যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য প্রধান বিধানই হল পরিমিত আহার। শুধু ওজন নিয়ন্ত্রণ নয়, দৈনন্দিন জীবনে সুস্থ থাকতেও চাই খাবারের নিয়ন্ত্রণ। তবে খাবারের নিয়ন্ত্রণ মানেই কি কম খাওয়া? না, তা কখনোই নয়। বরং ক্যালরি মেপে পরিমাণ মত খাওয়াটাই সুস্থতার আসল রহস্য। কোন খাবারে কত ক্যালরি বিদ্যমান এটি জানলে স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশেই সহজ হয়ে যায়।
ক্যালরি কি? ক্যালরি হল খাদ্য থেকে অর্জিত শক্তি পরিমাপের একক। একজন সুস্থ পুরুষ মানুষের দিমে গড় ক্যালরি প্রয়োজন হয় ২৫০০ ক্যালরি এবং মহিলার প্রয়োজন হয় ২০০০ ক্যালরি যদিও তা বয়স, কর্মক্ষমতা এবং সাস্থ্যের কারণে পরিবর্তিত হতে পারে। এর বেশি ক্যালরি গ্রহণ করলে স্থুলতা বা মোটাত্ব দেখা দেয়, যা বর্তমানে একটি বড় সমস্যা।
তাই প্রথমে জানতে হবে আপনার দৈনিক কত ক্যালরি প্রয়োজন। অনেক সহজ ও কম সময়েই অনলাইনে ক্যালরি ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে আপনার দৈনিক ক্যালরি চাহিদা বের করতে পারবেন। অথবা স্মার্টফোনটির জন্যেও রয়েছে নানা এপস। এসব এপস সহজেই মুহুর্তের মাঝে আপনার উচ্চতা, বয়স, কাজের পরিমাণ ইত্যাদি তথ্যের ভিত্তিতেই মোটামুটি সঠিক ফলাফল দিতে পারে।
এরপর মূল কাজ হল একটি ডায়েট প্ল্যান তৈরি করা। ডায়েট নিয়ে অনেকের মনেই একটি ভ্রান্ট ধারণা কাজ করে, তা হল না খেয়ে থাকাই ডায়েট। অনেকেই খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়ে মনে করেন তার ওজন কমে যাবে। অনেক ক্ষেত্রে তা ওজন কমালেও সঠিক পুষ্টির অভাবে করতে পারে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি। তাই বুঝে শুনে সঠিক খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ক্যালরি গ্রহণ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
তাহলে যখন জানলাম প্রতিদিন কত ক্যালরি প্রয়োজন, প্রতিদিনের খাবারে বুঝে শুনে হিসাব করাটা জরুরী। এমন নয় যে ভাত বাদ দিয়ে শুধু শাক লতা পাতা খেয়ে ক্যালরির চাহিদা পূরণ করা যাবে। সব ধরণের খাদ্য উপাদান যেমন আমিষ, স্নেহ, শর্করা ইত্যাদির খাদ্যে পরিমিত উপস্থিতিই পারে সুস্থতা এবং ফিটনেস দুটোই দিতে। এর জন্য জানতে হবে আমাদের দৈনন্দিন কন খাবারে কত ক্যালরি।
খাবার | ক্যালরি |
ভাত (১ কাপ) সাদা চাল | ২০০-২৫০ |
ভাত (১ কাপ) লাল চাল | ২১৮ |
পোলাও (১ কাপ) | ১৫৮-২৬০ |
রুটি (সাদা আটা) | ৭২ |
রুটি (লাল আটা) | ৬০ |
তেলে ভাজা পরোটা | ২৫০-৩০০ |
আলু পরোটা | ৩০০ |
খিচুড়ি | ১৭০-২২০ |
নুডুলস (১কাপ) | ২২০ |
দুধ ১ কাপ | ২৫০ |
দুধ ( লো ফ্যাট) | ৯০ |
ডাল (প্রতি ১০০ গ্রাম) | ১১০ |
ডিম (সিদ্ধ ১ টি) | ৭৫ |
মুরগী (চামড়া ছাড়া ১০০ গ্রাম) | ১৫১ |
গরুর মাংস (১০০ গ্রাম) | ২১০ |
