বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম হিট একটি ছবি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। ১৯৮৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বলিউডের “কেয়ামত সে কেয়ামত তাক” ছবিটির কপিরাইট কিনে নিয়ে ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশে এটি নির্মাণ করা হয়। বাংলায় ছবিটি পরিচালনা করেন স্বনামধন্য নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান। এই ছবি দিয়েই অভিষেক হয়েছিল সালমান শাহ্, মৌসুমী ও গায়ক আগুনের। ছবিটি মুক্তির পর রাতারাতি তারকাখ্যাতি পেয়ে যান এই তিনজনই।
জেনে অবাক হবেন যে, এই ছবির জন্য নায়ক হিসেবে পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের প্রথম পছন্দ ছিলেন তৌকির আহমেদ। তৌকির আহমেদ না করে দিলে সোহানুর রহমান সোহান মডেল আদিল হোসেন নোবেলকেও কাজ করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু নোবেলের তরফ থেকেও উত্তর না আসে। শেষ পর্যন্ত “কেয়ামত থেকে কেয়ামত” ছবিতে কাজ করে ইতিহাসে জায়গা করে নেন সালমান শাহ্।
অপরদিকে তৌকির আহমেদের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ১৯৯৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তানভীর মোকাম্মেলের “নদীর নাম মধুমতি” ছবিটি দিয়ে। ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের ছাত্র তৌকিরের শিল্প ভাবনার শুরু ক্যাডেট কলেজের লাইব্রেরি থেকে। ইন্টারমেডিয়েটের পর তৌকির ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে। সেই সময়ে মহিলা সমিতির নাটক তৌকিরের শিল্পী সত্তাকে আরও উসকে দেয়। তিনি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে যান থিয়েটারের সঙ্গে। কাজ করেন টানা ৫ বছর।
থিয়েটারে আব্দুল্লাহ আল মামুনের রচনা ও পরিচালনায় “তোমরাই” নাটকের মাধ্যমে প্রথম মঞ্চে অভিনয়ের সুযোগ পান তৌকির। এরপরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। মঞ্চ থেকে টেলিভিশন, টেলিভিশন থেকে চলচ্চিত্র- সব জায়গায় তিনি বিচরণ করতে শুরু করেন। ১৯৯৯ সালে মুক্তি পায় তানভীর মোকাম্মেলের “চিত্রা নদীর পারে” ছবিটি। এখানেও অভিনয় করার সুযোগ পান তৌকির। এর মাঝে জাহিদুর রহমান অঞ্জনের “কাগজের ফুল” ছবিতেও তিনি কাজ করেন।
একদম শুরু থেকেই প্রথাগত এফডিসি ঘরানার বাণিজ্যিক ছবিতে তৌকিরের অরুচি ছিল। সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র কর্মী শফিউজ্জামান খান লোদীকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তৌকির আহমেদ তার চলচ্চিত্র ভাবনার কথা অকপটে জানিয়েছিলেন। নিজের চলচ্চিত্র ভাবনায় তানভীর মোকাম্মেলের প্রভাব সম্পর্কে তৌকির বলেন, “তানভীর ভাইয়ের কাছে আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। কেননা উনার ছবিগুলির মধ্য দিয়ে ছবির প্রতি আমার আগ্রহটা বেড়েছিল।”
তৌকিরের “কেয়ামত থেকে কেয়ামত” ছবিতে কাজ না করার অন্যতম একটি কারণ ছিল বুয়েটের পড়াশোনার চাপ। তবে সেটিই প্রধান কারণ ছিল না। এমন হিট একটি ছবি ছেড়ে নিয়ে তিনি অনুতাপ অনুভব করেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে জানান,
“আমি মনে করেছি আমি ঠিক কাজটি করেছি। আমি যদি তখন ওই ধারার ছবিটি করতাম, যেটাতে আমি বিশ্বাস করি না, যে ধারাতে আমি বিশ্বাস করি না, যেটা সম্পূর্ণভাবে বাণিজ্যিক ও প্রায়শই misleading to the audience. মানুষের রুচি নিম্নগামী করার জন্য যে ছবিগুলো ভূমিকা রাখছে আমি তার বিপরীতে অবস্থান করি। সুতরাং আমি (এই ছবিটা) করতে চাইনি এবং আজও আমি সেই অবস্থানে আছি।”
আজ ২০২১ সালে এসে তৌকিরের ক্যারিয়ার ব্যবচ্ছেদ করলে দেখা যাবে, তিনি আসলেই তার অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছেন। স্রোতের বিপরীতে বিশাল অঙ্কের লগ্নিকৃত টাকার বোঝা মাথায় নিয়ে এখনো নির্মাণ করে যাচ্ছেন একের পর এক চলচ্চিত্র।
আরও পড়ুন- মাত্র ৫০ লাখে শ্যুটিং, পাইরেসিই শাপেবর হয়েছিল ‘অজ্ঞাতনামা’র ক্ষেত্রে