন্তু মরুভূমিতে গেলে সেই এক বিন্দু পানির মূল্য বুঝা যায়। ঠিক তেমনি আমাদের জীবনের ছোট ছোট ভুলগুলোকে আমরা গুরুত্ব দিই না। একসময় এই ছোট ছোট ভুলগুলোই বড় হয়ে আমাদের ক্ষতির কারণ হয়। অনেক সময় দেখা যায় ছোট কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে মারামারি লেগে যায়, এভাবে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বড় ঝামেলা তৈরি হয়। মানুষের ছোট ছোট দোষ বা খারাপ অভ্যাসগুলো যদি সে ত্যাগ করতে না পারে তাহলে একসময় এগুলো বড় আকার ধারণ করে তার জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। ছোটবেলায় আমরা আমাদের গুরুজনদের, শিক্ষকদের  ছোটখাটো উপদেশ এড়িয়ে চলি। কিন্তু আমাদের ব্যক্তিজীবনে সেটা অনেক বড়  প্রভাব ফেলে। আমরা অকারণে প্রতিদিন  নিজেদের সময় নষ্ট করি। কিন্তু প্রতিদিন সেই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আমরা অন্য ভালো কোন কাজ করতে পারি, হোক সেটা বই পড়া বা বাগান করা। এতে করে নিজের মনে প্রশান্তি আসে। আমাদের দৈনন্দিন জীবন এরকম  অজস্র ক্ষুদ্রের সমষ্টি। সময়ের প্রতিটা মুহূর্তের সমন্বয়েই তো একেকটা দিন,মাস বছর পার হয়। ছোট ছোট বালুকণা থেকে বিশাল মরুভূমি গড়ে উঠে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলরাশির সমন্বয়েই গড়ে উঠে বিশাল মহাসাগর।

এ পৃথিবীর প্রতিটা সফল ব্যক্তির সফলতার পেছনেও রয়েছে ক্ষুদ্র জ্ঞান, ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা বা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতার সমাহার। সকল ছোট কাজই মানুষকে বড় বড় কাজে অনুপ্রেরণা যোগায়। একজন মানুষের সফলতার পেছনে থাকে তার অসংখ্য ছোট ছোট প্রয়াস। ভালো কাজ ছোট হলেও আমাদের সেটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আর ছোট ছোট ভুলকে অবহেলা না করে সেটা শোধরানো উচিত। আমাদের জীবনে বড় বিষয়গুলোকে যেমন আমরা গুরুত্ব দিই ঠিক সেভাবেই ছোট ছোট বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। ক্ষুদ্র যে কোন কিছু শুরুতে ছোট হলেও সেটা পরবর্তীতে বড় কিছু হয়ে দাঁড়ায়। ছোট ছোট বিষয়কে গুরুত্ব দিলে তারপরেই তো বড় কোনো সম্ভাবনার দেখা মিলে। আমাদের ছোট ছোট ভালো কাজ, মানুষের প্রতি দয়া, ভালোবাসা এক অনিন্দ্য সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে। আবার একইভাবে ছোট ছোট অপরাধ একসময় বড় আকার ধারণ করে পরিবেশ নষ্ট করে। আমাদের সব সময় এই কথাটি মনে রাখা উচিৎ “ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল।”

মন্তব্যঃ মানুষের জীবনে ভালো মন্দ সবকিছুর পেছনে রয়েছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়। তাই ক্ষুদ্র কোনো কিছুকে আমাদের অবজ্ঞা করা উচিত নয়। যে কোন বড় বিষয়কে আমরা যতটুকু গুরুত্ব দিই, ছোট ছোট বিষয়েও আমাদের একই রকম গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এতে করে জীবনে সফল হওয়া যায়।

গুরুত্বপূর্ণ সকল ভাবসম্প্রসারণ-

১। ভাবসম্প্রসারণঃ পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি

২। ভাবসম্প্রসারণঃ একতাই বল

৩। ভাবসম্প্রসারণ: কীর্তিমানের মৃত্যু নেই / মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়

৪। ভাবসম্প্রসারণঃ ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ

৫। ভাবসম্প্রসারণঃ দুর্নীতি জাতীয় জীবনে অভিশাপস্বরূপ

৬। ভাবসম্প্রসারণঃ দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য

৭। পরের অনিষ্ট চিন্তা করে যেই জন

৮। ভাবসম্প্রসারণ: সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই

৯। ভাবসম্প্রসারণঃ সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত

১০। ভাবসম্প্রসারনঃ আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে..

১১। ভাবসম্প্রসারণঃ অর্থই অনর্থের মূল

১২। ভাবসম্প্রসারণঃ পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না।

১৩। ভাবসম্প্রসারণঃ গ্রন্থগত বিদ্যা পরহস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন

১৪। ভাবসম্প্রসারণঃ লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু