গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরি হলো জ্ঞান সমুদ্রের দরজা মাত্র। জ্ঞান পিপাসু সব মানুষের জন্য লাইব্রেরি অক্সিজেনের মতো কাজ করে। গ্রন্থাগার রচনাটি এসএসসি ও এইচএসসি বাংলা পরীক্ষার জন্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও শুধুমাত্র পয়েন্টগুলো মাথার রাখার জন্য সব শিক্ষার্থীর গ্রন্থাগার রচনাটি পড়ে রাখা দরকার। নিম্নে ২৬ পয়েন্ট সহ গ্রন্থাগার বাংলা রচনাটি তুলে ধরা হলো।
গ্রন্থাগার
সূচনা
মানুষ তার চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারণা লিপিবদ্ধ করে রাখে গ্রন্থে। যুগযুগ ধরে এভাবেই জ্ঞানের ভান্ডার এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে প্রবাহিত হচ্ছে। এই গ্রন্থসমূহ মানবজাতির অকৃত্রিম বন্ধু, ভবিষ্যত পথনিদর্শক, এবং মানব সভ্যতার দিকচিহ্ন। সেজন্যেই এই গ্রন্থসমূহ সঞ্চয় করে গড়ে তোলা হয় গ্রন্থাগার, যেখানে জ্ঞানপিপাসু মানুষেরা নিজের অন্তরাত্মাকে জ্ঞানের আলোয় বিকশিত করার সুযোগ লাভ করে।
গ্রন্থাগার কী?
যে স্থানে অসংখ্য গ্রন্থ মিলে এক বিরাট তথ্যসমৃদ্ধ জ্ঞান ভাণ্ডার সৃষ্টি করে, তাকেই গ্রন্থাগার বলা হয়। মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে জ্ঞান, এবং এই জ্ঞানের মূল উৎসই হচ্ছে গ্রন্থ। তাই যখন মানুষ গ্রন্থাগারে যায়, সেখানে সে খুঁজে পায় তার মস্তিষ্ককে তৃপ্ত করার রসদ।
মানবজীবনের বহুমুখী জ্ঞান যেখানে একত্রিত হয়, যেখানে সকল জ্ঞানের উৎস আশ্রয় পায়, সেই স্থানই গ্রন্থাগার। কালজয়ী কবি শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, “এখানে ভাষা চুপ করিয়া আছে, প্রবাহ স্থির হইয়া আছে, মানবাত্মার অমর আলোক কালো অক্ষরে শৃংখলে কাগজের কারাগারে বাঁধা পড়িয়া আছে। এক কথায় গ্রন্থাগার হলো মহামানবের পবিত্র মিলনতীর্থ, যেখানে জ্ঞান, তথ্য ও মানুষের অন্তরাত্মার অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটে।“
গ্রন্থাগারের প্রকারভেদ
গ্রন্থাগারের কোনো নির্দিষ্ট প্রকারভেদ নেই; স্থান-কাল-পাত্র অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের গ্রন্থাগার দেখতে পাওয়া যায়। প্রাচীনকালে যেমন গ্রন্থাগার দেখতে পাওয়া যেত, এই আধুনিক যুগে তেমন অবকাঠামো অনুপস্থিত। তাছাড়া বিভিন্ন দেশে নিজস্ব কৃষ্টি অনুযায়ী গ্রন্থাগার সাজানো হয়ে থাকে, তাই প্রত্যেকটি গ্রন্থাগার একেকটি অনন্য সত্ত্বা।
তবুও গ্রন্থের প্রকারভেদ এবং পরিচালনাগত দিক থেকে বিবেচনা করে গ্রন্থাগারকে ৬টি প্রকারে ভাগ করা যেতে পারে। প্রকারভেদগুলি হলোঃ
- গণগ্রন্থাগার
- গবেষণা গ্রন্থাগার
- সরকারী গ্রন্থাগার
- ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার
- শিক্ষা প্রাতিষ্ঠানিক গ্রন্থাগার
- বিশেষ গ্রন্থাগার
গণগ্রন্থাগার
গণগ্রন্থাকার বা পাবলিক লাইব্রেরি সাধারণত অন্যান্য গ্রন্থাগার থেকে আয়তনে বিশাল হয়ে থাকে। তাছাড়া এই গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা এবং ধরণ তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। গণগ্রন্থাকার সকলের জন্য উন্মুক্ত এবং বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত।
গবেষণা গ্রন্থাগার
গবেষণা গ্রন্থাগার এমন একটি স্থান যেখানে গবেষণার উদ্দেশ্যে গ্রন্থ এবং নথিপত্র সংগৃহীত থাকে। গবেষক ও শিক্ষকেরা এখানে গবেষণা ও শিক্ষামূলক উপাদান খুঁজে পায়। বিভিন্ন সামাজিক ও প্রযুক্তিগত গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকে এই ধরণের গ্রন্থাগারসমূহ যা ভবিষ্যত দিকনির্দেশনা দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
সরকারী গ্রন্থাগার
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কিছু সরকারী গ্রন্থাগার থাকে যা সকলের জন্য উন্মুক্ত নয় এই লাইব্রেরিগুলো শুধুমাত্র সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য এবং শুধুমাত্র তারাই এখান থেকে তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারে।
ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার
যদিও জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে গ্রন্থাগারের ভূমিকা অপরিসীম, কিন্তু দেশের বহু জায়গায় আজও কোনো প্রতিষ্ঠিত লাইব্রেরি নেই। জ্ঞানের বিকাশ যেন থেমে না থাকে, তাই গাড়ির সাহায্যে বই পৌছে দেয়া হয় বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এই সকল ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগারের কারণে পৃথিবীর কোণায় কোণায় আজ প্রজ্জ্বলিত হচ্ছে জ্ঞানের আলোচ্ছটা।
শিক্ষা প্রাতিষ্ঠানিক গ্রন্থাগার
শিক্ষা প্রাতিষ্ঠানিক গ্রন্থাগারগুলো যে সকল স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হয়ে থাকে, সেই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্যই বইপত্র এবং নথি সংরক্ষিত রাখে। ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকেরা তাদের শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্যে সকল উপাদান এই গ্রন্থাগার থেকেই লাভ করে থাকেন। শুধু তাই নয়, শিক্ষকেরা নিজের গবেষণামূলক তথ্য এই লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত রাখেন যাতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের জ্ঞান বৃদ্ধিতে এই সকল উপাদান কাজে লাগাতে পারেন।
বিশেষ গ্রন্থাগার
এই গ্রন্থাগারগুলো ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে দেখা যায়। বিভিন্ন জাদুঘর, হাসপাতাল বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই বিশেষ লাইব্রেরি গঠন করা হয়। এই ধরণের গ্রন্থাগারে শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য সংরক্ষণই গুরুত্ব পায় এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাই এখানে প্রবেশ করতে সক্ষম।
গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা
প্রাচীনকাল থেকেই গ্রন্থাগার মানবসভ্যতার এক অমূল্য উপাদান। শুধু জ্ঞানচর্চাই নয়, যুগযুগ ধরে সকলের চিন্তাধারণা এবং ইতিহাস ধারণ করে পরবর্তী প্রজন্মকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়ার কাজটিও নিষ্ঠার সাথে পালন করে এসেছে গ্রন্থের এই ভান্ডারগুলো। প্রতিটি লাইব্রেরি মানুষের জীবন দর্শনের সাক্ষ্য বহন করে। তাই অতীতকে জানতে, বর্তমানকে নির্মাণ করতে এবং ভবিষ্যত আলোকিত করতে গ্রন্থাগারের ভূমিকা অপরিহার্য। নিম্নে গ্রন্থাগারের কিছু উল্লেখযোগ্য প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করা হলো।
গবেষণার ক্ষেত্রে
গ্রন্থাগারে কয়েকশো বছরের পুরনো হতে সাম্প্রতিক; সব ধরণের গবেষণার নথি সংগৃহীত থাকে। তাই বিভিন্ন গবেষকেরা সেই সমস্ত পুস্তক ও গবেষণা সংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করে নিজেদের কাজে লাগাতে পারেন। এই সকল গবেষণার রেকর্ড পুরনো তথ্য থেকে নতুন কিছু আবিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং কোনো ভুলত্রুটি হয়ে থাকে সেটি সংশোধন করার সুযোগও থাকে।
পরিবার গঠনে ভূমিকা
