একটি ঝড়ের রাতের মুখোমুখি হয়নি এমন বাংলাদেশী কি একজনও খুঁজে পাওয়া যাবে? আমাদের ছোট বেলা থেকেই আমরা কাল বৈশাখী ঝড়ের সাথে পরিচিত। এই ঝড় যেমন ভয়ের, তেমনি উত্তেজনার। আমরা নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকেই লিখে ফেলতে পারি একটি ঝড়ের রাত রচনা। কিন্তু শিক্ষার্থীদের তারপরও উচিৎ নিজের অভিজ্ঞতা নিজের মতো করে লেখার আগে একটি ঝড়ের রাত রচনার কাঠামো কেমন হওয়া উচিৎ তা জেনে নেয়া। তাই নিম্নে একটি ঝড়ের রাত রচনাটি তুলে ধরা হলো।
রচনা একটি ঝড়ের রাত
সূচনা
মানবজীবন এক বিচিত্র অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার। জীবনে যেমন প্রচুর আনন্দঘন মূহুর্ত রয়েছে, তেমনি রয়েছে কিছু বেদনাসিক্ত স্মৃতি। এমন অনেক দিন কাটিয়েছি যখন প্রতিটা ক্ষণ কেটেছে সুখের ভেলায়। অন্যদিকে প্রচুর রাত কেটেছে যখন দু’চোখের পাতা এক হয়নি দুঃশ্চিন্তায়।
হাজার হাজার আলোয় ঝলমলে দিনের স্মৃতি যেমন রয়েছে, তেমনি এক ভয়ঙ্কর ঝড়ের রাত্রি আজও আমি ভুলতে পারিনি। সেই ঝড়ো রাতের স্মৃতি আজও আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। অনেক কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়েছি আমি, আশ্বিন মাসের ঝড় তাণ্ডবের স্মৃতিও আমি মনে রেখেছি। তবু এই বিশেষ ঝড়ের রাতটি এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। আমার জীবনের এক অন্যতম ভয়াল অধ্যায় এই বিভীষিকাময় দুর্যোগমুখর রাত্রি।
ঝড়ের পূর্বাভাস
সেই ঝড়ের দিনের সকালে আলো ঝলমল করছিল। কোথাও কোনো দুর্যোগের আভাস দেখা যাচ্ছিলো না। সাধারণ গ্রামের সাদামাটা দিনের মতোই সময় কাটাচ্ছিলাম আমরা। এরই মধ্যে দুপুরবেলা টেলিভিশনে বলা হলো যে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ৯নং বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে এবং দেশের অন্যান্য স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতসহ ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। ঝড়ের পূর্বাভাসের ঘোষণা শোনার কিছুক্ষণ পরে আবহাওয়া এক গুমোট রূপ ধারণ করলো। যেই আকাশে সূর্য সগর্বে ঝলমল করছিলো, তাকে ঘিরে ধরলো কালো মেঘের ছায়া। অল্প কিছু মূহুর্তের মধ্যেই ঝড়ের আতঙ্ক গ্রামের সকলের মাঝে ছড়িয়ে পড়লো।
ঝড়ের পূর্বপ্রস্তুতি
এক বিশাল ঘূর্নিঝড় তীব্র বেগে ধেয়ে আসছে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর দিকে, এমন খবরই পাওয়া যাচ্ছে সব মাধ্যমে। যদিও আমাদের গ্রাম সেইসব অঞ্চল থেকে কিছুটা দূরে। এখানে কাঁচা বাড়িঘরের সংখ্যাই বেশি। তাই যখন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘোষণা দেয়া হয়, সুবিধাবঞ্চিতেরা স্কুলের পাকা দালানে আশ্রয় নেয়। এই হঠাৎ বয়ে আসা ঘূর্নিঝড়ের তান্ডব থেকে রক্ষা পেতে এবারো তাই করতে বলা হলো। যাদের বাড়িঘর ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, তারা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাওয়ার আগেই আশ্রয়কেন্দ্রে রওনা হলো।