খাসীর মাংস (১০০ গ্রাম) | ২২৪ |
মাছ (প্রতি ১০০ গ্রাম) | ৮৭ |
মিক্সড সবজি (১ কাপ) | ১১০ |
শাক (১ কাপ) | ৪০-৫০ |
আলু ভর্তা (১০০ গ্রাম) | ১৫০ |
বেগুন ভর্তা (১০০ গ্রাম) | ৭০ |
এগুলো হল আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত খাদ্যের ক্যালরি তালিকা। এই ক্যালরি হিসাব করে প্রয়োজনীয় ক্যালরি গ্রহন করে সুসাস্থ্য নিশ্চিত করা যাবে।
তবে হ্যাঁ, শুধু ক্যালরি পরিমাপ করে খেলেই হবে না, তালিকাটি যান সুষম হয়, সেদিকটাও খেয়াল রাখা জরুরী। কারণ, দেহের জন্য শর্করা যেমন প্রয়োজন, তেমনিই প্রয়োজন আমিষ এবং স্নেহ। আবার আঁশ বা ফাইবারেরও রয়েছে অসীম উপকার। তাই মাথায় রাখতে হবে কিছু টিপস:
- পানি পানের কোন বিকল্প নেই। দৈনিক কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। পানি শুধু পিপাসাই মেটায় না, এটি ত্বক ও চুল সুন্দর করে তোলে। খাবার আগে ১ গ্লাস পানি পান করলে খাবার চাহিদা আপনা আপনিই কমে যাবে। ফলে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণের কোন সুযোগ থাকবে না।
- সকালের নাস্তাকে কখনোই না নয়। আমরা অনেকেই সকালের তাড়াহুড়ায় কিংবা অলসতায় নাস্তা করি না বা করলেও সামান্যই করি। এটি খুব একটি ভুলের কাজ। সারারাত উপোসের পর সকালের নাস্তাটি হওয়া চাই সুষম ও ভরপুর। খাবারের তালিকায় বেশ খানিকটা শর্করা, কিছুটা প্রোটিন এবং সামান্য ফ্যাট সারাদিনের সুগার লেভেলের সমতা বজায় রেখে অসময়ে ক্ষুধা লাগা কে দূর করে।
- দিনে দু’বার ফল খান। ফলের বেশিরভাগটাই পানি এবং ফ্যাট নেই। আছে কার্ব, যা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই, কারণ এটি উপকারী ফ্যাট। এছাড়াও রয়েছে ফাইবার। পুষ্টিগুণের পাশাপাশি ফল পেট ভরা থাকতে সাহায্য করে।
- দিনের খাবার কে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নিন। সবটা ক্যালরি বড় বড় দুই তিন ভাগে খাওয়ার চেয়ে ছোট ছোট পাঁচ বা ছয় ভাগে ভাগ করে নিন। এতে খাবার হজমে সুবিধা হবে এবং খাবার জমে শরীরে মেদ সৃষ্টি করতে পারবে না।
- সারাদিনে একটু শারীরিক পরিশ্রম আপনার শরীর ও মন দুটোকেই রাখবে প্রফুল্ল। আর বাড়তি ক্যালরি টুকুও ঝড়ানো যাবে খুব সহজেই। প্রতিদিন মাত্র ৫ মিনিটের ব্যায়ামই আপনার মেটাবলিজম বাড়িয়ে ক্যালরি বার্ণ করতে অনেক সাহায্য করবে।
কথায় বলে স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। তাই স্বাস্থ্যটাকে ভাল রাখতে একট খানি লাগামটা ধরতেই হবে। পরিমিত খাদ্য গ্রহণ, অসাস্থ্যকর খাবার পরিহার আর নিয়মিত ব্যায়াম আপনাকে দেবে একটি সুখী, সুন্দর আর প্রফুল্ল জীবন। কোন খাবারে কত ক্যালরি বিদ্যমান এটি নিজে জানুন, পরিবারের সদস্যদেরও এ ব্যাপারে সচেতন করুন।
আরও পড়ুন –
‘স্যার, এই যে ১০ লাখ টাকা। বই দেবেন কবে?’