কোনো পরিবারে যদি ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার থাকে, তাহলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে একটি বই পড়ার নিয়মিত অভ্যাস গড়ে উঠে। শিশুর জ্ঞান বিকাশে বই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই পরিবারের বড়রা যখন নিয়মিত বই পড়ে, শিশুরাও তাদের অবসরে বই তুলে নেয় এবং জ্ঞানের এক বিশাল জগত তাদের হাতের মুঠোয় এসে পড়ে। এভাবে শিশুরা একজন সুন্দর মানসিকতার মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার সুযোগ পায় এবং সমাজে একটি আদর্শ পরিবারের জন্ম হয়।
শিক্ষা ও অধ্যয়নের ক্ষেত্রে
শিক্ষা একটি বহুমুখী কার্যক্রম। শিক্ষা শুধুমাত্র একটি বা দুইটি গ্রন্থে সীমাবদ্ধ নয়। কিন্তু ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে একই বিষয়ে একের অধিক পুস্তক সংগ্রহ করা সব সময় সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে গ্রন্থাগার হয়ে উঠতে পারে একটি শিক্ষার্থীর জীবনের আলোকবর্তিকা।
গ্রন্থাগারে রয়েছে অসংখ্য গ্রন্থের আশ্রয়। তাই কোনো বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে চাইলে লাইব্রেরিতে প্রচুর বই পাওয়া যায়, যা কোনো বিষয় সমন্ধে পূর্ণ জ্ঞান প্রদান করতে সম্ভব। শুধু শিক্ষার্থিরাই নয়, শিক্ষকেরাও নিজেদের পাঠ্যদানের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য গ্রন্থাগারের সময় কাটাতে পারেন।
চরিত্র গঠনে সহায়ক
একটি ভালো গ্রন্থ একজন আদর্শ শিক্ষকের ভূমিকা পালন করে থাকে। বিভিন্ন মনীষীদের জীবনী, ঐতিহাসিক তথ্য কিংবা কোনো বিখ্যাত লেখকের বই মানুষকে মন্দ থেকে ভালো বাছাই করার শিক্ষা দিতে সক্ষম। এভাবেই একজন আদর্শ বই পড়ুয়া নিজের ত্রুটিগুলো শুধরে একজন উত্তম চরিত্রের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ পায়।
সংস্কৃতির সংরক্ষণের ক্ষেত্রে
প্রতিটি গ্রন্থাগার আমাদের অতীতের চিহ্ন বহন করে। প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন থেকে দুষ্প্রাপ্য পুঁথিসমূহ; সবকিছুই লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত রয়েছে। তাই আমাদের ইতিহাস জানতে, অতীত থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে হলে বা আমাদের শেকড় সমন্ধে আরো গভীরভাবে শিখতে চাইলে গ্রন্থাগারই হবে আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু।
সাধারণ জ্ঞান ও সামাজিক উন্নতি
গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত অসংখ্য তথ্য আমাদের সাধারণ জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করে। অতীতের ছোটছোট ঘটনা থেকে বর্তমানের জীবনযাপন, সবই লাইব্রেরিতে নথিভুক্ত থাকে। তাই গ্রন্থাগারে জ্ঞানার্জনে সময় জ্ঞাপন করলে সাধারণ জ্ঞানের সীমা প্রসারিত হয়। এছাড়া অতীত ও বর্তমান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আমরা ভবিষ্যতের সামাজিক উন্নতির কাঠামো গঠন করতে পারি।
জ্ঞান সংরক্ষণের ক্ষেত্রে
গ্রন্থাগারে শুধু কোনো একটি দেশ বা জাতি নয়, পুরো পৃথিবী থেকে হাজারো মানুষের জ্ঞান ও গবেষণা সংরক্ষিত থাকে। জ্ঞানের যে শাখা প্রশাখা আমাদের কাছে অজানা, অন্য কোন জাতি হয়তোবা সেই শাখায় বিশেষ কৃতিত্ব অর্জন করেছে। গ্রন্থাগার আমাদের সেইসকল অজানা জ্ঞানের সাগর সন্ধানে সহায়তা করে। এতে আমরা নিজেদের উন্নতি সাধন করতে পারি এবং অন্যান্য জাতি ও প্রজন্মের জন্য সেই জ্ঞানভাণ্ডার সংরক্ষণ করে রেখে যেতে সক্ষম হয়।
পৃথিবীর সুপ্রসিদ্ধ কিছু গ্রন্থাগার