গ্রামের অল্পকিছু সংখ্যক পাকা বাড়ির মধ্যে আমাদের একতলা দালানটি রয়েছে। তাই আমার বাবার পরামর্শে আমি কয়েকঘর প্রতিবেশীকে আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নেবার কথা বলে এলাম। তারা এই প্রস্তাবে খুব খুশি হলেও নিজেদের বাড়িতেই থাকতে চাইলেন। বাড়ি ফেরার পথে আমি কেরোসিন তেল ও কিছু মোমবাতি কিনে নিলাম। ঝড় শুরু হওয়ার আগেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, সেই পরিস্থিতির মোকাবেলা করাই জন্যেই এই সকল প্রস্তুতি।
যতই সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, আকাশের অবস্থা ততই খারাপ হচ্ছে। ক্রমাগত বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, বাতাসের গতি ক্রমশই বাড়ছে। বিকেল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ছিলো, এখন সেই বৃষ্টির ধারা প্রবল আক্রোশে মাটিতে আছড়ে পড়ছে। আমরা পরিবারের সকলেই আতঙ্কিত বোধ করছিলাম, তাই একসাথে বৈঠক ঘরে জমা হলাম। দুর্যোগের রাতে পরিবারের সকলে একসাথে থাকলে যতটা মানসিক শক্তি পাওয়া যায়, আলাদা থাকলে তা সম্ভব নয়। তাই সবাই একসাথে মিলে একটি বিভীষিকাময় ঝড়ের রাত্রি যাপনের যাত্রা শুরু করলাম।
ঝড়ের তাণ্ডবলীলা
তখন রাত ৮টা প্রায়, বাতাসের বেগ ক্রমশই বাড়ছে। যদিও দরজা-জানলায় খিল দেয়া, ফাঁক-ফোকড় দিয়ে ঘরে বৃষ্টির ছাট ঢুকছে। বিকেলে যখন হালকা হাওয়া দিচ্ছিলো, তখনই বিদ্যুৎ চলে গেছে। এই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্যে আগেই প্রস্তুত ছিলাম, তাই হারিকেনের আলোয় ঘর এখন আলোকিত। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুধু বাতাসের শো শো শব্দ আর বজ্রপাতের তাণ্ডবলীলা শোনা যেতে লাগলো। তীব্র বেগে বাতাস আছড়ে পড়ছে চারদিকে, মনে হচ্ছে এখনি বাড়ির দেয়ালগুলো হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে। এতক্ষণ শুধু বজ্রপাতের আওয়াজই শোনা যাচ্ছিলো, এবার যুক্ত হলো তীব্র বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ। আকাশের গর্জন, রুদ্র বারিধারা; সব মিলে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো। এমন সময় হুট করে জানালার একটি পাল্লা খুলে গেলো, সাথেসাথেই বৃষ্টির ঝাপটা আর বাতাস বৈঠকঘরে আঘাত হানলো। আমি আর আমার বোন দ্রুত পায়ে খোলা জানালা বন্ধ করার জন্য এগিয়ে গেলাম। তবে বাতাসের তীব্র বেগের কারণে জানালার পাল্লা টেনে ধরাটাই ছিলো মুশকিল। শেষ পর্যন্ত আমি শক্ত করে পাল্লা টেনে ধরায় আমার বোন অনেক কষ্টে ছিটকিনি লাগাতে সক্ষম হলো। ঝড়ের সাথে জানালার এই যুদ্ধে ঘরের একাংশ পানিতে ভেসে গেছে, সেই সাথে আমরাও। ভেজা গায়ে থাকলে অসুখ করতে পারে তাই দ্রুত আমরা জামাকাপড় পালটে ফেললাম। ততক্ষণে আমাদের মা-বাবা ঘর মুছে ফেলেছেন যাতে আমাদের কোনো অসুবিধা না হয়।
অন্ধকারে বসে যেন অনন্তকাল পার হয়ে যাচ্ছে। বাতাসের বেগ কখনো বাড়ছে, কখনো কমছে। বাতাসের গতির সাথে তাল মিলিয়ে বৃষ্টির ঝাপটা তার দিক পাল্টাচ্ছে, তবে বৈরি পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছেনা। কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিবেশ আরো অবনতির দিকে গেলো, বাতাসের গতি যেন আগের তুলনায় দ্বিগুন। আমাদের বাড়ির পাশের আম গাছ থেকে ডাল মটমট শব্দে ভেঙে পড়লো। এই বিকট আওয়াজে আমরা আরো ঘাবড়ে গেলাম। মনে হচ্ছিলো যেন মহাপ্রলয় উপস্থিত, উদ্দাম জলোচ্ছ্বাস ভাসিয়ে নিয়ে যাবে পুরো পৃথিবীকে।
এভাবেই কিছুক্ষণ পার হওয়ার পর মনে হলো পরিস্থিতি যেন খানিকটা উন্নতির দিকে, বজ্রপাতের বিকট শব্দ তেমন কানে আসছে না। কিন্তু তারস্বরে আজানের শব্দ ভেসে আসছে। হয়তোবা আমাদের প্রতিবেশীরা মহাদূর্যোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্যে সৃষ্টিকর্তার কাছে মিনতি করছেন। আমার বাবাও দুই বার আজান দিয়েছেন, এই প্রলয়কালে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করা ছাড়া তেমন কিছু করার নেই। যেহেতু বৃষ্টির বেগ খানিকটা কমে এসেছে, আমরা একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছিলাম। ঠিক তখনই আবার নতুন উদ্দ্যমে ঝড়ো বাতাস বইতে শুরু করলো। এই ক্রমবর্ধমান ঝড়ের গতিকে উৎসাহ জোটাতেই যেন পরপর কয়েকবার বজ্রপাত আঘাত হানলো। সেই সাথে কিছু একটা যেন আমাদের খোলা বারান্দায় আছড়ে পরলো। আমি সাথে সাথেই ছুটে গেলাম জানালা খুলে দেখার জন্য, কিন্তু আমার মা মানা করলেন। তিনি বললেন যে, এই ঝড়ে জানালা খুললে হয়তো আর বন্ধ করা সম্ভব হবে না। তাই আমিও নিজের মনকে শান্তনা দিয়ে চুপ করে বসে রইলাম।
যদিও বাইরে প্রলয়কাণ্ড ঘটছে, বেঁচে থাকা তো থেমে নেই। সেই দুপুরে কিছু খাবার পেটে পড়েছিল, এখন বাজছে প্রায় সাড়ে দশটা। খিদে, তৃষ্ণায় প্রাণ ওষ্ঠাগত আমার, তবুও কাউকে কিছু বলার সাহস পাচ্ছিলাম না। সৃষ্টিকর্তা যেন আমাদের প্রার্থনা শুনেছেন, বাতাস ও বৃষ্টির বেগ সত্যিই খানিকটা কমে এলো। শান্ত পরিবেশে খানিকটা ধাতস্থ হয়ে আমার মা ই প্রথম রাতের খাবারের প্রসঙ্গ তুললেন। সেই প্রস্তাবে আমরা সকলেই রাজি হয়ে গেলাম। এই ঝড়ের ধকল পেরিয়ে সকলের পেটেই খিদেটা বেশ চাড়া দিয়ে উঠেছিলো। তাই সবাই আর দ্বিমত না করে খাবার ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম।
ঝড়ের পরবর্তী সময়
আমাদের রাতের খাবার যখন শেষ, তখন বাইরে ঝড়ের তেমন তীব্রতা নেই। হালকা গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে, বাতাস নেই বললেই চলে। হাত ধুতে ধুতে আমার বাবা প্রস্তাব দিলেন বাইরের পরিবেশটা খানিকটা ঘুরে দেখার। কিন্তু অত রাতে আর বের হতে ইচ্ছে করলো না, তাই আমরা ঠিক করলাম সকালে বের হয়ে শুধু আমাদের বাড়ি নয়, পুরো এলাকা ঘুরে দেখবো।
রাতে ঝড়ের দাপট কমে গেলেও বৃষ্টি হয়েছে সারা রাতই। বাতাসের বেগও বেশ ভালোই ছিলো; কখনো কম, কখনো বেশি। সারারাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারিনি দুঃশ্চিন্তায়। মনে হচ্ছিলো, এই বুঝি ঝড় এলো, বোধহয় এখুনি সব ভেঙ্গে পড়বে। কিন্তু রাতে আবহাওয়ায় তেমন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেনি, শুধু কয়েকবার বাজ হেনেছে অন্ধকার আকাশে। সেই বজ্রপাতেই চমকে উঠছিলাম বারবার, ঝড়ের আতঙ্ক মন থেকে বিদায় হয়নি এক মূহুর্তের জন্যেও।
পরেরদিন সকালের পরিস্থিতি
সবে মাত্র ফজরের আজান দিয়েছে, ভোরের আলো ফুটছে কেবলই। বিছানায় শুয়ে থাকতে মন সায় দিলোনা, তাই বেরিয়ে পড়লাম। দরজা খুলতেই একরাশ ঠান্ডা হাওয়া এসে গা কাঁপিয়ে দিলো। আধো আলো ছায়াতে দেখলাম পুরো উঠান লন্ডভন্ড হয়ে আছে। বারান্দায় যেন কাদের টিনের চাল উড়ে এসে পড়েছে। চারদিকে গাছের পাতা আর ডালের টুকরো, কোথা থেকে যেন বাঁশের খুঁটিও আছড়ে পড়েছে আমাদের বাড়ির সীমানায়। রান্নাঘরের পাশের আমগাছের মস্তবড় এক ডাল ভেঙে পড়ে আছে একতলার ছাদে। শুধু তাই নয়, উঠোনে রাখা সাইকেলটি দুমড়ে মুচড়ে গেছে একেবারেই।
উঠোনের বামপাশে আমাদের ছোট্ট একটি বাগান আছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ বোধহয় এই নাজুক অংশটিরই হয়েছে। মাচায় উঠোনো লাউ গাছ এখন মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে, ছোট ছোট বেগুন আর টমেটো গাছগুলোও ভেঙে গুড়িয়ে গেছে। আমার ছোটবোনের সাধের গোলাপ বাগানের তো অস্ত্বিস্তই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের ছাদের তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, তবে প্রতিবেশীদের কাপড়চোপড় উড়ে এসে জমা হয়েছে সিঁড়ি ঘরের কাছে।
নিজের বাড়িঘরের অবস্থা দেখে বেড়িয়ে পড়লাম রাস্তায়। গ্রামে বেশিরভাগই টিনের অথবা খড়ের ঘর; পাকা দালান খুব কমই দেখা যায়। আমাদের এক প্রতিবেশীদের টিনের ঘর প্রায় সবটাই ভেঙে পড়েছে। তবে সেটি পুরোপুরি ঝড়ো বাতাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি, পাশের বাড়ির বিশাল পেয়ারা গাছের একাংশ তাদের ঘরের উপর পড়েছে। তবুও সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় কারো প্রাণ সংশয় ঘটেনি। মানুষের বাড়িঘর তেমন ক্ষতিগ্রস্থ না হলেও চারদিকের ক্ষেতখামার প্রায় ধংস হয়ে গেছে। ধান, গম এবং অন্যান্য আনাজের ক্ষেতগুলো বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। চারদিকে এক গুমোট পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। সারারাত ঝড়ের ধ্বংসযজ্ঞ শেষ হওয়ার পর সবাই বের হয়ে এসেছে বাড়ি থেকে। সবাই একে অপরকে সাহায্য করছে বাড়িঘর-ক্ষেতখামার গুছিয়ে নিতে। আমার এক বন্ধুর বাড়িতে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখলাম ওদের গোয়ালঘর পুরো ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। যদিও বড় গরুগুলোর তেমন কোন ক্ষতি হয়নি, একটি বাছুর আঘাত পেয়েছে। আমি তাদের কিছুটা সাহায্য করলাম বাড়িঘর গুছাতে, তারপর পা বাড়ালাম নিজের বাড়ির দিকে।
বেলা খানিকটা বাড়লেও সূর্যের দেখা মিলছে না, সে মেঘের আড়ালেই চুপটি করে বসে আছে। আমরা বাড়ির সকলে মিলে উঠোন থেকে ভাঙা ডালপালা সরিয়ে ফেললাম, বাগানের কিছু গাছ খুঁটির সাহায্যে দাঁড়া করানো গেলেও বাকিগুলো পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। তাই সেগুলো ফেলে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিলোনা। এই ঝড়ের অভিজ্ঞতা মনে চিরকালের জন্য দাগ কেটে দিবে, তা বুঝতে পারছিলাম হাড়ে হাড়ে।
