in

ভাবসম্প্রসারণ: কীর্তিমানের মৃত্যু নেই / মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়

ভাবসম্প্রসারণ: কীর্তিমানের মৃত্যু নেই / মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়
ভাবসম্প্রসারণ: কীর্তিমানের মৃত্যু নেই / মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়

SSC, HSC বাংলা পরীক্ষায় কীর্তিমানের মৃত্যু নেই ভাবসম্প্রসারণটি সচরাচর এসে থাকে। ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার জন্য “কীর্তিমানের মৃত্যু নেই / মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়” ভাবসম্প্রসারণটি তুলে ধরা হলো।

কীর্তিমানের মৃত্যু নেই / মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়

মূলভাবঃ 

“মানুষের জন্ম হয় সফলতার জন্য, ব্যর্থতার জন্য নয় ।”– বিল কসবি

এই পৃথিবীতে মানুষের জন্মের মতো মৃত্যুও সত্যি। কোন মানুষ যতই বিত্তশালী, বিদ্যান হোক না কেন সব কিছুর মায়া ত্যাগ করে একদিন সকলকেই পাড়ি জমাতে হয় পরপারে। মৃত্যুর পরে যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে সেটি তার কর্ম। জীবনদশায় করা ভালো কাজগুলোই মানুষকে পৃথিবীর বুকে অমর করে রাখতে পারে৷

সম্প্রসারিত ভাবঃ আমাদের আজকের এই সভ্য পৃথিবী একদিনেই গড়ে উঠেনি। আদিম যুগ থেকে আধুনিক যুগে এই বিশ্বের রূপান্তর অনেক মানুষের কর্মের ফল৷ কেউ দুনিয়ায় চিরকাল বেঁচে থাকেনা। খুব আপনজন হারানোর কষ্টটা সময়ের সাথে সাথে আমরা অনেকটা কাটিয়ে উঠি। আমদের স্মৃতিতে জড়িয়ে থাকে তাদের ভালো কর্মের উদাহরণসমূহ৷

“প্রশংসা সেটি নয় যেটি তোমার সম্মুখে করা হয়। প্রশংসা হচ্ছে সেটি যা তোমার আড়ালে করা হয় “৷ আমরা রোজ অনেক মানুষকে স্মরণ করি। এদের মধ্যে কাউকে তাদের কুকর্মের জন্য স্মরণ করা হয় ঘৃণা ভরে, আবার অনেকের কথা স্মৃতিতে আসলেই তাদের প্রতি শ্রদ্ধায় আপনা আপনি মাথা নত হয়ে আসে। একজন মানুষ কত বছর বাঁচলো তারচেয়েও গুরত্বপূর্ণ হচ্ছে সে কিভাবে বাঁচলো৷ সৎ পথে থাকলে মৃত্যুর পরেও সে তার কর্মে মানুষের স্মৃতিতে বেঁচে থাকে আর অসৎ পথে কিংবা কর্মহীন হয়ে বাঁচলে তার মৃত্যুর সাথে সাথে তার নাম বিলীন হয়ে যায় পৃথিবী থেকে৷ কীর্তিমান ব্যক্তিরা বেঁচে থাকেন তাদের কর্মের মাধ্যমে।

ইতিহাসের পাতায় অনেক মহৎ ব্যক্তিত্ত্ব রয়েছেন যাদের কথা পৃথিবী যতদিন থাকবে মানুষ ততদিন স্মরণ করবে। যেমনঃ মাদার তেরেসা, নেলসন ম্যান্ডেলা, হযরত মোহাম্মদ (সঃ), স্বামী বিবেকানন্দসহ আরো অনেকে। আবার হিটলার, মীর জাফরদের কথাও লোকে স্মরণ করে কিন্তু ঘৃণার সাথে। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো রাষ্ট্র নায়কদের কীর্তির কথা আজ পুরো বিশ্বের কাছে জ্ঞাত৷ তাদের কীর্তির মাধ্যমে মৃত্যুর বহু বছর পরেও তারা আজ অমর। আবার অত্যাচারী ব্রিটিশ, পাক হানাদার বাহিনীর মত অত্যাচারীদের কথাও কিন্তু কখনো ভুলে যাওয়ার মত নয়৷ সমাজের একজন যেমন ভালো কর্মের মাধ্যমে হওয়া যায় তেমনি দুর্নীতি করেও শীর্ষ স্থান দখল করা যায়। কিন্তু, এই দুইয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক থেকেই যায়।

কচ্ছপের জীবনকাল ১০০ বছরের বেশি। কিন্তু, তার জীবনের অর্ধের বেশি সময় চলে যায় ধীর গতিতে চলা ফেরা করতে। কিন্তু, সিংহের গড় আয়ু মাত্র ১৩ বছর। এই কম জীবনকাল নিয়েই কিন্তু সিংহ বনের রাজা। তার গর্জনে পুরো বন কেঁপে উঠে। বেঁচে থাকলে সিংহের মত বাঁচা ভালো। মহৎ কর্মের মাধ্যমে আমরা জীবনকে যতখানি দেব জীবন তার চেয়ে অনেক বেশি আমাদের ফেরত দেবে৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারের সদস্য সংখ্যা নেহাৎ কম ছিলনা। কিন্ত, বিশ্বকবি সকলকে ছাপিয়ে স্ব-মহিমায় চির অমর হয়ে আছেন।

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ৪০ বছর বয়সের পর তার বাক্শক্তি হারিয়েছেলেন৷ অল্প সময়ে সাহিত্যে তার অবদান অনস্বীকার্য। এখনো প্রতিবাদী গান কবিতার কথা মনে আসলে সর্বপ্রথম কাজী নজরুল ইসলামের মুখচ্ছবি স্মৃতিপটে ভেসে উঠে। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, শের শাহ, নাসিরুদ্দিন, জর্জ ওয়াশিংটনের মত বিখ্যাত ব্যক্তিদের বেড়ে উঠা নিতান্তই সাধারণ পরিবারে৷ কিন্তু, নিজ কর্মগুণে আজ তারা পুরো বিশ্বের কাছে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্য মাত্র ২১ বছর বয়সে প্রাণ হারিয়েছিলেন। কিন্তু, এই অল্প সময়ের মধ্যে তিনি তার সাহিত্যের মাধ্যমে আজও বেঁচে আছেন তার কবিতার প্রতিটি লাইনে৷ কর্ম সেটিই যার মাধ্যমে নিজের, সমাজের সকলের কল্যাণ সাধিত হয়। এমন অনেক বিজ্ঞানী আছেন যারা নিজ পরিবার থেকে দূরে থেকে বছরের পর বছর শুধুমাত্র গবেষণাগারেই কাটিয়ে দেন। তাদের এমন কল্যাণমূলক কাজের ফলেই আমরা রোজ বিজ্ঞানের নিত্যনতুন সুফল ভোগ করতে পারছি।

মন্তব্যঃ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জন্ম নেওয়া মানুষকে একমাত্র অমর করে রাখতে পারে তার কর্ম৷ কর্মহীন জীবন আর বাক্সে বন্দী পুতুলের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কারণ, পুতুল ভাঙ্গলে যেমন তার জায়গা ডাস্টবিনে হয় তেমনি কর্মবিমুখ লোক দেহত্যাগ করার পর তার স্মৃতি অনেকটা ঝাপসা হয়ে যায়।

আরও পড়ুন- ভাবসম্প্রসারণঃ একতাই বল

আরও পড়ুন- ভাবসম্প্রসারণঃ পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি