দুই বাংলাতে চলছে মহানগর ঝড়। ২০২১ সালে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচইতে মুক্তি পেয়েছিল আশফাক নিপুণ পরিচালিত ওয়েব সিরিজ মহানগর। আশফাক মহানগর যেখানে শেষ করেছিলেন, মহানগর ২ শুরু করেছেন ঠিক সেই জায়গা থেকে। কিন্তু মহানগর সিজন ২ এর জন্য দর্শকরা যেই আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিল, মহানগর সিজন ৩ এর জন্য বোধহয় এর চেয়ে ১০ গুণ বেশি আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করবে।
মহানগর ২ মুক্তির পর থেকেই পরিচালক আশফাক নিপুণ ভাসছেন প্রশংসার জোয়ারে। ফেসবুকে শতশত দর্শক মহানগর ২ এর প্রশংসা করে পোস্ট করছেন। সেই সাথে সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অপকটে মহানগর ২ এ তুলে ধরায় আশফাক নিপুণ সবার থেকেই পাচ্ছেন টুপি খোলা অভিবাদন। এই সব প্রশংসার পুরোটাই যে আশফাকের প্রাপ্য সেটা মহানগর ২ কেউ যদি না দেখে থাকেন তাহলে বুঝবেন না।
সাধারণ দর্শকদের পাশাপাশি তারকারাও মহানগর ২ ও আশফাক নিপুণে বুদ হয়ে আছেন। চলুন তারকাদের কিছু উল্লেখযোগ্য ফেসবুক পোস্ট আপনাদের সামনে হাজির করি।
চঞ্চল চৌধুরী
দুইটা কথা মনে রাখবেন…..
১.যে কোন ব্যাপারে অতি প্রত্যাশা ভালো নয়।
২.যতটুকু পাবেন,ততটুকু নিয়েই খুশী থাকবেন।
কাল রাতেই দলেবলে আমরা মহানগর২ দেখলাম।
এক কথায় বলবো…ভালো লেগেছে।
সাব্বাস আশফাক নিপুণ….!!!
আমার মত অনেক দর্শক তোমার মহানগর সিরিজ দেখে তোমাকে বাহবা দেবে…কারন তুমি যে অপ্রিয় সত্য গুলো তুলে ধরেছো তোমার মহানগরে….আমরা সেই পরিচিত মহানগরেরই বাসিন্দা।
আসলে আমরা যেমন ভাবি,”এটা হওয়া উচিত বা ওটা হওয়া উচিত নয়,নিজের বেলায় সততার সাথে সেটা মানি তো বা করি তো???
অন্যকে ধোঁওয়া তুলশী পাতার মত পবিত্র দেখতে চাই,কিন্তু নিজে সৎ হওয়ার চেষ্টা করি না।অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটাই সত্য।
তোমার এই কাজটা দেখে কিছু মানুষের বিবেক জাগ্রত হোক,এটুকু আশা করি।
আর তোমার গল্প বলার সাহসকে সাধুবাদ জানাই।
যাঁরা অভিনয় করেছেন মাহানগর২ তে,অধিকাংশই পরীক্ষিত অভিনেতা।
সবাই যার যার জায়গায় অসাধারন,সেটা হোক ফজলুর রহমান বাবু,হোক মোশারফ করিম বা জয়রাজ অথবা তানজিকা বা বৃন্দাবন দাস,
কিম্বা আফসানা মিমি বা শ্যামল মওলা।
বিশেষ ভাবে বলবো দিব্যজ্যোতির অভিনয়ের কথা।আমার কাকু দিব্য…..
এতটা পরিপক্ক অভিনয় আমি ওর কাছ থেকে ভাবতেই পারিনি
অনেক সম্ভাবনাময় অভিনেতা দিব্য।
এর আগে চরকি’তে “ইন্টার্নশীপ” এ সৌম্য’র অভিনয়ও আমাকে মুগ্ধ করেছে। কিন্তু ব্যক্তিগত ব্যস্ততা বা ঝামেলার কারনে তখন কোন পোস্ট দেয়া হয়নি…. সরি সৌম্য কাকু।
দিব্য-সৌম্য নিজের ছন্দে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে।
কাছের মানুষ হিসেবে যা দেখে আমার গর্ব হয়।
ওদের মত নতুনের আগমনে মুখরিত হোক আমাদের অভিনয় আঙিনা।
এগিয়ে চলি একসাথে……
আর কাকুরা….দুইটা কথা মনে রাখবা….
১.অভিনেতা হিসাবে তুমি কত বড়,এইটা জীবনেও ভাববা না,এইটা ভাবার দায়িত্ব দর্শকের।
২.বড় অভিনেতা হওয়ার সাথে সাথে,ভালো মানুষ হওয়াটা অত্যন্ত জরুরী।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
ওটিটি’র কাজগুলা নিয়া আমার একটা জেনারেল আশংকা হচ্ছে, যে কোনো কারনেই হোক আমরা কি ধীরে ধীরে এরকম দিকে ঝুঁকবো যেখানে সুন্দর গল্প হবে, থ্রিল হবে, কিন্তু সময়টা আর ভূগোলটা থাকবে না?
আশফাক নিপুনের মহানগর এই দিক থেকে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। ব্লেস ইউ, ম্যান (সিনস, অ্যাট ইওর ফোর্টি ফাইভ, ইউ আর নো মোর আ বয়)! মহানগর ২-তেও আশফাক একই সিগনেচার রাখতে পারছে। ব্রাভো!
আমরা যখন সবাই একসাথে থাকতাম, তখন মাঝেমধ্যেই রাতের বেলা আমাদের সুযোগ হইতো কিছু তত্বকথা বলবার। সেখানে অনেক বিষয়ে কথা হইতো। তবে সবচেয়ে বেশি কথা হইতো সম্ভবত “সময়” নিয়া, সময়ের ছাপ নিয়া। কেমনে স্ক্রিপ্টে, দৃশ্য নির্মাণে, এমন কি অভিনয়ে সময়কে আঁকা যায়। সময়, যে সময়টার ভিতর দিয়ে আমরা প্রবাহিত হচ্ছি, অথবা যে সময়টা আমাদের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে! আমাদের ভাই-ব্রাদারদের কাজের একটা সাধারন লক্ষণ দেখবেন এটা। সেটা যে কেবল সরাসরি রাজনৈতিক গল্পে হইতে হবে তা না, এমন কি প্রেমের গল্পেও আমরা হয়তো সেই চেষ্টাই করেছি বা করছি। কখনো সেটা সফল ভাবে পারা গেছে, কখনো পারা যায় নাই।
আশফাকের মহানগর বা মহানগর ২ ছিপ ফেলে সময় ধরারই আরেক নাম। যদিও সচেতন ভাবে “প্রাউড” শব্দটা ব্যবহার না করার চেষ্টা করতেছি ইদানিং। রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে, ধর্মে ধর্মে, কালচারে কালচারে প্রাইডের যে অসুস্থ কম্পিটিশন, এইসব দেইখা প্রাউড শব্দের উপর থেইকা ভক্তি উইঠা গেছে। কিন্তু শেষে আইসা মনে হইলো, “প্রাউড অব ইউ” বলি! না বললে মনের ভাবটা ঠিক প্রকাশ হইতেছে না।
ফাহমিদুল হক
Ashfaque Nipun আপনিই পারেন। একে তানভীর ভাই, দুইয়ে ময়নাঘর। কষ্টনীড়ে কিছুটা বামপালও ছিল।
নাসির উদ্দিন খান
সোশাল মিডিয়ায় লম্বা লম্বা সাহসী কথা অনেকেই বলতে পারে; আমি, আপনি, আশফাক নিপুন সবাই।
কিন্তু কাজে কর্মে সাহসী খেইল দেখাতে পারে কয়জনা!
সেই খেইলটাই দেখিয়েছে আমার চাটগাঁইয়া ভাই Ashfaque Nipun
অস্সাধারণ নির্মাণ, দেখতে হবে, বলে বোঝানো যাবে না।
Hoichoi এ চলছে “মহানগর ২”
তানিম নূর
এই সময়ের সামাজিক ,রাজনৈতিক বাস্তবতাকে আবারও দারুণভাবে নিয়ে এসেছে মহানগর ২। সাথে আছে মোশাররফ করিমের দুর্দান্ত অভিনয় যা প্রতি মুহুর্তে মুগ্ধ করেছে। ফজলুর রহমান বাবু, আফসানা মিমি, বৃন্দাবন দাস, তানজিকা আমিন, দিব্য জ্যোতিসহ সকলেই নিজ নিজ চরিত্রে ছিলেন অসাধারণ।মহানগর ৩ এর জন্য এবার অপেক্ষার পালা শুরু হলো ।আশফাক নিপুণকে ভালোবাসা এবং অভিনন্দন।
বিধান রিবেরু
মহানগর নিয়ে দুটো কথা
শ্রেণি স্বার্থে স্টেট এপারাটাসকে কি করে ব্যবহার করা হয়, কেমন করে অসহায় ও নিরাপরাধ মানুষ শাসকগোষ্ঠীর বলির পাঠায় পরিণত হয় তার এক সমকালের খতিয়ান হয়ে থাকবে “দ্য ক্যাপিটাল”। মজার বিষয় মহানগর ও পুঁজি দুটির ইংরেজি বানানই এক: Capital, নগরে পুঁজির খেলায় বুর্জোয়ারা কিভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তা তৃতীয়বিশ্বের মানুষ ভালো করে জানে। আর জানে বলেই মহানগরের মতো ক্রাইম থ্রিলার দেখে এখানকার মানুষ নিজের গল্প বলে কাছে টেনে নেয়। আর ক্রাইম থ্রিলারের নির্মাণ যদি ভালো হয়, তা হলে তো কথাই নেই। দর্শক সেই কাজকে সেলিব্রেট করা শুরু করে। মহানগরের বেলাতেও তাই ঘটেছে।
এখানে ওসি হারুণ ভূতের সাথে লড়তে লড়তে নিজেই ভূত হয়ে গেছে। তবে আমি বলি ভূতেরা নিরীহ। ঠিক যেমন নিরীহ সাপ, শেয়াল, সিংহ প্রভৃতি। মানুষের চেয়ে হিংস্র ও নিষ্ঠুর কিছু নেই। কিন্তু ওসি হারুণ এখানে রূপক। সে ম্যাকিয়াভেলির প্রিন্সের মতো একই সাথে শেয়াল ও সিংহ। সে তার মতো করেই খেলাটা খেলতে চায়। অনেকটা সাবভার্সিভ। এটাই তার সারভাইবাল টেকনিক। সে ভেতরে ভেতরে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে ব্রত নিয়েছে। তবে সিস্টেমের উজানে যাওয়া সহজ নয়। ভালো ও মন্দের দ্বন্দ্ব যেভাবে “ক্যাপিটালে” উঠে এসেছে, তাকে মার্ক্সের ক্যাপিটালে বর্ণিত শ্রেণিচেতনা দিয়ে বিচার করলেই ধরা পড়বে গরীব কিভাবে গাড়িচাপায় মরে, কি করে ধর্ষণের শিকার হয়, কি করে মিথ্যা মামলার আসামী হয়।
মহানগর যতটা না নির্মাণের জন্য আলোচিত হচ্ছে এই সময়ে, তারচেয়েও বেশি সমাদর পাচ্ছে এর সমসাময়িকতার জন্য। পার্ট টুয়ের ডিটেইলগুলো চমৎকার। যেমন ফোনালাপ শোনার পর ফজলুর রহমান বাবু যখন বলেন– টাকলা আর ভালো হইলো না! তাছাড়া গোপন স্থানে জিজ্ঞাসাবাদ, ব্যক্তিগত ফোনালাপে আড়িপাতা ইত্যাদি এই সিরিজকে কনটেম্পরারি করে তুলেছে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে এর টাইটেল সং ও ভিজুয়ালাইজেশন। যেখানে এক ভাস্কর্যে দেখা যায়: স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক।
নির্মাতা আশফাক নিপুণকে ধন্যবাদ, মহানগরকে নিপুণ হাতে সমকালীন করে তোলার জন্য।
খিজির হায়াত খান।
মহানগর ২ দেখলাম , দুইটা কথা মনে রাখবেন সবাই :
১. আশফাক নিপুন দের মতো নতুন প্রজন্মের নির্মাতাদের মেধা আর কলিজা দুইটাই আছে।
২. এরা যখন নিয়মিত সিনেমা বানাবে তখন আপনারা যারা দেশের সিনেমাটাকে বেঁচে দিতে উঠে পরে লাগছেন তাদের লুঙ্গিটা খুলে যাবে।
ঈদ মুবারক।
খিজির হায়াত খান।
ফাহাম আব্দুস সালাম
আমাদের জেনারেশানের রেয়ার ট্যালেন্ট আশফাক নিপুন। মহানগর সেকেন্ড সিজন, প্রথম সিজনের চাইতে স্লো পেইস কিন্তু অনেক বেটার মেইড। নন-লিনিয়ার টাইমলাইন, ছোটোখাটো ভুল আছে কিন্তু এরকম ভুল যেকোনো থ্রিলারেই পাওয়া যায়।
ওনার আসল ক্রেডিট লেখায় – দিস ইজ ভেরি ওয়েল রিটেন। ফার্স্ট সিজনে কিছু অপ্রয়োজনীয় সাব-প্লট আছে। এই সিজনে সেটা নাই এবং প্লট যথেষ্ট টাইট।
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে আর একজন মেকার নাই যার এইরকম বীচি আছে মেঝ স্ক্রীনে এই জিনিস বানানোর। বাংলাদেশের একটা এমপিকে খুনী এবং পুলিসকে ভাড়াটে খুনী হিসাবে দেখানোর যে বাস্তবতা – সেটা আশফাক ছাড়া কেউ দেখাতে পারতো না। ঠিক এই কারণেই আশফাক আমাদের সময়ের হিরো। উনি জয়বাংলা হয়ে যেতে পারতেন সবার মতো, কিন্তু হন নাই।
মোশারফ করিমের পারফর্মেন্স দুর্দান্ত। ইন ফ্যাক্ট – মোশারফ করিম যে এই স্ক্রিপ্টে রাজী হৈছে – এইটাই আমার কাছে আশ্চর্য লাগছে। ওসি হারুনের ক্যারেক্টার এখনকার কিশোররা আমার মনে হয় সারা জীবন মনে রাখবে যেমন আমরা মনে রেখেছি বহুব্রীহির মামাকে।
তানজিকা আমিনের পারফর্মেন্স খুবই বিশ্বাসযোগ্য ছিলো। আমি ওনাকে এই প্রথম স্ক্রীনে দেখলাম। আমার মনে হয়েছে উনি একজন ভালো অভিনেতা। রিপোর্টার ভদ্রলোক এবং ফজলুর রহমান বাবুও খুবই বিশ্বাসযোগ্য ছিলেন।
বাংলাদেশের অন্য মেকাররা আশফাক থেকে সাহস নিতে পারেন। এবং আর্টিস্টদের কাছে আমার অনুরোধ: ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ওপর এখন সরকারী নিয়ন্ত্রণ নেমে আসবে। আপনারা দয়া করে মুজিবকোট না পরে এই চাপ রেজিস্ট করেন।
যেকোনো নিয়ন্ত্রণবিধিই আপনাদের সর্বনাশ করবে। প্রশ্নটা ভালো Vs খারাপ নীতিমালা না। যেকোনো নীতিমালাই আপনাদের সর্বনাশ করবে। আপনাদের সম্মিলিত স্ট্যান্স হওয়া উচিত – আমাদের কোনো নীতিমালার প্রয়োজন নাই – কারণ ওটিটি নাটক যে দেখে – সে পয়সা দিয়ে নিজের ফ্রী-উইল ব্যবহার করে দেখে। এখানে হৈচৈ এবং আপনার মাঝে কোনো থার্ড পার্টি নাই। যার ভালো লাগবে না – সে দেখবে না। দ্যাটস দা এন্ড অফ দা স্টোরী।
প্যাকেজ নাটক (১৯৯৪/৯৫) এবং প্রাইভেট টিভি চ্যানেলের (১৯৯৯/২০০০) পর ওটিটি, একটা জেনারেশনাল অপোরচুনিটি আসছে আপনাদের। এইটা রক্ষা না করলে আপনারা নিজেদের য়ে নিজেরাই মারবেন।

সাকিব চৌধুরী
| মহানগর ২ |
। রেটিং – A ফর অসাধারণ ।
আশফাক নিপুনের বানানো মহানগর যখন দুই বছর আগে বের হয় তখন আমি একদম তাজ্জব হয়ে গেছিলাম। একটা জটিল গল্প নিপুন অত্যন্ত গুছিয়ে আমাদের উপাস্থপান করেছিলেন যেটা আবার কারিগরি দিক থেকে খুবই উঁচু মানের। আমার মনে আছে আমি বলেছিলাম যে নিপুনকে আরেকটু বাজেট বারায় দিলে এটা একটা বড় পর্দার সিনেমা হয়ে যেত।
এই ইদে আসলো মহানগর ২। অর্থাৎ দ্বিতীয় সিজন। এবং এবারো শেষ পর্ব দেখার পর ঠিক ওই কথা মনে হয়েছে – ইস এটা যদি বড় পর্দায় দেখতে পারতাম!
আশফাক নিপুন একটি ৯ পর্বের সিরিজ বানাননি, তিনি বানিয়েছেন একটা ৯ পর্বের সিনেমা। কারণ গল্প, চিত্রনাট্য, সংলাপ, মূল চরিত্রদের অভিনয়, ক্যামেরার কারসাজি, এডিটিং, সাউন্ড এবং আর্ট ডিরেকশন সব মিলিয়ে ঘটনাটা হয়েছে সেই লেভেলে।
সিজন ২ শুরু হয় ঠিক সিজন ১ যেখানে শেষ হয় সেখান থেকে। অর্থাৎ ওসি হারুনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। কিন্তু আমরা দেখি, থানার পরিবর্তে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অন্য কোথাও। এবং এখান থেকেই খেলা শুরু।
আমি গল্প নিয়ে আর কিছু বলব না। তাহলেই স্পয়লার হয়ে যাবে। শুধু বলব যে আশফাক নিপুন গত দুই বছর ধরে তাঁর সব ক্রিয়েটিভ সরঞ্জাম ঝালাই করেছেন। ক্যামেরা, এডিটিং, সংলাপ, অভিনয় ও মিউজিকের সমন্বয়ে তৈরি করেছেন দারুণ কিছু মুহূর্ত। যাতে করে আপনি অনেক সিনেম্যাটিক অনুভূতি পাবেন। মূল গল্প নিয়ে শুধু এটা বলব, এবারের গল্প প্রথম সিজন থেকে আরো অনেক বেশি জটিল। কিন্তু এত সুন্দর করে চিত্রনাট্য লিখেছেন যে বুঝতে কোন অসুবিধা হয় না। আর জটিল গল্পের অসাধারণ উপস্থাপনার জন্যই আমার কাছে পুরো ব্যাপারটা সিনেম্যাটিক লেগেছে।