প্রাচীনকাল থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়েছে, যা আজও মানবজাতির জ্ঞানভাণ্ডার ধারণ করে রেখেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো গ্রন্থাগারের নিদর্শন মিলেছে ব্যাবিলন শহরে, রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার ছিলেন এই লাইব্রেরির পৃষ্ঠপোষক। আরেকটি অন্যতম প্রাচীন গ্রন্থাগারের নাম আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগার, যা মিশরে অবস্থিত। তাছাড়া অতীতে ভারতবর্ষে গড়ে উঠেছিলো তক্ষশীলা, নালন্দা, মথুরা, বারাণসী, প্রভৃত বিদ্যকেন্দ্র। নিম্নে বর্তমান ও অতীতের কিছু সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থাগারের বর্ণ্না তুলে ধরা হলো।
আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগার, মিশর
মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগারটি বহু প্রাচীন আমল থেকে এক অমূল্য জ্ঞানভান্ডার রূপে সুপরিচিত। এই গ্রন্থাগারে বহু ঐতিহাসিক নিদর্শন, পুঁথি-পুস্তক, ও নথি সংরক্ষিত ছিলো। বর্তমানে এই গ্রন্থাগারটিকে আরো উন্নত রূপ দেয়া হয়েছে, যেখানে রয়েছে প্লানেটেরিয়াম ও সায়েন্স মিউজিয়াম, কনফারেন্স রুম, চিত্রকলা প্রদর্শন, সংস্কৃতিক কেন্দ্র, গবেষণাগার এবং অন্যান্য।
গ্রিনিচ গ্রন্থাগার, যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের গ্রিনিচ গ্রন্থাগার গত কয়েকশত বছর ধরে জ্ঞানের ধারক এবং বাহক হিসেবে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত। অতীতের পুঁথি, গ্রন্থ, কলা নিদর্শন; সকল উপাদান এই গ্রন্থাগারে পাওয়া যায়। বর্তমানে এই লাইব্রেরি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। কেউ চাইলে কাগজের নথি না ঘেঁটে ডিজিটাল তথ্য সংগ্রহ করতে পারে অনায়েসে।
নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এবং সমৃদ্ধশালী গ্রন্থাগার। হাজার হাজার গ্রন্থ, ডিজিটাল ডাটা এবং চিত্রকলা দেখতে পাওয়া যায় এই প্রতিষ্ঠানে। শুধু গ্রন্থাগার নয়, নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরি বিভিন্ন ধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লেকচার, চিত্রকলা প্রদর্শনী এবং অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করার অনুমতিও প্রদান করে।
ব্রিটিশ লাইব্রেরি, যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ লাইব্রেরি তার আয়তন এবং বইয়ের সংখ্যার জন্য সারা বিশ্বে আলোচিত এবং সুপরিচিত। শুধু গ্রন্থের সংখ্যা বিচারে নয়, এই গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত রয়েছে সহস্র বছরের ঐতিহাসিক নিদর্শন, খবরের কাগজ, ছবি, চিত্রকলা, মানচিত্র, ডাকটিকিট এবং সাউন্ড রেকর্ডিং। বিশাল এই তথ্যভাণ্ডারে প্রবেশের অনুমতি জনসাধারণের নেই, তবে অনুমতিপত্রের মাধ্যমে গবেষণার উদ্দেশ্যে এই গ্রন্থাগার থেকে তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
বাংলাদেশের গ্রন্থাগারসমূহ
বাংলাদেশে প্রথম ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি। তারপর থেকে শিক্ষার প্রসারের সাথে তাল মিলিয়ে গড়ে উঠেছে ছোটো-বড় অসংখ্য গ্রন্থাগার। বর্তমানে বাংলাদেশে শতাধিক সরকারি ও বেসরকারি লাইব্রেরি রয়েছে। গণ–উন্নয়ন পাঠাগারের পরিচালনায় চালিত হচ্ছে ২৭টি গ্রন্থাগার, সরকারি গ্রন্থাকার রয়েছে ৬৮টি এবং বেসরকারি গ্রন্থাগার রয়েছে ৮৮৩ এরও অধিক। শুধু তাই নয়, কিছু বিদেশী দূতাবাসের সাহায্যেও গ্রন্থাগার পরিচালিত হচ্ছে, যার মধ্যে ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরি একটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান।
আধুনিক পৃথিবীতে গ্রন্থাগারের ভূমিকা
বর্তমানে পৃথিবীতে গ্রন্থাগারের আদল বদলে যাচ্ছে। মানুষ এখন কাগুজে বই নয়, ই-বুক অথবা ডিজিটাইজড ডাটা নিয়ে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তাই এই কম্পিউটারাইজড যুগে গ্রন্থাগারের আবেদন খানিকটা কমে এসেছে।
তবে আধুনিক গ্রন্থাগারগুলো প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের আরো উন্নত করছে। বর্তমানে প্রায় সব লাইব্রেরিতেই রয়েছে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট কানেকশন, জরুরি তথ্যসমূহ ডিজিটাইজড করা হচ্ছে এবং কয়েকটি গ্রন্থাগারে বিশেষ ই-রিডিং কর্ণারও গড়ে উঠেছে। এই দ্রুতগতির ইন্টারনেটের জগতেও তাই গ্রন্থাগারের মত সুবিশাল জ্ঞানের ভাণ্ডারের বিকল্প খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ছাত্রজীবনে গ্রন্থাগারের গুরত্ব
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিটি শিক্ষার্থীর মাঝে জ্ঞানের আলো প্রজ্জ্বলিত করে। কিন্তু সেই আলোর পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে গ্রন্থাগারের সুবিশাল জ্ঞানভান্ডারে নিজে নিমজ্জিত করার মাধ্যমে। ছোট্ট একটি শ্রেণীকক্ষে যতটুকু জ্ঞান আহরণ করা সম্ভব, গ্রন্থাগার তার চেয়েও বড় এক জগতের দ্বার খুলে দেয়। গ্রন্থাগারে একই বিষয়ের উপর শতশত বই ও নথিপত্র পাওয়া যায়। তাই কোনো বিষয়ে আদ্যপান্ত জানতে, ইতিহাসের কোনো ঘটনা গভীরভাবে অনুধাবন করতে বা কোনো বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে গ্রন্থাগারের বিকল্প নেই।
হাতের মুঠোয় ইন্টারনেট থাকায় সকল তথ্য মানুষের হাতের নাগালে। কিন্তু গ্রন্থাগার প্রতিটি শিক্ষার্থীকে নিরবিচ্ছিন্ন জ্ঞান অর্জনের উপযুক্ত পরিবেশ প্রদান করে। তাই ছাত্রজীবনে বিশেষ কৃতিত্ব অর্জনে এবং সামাজিক ও আত্মউন্নয়নের ক্ষেত্রে গ্রন্থাগারের গুরুত্ব অপরিসীম।
উপসংহার
গ্রন্থাগার জ্ঞান-বিজ্ঞানের এক অন্যতম রত্নভান্ডার। অজ্ঞানতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে গ্রন্থাগারের শরণাপন্ন হওয়া আবশ্যক। এই প্রতিষ্ঠান সকলের জন্য উন্মুক্ত, যে কোনো বয়সের মানুষ জ্ঞানচর্চার জন্য এর দ্বারস্থ হতে পারে। বর্তমানে জ্ঞানপিপাসু মানুষের গ্রন্থাগারের প্রতি আগ্রহ বেড়েই চলেছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে লাইব্রেরিগুলো নিজেদের প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত করে চলেছে। তাই যুবসমাজ পুনরায় গ্রন্থাগারে প্রবেশের আগ্রহ ফিরে পাচ্ছে।
বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠছে গ্রন্থাগার। যে সকল অঞ্চলে বড় কোনো প্রতিষ্ঠান নির্মিত হয়নি, সেখানে পোঁছে যাচ্ছে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি। তবুও সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে গ্রন্থাগারের সংখ্যা আরো বাড়ানো উচিত, কেননা এটি জ্ঞানভিত্তিক আধুনিক সমাজ গঠনের মূলমন্ত্র।
আরও পড়ুন- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা (২০ পয়েন্ট)
আরও পড়ুন- চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান / চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান
আরও পড়ুন- বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তাঁর প্রতিকার
আরও পড়ুন- রচনাঃ কৃষি কাজে বিজ্ঞান
আরও পড়ুন- শ্রমের মর্যাদা রচনা (১৮ পয়েন্ট)
আরও পড়ুন- Tree Plantation