ঝড় পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রম
এই নিম্নচাপ থেকে উৎপন্ন ঝড়টি আমাদের দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে যেই পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি করেছে, ঠিক ততটা আঘাত আমাদের গ্রামে হানতে পারেনি। তবুও প্রচুর পরিমাণে ফসল নষ্ট হয়েছে, গাছপালা ভেঙে গেছে, যাদের টিনের বা খড়ের বাড়িঘর ছিলো তারা সকলেই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। আমাদের গ্রামে অনেকেই গবাদি পশু লালনপালন করে, তারা অনেকেই গরু, মুরগী বা ছাগল হারিয়েছে। যেইসব পশু ঝড়ের সময়ে আঘাত পেয়েছে, তাদের চিকিৎসার খরচও কম নয়। আমাদের লোকালয়ের এমন কোনো পরিবার নেই যারা ক্ষতির সম্মুখীন হয়নি।
গ্রামের সবাই একেঅপরের সহায়তার জন্য এগিয়ে এলো। বিধ্বস্ত মানুষগুলোকে তাদের বাড়িঘর পুনঃনির্মাণে সহায়তা করা হলো। যাদের হাজার হাজার একর ফসলী জমি নষ্ট হয়েছে, তাদের ক্ষয়ক্ষতির জন্য সামান্য হলেও সরকারী এবং বেসরকারী সাহায্য মিলেছে। তাছাড়া, গ্রামের সাধারণ মানুষের উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবীর দলও গঠন করা হয়েছিলো। এই স্বেচ্ছাসেবী দলেরা গ্রামের বিপর্যস্তদের সাহায্যে এগিয়ে এসে সবাইকে ঝড়ের পরবর্তী ধাক্কা সামলে উঠতে সাহায্য করেছে।
উপসংহার
সেই ভয়ঙ্কর একটি ঝড়ের রাত আমাদের মনে যে ছাপ রেখে গিয়েছে, তা আমরা কখনোই ভুলতে পারবো না। যত বিভীষিকাময় রাতই আসুক না কেন, এই একটি ঝড়ের রাত আমাদের জীবনে এক গভীর দাগ কেটে গেছে। আপাতদৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তেমন বেশি না হলেও গ্রামের নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের বহুদিন লেগেছে সামলে উঠতে। তাছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ সাহায্যের অভাবে পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সহজ ছিলোনা মোটেও। গ্রামের মানুষের একে অপরের জন্য সহমর্মিতাই এই ঝড়ের আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে।
আমরা যতই পরিকল্পনা গ্রহণ করিনা কেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমরা প্রকৃতির কাছে কতটা অসহায়। প্রকৃতি যতটা সুন্দর, তার প্রলয়োঙ্কারী রূপ ততটাই ভয়ানক। এবং সেই প্রকৃতির সেই রুদ্রমূর্তি আজও আমি ভুলতে পারিনি, স্মৃতির গভীরে রয়ে গেছে সেই ঝড়ের রাত্রি।
আরও পড়ুন- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা (২০ পয়েন্ট)
আরও পড়ুন- চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান / চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান
আরও পড়ুন- বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তাঁর প্রতিকার
আরও পড়ুন- রচনাঃ কৃষি কাজে বিজ্ঞান
আরও পড়ুন- শ্রমের মর্যাদা রচনা (১৮ পয়েন্ট)
আরও পড়ুন- Tree Plantation
আরও পড়ুন- বাংলা রচনাঃ গ্রন্থাগার (২৬ পয়েন্ট)