মোশারফ করিম দারুণ অভিনয় করেছেন। ফুজলুর রহমান বাবু অনেকদিন পর একটু অন্যরকম চরিত্রে অভিনয় করলেন এবং সেটা আমার খুব ভালো লেগেছে। সায়েফ দারুণ কাজ করেছে। আর আমার খুব ভালো লেগেছে তাঞ্জিকা আমিনের অভিনয়। অনেক দিন পর একজন অভিনেত্রি থেকে একদম সাবলীল একটা পারফর্মেন্স দেখলাম। আমার একটা চিরচারিত আফসোস যে আমাদের নির্মাতারা সাবলীল মহিলা চরিত্র লিখতে পারেন না। আশফাক নিপুন সেই ধারাটা ভাংলেন। আসলে সবারই দারুণ পারফরমেন্সের পিছনে হচ্ছে নিপুনের বলিষ্ঠ চিত্রনাট্য ও পরিচালনা। আমি প্রায়ই বাংলাদেশী সিরিজ বা মুভি দেখে বলি যে আইডিয়াটা ভালো কিন্তু এক্সিকিউশন ভালো না। মহানাগর ২ হচ্ছে সেই খুবই বিরল একটা ঘটনা যেখানে গল্প এবং সেটার এক্সিকিউশন দুটাই অতি চমৎকার।
ডেইলি সোপ অথবা ব্যাচেলার পয়েন্ট ধরণের সিরিজ বাদ দিলে সম্ভবত এটাই গত ২০ বছরে প্রথম সিজন ২। হ্যাঁ, কারাগার আমরা দু ভাগে দেখেছি কিন্তু সেটাকে তারা বলেছে পার্ট ২। সিজন ২ বলে নাই। আর সেটাকে সিজন ২ যদি ধরিও, খুব বাজে হয়েছে। তাই আশফাক নিপুনের উপর নিশ্চয় অনেক চাপ ছিল যেন সিজন ২ অন্তত সিজন ১ এর মতো ভালো হয়।
আমি খুব খুশি যে নিপুন শুধু সিজন ১ এর মতো ভালো বানাননি, তাঁর থেকে অনেক ভালো বানিয়েছেন।
আপনারা দেখেছেন নাকি মহানগর ২? দেখে থাকলে জানান কেমন লাগলো।
(আমার প্রচলিত গুড/ব্যাড/অসহ্য কায়দা এখানে ফলো করি নাই কারণ এটা পুরাটাই আমার কাছে অসাধারণ। হ্যাঁ কিছু জিনিস আরো ভালো হতে পারতো, কিন্তু সেগুলা মাফ।)
রওনক হাসান
বিনা মেঘে বজ্রপাত! Ashfaque Nipun ❤️❤️❤️❤️❤️❤️
রায়হান খান
ঈদের দিনে ” মহানগর”
গোগ্রাসে ,একবসায় দেখেনিলাম মহানগর,
আশফাক নিপুণ আমাকে স্ক্রিন ছেড়ে উঠতে দিলো না । মনোমুগ্ধকর প্লট, এঙ্গেজিং মেকিং আর পরিমিত প্রডাকশন ডিজাইন ধরে রেখেছে প্রীতিটি পর্বে।
মোশাররফ করিম, আবার তোমার কাছে জানতে চাই , এতো ভাল অভিনয় করো কিভাবে ? জানি এবার বলবে , জানি না , আল্লাহ ভরসা।
চোখ ঠোট না বাঁকিয়ে , উদ্ভট কোন গেট আপ এর বাহুল্য ছাড়া, বিরক্তিকর ম্যানারিজমের আধিখ্যেতা ছাড়া , আহা কি বিশ্বাসযোগ্য অভিনয়। মোশাররফ তোমার অভিনয় না করার বিস্ময়কর কাপাসিটির কারণেই তুমি এতো বড় অভিনেতা। আমি তোমার অভিনয়ে আবারো বিস্মিত হলাম। এবং ভবিষ্যতে বার বার হতে হবে এটা আমি জানি।
বাবু ভাই আপনার অভিনয়ের ডাইভারসিটি আমার মনে অস্থিরতা তৈরি করেছে।
সকল অভিনয়শিল্পীর সাবলীল চরিত্রায়ন নিঃসন্দেহে এপার আর ওপারের প্রতিটি মহানগরকে কাঁপাবে আমার বিশ্বাস। আর হইচই তে হবে হই হই রই রই।
তবে মিস করেছি মলয় কে ……।
দর্শকরা দুইটা কথা মনে রাখবেন,
মোশাররাফ করিম একজন অভিনেতাই বটে
আশফাক নিপুণ একজন নির্মাতাই বটে
আরও পড়ুন- তাকদীর ওয়েব সিরিজ ও নাটক নিয়ে চঞ্চলের ভাবনা
আরও পড়ুন- মুন্সিগিরিঃ আয়নাবাজি ম্যাজিক নাকি নিষ্প্রভ থ্রিলার?
আরও পড়ুন- খাঁচার ভেতর অচিন পাখিঃ সময়ের সাহসী বক্তব্য