ভাবসম্প্রসারণঃ গ্রন্থগত বিদ্যা পরহস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন
মূলভাবঃ গ্রন্থগত বিদ্যা হলো সেই বিদ্যা যে বিদ্যা আমরা বই পুস্তক পাঠ করে লাভ করি। গ্রন্থগত বিদ্যা আর অন্যের সম্পদ নিজের মনে করা দুটোই একই বিষয়। প্রয়োজনের সময় গ্রন্থগত বিদ্যা পরহস্তে ধন দুটির কোনটিই কাজে আসে না। তাই বলা হয়ে থাকে, গ্রন্থগত বিদ্যা পরহস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন।
সম্প্রসারিত ভাবঃ গ্রন্থগত বিদ্যা হচ্ছে যেটা আমরা পড়ি, শিখি, জানি। জ্ঞানের প্রসারের জন্য আমাদের গ্রন্থগত বিদ্যা অবশ্যই প্রয়োজন। গ্রন্থগত বিদ্যা দ্বারা নতুন নতুন জিনিস শেখা যায়, জানা যায়। কিন্তু এই গ্রন্থগত বিদ্যা যদি শুধু তোতা পাখির মতো মুখস্থ করে পরীক্ষা পাশ অবধি চলে, তাহলে সে বিদ্যা পেটেই থাকবে,বাস্তবে কোন লাভ হবে না। আমাদের জ্ঞানার্জন করা দরকার নিজের জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য, সেই সাথে নিজের দ্বারা পরিবার,সমাজ, দেশের উপকারে সেই জ্ঞান কাজে লাগানোর জন্য। নিজের অর্জিত জ্ঞানের দ্বারা সমাজের নানা সমস্যা সমাধান করা সহজ। কারণ জ্ঞান অর্জন করে যেটা জানা যায়, জ্ঞান ছাড়া তো সেই সমস্যা সমাধান কঠিন ব্যাপার।
সমাজের, দেশের নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলেও যথেষ্ট জ্ঞান থাকা দরকার। এখন কেউ যদি শুধু মুখস্থ বিদ্যা নিয়ে বসে থাকে তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আমাদের সবার উচিত, যা জ্ঞান অর্জন করেছি সেটিকে কিভাবে কাজে লাগিয়ে দেশের জন্য কাজ করা যায়, নিজের জন্য কিছু করা যায় সেটি চিন্তা করা। অর্জিত জ্ঞানকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে একটা মানুষের পক্ষে অনেক কিছু করা সম্ভব। অনেক কঠিন কঠিন সমস্যা অনায়াসে সমাধান করা সম্ভব।
যদিও আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় সন্তানের মা-বাবা মুখস্থ বিদ্যাতেই বেশি আগ্রহী। এতে নিজের সন্তানের সাথে সাথে দেশের ক্ষতি, দশেরও ক্ষতি। অনেকেই আছেন ক্লাসে এক-দুই রোল হওয়া বা পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পেয়ে পাশ করাকে মনে করেন প্রকৃত শিক্ষা! ক্লাসে বেশি নম্বর পাওয়া মানেই যেন ভালো ছাত্র ছাত্রী হওয়া। কিন্তু বাস্তবে অনেক সময় দেখা যায়, ক্লাসে ফার্স্ট হওয়া ছাত্রছাত্রীরা তাদের মুখস্থ বিদ্যাকে বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে পারে না বলে খুব বেশি দূর এগুতো পারে না। এরা নিজের জীবনেও তেমন কিছু করতে পারে না। কিন্তু এমন অনেক ছাত্রছাত্রী আছে যারা কেবল বইয়ের পড়া মুখস্থ করে পরীক্ষা পাশ করে না বরং তারা তাদের অর্জিত জ্ঞান দিয়ে অনেক কিছু করতে পারে। তাই এ বিষয়ে আমাদের অনেক বেশি সচেতন হওয়া জরুরি। আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এটা শেখাতে পারি যে শুধুমাত্র গ্রন্থগত বিদ্যা অর্জন করে জীবনে কিছু করা সম্ভব নয়। আমরা যে জ্ঞান অর্জন করবো সেটা নিজের ভিতরে ধারণ না করলে একজন মানুষ তার জীবনে কখনোই সে শিক্ষাকে কাজে লাগাতে পারবে না।
পরহস্তে ধন বিষয়টা হলো পরের ধনসম্পদ নিজের মনে করা। বাস্তবিক পক্ষে পরের সম্পদ কখনোই নিজের হয় না বা নিজের কাজে লাগে না। কেউ যখন নিজে পরিশ্রম করে কিছু অর্জন করে সেটাই হলো তার নিজের সম্পদ। এই সম্পদ অর্জন করতে নিজের পরিশ্রম, সময়, জ্ঞান সবকিছুকে কাজে লাগানোর দরকার হয়। সম্পদ অর্জন করতেও নিজের জ্ঞানটা বাস্তব জীবনে বেশি প্রয়োজন পড়ে। তাই আমরা সবাই এমনভাবে জ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা করবো যে জ্ঞান আমাদের ভবিষ্যত জীবনে কাজে লাগবে। যে জ্ঞান দ্বারা মানুষের উপকার করা যাবে, যে জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে কঠিন সমস্যা সহজভাবে সমাধান করা যাবে।
আমরা সবাই যদি নিজেদের অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সমাজের জন্য, দেশের জন্য কাজ করি এতে আমাদের দেশও সুন্দর, সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। যে কোন পরাশক্তিকে আমরা নির্দ্বিধায় পরাজিত করতে পারবো।নিজেদের কঠিন সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশকে রক্ষা করতে পারবো। এমনকি নিজের জীবনের যে কোন কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতেও আমাদের বেগ পেতে হবে না।
মন্তব্যঃ আমরা শুধুমাত্র বইয়ের পড়াশোনা মুখস্থ না করে বরং নিজেদের জীবনে কাজে লাগানোর মতো জ্ঞান অর্জন করবো। সেই সাথে নিজের সম্পদও নিজে অর্জন করবো।
গুরুত্বপূর্ণ সকল ভাবসম্প্রসারণ-
১। ভাবসম্প্রসারণঃ পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি
৩। ভাবসম্প্রসারণ: কীর্তিমানের মৃত্যু নেই / মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়
৪। ভাবসম্প্রসারণঃ ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ
৫। ভাবসম্প্রসারণঃ দুর্নীতি জাতীয় জীবনে অভিশাপস্বরূপ
৬। ভাবসম্প্রসারণঃ দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য
৭। পরের অনিষ্ট চিন্তা করে যেই জন
৮। ভাবসম্প্রসারণ: সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই
৯। ভাবসম্প্রসারণঃ সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত
১০। ভাবসম্প্রসারনঃ আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে..
১১। ভাবসম্প্রসারণঃ অর্থই অনর্থের মূল
১২। ভাবসম্প্রসারণঃ পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না।