in

ভাবসম্প্রসারণঃ একতাই বল

ভাবসম্প্রসারণঃ একতাই বল
ভাবসম্প্রসারণঃ একতাই বল

JSC, SSC, HSC শিক্ষার্থীদের বাংলা পরীক্ষায় প্রায়শই “একতাই বল” ভাবসম্প্রসারণটি চলে আসে। সবার জন্য উপযোগী করে “একতাই বল” ভাবসম্প্রসারণটি এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে।

একতাই বল

মূলভাবঃ

একতাই বল, একতা ও সামঞ্জস্য থাকলে অবিশ্বাস্য সব অর্জন করা যায়। — ম্যাটি স্ট্যাপেনেক

কথায় আছে “দশের লাঠি একের বোঝা”। মানুষ সামাজিক জীব৷ কোন মানুষের পক্ষে একা থাকা ভীষণ কষ্টসাধ্য। যখন আমরা কোন একটি কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব একা নিজ কাঁধে তুলে নেই তখন সে কাজটি সম্পন্ন করা আমাদের নিকট যতটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, আবার সে একই কাজ সবাই মিলে করতে গেলে খুব একটা কঠিন হিসেবে প্রতীয়মান হয় না৷ কারণ, একতাই বল।

সম্প্রসারিত ভাবঃ

আমরা সকলেই কোন না কোন সমাজের বাসিন্দা। পরিবারের সদস্যরা যেমন একে অন্যের উপর নির্ভরশীল তেমনি এই সমাজের মানুষেরা আমরা একে অন্যের প্রতি প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। এই নির্ভরশীলতা থেকেই মূলত একতার সৃষ্টি৷ প্রাচীনকালে মানুষ যখন বুঝতে পারলো জঙ্গলের প্রতিকূল পরিবেশে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে হলে সর্বপ্রথম তাদের একত্রে বসবাস শুরু করতে হবে। আর এভাবে একতা থেকেই ধীরে ধীরে তৈরি হয় আমাদের আজকের সভ্য সমাজ।

একতাবদ্ধ কোন জাতিকে সহজে কেউ পরাজিত করতে পারে না। তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। ঘুমন্ত জাতির উপর যখন পাক হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তখন বাঙ্গালী ছিল নিরুপায়, নিরস্ত্র। কিন্তু, সকলের মনে ছিল দেশেকে স্বাধীন করার তীব্র ইচ্ছা৷ সকলে মিলে একত্রে লড়াইয়ের মাধ্যমে আজ আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। একতা শুধু কোন জাতির মনোবলই বাড়ায় না সাথে নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ।

আজ থেকে কয়েকশ বছর আগে দেখা যেত যে রাজা তার প্রজাদের সাথে নিয়ে কাজ করতো। এতে নিজের রাজ্য শত্রু থেকে সুরক্ষিত থাকতো, বাইরের শত্রুর আক্রমণ আসলেও সেটি সকলে মিলে মোকাবেলা করতো৷ আর যে রাজা শুধু নিজের মতামতকে গুরত্ব দিয়ে রাজ্য চালাতো তার প্রতি তার প্রজাদের মনক্ষুন্ন থাকতো। প্রজাশক্তি তার বিপক্ষে থাকতো৷ কারণ, আত্মকেন্দ্রিক মানুষ কখনো অন্যের কষ্ট অনুভব করতে পারে না৷ তার চিন্তা জুড়ে কেবল থাকে নিজের স্বার্থ৷

আমাদের সমাজেও এই ধরনের মানুষ অনেক আছে যারা কেবল নিজের স্বার্থ উদ্ধারের কাজেই ব্যস্ত থাকে। এই সমাজে আমরা সকলে একে অন্যের পরিপূরক এই সামান্য কথাটুকু বোঝার বোধশক্তি এই ধরণের মানুষের থাকে না৷ “মানুষ সামাজিক জীব” এমন তকমা এই ধরনের সংকীর্ণমনা মানুষের বেলায় প্রযোজ্য হয় না। কেউ বিপদের পড়লে এগিয়ে আসার মনোভাব এই ধরনের মানুষের মধ্যে নেই বললেই চলে৷ এমন আত্মকেন্দ্রিক মানুষ সমাজের জন্য হুমকিস্বরূপ।

আমাদের দেশের উপকূলবর্তী মানুষদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে মোকাবেলা করেই জীবনধারণ করতে হয়৷ ঝড়ে সব লণ্ডভণ্ড করে দিলে আবার তারা উঠে দাঁড়ায়৷ যদি একতা না থাকতো তবে কখনোই এটি সম্ভব হতোনা। কারণ, ‘Unity is strength.’।

জাপান যুদ্ধ বিধ্বস্ত হয়েও আজ উন্নত দেশগুলোর একটি। এটি সম্ভব হয়েছে কেবলমাত্র তাদের একতা শক্তির কারণে। নিজেদের মধ্যে সব ভেদাভেদ ভুলে জাতীয় ঐক্যে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল বলে আজ তারা উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি। মানুষের একক শক্তি যতখানি সামান্য একতার শক্তি ততখানিই প্রবল৷

একতা শুধু মানুষের মাঝে বিরাজমান তেমন কিন্তু নয়। পশু পাখির মধ্যেও দলবদ্ধ হয়ে চলার প্রবৃত্তি লক্ষ্যণীয়। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, পিঁপড়া সবর্দা সারিবদ্ধভাবে চলাফেরা করে। শীতকালে যখন অতিথি পাখিরা আমাদের দেশে পাড়ি জমায় তখন তাদের দেখা যায় সারিবদ্ধভাবে ডানা মেলে উড়ে বেড়াতে।

পৃথিবীতে যখন কোন মহামারী দেখা দেয় তখন তা কাটিয়ে ওঠার জন্য একতার গুরুত্ব কতখানি তার একটি বড় প্রমাণ বর্তমান সময়কার করোনা মহামারী। সকলের একত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই এই মহামারী থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার একমাত্র উপায়।

মন্ত্যব্যঃ ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে হোক বা কোন জাতির ক্ষেত্রে – উভয়ই ক্ষেত্রে কিন্তু সাফল্যের জন্য একতার কোন বিকল্প নেই। কারণ, আমাদের একক শক্তি খুবই সীমিত। মাদার তেরেসার ভাষায়-

“যা আমি করতে পারি তা তুমি পারো না, যা তুমি পারো তা আমি পারি না; কিন্তু আমরা একসাথে এমন কিছু নেই যা করতে পারি না।”

আরও পড়ুন- ভাবসম্প্রসারণঃ পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি

আরও পড়ুন- দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান

আরও পড়ুন- চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান / চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান