সময়ের মতো আমাদের জীবনও বহমান। সময়ের সাথে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই জীবন। গতিই জীবন, স্থিতিতে মৃত্যু ভাবসম্প্রসারণটি নিম্নে তুলে ধরা হলো।
ভাবসম্প্রসারণঃ গতিই জীবন, স্থিতিতে মৃত্যু
মূলভাবঃ আমাদের চারপাশে যা কিছু দৃশ্যমান তাঁর সব কিছুই গতিশীল। কোন কিছুই স্থির অবস্থায় নেই। সময় এগিয়ে যাচ্ছে, এমনকি পৃথিবী, সূর্য, অন্যান্য গ্রহ নক্ষত্রও রয়েছে চলমান অবস্থায়। হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজকে মানব সভ্যতাও এসে দাঁড়িয়েছে আধুনিক যুগে।
সম্প্রসারিত ভাবঃ আমরা জানি পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। পৃথিবীর ঘূর্ণনের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে সময়।সময়ের সাথে এগিয়ে যায় মানুষ ও মানব সভ্যতাও। মানুষ যতদিন বাঁচে ততদিনই তাঁকে পরিশ্রম করে, সংগ্রাম করে বাঁচতে হয়। শিশুকাল থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষকে নানা রকম ঘাত-প্রতিঘাত পার হতে হয়। যে মানুষ সকল প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যায়, সেই মানুষই জীবন যুদ্ধে এগিয়ে যায়, জয়ী হয়। কিন্তু যারা জীবন্ত লাশ হয়ে হতাশা বুকে নিয়ে বেঁচে থাকে তাদের জীবন থমকে যায়। হতাশা, দারিদ্রতা, পরাজয়ের গ্লানি তাদের নিত্য দিনের সঙ্গী হয়।
মানুষ যদি জীবনে কিছু করতে চায়, বড় হতে চায়,কিছু পেতে চায় তাহলে অবশ্যই তাকে পরিশ্রম করতে হবে, সংগ্রাম করতে হবে। এটাই হলো জীবনের গতিশীলতা। রাতের শেষে যেমন দিনের সোনালি আলোয় চারিদিক ঝলমল করে, ঠিক তেমনি কঠিন সময়ের পরে মানুষ আবার যখন এগিয়ে যায়, তখন তার জীবন আরো সুন্দর হয়ে উঠে। আমাদের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম জীবনের গতিশীলতা নিয়ে অসাধারণ কিছু লাইন লিখে গেছেন,
“বিশ্বাস আর আশা যার নাই, যেয়ো না তাহার কাছে
নড়াচড়া করে, তবুও সে মড়া, জ্যান্তে সে মরিয়াছে।
শয়তান তারে শেষ করিয়াছে, ইমান লয়েছে কেড়ে,
পরাণ গিয়াছে মৃত্যুপুরীতে ভয়ে তার দেহ ছেড়ে।”
জীবন প্রবহমান নদীর মতো। নদীর আসল সৌন্দর্য ফুঠে উঠে যখন সে আপনমনে একেঁবেকেঁ বয়ে চলে। আবার সেই নদী যদি থেমে যায়, তবে তা ধীরে ধীরে সংকীর্ণ হয়ে হারিয়ে যায়। মানুষের জীবনেও যতদিন গতিময়তা থাকে, ততদিন সে জীবনের আসল সৌন্দর্য উপলব্ধি করে। জীবনকে উপভোগ করতে হলে কাজ করতে হবে, সংগ্রাম করতে হবে, সব ধরনের বাধা বিপত্তিকে উপেক্ষা করে সামনে এগুতে হবে। যে মানুষ যত বেশি সফল সে মানুষ ততই পরিশ্রমী,উদ্যমী। একজন মানুষের কাছে সফলতা তখনই ধরা দিবে যখন সে তার সংকল্পে দৃঢ় থাকবে, আত্মবিশ্বাসে অনঢ় থাকবে। অন্যদিকে, কুঁড়ে,অলস মানুষ সামনে এগুতে চায় না বলে সফল হতে পারে না। এমন মানুষের জন্য তার পরিবার কষ্ট ভোগ করে, সেই সাথে দেশের জন্য এরা বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এরা হলো গাছের সাথে জন্মানো পরগাছার মতো। এরা জীবন্ত লাশ। কর্মহীন স্থবির জীবনের মতো গ্লানির জীবন আর হয় না। “হয়ত কী হবে” এই ভেবে এরা ঘরে বসে কাঁপে ভয়ে। জীবন যুদ্ধে এরাই আছে পরাজিত হয়ে। এরাই বন্দী হয়ে আছে অধীনতার কারাগারে।
প্রকৃতপক্ষে গতিই জীবন, স্থিতিতে মৃত্যু। সময় যেমন গতিশীল, ঠিক তেমনি সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে মানুষকেও সামনে এগিয়ে যেতে হয়। মানুষ যদি সময়ের সাথে এগিয়ে যেতে না পারে তাহলে তার জীবনে সাফল্য কখনোই ধরা দেয় না। একজন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় ভালো ফল করতে হলে তাকে অবশ্যই পরিশ্রম করে সেটা অর্জন করতে হবে। এমনি এমনি পরীক্ষায় ভালো ফল আসবে না। এটাই হলো একজন শিক্ষার্থীর জীবনের গতিময়তা। একটা চারা গাছ তখনই বড় হয়, যখন তার পিছনে আমরা সময় দিই, চারা গাছটার যত্ন নিই। চারাগাছে পানি দিলে, রোদে রাখলে, সময়মতো কীটনাশক দিলে কেবল তখনই চারাগাছটি বড় হবে, তাতে ফল ধরবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে একটি বাড়ি যদি ব্যবহার না করে এমনি ফেলে রাখা হয়, তবে কিছুদিন পর দেখা যায়, বাড়িটি নানা রকম আগাছায় ভরে যায় আর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এটাই তো স্থিতিশীলতা। বাড়ীটি তখনই সুন্দর থাকে যখন এটা আমরা ব্যবহার করি। নিজের মতো করে ঘরটাকে সাজিয়ে রাখি।
আমাদের ব্যক্তিজীবন সফল ও সার্থক করতে হলে কাজ করতে হবে, অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হবে। কর্মঠ উদ্যমী জাতি সফলতার স্বাদ পায় বলে তারা নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে যায়। আমরা যদি নিজেদেরকে সফল হিসেবে দেখতে চাই, দারিদ্রতা ও ক্ষুধামুক্ত দেশ গড়তে চাই, তবে আমাদের পরিশ্রম করতে হবে, দৃঢ় আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা যদি কাজ না করি, অলস হয়ে স্থবির বসে থাকি তবে সফল হওয়া অসম্ভব। উন্নত জাতি তারাই যারা কর্মঠ, উদ্যমী। কোনো বাধা এদের গতি রোধ করতে পারে না। গতিই জীবন, স্থিতিতে মৃত্যু।
মন্তব্যঃ কর্মজীবন হোক বা ব্যক্তিজীবন, হাজারো সমস্যা আসবেই জীবনে। সেই সব সমস্যাকে মোকাবিলা করে সামনে এগুতে পারবে যে, সেই তো সফল। যে জাতি যত বেশি উন্নত, সমৃদ্ধ; সে জাতি তত বেশি উদ্যমী, সংগ্রামী। তারা জানে থেমে গেলে চলবে না। এগিয়ে যেতে হবে, কষ্ট করতে হবে। থেমে গেলে মুখ থুবড়ে পড়তে হয়।
গুরুত্বপূর্ণ সকল ভাবসম্প্রসারণ-
১। ভাবসম্প্রসারণঃ পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি
৩। ভাবসম্প্রসারণ: কীর্তিমানের মৃত্যু নেই / মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়
৪। ভাবসম্প্রসারণঃ ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ
৫। ভাবসম্প্রসারণঃ দুর্নীতি জাতীয় জীবনে অভিশাপস্বরূপ
৬। ভাবসম্প্রসারণঃ দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য
৭। পরের অনিষ্ট চিন্তা করে যেই জন
৮। ভাবসম্প্রসারণ: সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই
৯। ভাবসম্প্রসারণঃ সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত
১০। ভাবসম্প্রসারনঃ আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে..
১১। ভাবসম্প্রসারণঃ অর্থই অনর্থের মূল
১২। ভাবসম্প্রসারণঃ পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না।
১৩। ভাবসম্প্রসারণঃ গ্রন্থগত বিদ্যা পরহস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন
১৪। ভাবসম্প্রসারণঃ লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু
১৫। ভাবসম্প্রসারণঃ ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল
১৭। ভাবসম্প্রসারণঃ যে সহে সে রহে