Pulp Fiction (1994), Inglorious Bastards (2009), Django Unchained (2012) কিংবা Kill Bill (2003)- নামগুলো আউড়ালেই যার মুখ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভেসে ওঠে তিনিই কোয়েন্টিন টারান্টিনো। হলিউডের সমসাময়িক প্রভাবশালী পরিচালকদের তালিকা করলে দাপটের সাথে তাঁর নাম আসবেই। স্বকীয় নির্মাণ, গল্পের গাঁথুনিতে ভিন্নতাই তাঁকে আলাদা করেছে বাকি নির্মাতাদের থেকে।
নিজের কর্মপন্থা, ভাবনা ও পরিকল্পনা নিয়ে The Talks এর সাথে টারান্টিনো কথা বলেছেন। সেই সাক্ষাৎকারের অনুবাদ হিজিবিজি’র পাঠকদের জন্য দেয়া হলো এখানে।
কোয়েন্টিন টারান্টিনোর সাক্ষাৎকার
প্রশ্নঃ মিস্টার টারান্টিনো ,আপনার সিনেমাগুলো দেখলে স্বভাবতই একটা প্রশ্ন আসে, আপনি কি নারীদের পদযুগলে আসক্ত?
কোয়েন্টিন টারান্টিনোঃ আপনার প্রশ্ন থেকে পালাচ্ছি না। আপনি যদি চরণ-আসক্ত পরিচালকের কথা চিন্তা করতে বসেন, তবে প্রথমেই আসবে আলফ্রেড হিচককের কথা, এরপর বুনুয়েল, স্যামুয়েল ফুলার প্রমুখ- অনেকেই আছেন এই দলে। আমার মতে এঁরা প্রত্যেকেই দুর্দান্ত পরিচালক কারণ তাঁরা জানতো ক্যামেরা ঠিক কোথায় বসাতে হবে। তবে আমি মনে করি পা এবং নিতম্ব দুটোই আমার সিনেমায় সমান সময় পায়।
প্রশ্নঃ সহিংসতাও কি?
কোয়েন্টিন টারান্টিনোঃ আমি শুধু নিজের গল্প বলি আর কাজ করে যাই। আমার কারবার জনরা এবং ক্রমান্বয়ে সাব-জনরার ভেতরে নিজেকে নিয়ে যাওয়া। আমি যেই ঘরানায় কাজ করি সেগুলো উত্তেজক, রগরগে উপাদানের- তা হতে পারে অপরাধমূলক, কুংফু, সামুরাই, স্ল্যাশার কিংবা গাড়ি নিয়ে দুদ্দাড় দাপিয়ে বেড়ানো সিনেমা। স্বাভাবিকভাবেই এই উপাদানগুলো সিনেমায় মিশে যায়। থ্রিলারের প্রসঙ্গ এলেই এই ঘরানা আপনাকে শ্বাসরুদ্ধকর, উগ্র সিনেমা উপহার দেবে। আমার এটাই পছন্দ। তবে Jackie Brown (1997) এর বিষয়ে আমি বলবো, ওটা ঠিক হিংস্র নয়, ওটা পুরোটাই চারিত্রিক।
প্রশ্নঃ এত জীবন্ত চরিত্র লেখেন কী করে?
কোয়েন্টিন টারান্টিনোঃ এর উত্তর সোজা সাপটা বা সরসভাবে দেয়ার পথ নেই। তবে আমি একজন লেখক। এটাই আমার কাজ। একজন লেখকের কাজ শুধু নিজেকে নিয়েই লেখা না, মানুষ এবং তাদের বৈশিষ্ট্যকে বিশ্লেষণ করাও। আশেপাশের লোকজন কীভাবে কথা বলছে, কোন বাক্য ব্যবহার করছে সেগুলোও লক্ষ্য রাখতে হয় তাকে। আমার মস্তিষ্ক হলো স্পঞ্জের মতো। আমি সকলের কথা শুনি, তাদের স্বকীয়তা পর্যবেক্ষণ করি, কেউ কৌতুক বা মজাদার গল্প বললে সেটা মনে রাখি।
প্রশ্নঃ আর যদি আপনার মনে না থাকে?
কোয়েন্টিন টারান্টিনোঃ তাহলে সেটা মনে রাখবার মতোই নয়। বিষয়টা হচ্ছে- আজ থেকে মাস ছয়েক বা বছর পনেরো বাদে আমি যখন নতুন চরিত্রকে লিখতে বসবো তখন কলমের কাজ হবে এন্টেনার মতো। আমি আসলে তথ্য জড়ো করে বসে থাকি, আচমকাই কলম বেয়ে চরিত্ররা নেমে আসে। আমি ওদের সংলাপ লিখি না, চরিত্রগুলোকে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে দেই।

প্রশ্নঃ সন্তান নেবার কথা ভাবছেন নাকি একে ফিল্ম মেকিংয়ে বাধা হিসেবে দেখেন?
কোয়েন্টিন টারান্টিনোঃ সামনে কী হবে দেখা যাবে। তবে আমি আজীবন সিনেমা তৈরি করতে চাই না। ষাটের মাঝেই থামতে চাই।
প্রশ্নঃ আপনি নিশ্চিত?
কোয়েন্টিন টারান্টিনোঃ না, তবে পরিকল্পনা আছে। আমি আসলে নিজেকে এমন বুড়ো নির্মাতা হিসেবে দেখতে চাই না, যে জানে না কখন পার্টি ত্যাগ করতে হয়। ক্রমাগত বুড়োটে ছবিও তৈরি করতে চাই না। যেই বর্ণাঢ্য ফিল্মোগ্রাফি আছে, এর সাথে নীরস কিছু যোগ করতে আমি রাজি নই। তবে মন বদল হতেই পারে।
৬২ তেও যদি ছবি নির্মাণ করতে পারি, করবো। এখন যেই লোকটাকে আপনি দেখছেন, এই টারান্টিনো হয়েই সিনেমা করতে চাই। বৃদ্ধ বয়সে নিজেকে প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি হিসেবে দেখি যে সিনেমা নিয়ে চর্চা করে, উপন্যাস লেখে আর সন্তানদের সাথে সময় কাটায়।
প্রশ্নঃ এ পর্যন্ত কতগুলো সিনেমা দেখেছেন?
কোয়েন্টিন টারান্টিনোঃ আমার ঠিক জানা নেই। এমনকি আন্দাজের দুঃসাহসও নেই। তবে সতের থেকে বাইশ বছর বয়সে ছবির তালিকা করতাম। ১৯৭ বা ২০২ খানা ছবি দেখা হতো বছরে। এমনকি যখন গাঁটে পয়সা ছিল না তখনও গড়ে ২০০ টা দেখা হতো।

প্রশ্নঃ ধরে নিচ্ছি, সংখ্যাটা বিশাল। বরং আপনার প্রিয় তিন চলচ্চিত্রের নাম বলুন।
কোয়েন্টিন টারান্টিনোঃ আজ, এখন আমি তিনটের নাম বলবো। আগামীকাল বা ছয় ঘণ্টা পর জিজ্ঞেস করুন, সম্পূর্ণ ভিন্ন উত্তর পাবেন।
প্রশ্নঃ তা এই মুহূর্তে সেগুলো কী?
কোয়েন্টিন টারান্টিনোঃ আমি Abbott and Costello Meet Frankenstein (1948) এর নাম নেবো, কারণ একদম শিশুকালে এটা আমার সবচেয়ে প্রিয় ছিল। তাছাড়া এতে জনরার মিশ্রণ আছে, এবোট ও কস্টেলোর অংশটুকু বেশ মজার, কিন্তু ফ্র্যাংকেনস্টাইন আসার পরই তা ভীতিকর হয়ে যায়। পাঁচ বছর বয়স থেকেই আমি জনরা আলাদা করা বুঝেছি, অবচেতনেই। এটাই ক্যারিয়ারের বাকি সময়ে আমি করে এসেছি।
Taxi Driver (1976) কেও তালিকায় রাখবো। কারণ, চলচ্চিত্র ইতিহাসে এমন অভিনব, জটিল চরিত্র কমই আছে। উপন্যাসেই এত বিশদভাবে একটা চরিত্রকে তুলে ধরা হয়। একই সাথে এটা খুব বিনোদিতও করে। আর শেষ ছবি হিসেবে The Good, the Bad and the Ugly (1966) এর নাম নিতে পারি।

প্রশ্নঃ কোন অপছন্দের জনরা আছে?
কোয়েন্টিন টারান্টিনোঃ সবকিছু আমার পছন্দ নয়। ঐতিহাসিক ছবি ভালো লাগে, কিন্তু কস্টিউম ড্রামায় ভক্তি নেই। বায়োপিকেও আমার বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা নেই। এসব শুধু বড় বড় অভিনেতাদের অস্কার জেতানোর ধান্দা। এই সিনেমাগুলো স্রেফ নষ্টামি।
প্রশ্নঃ কেন?
কোয়েন্টিন টারান্টিনোঃ আরম্ভ থেকে শেষ পর্যন্ত কারো জীবন কাহিনী বললে সে যত আকর্ষণীয়, রসময় লোকেরই হোক না কেন বিরক্তিকর লাগবেই। এর চাইতে কারো জীবন নিয়ে কমিক বই ছাপতে পারেন। যেমন ধরুন, এলভিস প্রিসলি। তাঁর গোটা জীবন নিয়ে সিনেমা বানাবার কোন দরকার নেই। একদিনকে কেন্দ্র করে সিনেমা বানান। সান রেকর্ডসে তাঁর আগমন নিয়ে সিনেমা বানান, অথবা এর আগের দিন নিয়ে বানান আর শেষ করুন সান রেকর্ডসে ঢোকার মুহূর্ত দিয়ে। এটা একটা জবরদস্ত ছবি হবে!
প্রশ্নঃ আপনার জীবন নিয়েও যদি কেউ সিনেমা বানায়- সেটাও কি একঘেয়ে হবে?
কোয়েন্টিন টারান্টিনোঃ পদক্ষেপটা নিয়ে আমি সাধুবাদ জানাতে পারি, কিন্তু ওটা দেখবো না।
অনুবাদ করেছেন- সারাহ তামান্না
আরও পড়ুন-
দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন: শতক সেরা সিনেমার পেছনের কাহিনী